শয়তান সেরা মেধাবী ছিল। শাদ্দাদ শীর্ষ ধনাঢ্য ছিল। নমরুদ-ফেরাউনের অনেক ক্ষমতা ছিল। তবু তারা ঘৃণিত। নীতি না থাকলে আর চরিত্র হারালে মেধা-সম্পদ-ক্ষমতার কিছুই আখেরে কাজে লাগে না।
মানুষের জন্য অর্থ, অর্থের জন্য মানুষ নয়। যেখানে মানুষের চেয়ে অর্থ মূল্যবান, সেখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না। মানুষ সম্মানে বাঁচে, মর্যাদায় বাঁচে। জীবিকার বিনিময় জীবন হলে, সে জীবন জানোয়ারের মতো জীবন!
ভোগবাদী সমাজে আবেগের খেলা চলে মুনাফার বিজয়ের জন্য। পুঁজিহীনের আবেগের ফসল পুঁজিপতি ঘরে তোলে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গরিবের যতটা কাঙ্ক্ষিত, বক্রপথে ধনীদের জন্য ততটাই আতঙ্কের!
মূল্যহীন কিছুকে মূল্যবান রূপে উপস্থাপনের জন্য অধিকতর রঙ চঙে সাজানোর প্রয়োজন পড়ে। আর প্রকৃত মূল্যবান কিছু স্বরূপেই দীপ্তিমান, যা খোলসে ঢাকার প্রয়োজন পড়ে না। দুর্বল ভিত্তির ওপর মজবুত কিছু দাঁড়ায় না।
দুর্নীতিবাজরা ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা! মানবাধিকার লংঘনকারীরা নিয়াজীর উত্তরসূরী! গণ-মানুষের অধিকার হরনকারীরা ভুট্টোর বন্ধু! বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা আইয়ুব খানের আত্মার আত্মীয়!
ব্রিটিশদের শাসন নেই! পাকিস্তানিদের শোষণ নেই! তবু বাড়ছে- অর্থ পাচার, মানব পাচার ও মেধা পাচার! পাচারে জড়িতরাই লর্ড ক্লাইভ ও মীর জাফরের প্রেতাত্মা!
সময় সবার জন্যই সমান। ২৪ ঘন্টা। তবে যোগ্যতা ও সুযোগ সমান নয়। ফলে সবাই সবকিছু পারে না। কেউ জনপ্রিয়তা উপভোগ করে, কেউ উপেক্ষিত হয়। কেউ ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান নিয়েই এত ব্যস্ত থাকে চারপাশের সমস্যা সমাধানে দৃষ্টি দিতে পারে না।
আইডিয়ার উন্নয়নে ধৈর্য, দূরদৃষ্টি, লেগে থাকার মানসিকতা চাই। সহজে হার মানা, তাড়াতাড়ি বড়লোক হতে চাওয়া ও শর্টকাট পথে সাফল্য চাওয়া নয়। দরকার প্রস্তুতি, আনন্দ পাওয়া, মানুষের প্রয়োজন মেটানো, দক্ষ কর্মী বাহিনী।
উদ্যোক্তার জীবন বদলে দেয় বাস্তবসম্মত উদ্ভাবন। ইউনিক বিজনেসে সমৃদ্ধি ও সফলতার দ্বার উন্মোচনের জন্য দরকার বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম ইউনিক আইডিয়া। স্মার্ট সেবার জন্য স্মার্ট উদ্ভাবনী ধারণা সম্ভাবনাময়।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল! খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সিন্ডিকেট! জাল সার্টিফিকেট বিক্রির চক্র! শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য জমজমাট! নিয়োগ বাণিজ্য রমরমা! কমিশন বাণিজ্য চরমে! অপরাধের স্বর্গরাজ্যের গন্তব্য অনিশ্চিত!
যেসব পেশাজীবীরা নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকে উপেক্ষা করে অন্য পেশা নিয়ে মহাব্যস্ত রয়েছেন; তারা পেশাদারিত্ব হারিয়েছেন। নিজ কর্তব্যের ব্যাপারে উদাসীন থেকে অন্যের দায়িত্বের ব্যাপারে অতি উৎসাহ দেখানো অপেশাদার আচরণ।
পঙ্গু সমাজে- শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের চেয়ে পরীক্ষায় পাসের জন্য বেশি মেহনত করে। চাকরিদাতারা যোগ্যতা-দক্ষতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় বেশি বিবেচনা করে। নেতা-কর্মীরা নিজ মতাদর্শের কারো অবৈধ কর্মকাণ্ডকেও অন্ধভাবে সমর্থন করে।
সভ্য সমাজে অপরাধীরা কারাগারে থাকে। আর অসভ্য সমাজ হয় অপরাধীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। ফলে নিরপরাধ মানুষের জন্য কলুষিত সমাজটাই একটি উন্মুক্ত কারাগার; যেখানে অপরাধীদেরই জয়জয়কার!
নকল করে পাওয়া ডিগ্রি! টাকা দিয়ে কেনা সার্টিফিকেট! ঘুষ দিয়ে পাওয়া চাকরি! সুদ দিয়ে-নিয়ে করা ব্যবসা! হারাম উপার্জন আর ভেজাল খাবার খেয়ে গড়া দেহ! এসব অশনি সংকেত! জাতির প্রকৃত উন্নতির জন্য খাঁটি মানুষ দরকার।
প্রাণখুলে মা ডাকে মা দারুণ খুশি হন। সন্তানের একটু যত্ন ও সম্মান পেলে বাবার চোখের কোণে আনন্দাশ্রু দেখা যায়। ভালোবাসার একটি গোলাপে স্ত্রীর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি দেখা যায়। আর একটি বেলুন কিংবা আন্তরিক প্রশংসায় শিশু খুশিতে নাচতে থাকে। সৃষ্টিকেই খুশি করা যদি এত সহজ হয়, স্রষ্টাকে খুশি করাও কঠিন হবে না।
ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্নরা সম্ভাবনার বিকাশ ও সমস্যার সমাধানে মনোনিবেশ করে আশাবাদী ও সাহসী হয়ে ওঠেন। আর নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিয়ে হতাশ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।
ক্ষমতাতন্ত্র গণতন্ত্রের শত্রু। গণতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস জনগণ। আর ক্ষমতাতন্ত্রে সকল শক্তির উৎস ক্ষমতা। ফলে ক্ষমতাসীনরা অসীম সুবিধা ভোগ করে, আর ক্ষমতাহীনরা সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করে। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই সবকিছু আবর্তিত হয়।
সমস্যা সমাধানে সৃজনশীলতা দরকার, নতুন ধ্যান-ধারণা দরকার। আর সমস্যা বাড়াতে কুটিল মানসিকতা ও জটিল বুদ্ধি দরকার। সমস্যা তৈরির চেয়ে সমাধানের পথ সহজ, তবে সেই সহজ পথে হাঁটা খুবই কঠিন।
স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে হবে। স্বপ্ন পূরণে কাজও করতে হবে। তবে নিজের স্বপ্ন পূরণে অন্যের স্বপ্নকে চুরি বা হত্যা করা যাবে না। ভালোলাগা ও ভালোবাসার কাজকে মর্যাদা দিয়েই স্বপ্নের পথে চলতে শিখতে হবে।
ক্ষমতাতন্ত্রের নিপীড়নমূলক কাঠামোতে ভদ্রতা ও সদাচরণের কোনো স্থান নেই। ভালোবাসা ও সহানুভূতি এখানে পাপ। এখানে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্যরা ভয় দেখিয়ে সম্মান নেয়, আর মর্যাদা ধরে রাখতে দুর্ব্যবহার করে।
শূণ্যতার চেয়ে পূর্ণতা ভালো। অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তি আনন্দের। তবে সকল অর্জনই নেতিবাচক হয়ে যায় আত্মপূজারি ও চিন্তাহীন হলে।
যারা কাজই করে না; তাদের ভুলও হয় না, সমালোচনাও হয় না। সমালোচকদের তীর্যক দৃষ্টি যারা কিছু করে তাদের ওপর। সমালোচনাকে হজম করা কর্মবীরদের বড় গুণ।
আত্মতুষ্টি-আত্মতৃপ্তি নিরুদ্যম করে। পরিতৃপ্ততা আনে বিপদ, বাড়ায় অলসতা-বিলাসিতা-অহংকার। অতৃপ্তিতে বাড়ে সাধনা-উন্নতি-উৎকর্ষতা।
কেউ কারণে হাসে, কেউ অকারণে হাসে। কেউ কারণে কাঁদে, কেউ অকারণে কাঁদে। সব হাসির অর্থ এক নয়। সবার কান্নার কারণও এক নয়। হাসিমুখের আড়ালেও কেউ বিষ লুকিয়ে রাখে, অশ্রুসিক্ত চোখের আড়ালেও কেউ মিষ্টি লুকিয়ে রাখে।
ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করলেও প্রশংসা পায় মালি। আকাশের বিশালতা, তারকার তাজাল্লি, বাতাসে পাতাদের আনন্দ-হিল্লোল, পাহাড়ের দৃঢ়তা, সাগরের উদারতা মুগ্ধ করলেও কৃতজ্ঞতা স্রষ্টারই। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক সবচেয়ে সুন্দর ও পবিত্রতম সম্পর্ক।
আইডিয়া হচ্ছে বীজ। সংগঠন হচ্ছে বীজ বপণের ক্ষেত্র। নেতা-কর্মীরা তার চাষী। আর সেবা হচ্ছে বৃক্ষ। সেবাদাতা-গ্রহীতারা ফুল-ফল। সেবা দিয়ে-নিয়ে তৃপ্ত হাসিমুখগুলোই চূড়ান্ত সৌন্দর্য।
কর্মব্যস্ত থাকা মানে সক্রিয় থাকা। কর্মক্ষম থাকা মানে কাজ করার সুযোগ থাকা। কাজ, কাজ আর কাজ। কর্মপ্রিয় ও পরিশ্রমপ্রিয়দের জীবনে অলসতা ও অবসরের কোনো স্থান নেই।
স্বার্থপরের মস্তিষ্ক- নিজের স্বার্থ হাসিলের ব্যাপারে যতটা সক্রিয়, পরের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে ততটাই নিষ্ক্রিয়। স্বার্থপরের- চিন্তা আত্মকেন্দ্রিক, কর্ম পরকে উপেক্ষা করে, স্বপ্ন নিজের ষোলো আনা বুঝে নেয়ার।
অবৈধ পথেও সাফল্য আসে, তবে সার্থকতা আসে না। সম্পদ বক্র পথেও অর্জন করা যায়, তবে তাতে মানুষ আর মানুষ থাকে না। অন্যায় পথে অর্জিত সম্মান ও মর্যাদা দীর্ঘস্থায়ীও হয় না।
দক্ষতা মানুষকে সম্পদে পরিণত করে। পরিশ্রম সেই সম্পদের ব্যবহার ত্বরান্বিত করে। সততা সঠিক পথে যথার্থ ফলাফল অর্জনকে সুনিশ্চিত করে।
সুখের চেয়ে দুঃখ ভোলা কঠিন, অনেক পেয়েও কিছু হারালে হারানো কিছুই মনে থাকে বেশি। কাউকে কোনো সুযোগ দেয়ার পরে তা বন্ধ করলে বা কোনো সুবিধা দিয়ে তা কেড়ে নিলে- সে প্রতিবাদী হয় বা মনোকষ্টে ক্ষোভ পুষতে থাকে।
সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে বিচিত্র মানুষের বৈচিত্রতাকে ধারণ করেই নেতা সার্থকতা অর্জন করেন। নদীগুলোর মিলিত হবার জন্য যেমন মোহনা থাকতে হয়, কর্মীদের স্বপ্ন ও আবেগকে ধারণ করার জন্যও তেমন নেতা থাকতে হয়।
সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের গ্রহগুলো যেমন ঘুরতে থাকে; নেতাকে কেন্দ্র করে কর্মীদের সুখ ও দুঃখের অনুভূতিগুলো তেমনি আবর্তিত হতে থাকে। প্রকৃত নেতা বস নয়, দায়িত্বশীল।
অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে আর ব্যক্তি স্বাধীনতা মানা যায় না। লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার সমাজে স্বাধীনতা পরাধীনতারই নামান্তর। কারণ স্বাধীনতা মানে দায়িত্বশীলতা, দায়িত্বহীনতা নয়।
প্রোঅ্যাকটিভরা বিষকেও হজম করে চারপাশকে বিশুদ্ধ রাখে। রিঅ্যাকটিভরা ভেতরের বিষ উগরে দিয়ে চারপাশকে বিষাক্ত করে ফেলে।
সুশৃঙ্খল ও অনুগত ছোট্ট কর্মীবাহিনীও সঠিক নেতৃত্বে অসাধারণ বিজয় আনতে পারে। আর চরিত্রহীন বিরাট কর্মী বাহিনীও দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বে লক্ষ্য হাসিল করতে পারে না।
সত্য তিক্ত। সত্যের পথ কণ্টকাকীর্ণ। মিথ্যা আকর্ষণীয়। মিথ্যার পথ মসৃণ। সত্যে অবিচল থাকতে প্রয়োজন সাহস ও দৃঢ়তা। আর ভীরু-কাপুরুষদের কাছে মিথ্যাই প্রিয়।
আলো আর অন্ধকার একসাথে থাকে না। কেউ আলোর দিকে এগোলে সে অন্ধকার থেকে দূরে সরে যায়। আর কেউ অন্ধকারের দিকে এগোলে সে আলো থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।
পুঁজিবাদে- অধিক মুনাফাই অধিক সাফল্যের সূচক। মানবিকতা ও নৈতিকতার সার্থকতাকে সফলতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। পুঁজিবাদে যে যত বেশি পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করে সে তত বেশি সম্মানিত।
পরিবর্তনের জন্য অশ্রুর চেয়ে ঘাম বেশি প্রয়োজন। তবে অশ্রু শক্তিশালী ভূমিকা রাখে মানুষের হৃদয় গলানোয়, সৃষ্টি-স্রষ্টাতে দয়া-মায়া ছড়িয়ে দেয়ায়।
অপরাধ জেনেও অপরাধীকে নিরপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করা অপরাধীকে সহায়তা করারই নামান্তর। জেনে শুনে অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া মহা অপরাধ।
টেকসই ব্যবসায় পুঁজির চেয়েও বেশি জরুরি আইডিয়ার উন্নয়ন। সেবাধর্মী ব্যবসা বহুমুখীকরণে লাগে বুদ্ধি ও পরিকল্পনা; সততারও বিকল্প নেই।
বৈষম্যে অসন্তোষ বাড়ে। শোষণে অসহায়ত্ব বাড়ে। প্রতিবাদের চেতনাহীন শোষিতের ভূমিকা শোষকের পীড়ন-বঞ্চনাকে স্থায়িত্ব দেয়।
পথ তৈরি করে এগিয়ে নেয়া সমাজের সংবেদনশীল অংশের জন্যও আশাজাগানিয়া। স্বার্থের প্রয়োজনে রক্ত শুষে ছুঁড়ে ফেলা সামাজিক বিবেককে নাড়া দেয়!
এদেশে তরুণদের রক্ত খুব সস্তা! সহজেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়! ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের স্বপ্নপূরণে তাদের মূল্যবান ঘাম মূল্যহীনভাবে ঝরে।
চরিত্র হারালে জীবনের সকল অর্জন নিমিষেই ম্লান হয়ে যায়। মুকুটতুল্য ব্যক্তিত্বও কাদা মাটিতে পতিত হয়ে নির্লজ্জভাবে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
বাহিরটা যতই জৌলুস ও জাকজমকপূর্ণ হোক না কেন; ভেতরটা কুৎসিত ও কদর্যময় হলে তা একদিন খোলস ভেঙে বের হবেই।
প্রতিপক্ষহীন খেলার মাঠ বিজয়ে সহায়ক। তবে অর্জনহীন সেই বিজয়ে গৌরব করার মতো কিছুই থাকে না।
সার্টিফিকেট সর্বস্ব ডিগ্রি ও চাকরি নির্ভর মুখস্ত পড়াশোনা- শিক্ষাকে মোড়কজাত পণ্যের মতো মোড়কহীন আরেকটি পণ্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
সাধারণত- দরিদ্রের কাছে প্রাধান্য পায় পেট ও চোখের চাহিদা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত প্রাধান্য দেয় সমাজের বিবেচনা। ধনীর কাছে প্রাধান্য পায় মনের চাহিদা।
তথাকথিত উন্নয়ন- নিম্নবিত্তকে শিহরিত করে, মধ্যবিত্তকে পুলকিত করে আর উচ্চবিত্তকে তৃপ্ত করে।
আন্তরিকতায় বাড়ে মুগ্ধতা। আশ্বাসে বাড়ে বিশ্বস্ততা। প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বাড়ে সম্পর্কের গভীরতা।
প্রতিদ্বন্দ্বী বেশি হলে কোয়ালিটি বাড়িয়েই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠতে হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেই শুধু কোয়ান্টিটিকে গুরুত্ব দিয়েও নিরাপদে থাকা যায়।
উঁচুতে দৃষ্টি আক্ষেপ বাড়ায়। সমান্তরালে দৃষ্টি চাহিদা বাড়ায়। নিচুতে দৃষ্টি প্রশান্তি বাড়ায়।
অবস্থান তৈরি হয় যোগ্যতায়। গ্রহণযোগ্যতা স্থায়ী হয় উৎকর্ষতায়। ক্রমোন্নতি নিশ্চিত হয় বিশ্বস্ততায়।
স্বপ্ন দেখায় স্বপ্নদ্রষ্টা। স্বপ্নপূরণের কাজ এগিয়ে নেয় নেতা। স্বপ্ন সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয় বিপ্লবী।
ক্ষমতাবানের আইন ভাঙার প্রবণতা আর ক্ষমতাহীনের আইন মানার প্রবণতার পাশাপাশি চলা দুর্দশাকে স্থায়ী করে।
যানজট- চাকার গতিকে পায়ের গতিতে নামিয়ে আনে। জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়। মূল্যবান সময়কে মূল্যহীন করে তোলে।
শিকড় সন্ধানীরা হয় কৃতজ্ঞচিত্ত। আর শিকড়কে অস্বীকারকারীরা হয় আত্মকেন্দ্রিক, অকৃতজ্ঞ, লোভী, স্বার্থপর ও উচ্চবিলাসী।
রক্ত গরম হলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। হৃদয় নরম হলেও নীতিতে অটল থাকুন। চিন্তার কেন্দ্রস্থল থেকে ‘আমি’ শব্দটি সরিয়ে ‘আমরা’ রাখুন।
প্রকাশ্য শত্রুর চেয়ে বিশ্বাসঘাতক বন্ধু অধিকতর বিপজ্জনক! মুনাফিককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া কাঁটা খেয়ে দুধ-মধু খাওয়ার ফলাফল আশা করার মতো!
শয়তানের সবচেয়ে বড় শক্তি নির্লজ্জতা! কুৎসিত কর্মে বাধা লজ্জা। লজ্জাহীন মাত্রই নিয়ন্ত্রণহীন, ব্রেকহীন ভন্ড! যেন জীবন্ত বোমা!
স্বর্গীয় সুখের জন্য স্বর্গীয় আভায় উদ্ভাসিত আলোকিত মানুষ প্রয়োজন।স্বর্গকে নরকে পরিণত করে শয়তান, শয়তানের প্রেতাত্মা ও অনুসারীরা!
প্রতিষ্ঠান গড়তে লাগে- রক্ত পানি করা শ্রম, ঘাম ঝরানো সাধনা, তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন। প্রতিষ্ঠান ভাঙতে এক মীর জাফর বা ঘসেটি বেগমই যথেষ্ট!
প্রশাসনিক জটিলতা অগ্রগতিকে মন্থর করে। সমন্বয়হীনতা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। অসহযোগিতা সম্ভাবনাকে সমস্যায় রূপান্তরিত করে।
শৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য। অতিরিক্ত শৃঙ্খলা বাতিলযোগ্য। বিশৃঙ্খলা অগ্রহণযোগ্য।
কেরানির মানসিকতা পরনির্ভরশীলতা বাড়ায়। উদ্যোক্তার মানসিকতা আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ায়।
অপমান করার পর মর্যাদা দিলেও অপমান ভুলে না। মর্যাদা দেয়ার পর অপমান করলে মর্যাদা ভুলে যায়।
কম দেয়া ও বেশি নেয়ার প্রতিযোগিতা যতটা তীব্র, বেশি দেয়া ও কম নেয়ার প্রতিযোগিতা ততটাই মন্থর।
নেতার মানসিকতা বুঝা কর্মীর জন্য জরুরি নয়; তবে কর্মীদের মানসিকতা নেতাকে বুঝতেই হবে।
শিক্ষা হীনমন্যতা বাড়ালে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ। শিক্ষা আত্মবিশ্বাস বাড়ালে শিক্ষাব্যবস্থা সফল।
চাকরিজীবী কাজ করে সময়ের হিসাবে। শ্রমজীবী কাজ করে কাজের হিসাবে। উদ্যোক্তা কাজ করে প্রয়োজনের আলোকে।
দায়িত্বশীলতা মানুষকে মানুষ বানায়। দায়িত্বহীনতা মানুষকে পশুতে পরিণত করে।
বেশি দামে বিক্রি হওয়া অযোগ্যতা নয়! কম দামে বিক্রি হওয়াও যোগ্যতা নয়! তবে বিক্রি না হয়ে কেনাটাই অধিক যোগ্যতার পরিচায়ক!
প্রিয়জন হয়ে থাকা আনন্দদায়ক। প্রয়োজন হয়ে থাকা সম্মানজনক।
নীতিবানের সমাজে নীতির চর্চা পুরস্কৃত হয়। নীতিহীনের সমাজে নীতির চর্চা তিরস্কৃত হয়।
ঘুমন্ত জাতিকে জাগাতে জাগ্রত নেতা প্রয়োজন। ঘুমন্ত সিংহকে জাগ্রত হরিণও ভয় পায় না!
দাতার উদারতা গ্রহীতাকে সন্তুষ্ট করে। গ্রহীতার উদারতা দাতার ঔদ্ধত্য বাড়ায়।
স্বপ্ন বড় হলে মানুষ বড় হয়, সংকীর্ণতা বাড়লে মানুষ ছোট হয়।
ছাগল দিয়ে হাল চাষ হয় না বুঝতে- লাঙ্গল নিয়ে যাকে মাঠে যেতে হয়; সে ছাগলতুল্য!
জ্ঞানীকে মূর্খ সাজালে জ্ঞানী আরো জ্ঞানী হয়। মূর্খকে জ্ঞানী সাজালে মূর্খ আরো বোকা হয়।
কর্মব্যস্তরা ব্যস্ততা দেখানোর সময় পান না। ফাঁকিবাজরা ব্যস্ততায় কাজ করারই সুযোগ পান না!
পক্ষ নেওয়া দোষের নয়, পক্ষপাতিত্ব দোষের। ভিন্নমত নিন্দনীয় নয়, ভিন্নমত দমন নিন্দনীয়!
মগজের শক্তি ইতিবাচক হলে উন্নতি হয় স্থায়ী; মগজের শক্তি নেতিবাচক হলে পতন হয় তাড়াতাড়ি!
চাপার জোর বাড়ে, শক্তির জোরে; মনের জোর বাড়ে, মাথার জোরে! যেখানে কথা বেশি, সেখানে কাজ কম; যেখানে কাজ বেশি, সেখানে কথা কম। বেশি লিখতে হলে, বেশি ভাবতে হয়; আর বেশি বলতে হলে, চিন্তা করার সুযোগই পাওয়া যায় না!
বীজতলার কিংবা ফসলের মাঠের আগাছা পরিষ্কার করে চাষী। শরীরের রোগের চিকিৎসা করে চিকিৎসক। মনের আগাছা পরিষ্কার বা আত্মার চিকিৎসা করতে হয় নিজেকেই। জমির আগাছা যেমন পরিচর্যা ছাড়াই দ্রুত বাড়ে, মনের আগাছাও তেমনি।
পরিপূর্ণতায় দরকার- দেহের ক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পরিবারের ক্ষেত্রে সব বয়সীরাই, সমাজের ক্ষেত্রে সব পেশাজীবী-বৃত্তিজীবীই। সবাই গুরুত্বপূর্ণ, সবার ভূমিকাই সম্মানযোগ্য। অপূর্ণতায় শূণ্যতা ও হাহাকার, পূর্ণতায় সৌন্দর্য ও তৃপ্তি।
স্রষ্টা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়। সবচেয়ে প্রিয়, ক্ষমতাধর বা মেধাবী মানুষের জীবন গেলেও জগত সংসারের কিছুই থেমে থাকে না। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছাড়াও কত জনের জীবন চলে!
যে কাজ ক্ষতিকর, তা অকাজ। যে চিন্তা ক্ষতিকর, তা কুচিন্তা। যে মানুষ ক্ষতিকর, সে অমানুষ। মানুষ মানে পশু নয়, কর্মী মানে দুষ্কর্মী নয়।
প্রতিটি ঘটনার পেছনে কারো না কারো ভূমিকা থাকে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনেও কেউ না কেউ দায়ী থাকে। পার্থক্য হচ্ছে- অবদান অনেকেই দেখাতে চায়, দায়টা কেউ নিতে চায় না!
লেখক: আনিসুর রহমান এরশাদ, লেখার সময়: ২৭ জানুয়ারি ২০২২