যে চিন্তা থেকে উত্তম কর্মের সৃষ্টি হয়, তা মূল্যবান-দামি চিন্তা। সব মানুষের চিন্তার গুণগতমান একই স্তরের নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একই মানুষের চিন্তারও পরিবর্তন ঘটে। কল্যাণধর্মী চিন্তা মানুষের মন্থর জীবনকে গতিশীল করে। বাস্তবায়নযোগ্য চিন্তা সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়। বাস্তব চিন্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভাবনার জন্ম দেয়।
চিন্তা-ভাবনার বহুমাত্রিকতা সৃষ্টিতে সক্ষমদের চিন্তা থেকে চিন্তা সৃষ্টি হয়ে নতুন কিছু জন্মও নেয়। কেউ কেউ চিন্তা থেকে কল্পনা করে। কেউ চিন্তা থেকে অনেক চিন্তার জন্ম দিয়ে কীর্তি বের করে আনে। কিছু চিন্তা মানুষ সঙ্গে সঙ্গেই ভুলে যায়, কিছু চিন্তা মনে রাখে এবং কিছু চিন্তা বাস্তবায়নও করে। চিন্তা-চেতনার বিবর্তন ঘটে অন্যের চিন্তা-চেতনার প্রবল প্রভাব থেকে।
চিন্তার শক্তি প্রয়োগ করে সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন সম্ভব। চিন্তার বড়ত্ব ও চিন্তার উদারতা থাকলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনের চিন্তার আদান-প্রদান বিষয়টিকে নতুন উচ্চতায়ও নিয়ে যায়। চিন্তা শক্তি- যা দেখা যায় না তাও দেখায়, যা গোপন থাকে তাও উপলব্ধি করায়; যা ঘটার নয় তাও ঘটায়।
চিন্তা-ভাবনার কারণেই সেই ভবিষ্যতকে দেখা যায় যা এখনো আসনি; সেই ভাবনা ভাবা যায় যা কেউ আগে ভাবেনি, সেই দৃশ্য আঁকা যায় যা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। যিনি চিন্তা-ভাবনায় এগিয়ে থাকেন, তিনি কাজে-কর্মেও এগিয়ে থাকেন।
চিন্তার বৈচিত্র্যে বহুমাত্রিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে। চিন্তা নতুন নতুন ধারণা দেয়। কিছু কিছু চিন্তা হচ্ছে বীজের মতো। কেউ চিন্তা করে, কেউ তা বপণ করে, কেউ তা পরিচর্যা করে, কেউ তার সুফল ভোগ করে। অবশ্য কখনো যার চিন্তা তিনিও চিন্তার বাস্তবায়ন করে ফলাফল ভোগের পর্যায়ে যেতে পারেন; কখনো অন্য মানুষের সাহায্য ছাড়াই, কখনো অন্য মানুষের সাহায্য নিয়ে।
চিন্তা-ভাবনা ইতিবাচক হলে তার ফলাফল একরকম আর নেতিবাচক হলে আরেকরকম। ইতিবাচক চিন্তা এগিয়ে নেয়, নেতিবাচক চিন্তা পিছিয়ে দেয়। চিন্তার মাধ্যমে মানুষের মনকে প্রভাবিত করা যায়, মনোভাবের পরিবর্তন ঘটানো যায়। মানুষের মঙ্গলের চিন্তা দ্বারা মানুষ আলোকিত হয়, সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা দ্বারা সমাজের পরিবর্তন প্রভাবিত হয়।
চিন্তা তখনই শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে যখন মানুষ ইতিবাচক চিন্তা দ্বারা তাড়িত হয়ে এবং নেতিবাচক চিন্তায় আবদ্ধ না হয়ে পজেটিভ চিন্তা-কর্মের মানুষ হয়ে উঠবে, চিন্তার ফাঁদে পড়বে না বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তন প্রক্রিয়ায় যুক্তও হবে না।
নিজের চিন্তাবৃত্তে কে না আটকে থাকে! যদিও অপরের চিন্তার অংশ নিয়ে গঠন হওয়ায় একান্ত নিজের চিন্তা নয়! যার চিন্তার উৎপত্তি যত উন্নত, চিন্তার পদ্ধতি যত স্বচ্ছ, তার চিন্তা ততই সুন্দর। চিন্তার সূত্রে লাভ করা যায় অনেক কিছুই। ভালো চিন্তা ভালো কর্মের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আর খারাপ চিন্তাকে যে ধারণ করে তার কর্মও হয় অসুন্দর। কারো চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, তার কাজ ও আচরণকেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
কত যে চিন্তা! চিন্তার কোনো শেষ নেই! সুশিক্ষিত করার চিন্তা! সুস্বাস্থ্য অর্জনের চিন্তা! মান-সম্মান বাড়ানোর চিন্তা! নিরাপদ খাদ্য ও পানির চিন্তা! স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকারের চিন্তা! সামাজিক সুরক্ষার চিন্তা! উৎসবমুখর চিন্তা! আর্থিক স্বচ্ছলতার চিন্তা! আয় বাড়ানোর চিন্তা! ভর্তুকি বাতিলের চিন্তা! বিনিয়োগের চিন্তা! বহুমাত্রিক চিন্তা!
মধ্যবিত্তের চিন্তা! ভবিষ্যতের চিন্তা! অতীতের চিন্তা! নতুন নতুন চিন্তা! গুণে চিন্তা! দোষে চিন্তা! বড় চিন্তা! ছোট চিন্তা! তেলবাজি চর্চার চিন্তা! সৃজনশীল চিন্তা! আজেবাজে চিন্তা! অযথা চিন্তা! পুনরাবৃত্তির চিন্তা! উল্টোভাবে চিন্তা! অন্যভাবে চিন্তা! বিকল্প চিন্তা! প্রত্যাহারের চিন্তা! বদলের চিন্তা! বাড়ানোর চিন্তা! বাদ দেয়ার চিন্তা! দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা! মধ্যমেয়াদী চিন্তা! স্বল্পমেয়াদী চিন্তা!
ইতিবাচক চিন্তা! নেতিবাচক চিন্তা! ভালো চিন্তা! খারাপ চিন্তা! সাদা চিন্তা! কালো চিন্তা! মৌলিক চিন্তা! উৎপাদনের চিন্তা! বিক্রির চিন্তা! ভোগের চিন্তা! ভেঙে ফেলার চিন্তা! গড়ার চিন্তা! মৃত্যুর চিন্তা! নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তা! অশুদ্ধ চিন্তা! শুদ্ধ চিন্তা! অযৌক্তিক চিন্তা! অলীক চিন্তা!
যৌক্তিক চিন্তা! অতিরিক্ত চিন্তা! বিরক্তিকর চিন্তা! অপ্রয়োজনীয় চিন্তা! অযাচিত চিন্তা! অনিষ্ট চিন্তা! অকারণ চিন্তা! সংস্কার চিন্তা! স্বাধীন চিন্তা! উদ্ভাবনী চিন্তা! সস্তা চিন্তা! অহেতুক চিন্তা! মানবিক চিন্তা! নেয়ার চিন্তা! দেয়ার চিন্তা! সঠিক চিন্তা! বেঠিক চিন্তা! সমালোচনামূলক চিন্তা!
কত যে চিন্তাধারা! নতুন নতুন চিন্তাধারা! ধর্মীয় চিন্তাধারা! গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা! সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারা! রাজনৈতিক চিন্তাধারা! সুস্বাস্থ্যময় চিন্তাধারা! অর্থনৈতিক চিন্তাধারা! দার্শনিক চিন্তাধারা! আচরণবাদোত্তর চিন্তাধারা! সৃজনশীল চিন্তাধারা! ভ্রান্তিমূলক চিন্তাধারা! ব্যবস্থাপনা চিন্তাধারা!
আধুনিক চিন্তাধারা! জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা! ইসলামী চিন্তাধারা! জঙ্গীবাদী চিন্তাধারা! নির্ভুল চিন্তাধারা! নিজস্ব চিন্তাধারা! ভিন্ন চিন্তাধারা! রক্ষণশীল চিন্তাধারা! উত্তরণের চিন্তাধারা! বিপ্লবী চিন্তাধারা! গঠনের চিন্তাধারা! মূল চিন্তাধারা! গতানুগতিক চিন্তাধারা! মৌলিক চিন্তাধারা!
পরিপক্ক চিন্তাধারা! মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা! সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা! অগোছালো চিন্তাধারা! তাওহীদি চিন্তাধারা! উদ্ভাবনী চিন্তাধারা! চিরাচরিত চিন্তাধারা! সমন্বিত চিন্তাধারা! ঐতিহ্যবাদী চিন্তাধারা! সম্প্রসারিত চিন্তাধারা! সত্যকামী চিন্তাধারা! সমাজকল্যাণমূলক চিন্তাধারা! বিষাক্ত চিন্তাধারা!
কিছু চিন্তা মানুষ সঙ্গে সঙ্গেই ভুলে যায়, কিছু চিন্তা মনে রাখে, কিছু চিন্তা বাস্তব রূপ পায়! অনেকে পুরনো চিন্তার খোলস থেকে মুক্ত হতে পারে, অনেকে পারে না। প্রকৃত চিন্তাবিদ মানুষের শৃঙ্খলমুক্ত চিন্তা সমাজকেও এগিয়ে দেয়। শুভ চিন্তাকে ধারণ করে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন চিন্তাশীলরা।
অনেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও চিন্তা করে, আবার অনেকে চিন্তা-ভাবনার ধার ধারে না। চিন্তার মুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন চিন্তকরা দুর্বুদ্ধিজীবী অপচিন্তকদের পিছু হটায়। যাদের চিন্তাধারার ফলে মানবতার কল্যাণ চিন্তা বাড়ে, তাদের ভাবনা-চিন্তা করার ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিন্তার শক্তিতে বদলে যায় অনেক কিছুই।
লেখক: আনিসুর রহমান এরশাদ, লেখার সময় : ৬ জুন ২০২২