মাদকের আগ্রাসন থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। সন্তানের ওপর অভিভাবকদেরও সতর্ক ও সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকতে হবে। অভিভাবক সন্তানকে নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তার গতিবিধি লক্ষ্য করবেন। সন্তানের বাড়ি ফেরা, ঘুম, জেগে ওঠা দেখে মাদকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক সচেতন হলে সন্তান মাদক গ্রহণ করতে পারে না। মাদকমুক্ত পরিবার গড়তে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পারিবারিকভাবেও সময়োপযোগি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদক বিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারণার সাথে বড়দের যুক্ত থাকতে হবে, মাদকাসক্তদের স্বাবলম্বি করতে হবে। এমন লেখালেখি ও সিনেমা-নাটকের সাথে পরিচিত করাতে হবে, যাতে মনে মাদকের খারাপ দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। মাদকমুক্ত পরিবার গড়তে পারলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব হবে। জীবনমান গড়ার জন্য, আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলার জন্য পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাদকনির্ভরতা একটি ক্রনিক রিল্যাপ্সিং ব্রেইন ডিজিজ। তাই অভিভাবকদের মাদকাসক্তকে শনাক্ত করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে, সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সময়মত মোটিভেশন করতে হবে, যথাযথ কাউন্সিলিং করতে হবে, মেডিটেশন করাতে হবে, প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণ করতে হবে। চিকিৎসার পর মাদকাক্তদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাকে নিঃসঙ্গ রাখা যাবে না। তার সাথে খারাপ আচরণ করা হলে কিংবা অবহেলা করলে ফের মাদকের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও অভিভাবকদের ভূমিকা জরুরি। মাদকের অপব্যবহার বন্ধ করতে হলে পারিবারিকভাবে পর্যায়ে উদ্যোগী হয়েও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদকাসক্তকে ঘৃণা না করে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে, বিভিন্ন কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে সর্বনাশী মাদকের কুফল থেকে ফেরাতে হবে।
মাদক থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে প্রতিটি পরিবারের করণীয় হচ্ছে- পারিবারিক পরিবেশ ধূমপানমুক্ত রাখা। সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখা। সন্তানরা যেসব জায়গায় সবসময় যাওয়া-আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানা। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা, যাতে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করে। পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন। ধৈর্য ধরে সন্তানদের সব কথা শোনার জন্য অভিভাবকরা নিজেদের প্রস্তত করবেন। সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট সময় দেবেন। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োাজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, প্রায়ই তারা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। ‘গুড প্যারেন্টিং’ বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে বাবা-মাকে।
মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসুন।