পরিবার বইটি পরিবার বিষয়ক দিক-নির্দেশনায় পরিপূর্ণ অনবদ্য গঠনমূলক ও উন্নয়নমূলক এক বই। বইটির ভাষাশৈলী, লেখনী কৌশল ও বক্তব্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। যা ভেতরকে নাড়িয়ে দেয়, উদ্দীপ্ত করে। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন বা বইটি এখনো পড়েননি, কিছুটা সময় বের করে পড়ে ফেলুন; ভালো লাগবে, ভালো কিছু শিখতে ও জানতে পারবেন।
উন্নয়নমূলক বই
আনিসুর রহমান এরশাদ রচিত প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বইটিতে আছে- জীবন গঠনের মোটিভেশন, আত্মিক উন্নতির নির্দেশনা, তেজে ভরা মন ও সুস্থ-সবল দেহের জন্য স্বাস্থ্যপুষ্টির ব্যাপারে টিপস, পারিবারিক ও সামাজিক উন্নতির বিভিন্ন দিক। বইটিতে মানুষের মানসিক প্রশান্তি, শারীরিক সুস্থতা, দৈনন্দিন জীবনাচরণ ও সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই বইটি নিয়ে অনেক পাঠকই পাঠ পরবর্তী ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটি সহজ, সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষায় লেখা একটি বই।
নিরপেক্ষ লেখা
লেখক বই রচনার ক্ষেত্রে কোনো ধর্ম, গোত্র বা গোষ্ঠী কারো প্রতি কোনো সহানুভূতি নিয়ে লেখেননি। কারো প্রতি বিরাগভাজন হয়ে লেখেননি। নিরপেক্ষভাবে লিখেছেন। বইটিতে আছে- একজন মানুষ কেন তার চারপাশের মানুষজনের সাথে উত্তম আচরণ করা নিয়ে ভাববে? কিভাবে সাবলিলভাবে নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যমে বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত হবে? কিভাবে সন্তানকে সুসন্তান ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে? সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশই বা ঘটাবে কিভাবে? পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরো সুন্দর ও অন্যের মতামত গুরুত্ব দেয়াকে অগ্রাধিকার দিতে শিখবে কিভাবে?
অনুপ্রেরণামূলক বই
বইটিতে আছে- সফল হওয়ার চেয়ে সার্থকতা অর্জনের মনোবল তৈরির কথা। মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মানবিকতার বিকাশের কথা। মানুষের উচ্চ-মহৎ-উন্নত জীবন গঠনে পরিবারের ভূমিকা, আধুনিক বাস্তবতার নিরিখে ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ জীবনের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যা আশাবাদী করবে, হতাশাগ্রস্তরাও অনুপ্রেরণা পাবেন।
সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির ম্যানুয়াল
বইটিতে লেখক শান্তিময় পরিবার বিনির্মানের পথ, পারস্পরিক বন্ধনগুলো সুদৃঢ়করণের উপায়, সামাজিক আচরণে করা ভুল সংশোধনের পরামর্শ এবং সমস্যা সমাধান ও সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ থাকা সত্বেও ব্যর্থতা আসার ব্যাপারগুলো ব্যাখা করেছেন। নয়া নয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় ও সমসাময়িক সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। পুরো বইটি যেন পারিবারিক সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির ম্যানুয়াল। লেখক সহজ কথা লিখে বা চটকদার বিষয় নিয়ে লেখালেখি করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করেননি।
সার্থক-অর্থবহ জীবনের সন্ধান
বইটিতে পরিবারের বিভিন্ন দিক ও বিভাগে বিস্তৃত লেখার স্বাদ পাঠক বেশভালোভাবেই পাবেন। বইয়ের প্রচ্ছদটাও খুব অর্থপূর্ণ আর সুন্দর হয়েছে। কিছু কিছু জানা বিষয়ও বইতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো পড়ে নতুন করে গুরুত্বসহ নেবে পাঠক। চারপাশে বিরাজমান থাকলেও সাধারণত কখনো ভাবা হয়নি বা খেয়াল করা হয়নি এমন অনেক জরুরি ও প্রয়োজনীয় বিষয় নতুন ভাবনার খোরাক জাগবে বইটি।
গঠনমূলক বই
বইটি পড়ার পর মনে হবে পরিবার গঠনমূলক বিষয়ে ভালো একটা বই! বইটির বিন্যাস ও এর অন্তর্নিহিত ভাব বক্তব্য উৎসাহিত হওয়ার মতো, আশাবাদী করার মতো। বইয়ের ব্যাখ্যাগুলো খুবই চমৎকার; যা পাঠককে উদ্বুদ্ধ করে, হৃদয়ে গেঁথে যায়। বইটি পাঠকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- ঠিক কি কারণে নেতা কখনোই সফল হতে পার না। একজন নেতার জীবনে সঠিক লক্ষ্য ও সঠিক পরিকল্পনা করার জন্য বইটি পড়া প্রয়োজন।
বই পরিচিতি
পরিবার বইটিতে বলা হয়েছে- পরিবার কিভাবে জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে।সার্থক জীবনের সন্ধান দিতে পারে। টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারে। ভালো মানের ও ভালো মনের সুনাগরিক উপহার দিতে পারে।পরিবার যদি ভালো হয়, ব্যক্তি ভালো হবে, ব্যক্তি ভালো হলে দেশ বা রাষ্ট্র ভালো চলবে।
বইটিতে আছে- একটি অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলন পরিবার থেকেই শুরু করার কথা, পরিবারকে সুস্থ ধারার বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার উর্বর ক্ষেত্র বানানোর কথা, গৃহের প্রশস্ততা-বড়ত্ব-চাকচিক্যের চেয়ে গৃহে থাকা মানুষগুলোর মানবিক মান-মর্যাদা-সুখকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা।পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, বন্ধন হবে সুদৃঢ় ও জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা।
আহ্বান জানানো হয়েছে- পারিবারিক বন্ধন ও পারিবারিক মূল্যবোধকে সবেচেয়ে গুরুত্ব দিন। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের মানসিক দূরত্ব কমান। পরিবারকে সময় দিন, পরিবারের যত্ন নিন। পরিবারের সদস্যদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটান। দুঃসময়ে সাপোর্ট দিন, সান্ত্বনা দিন।
পরিবার শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে- পরিবার কী, পরিবারের প্রকারভেদ, পরিবারের গুরুত্ব, পরিবারের কার্যাবলি, পরিবারহীনতার পরিণতি ও পরিবারের ইতিহাস।
পারিবারিক বন্ধন শীর্ষক দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, মায়ের ভালোবাসা অকৃত্রিম, বোনের মনে প্রীতির শিহরণ, ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আনন্দ, দাদা-দাদী ও নানা-নানী, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষক।
সন্তান লালন-পালন শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- প্যারেন্টিং, সুশিক্ষা, মানবিক গুণাবলি, অপরাধপ্রবণতা, ভুল সংশোধন, সঠিক সামাজিকীকরণ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, শিষ্টাচার, কমনসেন্স, নীতি-নৈতিকতা-চরিত্র ও আব্রাহাম লিংকনের চিঠি।
পারিবারিক ব্যবস্থাপনা শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে- পারিবারিক রুটিন, পারিবারিক বাজেট, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, নেতৃত্বের বিকাশ, বিপদ মোকাবেলা ও ঝুঁকি হ্রাস, সময় ব্যবস্থাপনা, জীবন-যাপন পদ্ধতি, পারিবারিক কাজ, হালাল জীবিকা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, সম্পত্তির ওয়ারিশ ও গৃহকর্ম-গৃহিণী।
নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে- পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতার চর্চা, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যৌতুক, ধর্ষণ, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, সামাজিক সমস্যা, মাদকাসক্তি ও গ্যাং কালচার।
করণীয় শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে রয়েছে- কোয়ালিটি টাইম, টেকসই উন্নয়ন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতা, প্রবীণবান্ধব হওয়া, পরিবারবান্ধব হওয়া, পরিবেশবান্ধব হওয়া, শিশুবান্ধব হওয়া, স্বাস্থ্যবান্ধব হওয়া, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, অপরাধকে না বলা, মূল্যবোধের চর্চা, সমতার চর্চা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক সমস্যার সমাধান।
আদর্শ পরিবার শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে- আদর্শ পরিবারের বৈশিষ্ট, বিপদগ্রস্তকে সহযোগিতা, পরিবার থেকে বৃহত্তর জীবনে এবং ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে জগৎ পরিবর্তনে।
বিবিধ শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে- দুটি চিঠি, এক সিঙ্গেল মাদারের উপলব্ধি, পরিবার সম্পর্কে বারাক ওবামা, প্রাসঙ্গিক চিন্তাধারা ও তথ্যসূত্র।
লেখিকা ইসরাত জাহান: পরিবার ডটনেটের সহকারী সম্পাদক