হাফেজ মাও. রমজান আলী: নিজের যাকিছু আছে তা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের শক্তি ও জীবন পরিচালনার নাম স্বনির্ভরতা। স্বনির্ভরতাই সর্বপেক্ষা বড় সাহায্য। যে সৎভাবে স্বনির্ভর হবার চেষ্টা করে না, সৃষ্টিকর্তা তাকে সাহায্য করে না। কর্মবিমূখ ব্যক্তিকে কেউ সাহায্য করে না।
পরিশ্রমী ব্যক্তির সাহায্যে অন্য লোক ছুটে আসে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, ‘বিশ্বাসীদের মধ্যে পুরুষ ও নারী যে কেউ সৎকর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব’।
প্রায় সকল পশু-পক্ষীর দেহ এমনভাবে গঠিত, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই তাদের স্বনির্ভর হতে হয়। এ বিষয়ে মানুষের কিছু সময় লাগে। মানব শিশুকে নির্ভর করতে হয় পিতা-মাতা বা অন্যান্যের সাহায্যের উপর। নবজাত মানব শিশুটি স্বাবলম্বী হবার উপাদান নিয়েই পৃথিবীতে আসে। তাকে দৈহিক ও মানসিক বিকশিত করার দিক পরিপুষ্ট করে নিতে হয়। যে চেষ্টা করে সে বিকাশ করতে পারে আর যে নিজে শিখবার চেষ্টা করে না তাকে পরের ওপর নির্ভর করতে হয়। তার শিক্ষার অগ্রগতির পথ অল্প সময়ের মধ্যেই বন্দ হয়ে যয়ি।
সুতরাং পত্যেক মানুষের ভিতর সুপ্ত প্রতিভাগুলো বিকশিত করতে পারলেই সে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। স্বাবলম্বন আত্মরক্ষার প্রকৃত উপায়। শরীরটাকে আশ্রয় করেই জীবন। অথচ আকাশে বাতাসে সর্বত্র অসংখ্য রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে আছে। প্রতি মুহূর্তেই এগুলো দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। মানুষের জীবনশক্তিই সর্বদা রোগ-জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে দেহটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। অতএব নিজের জীবনীশক্তি কখনো হারিয়ে ফেলবে না।
স্বনির্ভরতা যেমন ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োজন, সমাজ রাষ্ট্র বা জাতির জীবনেও ঠিক তেমনি প্রয়োজন। যে দেশ বা জাতি কেবল পরের উপর নির্ভরশীল থাকে, সে দেশ জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। আমাদের দেশে অনেক পরিবার দেখা যায় একজন উপার্জনকারী ব্যক্তির আয়ের উপর নির্ভর করে সুস্থ ও সক্ষম লোকগুলো কর্মহীনভাবে দিন যাপন করে। ফলে গোটা পরিবার একদিন ভেঙ্গে পড়ে। তদ্রুপ বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি স্বনির্ভর না হয়ে প্রতিটি বিষয়ে অন্যের উপর নির্ভর থাকে, তাইলে কোনদিনই বাংলাদেশ স্বনির্ভর হতে পারবে না। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে শিশুকাল থেকেই এর শিক্ষা নিতে হবে। শিশুকাল থেকে প্রয়োজনীয় কাজ এমনভাবে শিখতে হবে পরবর্তী জীবনে এটা যেন স্বভাবে পরিনত হয়।
আজ আমরা সকলে যদি নিজের উন্নতির সাথে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে নিজেদের তৈরি করতে পারি, তাহলে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এ সোনার বাংলা নবজীবন লাভে সমর্থ হবে।