আনিসুর রহমান এরশাদ
আদর আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ছোট বোনের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্নেহময়ী নারীর মুখচ্ছবি, আহ্লাদ-আদর-ভালোবাসার স্পন্দন আর আবদারের প্রতিচ্ছবি। চঞ্চলতা আর মিষ্টি দুষ্টমিতে সে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। বোনের জন্য ভাইয়ের ত্যাগ কিংবা ভাইয়ের জন্য বোনের মায়া-মমতা নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা জানা আছে অনেকের। কথায় আছে ভাইয়ের জন্য বোনের মন কাঁদে সারাক্ষণ, ভাইয়ের মনে জাগে শুধু স্নেহের শিহরণ। আর জন্মদিনে বড় ভাই-বোনের উপহার পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়ে যান ছোটরা।
অদ্ভুত আবদার
ছোটবেলায় অদ্ভুত অনেক জিনিস আমার মাথায় ঘুর ঘুর করতো। আর একরত্তি ছোটভাই এটার মানে কি, ওটা কেনো হলো-জিজ্ঞেস করতো। ভাইয়ার কাছে ছড়া-গল্প-কবিতা শুনার আবদার করতো। হরেক রকমের প্রশ্ন করতো। পাখির গায়ে ঢিল ছুড়লে পাখিরা ব্যথা পায় কি-না? শীতে বিড়ালটার ঠাণ্ডা লাগে কী? সূর্য পশ্চিম দিকে ডুবে কেন? পাখি আকাশে উড়তে পারে আমরা কেন পারি না? নানির চুল কেন সাদা? তুমিও কি ছোট ছিলে? – ইত্যাদি। চান্স পেলেই কাঁধে চড়া, ইচ্ছে হলেই কোলে উঠা–আর নরম নরম পিচ্চি দুহাতে চুল খামচে ধরে হুকুম করা—চালাও ঘোড়া। আর ছোটবোনতো ভয় পেয়ে আমাকে বেশ মানতো, তবে অভিমানে মুখ ভার করে গাল দুটো ফুলাতো।
আদি ও অকৃত্রিম সম্পর্ক
ভাই-বোনের আদি ও অকৃত্রিম সম্পর্কের শুরু জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই, তাই হয়ে উঠুন তাদের খুব ভালো একজন বন্ধু। মনের ভেতরের খবর, ভালো লাগা-মন্দ লাগা আপন ভাই-বোন সবচেয়ে ভালো জানে। সারাটা দিন ছোট্ট দুই ভাই-বোন মারামারি করছে, একে অন্যকে ভেঙচিয়ে রাগাচ্ছে, শখের খেলার পুতুল ভেঙে দিচ্ছে অথবা খেলার বলটা ঘরের জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, মায়ের কাছে নালিশ করছে, মতের অমিল হলেই চিল্লাচিল্লি করছে, অপছন্দের কিছু ঘটলেই কান্নাকাটি করছে। কিন্তু খাওয়ার সময় একসাথে বসেই খাচ্ছে, শোবার ঘরে একসাথেই ঘুমুচ্ছে, একসাথেই টিভিতে মুভি দেখছে, ভূতের গল্প শুনে প্রবল আতংকে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে, যেকোনো বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসছে।
শিশুতোষ আবহ
ভাই-বোনের সংস্পর্শ মানে পরিণত বয়সেও শিশুতোষ আবহ পাওয়া, গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বসে না থেকে কিছুটা সময়ের জন্য শিশুর মতো হয়ে যাওয়া, জীবনের জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে হাসি-আনন্দে থাকা, মজার কোন কথায় হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খাওয়া। অনেক মধুর অনেক মজার, অনেক ভালোবাসার এবং খুনসুটির সম্পর্কের কারণে ভাইবোন একজন আরেকজনের আয়নার মতো, জন্মের পর থেকেই তাদের সাথে বন্ধুত্ব, সুখ-দুঃখ-উত্থান-পতনের প্রত্যক্ষদর্শী।
রক্তের সম্পর্ক
পরিবারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে, দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসলে পরস্পরের সান্নিধ্য বেশি দরকার হয়। তাই সুখের সময়কে আরো আনন্দময় করতে, ভিতরের হতাশা দূর করতে, হাহাকার কমাতে, না বলা কথাগুলো বলতে ভাই-বোনকে বেছে নিন। দেখবেন তারা আপনাকে দেখলেই অনেক কিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবে, তাদের মুখের ভাবভঙ্গি হবে আপনার মনেরই প্রতিচ্ছবি। স্বভাবজাত কোমলতা, সবকিছু দ্রুত বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা আর রক্তের সম্পর্কের কারণে যথাযথ অনুভব করার মাধ্যমে ভাই-বোনই হতে পারে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
কোমলতা-কঠোরতার সংমিশ্রণ
যেকোন পরিস্থিতিতে ভাইবোনের সম্পর্ক কোমলতা-কঠোরতার অপূর্ব সংমিশ্রণ, অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকা, প্রচন্ড রাগের কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যাগি নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসে কিংবা আইসক্রিম কিনে নিয়ে এসে অবাক করে দেয়া, মধুর চাইতেও মধুর। ভাই-বোনের আদর-ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক চিরকাল বাঁচিয়ে রাখুন। সহোদর ভাই-বোন হচ্ছে অতি আপনজন ঘনিষ্ঠ মহল সেলায়ে রেহমীর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ এক-মাতৃগর্ভজাত সন্তান-একই মায়ের কোলে যাদের অবস্থান ছিল। একটা খেলার পুতুল ভাঙলে, জানালা দিয়ে একটা বল ফেললে সম্পর্ক যাতে ভেঙে না যায়। শর্তহীন-নিখাঁদ ভালোবাসা টিকে থাকুক সবসময়, সবখানে।
বড় আদরের, বড় শ্রদ্ধার
ক্লাস থেকে ফেরার পথে চকোলেট–আইসক্রিম আনতে হয়, পকেট হাতড়ায়ে না পেলে রক্ষা নেই, ছোটভাইকে সামলানো খুব মুশকিলের। ধমকে ভীত আবার কিছু বললে লাজুক লাজুক ভঙ্গি। অন্যদিকে সংসার করতে পারবে কি পারবে না সাত-পাঁচ না ভেবেই এতোটুকুন ছোট্টবোনকে বিয়ের সিদ্ধান্তে ভাইয়ের চমকে উঠা! পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেলে যে মেয়ে কেঁদেকেটে একাকার হয়, নায় না খায় না, সেই মেয়েই বধুর বেশে শ্বশুরবাড়ি যায়!
পড়াশুনা করতে না দেয়ায় ভাইকে বলে—আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, আমি আর পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, তোমরা কেউ নেই, আমার কিছু ভাল্লাগে না! ভাই কিছু করতে পারে না, কোনো কাজে তারও মন বসে না, বোনের কথা মনে হলেই বুকের বা দিকে চিনচিনে ব্যথাটা মোচড় দিয়ে ওঠে। প্রজাপতির মতো চঞ্চল মেয়েটার কষ্ট ভাবতেই ভাইয়ের মনটা দুঃখে ভরে ওঠে, চোখ দুটো ছলছল করে, অশ্রুসজল ভাই কাঁদতে থাকে আর গান শুনতে থাকে- ‘সে আমার ছোটবোন, বড় আদরের ছোটবোন’।
ভালোবাসার স্মৃতি ও আনন্দ আড্ডা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে মানিকনগরে চলে আসার পর রোজিনা আর আশিকসহ একসাথে কাটিয়েছিলাম। সেখানে রয়েছে ছোটভাই-বোনের সাথে আনন্দ-বেদনার ভালোবাসার অনেক স্মৃতি, আনন্দ আড্ডায় জমজমাট থাকত বাসা, মাতিয়ে রাখত আদরের ছোট বোনটি। অর্থের অভাব থাকলেও শ্রদ্ধা ভালোবাসার অভাব ছিল না।
বাসায় সে আমাদের সবকিছু খেয়াল রাখত। মানুষ হিসেবে সে অসাধারণ, আশপাশের মানুষের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল, অনেক বেশি দায়িত্ব নেয়, অনেক পরিশ্রম করে। আমার বড় এক আপু অকাল প্রয়াত, তাকে দেখারই সৌভাগ্য হয়নি। ছোটবোনকেও শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়েছে। তারপরও ভাইবোনের মধুর সম্পর্ককে নতুন কোনো সম্পর্ক এতটুকু ম্লান করতে পারেনি।
আপন মানুষ, কাছের মানুষ
জীবনে চলার পথে দেখেছি- বড় ভাই-বোনের চলন, বলন ছোটদেরকে আকর্ষণ করে, প্রভাবিত করে। জীবনের সব চেয়ে খারাপ সময়ে এগিয়ে আসেন তারা; অর্থ-বুদ্ধি আর পরামর্শ দেন। অনেক ছোট- ভাই-বোনের কাছে বড় ভাই-বোন আদর্শ মানুষ, সবচেয়ে আপন মানুষ। ভাই-বোনের কেউ একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে, মানসিকভাবে ভালো না থাকলে, সুস্থ না থাকলে; স্নেহ-ভালোবাসার কারণেই আরেকজনও কষ্ট অনুভব করে। কথায় আছে, ‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন।’
স্বপ্ন দেখা, ইচ্ছা পূরণ
পরম স্নেহ- মমতায় লালন-পালন, নিরলস সেবা দান, কোনো ক্লান্তি ও বিরক্তিহীন যত্ন দিয়ে মানবতাকে উচুঁতে তুলে ধরেন। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের সহমর্মিতা, মানবিক মান্যতা, শ্রদ্ধা, সম্মান, ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির হিসেব না করার কারণেই এখনো পরিবার এতো সুন্দর। কখনো চকবার আইসক্রিম আনার আপদার, কখনো তুমুল ঝগড়া, আড়ি কাটা; আবার অল্প সময়ের মধ্যেই ভাব হয়ে যায়!
বড়রা ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে, নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো ছোট ভাই-বোনদের দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করে৷ ভাই-বোনের প্রতি ভালবাসার এই সম্পর্ক সম্পর্ক মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষের হৃদয়ের গভীরে গেঁথে দেন ৷ বেঁচে থাকুক এই পবিত্র ভালোবাসাগুলো!
বড় ভাই-বোন, ছোট ভাই-বোন
অন্য মানুষের তুলনায় ছোট ভাইয়ের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকায় বড় ভাইসুলভ আচরণ বা দাদাগিরি প্রকাশ পায়। বড় ভাইয়েরা রক্ষাকর্তা হিসেবে ভালো, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে, ছোটদের প্রতি একটু বেশি আশার কারণেই মাঝে মাঝে তীব্রভাবে ভর্ৎসনাও করেন, সর্বদা চান ছোটরা যেন সঠিক পথে চালিত হয়। বড় ভাই-বোন সর্বদা ছোট ভাই-বোনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। বড় ভাই-বোন ছোট ভাই-বোনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
আশিক একটু বড় হলে আমি মজা করে ডাকতাম ‘আশিক-প্রিয়া’। আর ছোটবোনের সাথে মারামারি, অভিমান, বন্ধুত্ব- সবই ছিল। পিঠাপিঠি হওয়ায় প্রতিনিয়ত আরেকজনের কিভাবে দোষ বের করা যায়, কিভাবে ঝগড়া করা যায়, কিভাবে মায়ের বকুনি খাওয়ানো যায়, কিভাবে পঁচানো যায় সেই চেষ্টায় থাকা হতো। কিছু দুষ্টুমি, কিছু ঝগড়া, কিছু মজার স্মৃতি সবমিলিয়ে চলছিল ছোটবেলার দিনগুলো।
ভালোলাগা ও ভালোবাসা
ভাই-বোন তো ভাই-বোন। ‘ভাই-বোন’-শব্দের মধ্যে আছে জীবনের নানা স্মৃতি আর ভালো লাগা-মন্দ লাগার হিসেব-নিকেশ। বোন বললো ভাইয়া আসার সময় এটা নিয়ে এসো, বললাম পারব না। অথচ আসার সময় ঠিকই নিয়ে এলাম। বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে খেতে গেলাম, হয় পুরো প্যাকেট না হয় কিছু অংশ বাসায় নিয়ে আসলাম।
দেখা গেলো বোনও ফেরার পথে কিছু নিয়ে এসেছে কিংবা রান্না করে অপেক্ষা করছে। ভাই-বোন প্রায়-ই সুযোগ পেলেই এই সেই নিয়ে গল্পে মেতে উঠে, সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয় সারাদিন পরে ভাইয়া যখন রাতে বাসায় ফেরে। ভাই-বোনেরা কখনো কখনো ঝগড়া-তর্ক, কখনো সিরিয়াস বিষয় কখনো মামুলী বিষয় আবার কখনোবা আষাঢ়ে গল্পেও মেতে উঠে।
পিঠাপিঠি ভাই-বোন
পিঠাপিঠি ভাই-বোন একই সাথে বড় হলে ছেলেবেলা থেকেই একে অপরের সাথে ঝগড়া করে আবার ভাবও অনেক। কখনোই একজন অন্য জনকে ছেড়ে কোনো কিছু করতে চায় না। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হলে ভাই অথবা বোনকে বিয়ে করতে হয়। বিয়ের পরেই ভালোবাসায় ভরপুর সম্পর্কের মধ্যে অনেক দূরত্ব, সম্পর্কের পরিবর্তন দেখা যায়।
বোন বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে তাই খুব ব্যস্ত বাবার বাড়িতে আসার সময় নেই, যে কোন দায়িত্ব পালনে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। অথবা ভাইটি বিয়ে করে একই বাড়িতে কিংবা আলাদা থাকার পরেও সে আর আগের মতন নেই, পরিবারে কোনো সমস্যা হলে বা বাবা-মায়ের কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আসে না। তার নিজের সাংসারিক জীবন ও স্ত্রী নিয়ে সেও ব্যস্ত। এতে করে কষ্ট পায় পরিবারের সব কয়টি মানুষ।
বিয়ের পরে সময়দান
বিয়ের পরে নারী ও পুরুষের জীবনের নতুন একটা দিক খুলে যায় ঠিকই তাই বলে পরিবার বিশেষ করে বাবা-মাকে অবহেলা করা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ির পরিবারের সকলকে একসাথে মেনটেন করা খুব সহজ কাজ নয়। ভাই -বোনকে কখনো নিজেদের থেকে আলাদা করবেন না। ভাই-বোনের সাথে কথা বলুন, আগে নিজেরা যেভাবে গল্প করতেন তেমনই ফোনে বোনের সাথে মাঝে মধ্যে কিংবা বাসাতেই ভাই-ভাবির সাথে আড্ডা দিন।
মাঝে মধ্যেই হুটহাট করে ভাই-বোনেরা মিলে বাহিরে কোথাও ঘুরে আসুন। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে একে অপরের সাথে শেয়ার করুন, একসাথে সমাধান করার চেষ্টা করুন, কখনোই নিজেরদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে দেবেন না। কারণ ভাই-বোনেরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে। মাঝে মধ্যে কোন অকেশন ছাড়াই বোনের শ্বশুরবাড়ি ঘুরতে চলে যান বা ভাই-ভাবির জন্য এমন কিছু করুন যাতে তারা খুশি হয়। কোন ছুটির দিনে পরিবারের সকলে একত্র হন, অনেক গল্প করুন বাবা-মা, ভাই-বোনকে সময় দিন।
দায়িত্ব পালন ও ত্যাগের মানসিকতা
আমাদের কাছে অনেক কিছুই তুচ্ছ মনে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে যা তুচ্ছ, তা হয়তো আরেকটা মানুষের কাছে সবকিছু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে ভালোবাসার। হয়তো আমি কাউকে পছন্দ করি না, সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। তার ভালোবাসার মর্যাদা দেয়া আমার দায়িত্ব নয়, কর্তব্যও নয়, সুন্দর মানসিকতার পরিচয়। ভালোবাসার জন্যই মানুষ বেঁচে থাকে, ভালোবাসা আছে বলেই মানবসভ্যতা এখনো জেগে আছে। ।
ভালোবাসাকে যেন আমরা কখনো তুচ্ছ মনে না করি। হোক না খুব তুচ্ছ একটা মানুষের তুচ্ছ একটা আবদার, তবু শুধু তার ভালোবাসার মর্যাদা দেয়ার জন্য হলেও যেন সব কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা তা রক্ষা করি। পরিবারে বড়ভাই বা বোনের দায়িত্বই হচ্ছে ছোটভাই/বোনদের একমাত্র বন্ধু হওয়া, খোঁজ খবর নেয়া, সময় ব্যয় করা। যতই ব্যস্ত থাকুন, খোঁজ নিন, খেলুন, মুভি দেখুন, বই পড়ুন এবং আনন্দে কিছু সময় কাটান, তাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনুন, আরো বলতে উৎসাহ দিন, তারপর সেটা খুব সহজে সমাধান করুন।
সুদৃঢ় বন্ধন ও উপহার দেয়া
ভাই-বোন বেশি ছোট হলে তার উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা লাগে। ছোট ভাই বোনের কিছুক্ষণের জন্য দেখাশোনা করলে আপনিও তাদের কাছে পছন্দের হয়ে উঠবেন। ছোট ভাই-বোনের প্রতি দায়িত্বগুলো আলাদা করে বুঝে নিন, মানিয়ে নিন। আপনিই তাদের জন্য কিছু করুন এবং তাদেরকেও আপনার জন্য কিছু করতে দিন, এতে বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। শিশুরা বড় কাউকে কিছু উপহার দিতে, বা কোন কাজে নিজের ইচ্ছায় সাহায্য করতে পছন্দ করে।
আপনার সাথে আপনার ভাই বোন এর তুলনা করলে তারা হতাশ হয়ে পড়তে পারে। তাদেরকে যত বেশি সম্ভব উৎসাহ দিন, যাতে তারা যেটা ভালো পারে সেটাতে দক্ষতা নষ্ট না হয়। তাদের সামনে উত্তেজিত হবেন না, রাগ দেখাবেন না। একসঙ্গে বসে আনন্দ করুন, গল্প করুন, হাতে হাত ধরে পথ চলুন, খেলনা নিয়ে খেলুন। চিরন্তন ভালবাসার অন্তরঙ্গ-প্রাণবন্ত হাসি, নিঃস্বার্থ একবুক অনন্ত ভালোবাসার প্রকাশ ঘটান।
অটুট সম্পর্ক অনিন্দ্যসুন্দর
ভাই-বোনের মধ্যে ছোটরা বড় ভাই-বোনের কোলে-পিঠে চড়ে বড় হয়। বড় ভাই-বোনের সাথে ঝগড়া বা মারামারি যাই হোক না কেন, বাবা-মায়ের বকা খেতে হয় বড় ভাই বা বোনকে। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে বড় ভাই-বোনের ছোট হয়ে যাওয়া পোশাক পরার মধ্যেও ছোটদের একটা আনন্দ থাকে। ছোট ভাই বা বোনেরা অনেক চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে পারে বলে তাদের মধ্যে রসবোধের পরিমাণ বেশি হয়।
বাড়ির সবচেয়ে ছোট হওয়ার সুবাদে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয় সেই শিক্ষা ছোটবেলাতেই পান ছোটরা। ভাই-বোনের মধ্যেকার অনিন্দ্যসুন্দর সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকুক, মঙ্গল কামনায় আকুতি থাকুক, সাফল্য-দীর্ঘায়ু লাভের জন্য প্রার্থনা করুক। ভাই-বোনের সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক, অটুট থাকুক।