সঠিক যত্নেই সুস্থ থাকে শিশু। পরিপূর্ণ সুস্থ শিশু- শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবেও সুস্থ। যার শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, আবেগীয় বিকাশ ও ভাষাগত বিকাশ স্বাভাবিক। তাই শিশুকে দিতে হবে- সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন সৃজনশীল খেলনা, শিল্পচর্চার সুযোগ, সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ, উপযোগী শিক্ষা, সঠিক যত্ম ও প্রতিপালন।
শিশুর থাকতে হবে- সমস্যার সমাধানের শিক্ষা, ভাবার ও চিন্তা করার সক্ষমতা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা। শিশুর পরিচয় হবে- সংগীতের সাথে, কবিতার সাথে, গল্পের সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে. স্রষ্টার সাথে। শিশুর থাকবে- মনের সুপ্ত ভাবনার বিকাশের সুযোগ, শিক্ষামূলক ও গল্পের বই পড়ার অভ্যাস।
শিশুর যাতে বাড়ে- মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা, নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস, শারীরিক খেলাধুলার সুযোগ। বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে- ক্রমান্বয়ে দক্ষ হয়ে ওঠাই পরিপূর্ণ বিকাশ। বিকাশ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, গুণগত পরিবর্তন। শিশুর বিকাশে বা যত্নে ব্যয় একটা বিনিয়োগ। শিশুর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করুন।
শিশুর অধিকারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত, জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার, ভূপৃষ্ঠে নিষ্পাপ মানুষ। তাই শিশুদের অধিকার রক্ষায়- আগ্রহী মানুষদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এক্ষত্রে ভূমিকা রয়েছে- শিক্ষকের, বাবা-মায়ের, বিচার বিভাগের, সরকারের, নাগরিক সমাজের, গণমাধ্যমের। শিশু অধিকার বাস্তবায়নে- সম্মিলিতভাবে কাজ করুন। শিশু অধিকার লঙ্ঘিত হলে- কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা- একটি অপরিহার্য সামাজিক কর্তব্য। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে- দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। তাই শিশুর অধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। শিশু অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ান। শিশুর মৌলিক অধিকার পূরণ করুন। মানবাধিকার রক্ষা করুন। নিশ্চিত করুন- শিশুর নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার অধিকার। অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
সবাইকে শিশুর প্রতি- যত্নশীল হতে উদ্বুদ্ধ করুন। শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করতে সাধ্যানুযায়ী এগিয়ে আসুন। শিশুর সঠিক পরিচর্যায়- একসঙ্গে কাজ করুন, সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ান। শিশুদেরকে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন, ইতিবাচক পরিবর্তনের দূত হিসেবে গড়ুন। কর্মজীবী শিশুরও খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন। প্রতিবন্ধী শিশুরও জীবনকে সহজ করুন।
শিশুদের মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসুন, অপরকেও এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করুন। ঝুঁকি কমিয়ে এনে সঠিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন। পজিটিভভাবে দেখতে থাকুন। সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করুন। করণীয় ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করুন। পরিস্থিতির উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করুন।
পারিবারিক সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলতে হবে। পরিবারের বন্ধন, প্রশান্তি, প্রেরণা ও বিকাশকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবার শিশুর জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, সার্থক জীবনের সন্ধান দিতে পারে।
টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারে পরিবার। পরিবার ভালো মানের ও ভালো মনের সুনাগরিক উপহার দিতে পারে। পরিবার যদি ভালো হয়, ব্যক্তি ভালো হবে, ব্যক্তি ভালো হলে দেশ বা রাষ্ট্র ভালো চলবে। তাই পরিবার থেকেই অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলন শুরু করতে হবে, পরিবারকে সুস্থ ধারার বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার উর্বরক্ষেত্র বানাতে হবে, গৃহের প্রশস্ততা-বড়ত্ব-চাকচিক্যের চেয়ে গৃহে থাকা মানুষগুলোর মানবিক মান-মর্যাদা আর সুখ-শান্তিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারহীনতার পরিণতি ভয়াবহ। মানব জাতির ইতিহাসের মতোই পরিবারের ইতিহাসও পুরনো। পারিবারিক বন্ধন যত মজবুত ও দৃঢ়, মানব সভ্যতা তত টেকসই ও শক্তিশালী। বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, মায়ের ভালোবাসা অকৃত্রিম, বোনের মনে প্রীতির শিহরণ অনন্য।
ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আনন্দ। দাদা-দাদী ও নানা-নানীর ভালোবাসা অতুলনীয়। সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্যারেন্টিংয়ের জ্ঞান দরকার। সুশিক্ষা দিতে হলে সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
মানবিক গুণাবলির বিকাশ পরিবার থেকেই হতে হবে। অপরাধপ্রবণতা যাতে গড়ে না ওঠে সতর্ক থাকা দরকার। ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। সঠিক সামাজিকীকরণ দরকার। ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশ খুবই জরুরি। পরিবার থেকে শিষ্টাচার, কমনসেন্স, নীতি-নৈতিকতা-চরিত্র না শিখলে পরবর্তীতে তা শেখানো দুরুহ কাজ।
পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় চৌকস না হলে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয় না। পারিবারিক রুটিন ও পারিবারিক বাজেট খুব সহায়ক হয়। পরিবারে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, নেতৃত্বের বিকাশ, বিপদ মোকাবেলার কলাকৌশল, ঝুঁকি হ্রাসের পদ্ধতি-প্রক্রিয়া, সময় ব্যবস্থাপনা, জীবনযাপন পদ্ধতি, পারিবারিক কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়া, হালাল জীবিকা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা কোনোটিই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা আাসছে। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতার চর্চা, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যৌতুক, ধর্ষণ, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, সামাজিক সমস্যা, মাদকাসক্তি ও গ্যাং কালচার বাড়ছে। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে- কোয়ালিটি টাইম দেয়া, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি, স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রবীণবান্ধব হওয়া, পরিবারবান্ধব হওয়া, পরিবেশবান্ধব হওয়া, শিশুবান্ধব হওয়া, স্বাস্থ্যবান্ধব হওয়া, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, অপরাধকে না বলা, মূল্যবোধের চর্চা, সমতার চর্চা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক সমস্যার সমাধান।