মো. তৌহিদ হোসেন : ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাস। শীতের সকাল। বাইরে মিষ্টি রোদের আবহ। আমার প্রথম কর্মস্থল শাহবাগের (ঢাকা) একটি এনজিও অফিসে বসে আছি। এমন সময় মধ্যবয়সী একজন সফেদ সাদা মনের মহান মানুষের কণ্ঠের আওয়াজে হঠাৎ হতচকিত হয়ে গেলাম। অফিস কক্ষে প্রবেশ করেই বললেন- ‘তুমি কেমন আছো? তোমার সাথে জরুরি কথা আছে! হ্যাঁ, জরুরি কথা হলো- তৌহিদ! তোমাকে এ চাকরি ছাড়তে হবে। কলেজের দায়িত্ব নিতে হবে। তুমি যদি কলেজের দায়িত্ব নিয়ে শুরু করতে পারো, তাহলে কলেজ করবো নইলে করবো না।’ হ্যাঁ, এই কথাগুলো হলো ক্ষণজন্মা, মানব প্রেমিক, মহান ব্যক্তিত্ব, আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় উচ্চস্থানে সমাসীন, অভিভাবকতুল্য অধ্যাপক ড. মীর আকরামুজ্জামান স্যারের।
সদ্য মাস্টার্স শেষ করে আমি চাকরি নিলাম ঢাকার একটি এনজিওতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে সাভারের মাটি ও মানুষের প্রতি একধরনের গভীর টান সবসময় অনুভব করতাম। সেই সুবাদে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে স্বপ্ন দেখতাম আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্তে সাভারে একটি আলোর বাতিঘর ‘কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করার। যা দেশের সীমানা পেরিয়ে আলোকিত করবে বিশ্বময়! সেই ভাবনা থেকে প্রায়ই আমাদের বন্ধুদের মধ্যে চলত দীর্ঘ-নাতিদীর্ঘ আলোচনা। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো একাজে শিক্ষাজগতের চেঞ্জমেকার আকরামুজ্জামান স্যার যদি সময় দেন, রাজি হন, তাহলেই কেবল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব; নইলে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে কথা সেই কাজ, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে স্যারের বাসায় গেলাম! স্যার আমাদের কথাগুলো আগ্রহ সহকারে শুনলেন, অনুধাবন করলেন এবং কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজি হলেন।
এরপর রাত নেই, দিন নেই, নাওয়া-খাওয়া ফেলে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য কি যে শ্রম? স্যার অর্ডার করছেন, আর আমরা ছুটে চলেছি স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে…!! আজ জমি দেখা, তো কাল কলেজের জন্য বাসা ভাড়া করা, পরশু ক্লাসরুম ডেকোরেশন! সবই চলছে দুরন্ত গতিতে! শুধু অর্ডার প্রদান করেই স্যার ক্ষ্যান্ত নন, আমাদের সাথে সাধারণ একজনের মতো করে স্যার সব কাজে অংশ নিচ্ছেন, সাহস দিচ্ছেন, হাতে ধরে শেখাচ্ছেন! তারপর বোর্ড কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন, সব যেন স্যারের নির্দেশনায় ও সুনিপুণ তদারকিতে যন্ত্রের মতো চোখের পলকে কাজ চলছে..!
এরই মাঝে একদিন স্যার আমার এনজিও অফিসে এসে এভাবেই বললেন, কলেজের দায়িত্ব নিতে! অভিভাবকতুল্য, মানবহিতৈষী, প্রিয় এ স্যারের কথার অন্যথা আমি করতে পারিনি। স্যারের কথামতোই অবশেষে এনজিও-র চাকরি ছেড়ে কলেজে যোগদান করলাম! আমি এনজিও-তে তখন যে বেতন পেতাম তার ছয়ভাগের একভাগ বেতন নিয়ে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আমার পিতৃতুল্য স্যারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম এবং অদ্যবধি আমি এক বরকতময় জীবন পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ!
স্যারের প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ আজ ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’ বাংলাদেশ সরকারের মূল্যায়নে ঢাকা জেলার সেরা এবং সাভার উপজেলায় একাধিকবার সেরা কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহর একান্ত মেহেরবানীতে সাভারের সেরা অধ্যক্ষ হিসেবে আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এ্যাওয়ার্ড-২০১৯, মওলানা ভাসানী স্মৃতি পদক- ২০১৭ প্রাপ্তির সুযোগ দিয়েছেন। আজ মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ব্যক্তি হিসেবে আমার সম্মান-মর্যাদা, কলেজের আজকের অবস্থান সবকিছুর পিছনে রয়েছে প্রিয় এ স্যারের সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি সাভার মডেল কলেজ আজ স্বগৌরবে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। স্যারের লাগানো গোলাপ বাগান, আমাদের স্বপ্নের বাতিঘর থেকে সৎ যোগ্য মানুষ তৈরি হয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস (শিক্ষা, প্রশাসন, পুলিশ) ক্যাডার, এডভোকেট, ব্যাংক কর্মকর্তা, সফল ব্যবসায়ী হয়ে হাজারো শিক্ষার্থী দেশ গঠনে সফল ভূমিকা পালন করছে।
আমার আজকের পথচলার পিছনে স্যারের ছোঁয়া আমাকে ধন্য করেছে। জীবনের প্রায় প্রতিটি বাঁকে স্যারের পরামর্শ, সিদ্ধান্ত আমাকে করেছে আলোড়িত! এমনকি আমার বিবাহের প্রস্তাব আসার পর স্যারের কাছে পরামর্শের জন্য গেলাম, স্যার সিদ্ধান্ত দিলেন “চোখ বন্ধ করে এখানেই সিদ্ধান্ত নাও”। আলহামদুলিল্লাহ, আমার পারিবারিক জীবনে শান্তির অবিরত ধারা বহমান। ভাবতেও পারিনি, প্রিয় স্যার বিয়ের সময় আমার নতুন সংসারের জন্য গিফ্ট হিসেবে ‘ডাইনিং টেবিল সেট’ পাঠিয়ে দিবেন!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মহান স্যারের সাথে এমন অসংখ্য স্মৃতি মনকে এখন শুধুই পীড়া দেয়। তাঁর অভাব অপূরনীয়। যেদিকেই যায় সেখানেই স্যারের সৎ কাজের স্বাক্ষর দেখতে পাই! কয়েকদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া বাজারে গেলাম। স্যারকে নিয়ে কথা উঠতেই ঐখানের এক স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান অনায়াসে চিনে ফেললেন স্যারকে! ঐ ভাই বললেন- ‘স্যার প্রায়ই সবজি কিনতে গেরুয়া বাজারে আসতেন। পছন্দনীয় মৌসুমী সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, শশা ইত্যাদি ঝুড়ি ধরে কিনতেন তারপর রিক্সাযোগে সেগুলো ক্যাম্পাসে নিয়ে বসবাসকারী তাঁর প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।’
জা.বি ক্যাম্পাসে স্যারের প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে বাসা পরিবর্তনের জন্য যদি কেউ কখনো ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতেন, তখন তাদের বাসায় গিয়ে বলে আসতেন, আপনারা মালামাল গুছিয়ে নেন। রান্না-বান্না করার দরকার নেই, রান্না আমাদের বাসায় হবে। আমরা একসাথে খাব! অনুরূপভাবে কেউ বাসা পরিবর্তন করে তার নতুন প্রতিবেশী হিসেবে আসলে তাদেরকেও বলতেন, আপনারা আপনাদের ফ্ল্যাটে মালামালগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেন। খাবার রান্না করার দরকার নেই। আমাদের বাসায় আপনারা খাবেন। এভাবে দুই-তিন বেলা পর্যন্ত নতুন আগমনকারী বা বাসা পরিবর্তনকারী প্রতিবেশীর খাবারের ব্যবস্থা স্যার করতেন। মানুষের দৈনন্দিন এমন পরিশ্রম বা কষ্টদায়ক মূহুর্তে দ্বিধাহীনচত্তে তিনি সবসময়ই অংশী হতেন।
সমাজ-সংসারে মানব কল্যাণকর এমন হাজারো সূক্ষ সূক্ষ বিষয়েও কখনো তার দৃষ্টি এড়াতো না। বিপদে মানুষের পাশে থাকা, প্রতিবেশীসহ অন্যের হকের প্রতি তিনি ছিলেন সদা জাগ্রত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু পাঠ্য সমস্যার সমাধানই করতেন না, ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য যেকোনো ব্যক্তিগত সমস্যা শুনলে তিনি রিস্ক নিয়ে তা সমাধান করতেন। যেমন- আমাদের এক সহপাঠী বন্ধু (ফয়জুল ইসলাম) খুবই জরুরি প্রয়োজনে স্যারের কাছে ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা ঋণ চাইলেন। ঐসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতর ছাত্র ধর্মঘট চলছিল। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের গেইট, অফিস কক্ষ সবই তালাবদ্ধ ছিল। স্যার বিভাগের পিছন থেকে পাঁচিল টপকে অফিসে নিজের চেম্বারে রাখা চেক বই বের করে, বিশ হাজার টাকার চেক ইস্যু করে আমার সহপাঠী বন্ধুকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
আরেক সহপাঠী জিয়াউল হক ভাই জানালেন, একবার দেশব্যাপী লাগাতর হরতাল চলছিল। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া এক ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি ছিল টাঙ্গাইল। তার এইচএসসি-র মূল মার্কশীট জমা দেয়ার শেষদিন উপনীত হয়। ভর্তি বাতিল হওয়ার প্রবল আশংকা দেখা দেয়। নিরুপায় হয়ে উক্ত শিক্ষার্থী বিভাগীয় এই স্যারের সাহায্য চান। স্যার হরতালের মাঝে নিজে সেই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মূল মার্কশীট নিয়ে এসে ভর্তি প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে সাহায্য করেন। এভাবে বিভিন্ন কাজ বা পরামর্শের জন্য তাঁর সংস্পর্শে বা সাহচর্যে যেই গিয়েছে, সে কখনোই নিরাশ হয়ে ফেরেনি বরং তার জন্য সর্বোচ্চ রিস্ক নিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন আমৃত।
সাভারে মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মূল কান্ডারী ছিলেন স্যার। মূল্যবোধ ভিত্তিক তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাভার মডেল একাডেমী। উল্লেখ্য, তখন সাভার পৌরসভার এটি দ্বিতীয় কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান। স্যার ছিলেন সাভার মডেল একাডেমীর প্রথম অনারারী অধ্যক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের আগে ও পরে সদ্য প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপীঠে এসে গভীর রাত্রি অবধি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করে সফলতার সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত নতুন এ প্রতিষ্ঠানে অক্লান্ত পরিশ্রমসহ নিরবিচ্ছিন্ন সময়দান বা দায়িত্বপালনকালে তিনি কখনোই কোন আর্থিক সুবিধা বা অনুদান গ্রহণ করেননি। এমনকি আসা-যাওয়া বাবদ খরচটুকুও নয়! সেই যে শুরু তারপর থেকে স্যারের আদর্শে গড়া ছাত্রদের হাতে একে একে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- ল্যাবরেটরী স্কুল, ল্যাবরেটরী কলেজ, এ্যসেড স্কুল, এঞ্জেলিকা স্কুল ইত্যাদি। যা সাভারে জ্ঞান বিস্তারে পায়োনিয়ারের ভূমিকা পালন করছে।
স্যারের ঐকান্তিক স্বপ্ন ছিল- দেশে মূল্যবোধভিত্তিক ভালো মানের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) গড়ে উঠুক। বিশেষ করে সাভারে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি অলিতে গলিতে। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হোক পুরো দেশ, বিশ্বময়..! মূল্যবোধ ভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আলোকিত মানুষ তৈরী হবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে এই প্রত্যাশায় নিজের টাকা খরচ কওে, কখনো অনারারী অধ্যক্ষের ভূমিকায়, কখনো পরামর্শক হিসেবে, কখনো নিজে উদ্যোগী হয়ে, কখনো স্বশরীরে খোঁজ-খবর নিতে প্রায়ই ছুটে যেতেন তাঁর হাতে গড়া এসব প্রতিষ্ঠানে!
নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতেন তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত সকল পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। গত ৫ অক্টোবর ২০২০ইং এ পালিত ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসে’ সাভার মডেল একাডেমিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে একাধিক শিক্ষক স্মৃতিচারণ করলেন যে, মীর আকরামুজ্জামান স্যার এমন ছিলেন- যেকোনো শিক্ষকের আর্থিক অসুবিধার কথা জানলেই তাকে তিনি টাকা ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করতেন, কিন্তু তার থেকে আর তা কখনোই ফেরত নিতেন না!
মাত্র কয়েকদিন হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের বিভাগের (পদার্থবিদ্যা বিভাগ) বাগানের সাবেক মালী দুদু মিয়া মডেল কলেজে এসেছিল। আলাপচারিতায় স্যারের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরে তিনি কাঁদছেন। একদিনের একটি ঘটনা বললেন- ‘কুরবানির ঈদের দিন। বাসায় বসে আছি। এমন সময় রান্না করা ও কাঁচা গোশ্ত নিয়ে হঠাৎ আমার বাসায় স্যার উপস্থিত। ভাবতেই পারেনি, আমার মতো একজন সাধারণের বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এভাবে আসবেন।’
এভাবে স্যারকে যদি মানুষ হিসেবে চিন্তা করি, তাহলে দেখি- যে মানুষই স্যারের সহচার্যে গিয়েছে সেই উপকৃত হয়েছে। স্যারকে যদি শিক্ষক হিসেবে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাই, স্যার ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তম অভিভাবক, পথনির্দেশক, সকলের চোখের মণি! সহকর্মী হিসেবে দেখতে পাই, তিনি ছিলেন সহকর্মীদের প্রিয় বন্ধু, ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও নিঃস্বার্থ শুভাকাঙ্খী। গবেষক হিসেবে দেখতে পাই- গবেষণা কার্যক্রমে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও সময় সচেতন।
তার অধীনে যেসকল গবেষক শিক্ষার্থী গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছেন, সেখানে রয়েছে তাঁর জ্ঞানগর্ভ, দায়িত্ববান, সৃজনশীল সফল নেতৃত্ব! এক্ষেত্রে এমন অনেক ঘটনার কথা আমরা জানি- তাঁর অধীনস্ত গবেষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে (ছাত্রী শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ) রাতের পর রাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোতে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করেছেন! সময়ের প্রতি তিনি এতটাই সচেতন ছিলেন যে, কোনো কাজে বা প্রোগ্রামে কখনোই তাঁর একটা মিনিটও দেরি হতো না। স্যার তাঁর নাতিদীর্ঘ জীবনের প্রায় প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিট সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টাতে ছিলেন পাগলপারা। কোন কাজ কখনোই পরবর্তী দিনের জন্য ফেলে রাখতেন না। তিনি ছিলেন আমার দেখা জীবন্ত টাইম মেশিন!
আমরা কবিতায় পড়েছিলাম- “যখন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে তুমি হেঁসে ছিল সবে, এমন জীবন করিবে গঠন, মরণে হাঁসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।” স্যার ছিলেন এই কবিতার সার্থক উদাহরণ।
স্যার আমার মত অসংখ্য গুনগ্রাহীকে কাঁদিয়ে মহৎ এবং মহান কর্মের মাঝে আজীবন বহমান থেকে প্রভুর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। মহান আল্লাহর কাছে হৃদয়ের সবটুকু আকুতি নিয়ে চাওয়া- হে প্রভু! আমাদের প্রিয় স্যার, আমাদের অভিভাবক, আমাদের পথনির্দেশক ড. মীর আকরামুজ্জামান তোমার সৃষ্ট মানবতার কল্যানে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন। সমাজে মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারে, একটানা এমনকি ৫২, ৭২ ঘণ্টা বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন। শিক্ষার আলো জ্বেলে মানবতার জয়গানে এ পৃথিবীকে মুখরিত করতে অবিরত পথ চলেছেন। আজ তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন!
হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে জান্নাতি শান্তিতে বিশ্রামের সুযোগ দাও! দুনিয়াবী জীবনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাজপাগল এ মানুষটি সামান্যতম বিলাসী জীবনযাপন করেননি! আদালতে-আখিরাতে বিনা হিসেবে জান্নাতগামী অগ্রবর্তীদের দলে সামিল করে স্যারকে চিরশান্তির জান্নাতে উচ্চ মাকামে স্থান দাও! আমীন! আমরা যারা স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করছি আমাদেরকেও স্যারের সাথে জান্নাতে সাক্ষাতের সুযোগ দিও, হে প্রভু!