মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল। শতকরা ৮০ ভাগ খুনের সাথে মাদকাসক্তরাও কোনো না কোনোভাবে জড়িত। মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা পরিবারকে ধ্বংস করছে; সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে। মাদকাসক্তি নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে খেয়ে ফেলে। জীবনবিধ্বংসী এ নেশায় সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হয়, অনিষ্টকারিতা-অপকারিতার মতো গুরুতর মহাপাপ বৃদ্ধি পায়, পাপাচারে লিপ্ত করে, পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটায়। নেশার কারণে শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়, চাকরিচ্যুত হতে হয় কাউকে কাউকে। যেসব পরিবারের কোনো সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন।
যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে যে নেশা কোনো রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং এটা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। মাদকাসক্তির কারণে স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, যকৃত, ফুসফুস, প্রজননতন্ত্র, কিডনি, লিভার, পাকস্থলীসহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিরায় মাদক গ্রহণের কারণে হেপাটাইটিস বি, সি, যৌনবাহিত রোগ ও এইচআইভি সংক্রমণ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় লেখাপড়া, স্লিম থাকা ও বেশি সময় যৌনক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, মডেলকন্যা ও অভিনেত্রী কিংবা সুন্দরী গৃহবধূরা ব্যাপক হারে ইযয়াবা আসক্ত হয়ে তাদেরও জীবন বিপন্ন করে তুলছে। মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতি তাদের গড় আয়ু অনেক কমে যাওয়া; স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া। কুকুর-নিধন বিষের মিশ্রণে তৈরি ইয়াবা খেলে খাবারের রুচি কমে যায়, ঘুম কমে যায়, না খেতে খেতে তারা রোগাটে হয়ে যায়, বছরখানেক ব্যবহারের পর যৌন ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে- মাদকের সহজলভ্যতা, মাদকের প্রতি কৌতূহল ও নিছক মজা করার প্রবণতা, পারিবারিক অশান্তি, বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি, অবহেলা, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের কুপ্রচারণা, অসৎ সঙ্গ, মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রকৃত ধারণার অভাব, আমি ইচ্ছা করলেই মাদক ছাড়তে পারি এমন ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, মানসিক টানাপড়েন, ব্যবসায় ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল করা, নানা রকম হতাশা ও আকাশ-সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব । পারিপার্শ্বিক কারণ- মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা, উইথড্রয়াল ইফেক্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি। ব্যক্তিত্বের কিছু সমস্যা যেমন এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশের সমস্যা, পারিবারিক কারণেও মাদক গ্রহণের জন্য দায়ী। ধূমপানই মাদকের জগতে প্রবেশের মূল দ্বার খুলে দেয়। সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে মদ্যপানও।
তাই মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে এখনই।