‘বই না পড়লে জাতি মানসিকভাবে দেওলিয়া এবং দীন দরিদ্র হয়ে হয়ে যায়’

একাডেমিয়া পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড (এপিএল) থেকে প্রকাশিত `আইন আইনসর্বস্বতা এবং সংস্কার: মূল্যবোধমুখী ইসলামী চিন্তাধারা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ২৫ আগস্ট রোজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাবি’র আইন বিভাগ এর অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এর সভাপতিত্বে এবং ও এপিএল এর সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ড. সৈয়দ শহিদ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন এপিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ। অনুষ্ঠানে বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক, ঢাবি’র আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপক (অব.) ও সউদি দূতাবাস এর প্রেস কনসালটেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম আবদুস শাকুর খন্দকার, মহাখালী দারুল উলুম হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসা এর অধ্যক্ষ শায়খ ড. নজরুল ইসলাম আল-মারূফ আল-মাদানি, ঢাবি’র আরবি বিভাগ এর অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, এবং গবেষক চিন্তক কলামিস্ট কবি মুসা আল হাফিজ প্রমূখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীসহ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।

বইটির লেখক বাহরাইন এর গাল্‌ফ ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সংস্কার (reformation)। তবে ইসলামের সংস্কার নয়, কারণ ইসলামের সংস্কার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন মুসলিমদের প্রচলিত ধ্যানধারণা, রীতিনীতি, আচার-আচরণের সংস্কার। মুসলিম উম্মাহর বিপর্যন্ত অবস্থার মূলে রয়েছে ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক অজ্ঞতা এবং অবহেলা। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে মূল্যবোধমুখী ধারা। মুসলিম বিশ্বে বিরাজমান অবস্থার পরিবর্তন আশা করা যেতে পারে না, যতক্ষণ না ইসলামের বুনিয়াদি উৎসগুলো নিয়ে কুরআন এবং নবিজীর ঐতিহ্যের আলোকেই মুসলিম চিন্তা ও বুঝের যথাযথ মূল্যায়ন হয় এবং সংস্কার আসে।

লেখক আরো বলেন, যাদের উৎসাহ, সহযোগিতা, অবদান এবং পরামর্শে এই বই প্রকাশনা সম্ভব হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবনে অপরিসীম রহমত এবং বরকত দান করুন। তবে এই বইয়ে যা কিছু পেশ করা হয়েছে তার দায়দায়িত্ব আমার। এই কাজে যেকোনো ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহ তায়ালার মাগফিরাত কামনা করি এবং কাজটি যদি প্রাসঙ্গিক ও মূল্যবান হয়, সেজন্য আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করি। আপনারা বইটি পড়ে ভালো লাগলে আমার জন্য দোয়া করবেন। না ভালো লাগলেও দোয়া করবেন। ভুল ত্রুটি পেলে ধরিয়ে দিবেন এই কমনা করছি।

এপিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, বই না পড়লে জাতি মানসিকভাবে দেওলিয়া এবং দীন দরিদ্র হয়ে হয়ে যায়। বিশ্বে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ বই প্রতিবছর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। আর ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশিত লেখকদের বই ধরলে হয় প্রায় ৪০ লাখ। প্রতিদিন ১০০০ নতুন বই অ্যামাজনে আপলোড করা হয় অর্থাৎ বছরে ৩ লাখ ৬৫ হাজার বই।

ড. আজিজ আরো বলেন, এপিএল প্রকাশনা জগতের বিস্তৃত পরিধিতে বিশুদ্ধ সাহিত্য প্রকাশের ইতিহাস তৈরি করতে চায়। বৈচিত্র্যময় চেতনায় ঋগ্ধ হতে চায়। গ্রন্থ প্রকাশনায় বিশুদ্ধতা ও গুণগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে চায়। বিদেশী প্রতিথযশা লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ বই অনুবাদ মানসম্মতভাবে করার ক্ষেত্রে এপিএল এর সজাগদৃষ্টি রয়েছে। দেশের স্বনামধন্য লেখকদের বইও পাঠকদের একটি পজিটিভ চিন্তার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। এরই অংশ হিসেবে “Towards our Reformation from Legalism to value-oriented Islamic Law and Jurisprudence” এর প্রকাশ ও অনুবাদ।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অগ্রগতির সাথে সাথে জ্ঞানে এগিয়ে যেতে রুচিশীল ও ভালো বই প্রকাশের প্রত্যয় নিয়েই এপিএল এর যাত্রা শুরু। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকেই এপিএল সৃজনশীল ও মননশীল একাডেমিক বই প্রকাশ করছে। এপিএল এর প্রকাশনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বুদ্ধির মুক্তি এবং শুভবুদ্ধির বিকাশ ঘটাচ্ছে। চিন্তাজগতের অন্ধত্ব, গোঁড়ামী মোচনে প্রয়াস চালাচ্ছে। গুণগত বৈশিষ্ট্যে বজায় রাখার মহতি উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। সর্বদাই গ্রন্থ ও লেখক বাছাই করে গ্রন্থ প্রকাশ করায় তা সমাদৃতও হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই বইটি ইসলামি আইনের মূল উৎসগুলো (কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা এবং কিয়াস) নিয়ে একটি প্রশংসনীয় কাজ। এই উৎসগুলোর প্রাসঙ্গিক সংজ্ঞা, ব্যবহার এবং ব্যাখ্যা নিয়ে হয়রান হওয়ার মতো (vexing) বহুবিধ প্রশ্নাদি নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। অতীতের আইনসম্ভারের স্থবিরতা এবং আক্ষরিকতা এবং ভবিষ্যতে ইসলামি আইনের ক্ষেত্রে মূল্যবোধমুখিতার ওপর তিনি আলোকপাত করেছেন। অনেক ইস্যুতে তিনি আগের অনেক ফুকাহাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অতীত এবং বর্তমানের খ্যাতনামা ইসলামি স্কলারদের রেফারেন্স দিয়েছেন তাঁর মত এবং বিশ্লেষণের সপক্ষে। ইসলামি আইন এবং উসূলে ফিকহের সাহিত্যে এ বইটি একটি মূল্যবান সংযোজন। তাঁর কোনো কোনো মতের সাথে একমত না হলেও পাঠকরা অবশ্যই এ বইয়ের পাঠে উপকৃত হবেন।

বক্তারা বলেন, আল্লাহপাক বলছেন আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি, বিভিন্ন গোত্রে ভাগ করেছি, অর্থাৎ কাউকে ডাক্টার বানিয়েছি, কাউকে গবেষক বানিয়েছি। যিনি বইটি লিখেছেন তিনি আলেম না হয়েও, মাদ্রাসা লাইনে ১২-১৩ বছর সময় না দিয়েও তিনি একটি গবেষণার কাজে হাত দিয়েছেন। এটা একটা গবেষণা ধর্মী বই। ইসলামকে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে হলে গবেষণা করতে হবে। লিখতে গেলে ভুল হতেই পারে এটা স্বাভাবিক। তিনি তারা মেধা দিয়ে লিখেছেন, চেষ্টা করেছেন এজন্য তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

মূল ইংরেজী বইটি যে মুসলিম বিশ্বের চিন্তাশীল মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে তার দৃষ্টান্ত মেলে মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের ২০১৫ সালের The Reform of Muslim Education and the Quest for Intellectual Renewal শীর্ষক একটি লেখায় তার কিছু প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণের সমর্থনে এই বইয়ের রেফারেন্স ইতিবাচকভাবে ব্যবহার।

উল্লেখ্য যে, লেখক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার ট্রয় ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় অনার্স, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর, ইউনিভার্সিটি অব টেনেসী, নক্সভিল থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করার পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি-তে পোস্ট-ডক্টরেট করেন এবং দুই দশক ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরের দেড় দশক তিনি বাহরাইনে অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি সেন্টার ফর ইসলামিক ফাইন্যান্স (বাহরাইন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স)-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গবেষণার যেসব ক্ষেত্রে গ্রন্থকারের অবদান রয়েছে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স, ইসলামী আইন ও উসূলে ফিক্হ, ইসলামী ইতিহাস এবং ইসলামী পলিটিক্যাল ইকোনমি । তার কিছু কিছু লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যেমন ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ইটালিয়ান, রাশিয়ান, ডাচ, উর্দু, তুর্কি, বসনিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান এবং জর্জিয়ানড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার ট্রয় ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় অনার্স, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর, ইউনিভার্সিটি অব টেনেসী, নক্সভিল থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করার পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি-তে পোস্ট-ডক্টরেট করেন এবং দুই দশক ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

পরের দেড় দশক তিনি বাহরাইনে অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি সেন্টার ফর ইসলামিক ফাইন্যান্স (বাহরাইন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স)-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গবেষণার যেসব ক্ষেত্রে গ্রন্থকারের অবদান রয়েছে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স, ইসলামী আইন ও উসূলে ফিক্হ, ইসলামী ইতিহাস এবং ইসলামী পলিটিক্যাল ইকোনমি। তার কিছু কিছু লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যেমন ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ইটালিয়ান, রাশিয়ান, ডাচ, উর্দু, তুর্কি, বসনিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান এবং জর্জিয়ান ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top