অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক
দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ কবছর থেকে অনেক বেশি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। নিত্যপণ্য কিনতে যেয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আয় হয়তো বাড়েনি, কারো কারো কিছু বেড়েছে, অনেকের আবার কমেছে।
দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। অনেকে বিদেশে থেকে খালি হাতে ফিরে এসে বেকারের খাতায় যুক্ত হচ্ছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বিদেশ গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে ইউরোপ-আমেরিকা যেতে চেয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছেন অনেকে এসব দিকে নজর দেয়ার কেউ নেই।
দ্রব্যমূল্য কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা মোটা দাগে বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উঠে আসে।
১. মধ্যসত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম।
২. পরিবহন ব্যয় মারাত্মক বেশি, কারণ পথে পথে চাঁদাবাজি।
৩. পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেশি।
৪. সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ওপর বড় অংকের চাঁদাবাজি
৫. মিল মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা
৬. যথাযথ তদারকির অভাব
৭. পণ্যের আমদানি ব্যয় বেশি
৮. মারাত্মক আয় বৈষম্যের কারণে এক শ্রেণির মানুষের অধিক ার্থের মালিক হওয়া।
৯. বাজার ব্যবস্থার অনিয়ম
১০.অতিরিক্ত ভ্যাট ও ট্যাক্সের চাপ ইত্যাদি।
এবার এক এক করে কিছু বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রথমত, ২/১টা পণ্য বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে কেন অযথা দ্রব্যমূল্য বেশি। দেশে উৎপাদিত একটি নিত্য সবজিপণ্য আলু। এর যৌক্তিক মূল্য কত হওয়া উচিত তা বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা করছি।
১. মৌসুমে কৃষক আলুর মূল্য কেজিতে পাচ্ছে ১২-১৫ টাকা, যা গড়ে ১৩.৫০ টাকা
২. কোল্ড সেন্টার ভাড়া, বস্তা, কুলি খরচ ইত্যাদি ৮-১০ টাকা, গড়ে ৯.০০ টাকা
৩. মুন্সিগঞ্জ কোল্ড সেন্টার থেকে যেকোনো জায়গায় গাড়ি ভাড়া
কেজি প্রতি ২-৩ টাকা, গড়ে ২.৫০ টাকা
৪. আড়তদার, লেভার ইত্যাদি খরচ ৩-৪ টাকা, গড়ে ৩.৫০ টাকা
৫. খুচরা বিক্রেতার লাভ কেজিপ্রতি খরচ ৩-৪ টাকা, গড়ে ৩.৫০ টাকা
১ কেজি আলুর বাজার মূল্য ৩২ টাকা।
তাহলে ১ কেজি আলুর বাজার মূল্য খুচরা পর্যায়ে ৩২-৩৫ টাকা বা সর্বোচ্চ ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেই আলুর কেজি মূল্য ৬০-৬৫ টাকা হওয়ার অর্থ হলো ভোক্তার ওপর বড় ধরনের জুলুম। ৩৫-৪০ টাকায় আলু কিনতে আশা করি সাধারণ ভোক্তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।এভাবে প্রতিটি পণ্য উৎপাদন বা আমদানিতে খুচরা পর্যায়ে যদি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই দ্রব্যমূল্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে কিছু ফটোসেশন, কিছু বক্তব্য, একে অন্যের ওপর দোষারোপ করলে আর অফিসে বসে চেষ্টা করলে, মাঠে-ময়দানে বা জায়গা মতো হাত না দিলে ফলাফল শূণ্যই হবে; কাজের কাজ কিছু হবে না।
এবার উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করছি।
১. মধ্যসত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম রয়েছে। পণ্য উৎপাদন কালে কৃষকদেরকে অগ্রিম দাঁদন দিয়ে বা কৃষক থেকে স্বল্প দামে একত্রে মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা ফড়িয়ারা কিনে ফেলে। ফলে কৃষক তেমন মুল্য পায় না কিন্তু ফড়িয়ারা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে- এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সিন্ডিকেট এরা কারা? এরা হলো সরকারের বা প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় মিল মালিক বা গুদাম মালিক বা আমদানিকারক। তারাই প্রতিদিন অধিক মুনাফা করতে বেশি মুল্যে নিত্যপণ্য বাজারে ছাড়ে। ফলে আড়ৎদারগণের কিছুই করার থাকে না।
মূলত আড়তদার বা খুচরা ব্যবসায়ীগণ পণ্যমূল্য বাড়ানোর বা কমানোর ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না।মিলমালিক, মধ্যস্বত্ত্বভোগি, আমদানিকারকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরাই দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিদিন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হেছকা হেছকি করলে কোনো লাভ হচ্ছে না, হবেও না।
২. পরিবহন ব্যয় মারাত্মক বেশি, কারণ পথে পথে চাঁদাবাজ।একজন পরিবহন ড্রাইভার বলেন যে, বগুড়া-নওগা থেকে এক গাড়ি মাল ঢাকা বা চট্টগ্রামে পৌঁছাতে ২২ জায়গায় চাঁদা দেয়া লাগে। এই চাঁদাবাজ কারা? এরা হয় প্রশাসনের লোক নতুবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী। অবশ্যই এসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যখন যে দল সরকারে থাকে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট, এক্ষেত্রে বিরোধীদের সংখ্যা খুবই কম। এই চাঁদাবাজদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
মিডিয়াতে আলোচনা হয় যে, প্রতিদিন কাওরানবাজারে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা ওঠে। এই চাঁদার ভাগ কারা পায়? ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন কমিটির সদস্য হবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করতে হয়।সারাদেশের মার্কেটগুলোতেই এ অবস্থা। এসব চাঁদাবাজি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে গোপনীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। ড্রাইভার, হেল্পার, পরিবহন মালিকদের থেকে গোপনে তথ্য নেয়া যায়।
১০/২০ জনকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনলে অবশ্যই চাঁদাবাজ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে ১/২ বার করে চুপ হয়ে গেলে চলবে না, এটি নিয়মিত ও রুটিন কাজ হিসেবে সব সময় চালু রাখতে হবে। তাহলে চাঁদাবাজেরা আর এপথে যেতে রোভ করবে না। বিনাপুঁজিতে এভাবে অবৈধ সিস্টেম গড়ে যারা লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেছেএরাতো জাতীয় দুশমন। চাঁদাবাজদেরকে মন্ত্রী-এমপি যারাই প্রশ্রয় দিচ্ছে তারাও হয়তো এই চাঁদার ভাগ পায়।তা না হলে চাঁদাবাজদের এতো সাহস হবার কথা নয়।এসব অবৈধ সিস্টেম ও সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
৩. পণ্যের উৎপাদন ব্যয বেশি। মিডিয়াতে আলোচনা হয় একজন মুরগীর খামারী বলেন যে, ১টি বাচ্চা কিনতে হয় ৭০-৮০ টাকা বা তারও বেশি দরে।পণ্য উৎপাদনে সার, বীজ, ঔষধের অত্যাধিক মূল্য।ঘোষিত মূল্যের চেয়েও কৃষকদের বেশি দামে কিনতে হয়। পশুখাদ্যের মূল্য অত্যাধিক, এসব দিকেও নজর দিতে হবে।ফসল কাটার মৌসুমে শ্রমিক পাওয়া যায় না। ধান বা অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে অধিক খরচ হয়। অথচ দাঁদন বা ফড়িয়াদের দৌরাত্মের কারণে ফসলের উপযুক্ত মূল্য পায় না কৃষক। এসব দিকে স্বস্ব বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তগণকে নজর দিতে হবে।তাহলে উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে।
৪. সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ওপর বড় অংকের চাঁদাবাজি হয়। মহল্লার মুদি দোকান থেকে শুরু করে আড়তদার, পাইকার, আমদানীকারক মিল মালিক অর্থাৎ ছোট থেকে বড় সব ব্যবসায়ীগণকে কম বেশি চাঁদা বিভিন্নভাবে প্রদান করতে হয়। এসব চাঁদা না দিলে মহল্লায় বা ব্যবসায় টিকে থাকা যায় না।এ চাঁদা ও স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, এককালীন প্রদান করতে হয়। এসব অঘোষিত ব্যয় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া ২০/৩০ জনকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে পারলে, দ্রব্যমূল্য অবশ্যই কমতে বাধ্য। সরকারি পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির কাগজ নবায়ন, আর্থিকপ্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ গ্রহণ, বিএসটিআই অনুমোদন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বীমা সবক্ষেত্রেই দুর্নীতি, ঘুষ, বাণিজ্য- এসব কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।এসব নিয়মিত কাজ। ৫/১০/২০ বৎসর পর ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিচার হবে, আদৌ হবে কিনা জানা যায় না। তাহলে তো চলবে না। চোর চুরি করে চলে যাওয়ার পরে আপনি সজাগ হয়ে লাভ কতটুকু।
৫. মিল মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা দেখা যায়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে প্রতিনিয়ত দেশে পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুদ, আমদানির পরিমাণ জানা বড় বড় ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটদের জন্য অত্যন্ত সহজ। ফলে তারা সুযোগ বুঝে জনসাধারণের অবস্থা চিন্তা না করে পণ্যমুল্য অত্যাধিক বাড়তে দেয়।এ সুযোগ পর্যায়ক্রমে পাইকারী, আড়তদার, খুচরা বিক্রেতা সবাই গ্রহণ করে।এক্ষেত্রে নৈতিকতার বালাই থাকে না।
গলাকাটা ব্যবসা অবশ্যই নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয়।সরকার বাহাদুরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিয়মিত সমন্বয় ও তদারকির মাধ্যমে অবশ্যই মিল বা আমদানী বা পাইকারী পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। যেসব প্যাকেটজাত পণ্যের গায়ে এমআরপি ঠিক করা থাকে, সেগুলোর মূল্য যখন তখন বৃদ্ধি করা কঠিন। সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করে বস্তার ওপর প্রাইসট্যাগ বা সিল মেরে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার বা বিভাগীয় পর্যায়ে দক্ষ জনবলও বৃদ্ধি করা জরুরি বৈ কি।
সকল পর্যায়ে স্বদিচ্ছাটাও জরুরি। আইন যেমন কঠোর থাকবে, তার যথাযথ প্রয়োগও থাকা চাই। সৎ ব্যবসায়ীগণ যদি সম্মানিত ও পুরস্কৃত হন তবেই সৎ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রেও যেন দু’নম্বরী পন্থা অবলম্বন করা না হয়।
৬. যথাযথ তদারকির অভাব রয়েছে। তদারকি বেশি বেশি হতে হবে। তবে গোড়ায়, আগায় বেশি দরকার হবে না। সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। অনেক পণ্য আছে উৎপাদন খরচের তুলনায় আমদানি শ্রেয়। সেক্ষেত্রে অযথা উৎপাদন এর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব না দেয়া ভালো। যেমন আমাদের দেশে গরু বেশি উৎপাদন এর চেয়ে পার্শ্ববর্তী দেম তেকে বৈধ পথে আমদানি করা আমাদের জন্য বেশি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
কলিকাতায় যেখানে গরুর গোশতের মুল্য ২৬০-২৭০ টাকা, সেখানে অনায়াসে ৪৫০-৫০০ টাকায় গরুর গোশত খাওয়া আমাদের দেশে সম্ভব হবে। আমাদের দেশের চাহিদার তুলনায় গো খাদ্যের যোগান দেয়া কঠিন হয়ে যায়, ফলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যায়।
ভোক্তা অধিকারসেহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের যথাযথ তদারকি বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। শুধু কিছু মিডিয়া কভারেজ করলে চলবে না। মূলে হাত দিতে হবে।এটা সরকারের উপর পর্যায়ের সিদ্ধান্ত দরকার। শুধু ভোক্তা অধিকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না।
৭. নিত্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় বাজারে বিক্রয়মুলণ্য বেশি পড়ে। নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক খুবই নগণ্য করতে হবে। সৌখিন পণ্যের, গাড়িসহ দামি সিগারেট ইত্যাদির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়ে চাল, পেয়াজ, তেল ইত্যাদির আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিতে হবে।ডলারের মূল্যও সহনশীল রাখতে হবে। পচনশীলপণ্য বন্দরে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যেক বন্দরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বড় বড় হিমাগার বানিয়ে ট্রাকসহ হিমাগারে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে পচনশীল পণ্যের পচে যাওয়ার আশংকা কম থাকবে। রাজধানীসহ বড় বড় শহরের বাইপাস সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পচনশীল পণ্যের ট্রাক পরিবহন মসৃণ করতে হবে।রাজধানীসহ বড় বড় শহরে দিনের সকাল ও বিকাল পিকটাইম ছাড়া দিনে ৩/৪ ঘন্টা ট্রাক প্রবেশের অনুমতির ব্যবস্থা করা যায় কিনা বিবেচনার দাবি রাখে।তাহলে ডাকা বা বড় শহরের প্রবেশ মুখে ট্রাকগুলোর অপেক্ষা করতে হবে না। এতে পচনশীল মাল পচনের হাত থেকে বেহাই পাবে।অফিস টাইমের ২ ঘন্টা আগ পর্যন্ত ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
৮. মারাত্মক আয় বৈষম্যের কারণে এক শ্রেণির মানুষ অধিক অর্থের মালিক হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে বেতনের ২০টি গ্রেড, এটি কোনো অবস্থায়ই ১০টির বেশি হওয়া ঠিক নয়। অন্যদিকে নিম্নগ্রেড ও উচ্চতম গ্রেডের বেতন পার্থক্য অনেক অনেক বেশি। সম্মানিত বিবেচিত হচ্ছেন অবৈধ পণ্যের ব্যবসায়ীরাও। দুর্নীতিগ্রস্ত নিম্নপদস্থদের অনেকের আয়ও অনেক বেশি।
এদের সংখ্যা ৫-১০%, যাদের এতো পরিমাণ অর্থ যে তারা বাজারে গিয়ে ভালো মাছ, মুরগী, গোশত, তরিতরকারি বেপারীদের কাছ থেকে যাচাই বাছাই না করে গাড়ি ভর্তি করে নেয়। ফলে বেপারীরা আর দাম কমাতে চায় না। এটা নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সকল পণ্য এমন কি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, একারণেও সাধারণ মানুষকে একটু হলেও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হতে হয়।
যখন বাজারে পণ্যের কিছুটা স্বল্পতা থাকে তখন তো আর কথাই থাকে না। বেপারিগণ সাধারণ মানুষের কথাই শুনতে চায় না। একটু দাম কমানোর কথা বললেই ভেটকি দিয়ে উঠেন এবং অপমানজনক কথা শুনিয়ে দেন।কয়মাসে বাজারে এসেছেন? কিনেন বা খান কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি।
৯. বাজার ব্যবস্থার তীব্র অনিয়মের কারণে ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন কত, চাহিদা কত, মজুদ কত আছে ইত্যাদি সঠিক তথ্য থাকে না। সরকারি হিসেবে অনেক সময় গড়মিল থাকে বা কাল্পনিক হিসাব দেয়া হয়, যা মজুতদার বা আমমদানিকারকরা বুঝে ফেলে। ফলে মজুদ, উৎপাদন ও আমদানি কিছুটা ঘাটতি হলেই বড় বড় মিলার, আড়ৎদার বা ব্যবসায়ীগণ গোপনে মজুত করে বাজারে ঘাটতি ফেলে রাতারাতি দ্রব্যমুল্য অসম্ভব বাড়িয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে সরকারি টিসিবি বা সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণে বাজারে পণ্য সরবরাহের ঘাটতির সুযোগে মূল্য অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়।ফলে কম দামে ক্রয় করা পণ্যও একলাফে বাড়িয়ে দেয়া হয়।জানা-অজানা কারণে এক্ষেত্রে যথেষ্ট মনিটরিং হয় না বিধায় ক্রেতা সাধারণ অধিক মূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হয়।
১০. অতিরিক্ত ভ্যাট ট্যাক্স ধার্য করার কারণে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে দোকান মালিক পর্যন্ত কয়েক ধাপে ভ্যাট আরোপ করা হয়।১৫% পর্যন্ত ভ্যাট আরোপ করা হয় যা অত্যন্ত বেশি। অন্যদিকে নীট মুনাফা বা আয়ের উপর ৩৮-৪০% আয়কর ধার্য করা হয় যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি।ফলে অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে অধিকাংশই ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়।
সরকারের ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। আয়কর যদি ১০ থেকে ১৫% এবং ভ্যাট সর্বোচ্চ ৫% নির্ধারণ করা হয় তবে ভ্যাট ও ট্যাক্স দাতার সংখ্যা, ১৫/২০ গুন বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে উদ্যোমী হবে। ফাঁকিবাজির চিন্তা কমে যাবে। বড় বড় শিল্প গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছলে বলে কৌশলে ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করে না।
সরকার ও মামলা মোকদ্দমা করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ও যথাযথ ফল আনতে সক্ষম হয় না। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারাই ঘুষ খেয়ে দুই নম্বরী পথ দেখিয়ে দেন। ন্যায্যভাবে হিসাব করলে কারো ভ্যাট হবে এক লক্ষ টাকা, তাকে শুনানো হয় দেড় লক্ষ টাকা। ফলে শিখানো হয় আমাকে ২০ টাকা দিবেন, আপনার ভ্যাট বা ট্যাক্স ৩০/৪০ হাজার টাকা করে দিবো। ফলে প্রকারান্তরে সরকারই বঞ্চিত হলো।
খোঁজ নিলে জানা যাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গেছে। তার থেকে ভ্যাট সর্বোচ্চ ৫% এবং আয়কর সর্বোচ্চ ১৫% করা হলে এত মামলা মোকদ্দমা ছাড়াই রাজস্ব আয় বর্তমানের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস, মানুষ ও এত ফাঁকিবাজি করতে চাইবে না। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ২ নম্বর রাজস্ব কর্মকর্তাগণ। সকল ক্ষেত্রে এ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে; বিদ্যুৎ, জ্বালানী ইত্যাদি ক্ষেত্রে। উপরেল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারলে দ্রব্যমূল্য ৩০/৪০ শতাংশ অনায়াসে কমে যাবে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, হলিফ্লাওয়ার মডেল কলেজ, ঢাকা