বিদেশী বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অহংকার করা অথবা পড়ার সুযোগ না পেয়ে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা দুটোই অন্যায্য। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার একটা বড় সুবিধা হলো জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবহারিক ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জিত হয়। বাংলাদেশের পাবলিক (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই) বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্ককে (আমার অভিজ্ঞতায়) যদি আমার বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা দিয়ে তুলনা করি তবে সেখানে দাস-প্রভূর সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।ব্যতিক্রম যে নেই তা বলবো না।
অনেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েই ভালো বিশ্বমানের গবেষণা করছেন, শিক্ষকতা করছেন, আবার অনেকে অনেক যশখ্যাতি সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও দেশ ও জাতি গঠনে কাংখিত অবদান রাখতে পারছেন না। এর পেছনে নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণও রয়েছে। তবে যারা ভবিষ্যতের গবেষক তাদের জন্য নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের একটি অভিজ্ঞতা উপকারী হতে পারে; তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দেখলাম বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন নাই। এর মাঝেও বাংলা নাটকে কিঞ্চিত্ ফাঁকা জায়গা আছে বলে আমার মনে হলো। ফলে আমি সেখানেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ মানে হলো গবেষণায় ভালো করতে চাইলে ‘গ্যাপ’ খুঁজে বের করুন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন এবং কাজে নেমে পড়ুন।
শিক্ষা গ্রহণের প্রসেস নিয়ে আমার ধারণা ইদানীং নিয়ত পরিবর্তনশীল। আমরা সবাই আসলে ছাত্র। আমৃত্যু ছাত্র। জ্ঞানের যে অসীম বিস্তার তা থেকে কতটুকু নেয়া সম্ভব? আমরাতো অল্পই জানি, বেশীই জানি না। সমুদ্র থেকে আঁজলা ভরে পানি নিলে তাতে কতটুকু কমে বা বাড়ে? আমি ভাবতাম, আমি অনেক জ্ঞানী। সত্যিই তাই! আমার চারপাশ আমাকে তেমনি ভাবেই গড়ে তুলেছিলো, ভাবতে শিখিয়েছিলো।
যেদিন আমি প্রথম অক্সফোর্ডে আসলাম, আমার প্রফেসর দ্বয়ের সাথে মিটিং হলো। নানান বিষয় আলোচনার পরে মিটিংয়ের শেষদিকে একজন বললেন, রহমান তুমি যে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করবে, আমরা সে বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা তোমার কাছে থেকে শিখবো। আমি হতবাক এবং স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। আমি বসে আছি দুনিয়ার প্রত্নউদ্ভিদ বিজ্ঞানের দুই দিকপালের সামনে অথচ তাঁরা এ কি বলছেন!! ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, হ্যাঁ তারাই সঠিক।
আমরা সবাই ছাত্র। আমরা সবাই শিক্ষক। প্রতিদিন, প্রতিমূহুর্তে আমরা শিখছি, ছোট কিংবা বড় প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সবার কাছ থেকে। এমনকি প্রকৃতিও আমাদের কত কিছুই না শেখায়! শিখতে শিখতেই আমরা মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবো, তবুও শেখা শেষ হবে না। নবীজীর (স.) একটি হাদীস স্কুলে থাকতে পড়েছিলাম, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষাকাল’। আমি অবাক হয়ে যাই, দেড় হাজার বছর আগে আরবের নিরক্ষর নবী’র (স.) বাণীর গভীরতা, অন্তনিহিত তাৎপর্য উপলব্ধি করে! পথ চলতে চলতে আনমনে অনেক দিন আমি ভেবেছি এগুলো, কিনারা বিহীন অসীম এর গন্তব্য!
তথাপিও, পেশাদার শিক্ষকের নিকট থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা গ্রহণ করি। ছাত্রদের জীবন গঠনে শিক্ষকের অবদান অসীম। আমি যখন কিশোর, আমার বাবা আমাকে গভীর নিষ্ঠার সাথে সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি শিখিয়েছিলেন সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য। সেটিই আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ, আমি পরম যত্নে এটি আগলে রেখেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হওয়া ও শিক্ষকদের সাথে কাজ করার দূর্লভ সুযোগ আমার জীবনের গতিপথকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আমি যা ভেবেছি আর যা ভাবিনি, দয়াময় উজাড় করে তা দিয়েছেন। আমি গভীরভাবে আমার সকল শিক্ষককে, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের, শিক্ষক দিবসের এই লগ্নে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যদি আমি ভালো অনুকরনীয় কিছু করতে পারি তবে তা আমার শিক্ষাগুরুদেরই কৃতিত্ব, ব্যর্থতার দায়ভার একান্তই আমার। শিক্ষকতার পেশায় নাম লিখিয়ে আমিও চেষ্টা করেছি কিভাবে ভালো শিক্ষক হওয়া যায়। আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করি আমি চৃড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেও সম্মানজনক একটি পজিশনে যেতে পারবো। যেদিন দেখবো আমার কোনো ছাত্র ডিঙ্গিয়ে গিয়েছে আমাকে, আমি সেই দিন হবো তৃপ্ত।
বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের সবচেয়ে কদর্যময় যে চেহারা সেটা হলো ‘গণরুম’। কিভাবে হাজার হাজার সম্ভাবনাময় জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে তা আমাদের জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে। রিকশাওয়ালা-দিনমজুর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি সন্তান যে স্বপ্ন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তারপর কিভাবে তা করুণ পরিণতিতে পরিসমাপ্ত হয় সে খোঁজ কেউ নেয় না। অনেক নিকটে থেকে এরকম দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আমাকে দেখতে হয়েছে।
সাধ্যের ভেতরে যতটুকু ছিলো পুরোটাই করেছি, কিন্তু যে বিরাট ক্ষত তা মোকাবেলার সামর্থ্য আমাদের মতো সাধারণের ছিলো না। কয়েকবার সদল বলে উচ্চ পর্যায়ে ধরণা দিয়েছিলাম, সমস্যা সমাধানে আশ্বাসও মিলেছিলো, কোনো অজ্ঞাত কারণে কোনো সমাধান হয়নি।মাঝে দুয়েকটা সংবাদপত্রে খবর হলেও খুব একটা সাড়া পড়েনি ফলে পরিস্থিতিরও কোনো পরিবর্তন হয় নাই।
গণরুম থাকা’র জন্য কেবল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনই দায়ী বলে আমি মনে করি না (তবে মোটাদাগে তাদের দায় আছে)। এখানে দায়িত্বে অবহেলা (হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের) এমনকি শিক্ষকদের একটি অংশও (যারা নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া ও পরীক্ষার রেজাল্ট সময়মত না দেবার দোষে দোষী) দায় এড়াতে পারে না। অবিবেচক কিছু ছাত্রকেও দেখেছি, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হবার পরেও বছরের পর বছর হলে অবস্থান করছে। সবকিছু মিলিয়ে জাতীর ভবিষ্যতের এক অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে। এর কি কোনো শেষ হবে না?
স্কুলে পড়ার সময়ে জেনেছিলাম, ‘যে দেশে গুণী’র কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মায় না’। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা আমার ভাবনা’র রাজ্যে নাড়া দিয়ে গেল। দুজনেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। একজন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী। সম্প্রতি অবসরে গিয়েছেন। তাঁর জীবন বৃত্তান্ত ছেপেছে বিশ্বখ্যাত একাডেমিক জার্নাল। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর, কিংবা দেশ হিসেবে বাংলাদেশও তাঁর এরকম কীর্তিমান সন্তানের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে। তাঁর এমন প্রাপ্তিতে ২/১ টা ফেসবুক পোস্ট ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়লো না।
অপরজন মধ্যম সারির একজন পুলিশ কর্মকর্তা। নতুন পোষ্টিং পেয়েছেন সেই উপলক্ষ্যে অসংখ্য মানুষের (পড়ুন জাবিয়ান) ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন। দলে দলে ফুল দিয়ে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পরে সেখানেও শুভেচ্ছার বিপুল আধিক্য লক্ষ্য করা গেল। নির্মোহভাবে দুটি ঘটনা পাঠ করে আমার মনে হলো এটিই আমাদের সমাজের দর্পণ। যেখানে ক্ষমতা, অর্থ, পেশী ও প্রভাবের কাছে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা প্রভৃতি সুকুমার বৃত্তিগুলো ম্রিয়মান। এমন সমাজের ভবিষ্যত্ কী? এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতো এই সমাজেরই অংশ। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সংক্রমিত হচ্ছে যা শিক্ষকদের সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কমেন্টে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) কিছুটা হলেও প্রকাশিত।
পশ্চিমা একাডেমিয়ায় ‘একাডেমিক রাইটিং’ নামে একটি প্রপঞ্চ আছে, যা গবেষণা করে এমন সকল ছাত্রকে রপ্ত করতে হয়। এটা হলো লেখার এমন একটি কাঠামো যাতে করে পাঠক প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পেয়ে যেতে পারে। অল্প কথায় বেশী তথ্য দেয়া, বোধগম্য উপায়ে উপস্থাপনের কৌশল। আমি পশ্চিমে আসার আগে এ বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ ছিলাম। বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা, নামী গবেষক ও চিন্তকদের লেখা পড়তে গিয়ে হোচট খেতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সমগ্র গবেষণা প্রবন্ধই পড়তে হচ্ছে। সারসংক্ষেপে ব্যাকগ্রাউন্ড লিখে রেখেছেন, উপসংহারে লিখেছেন গবেষণার উদ্দেশ্য, ফাইন্ডিংস নাই। যাঁরা রিসার্চ শেখানোর দায়িত্বে আছেন তাদেরই এই অবস্থা! রিভিউয়ার আর এডিটরের কাজটা তাইলে কী?
উপর্যুপরি ষষ্ঠবারের মতো University of Oxford পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তালিকায় টপ পজিশন অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হলো। একেবারে ভিতরে থেকে একটা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখার সৌভাগ্য হলো। মেরিটোক্রেসি হলো এখানকার প্রাণভোমরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অর্গান কাজ করছে প্রপারলি। প্যানডেমিক শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাংলাদেশের সরকারি/পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিয়েছে প্রায় দুই বছর।
এতো বড় প্রাপ্তি তথাপি নেই কোনো আওয়াজ, ফুলের তোড়া নিয়ে নেই ছোটাছুটি, নেই কোনো (উপাচার্য/ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য কেউ) অভিনন্দন জানাবার ভীড়, র্যালী কিংবা উদযাপনের নূন্যতম আয়োজন! কি অদ্ভুত! আমি যে বিভাগের ছাত্র এটা সাবজেক্টের তালিকা অনুযায়ী দুনিয়ার ১ নং। এখানে আসার পরে দেখলাম নোটিশ বোর্ডের এক কোনায় ছোট একটা খবর, সেটা হলো Times Higher Education রেটিং এ বিভাগটি টপ পজিশন অর্জন করেছে। এতটুকুই, এর বেশি কিছু কোনোদিন কারো নিকট থেকেই শুনিনি।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডে আসার ৫ মাসের মাথায় লকডাউনের কবলে পড়ে যাই। লকডাউনে ইউকে’তে একটি মাত্র সেক্টর সরকার তার সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দিয়ে চালু রেখেছিল সেটা হলো শিক্ষা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হলো, যে দিন ল্যাবে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো প্রফেসর সাপ্তাহিক অনলাইন মিটিং চালু করে দিলো, ঠিক যেভাবে স্বাভাবিক সময়ে সামনা-সামনি মিটিং করেছি, ল্যাবের বদলে চালু হলো লেখালেখি। প্রথম তিন মাসের লকডাউনে আমার থিসিসের ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি সম্পর্কিত ২টি চ্যাপ্টার লেখা শেষ করে জমা দিতে হলো, লকডাউন হয়ে উঠেছিল দারুণ প্রোডাক্টিভ! ফলে লকডাউন সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষানবীশ থেকে পিএইচডি গবেষক ক্যাটেগরিতে উত্তরণ সম্ভব হয়েছিল।এভাবে যাঁকে যেভাবে সম্ভব কাজের ভিতরে রেখে সময়কে প্রোডাক্টিভ করে তোলার আন্তরিক প্রয়াস ছিলো যা এদের জাতীয় জীবনে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি যুগিয়েছে।
লকডাউনের ভেতরেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিকল্প পদ্ধতিতে খোলা রেখে নির্দিষ্ট সময়ে (২০২০-২১ সেশন) কোর্সসমূহ শেষ করে এবং পরবর্তী বছরের কোর্স (২০২১-২০২২) ঠিক সময়ে শুরু করে আবার শেষ হবার পথে। আমরা খেয়াল করলাম, এই লকডাউনে যখন প্রায় সবকিছু বন্ধ তখনও স্কুলগুলো খোলা! শেষ মুহুর্তে যখন বাধ্য হয়েছে, সবার শেষে বন্ধ হয়েছে এদেশের স্কুল আর সবার আগে খুলে দিয়েছে স্কুল। সর্বশেষ যে লকডাউন গেলো সেটাতে স্কুল খুলে দিয়েছে ফেব্রুয়ারী মাসে আর শপিংমল খুলে দিলো মে মাসে! আমাদের মেয়ে বেহেশতী স্কুলে পড়ে বলে এটা আমরা গভীরভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছি। একটা জাতি কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তা দেখার দারুণ কিছু মুহুর্ত মনে হলো জীবনে এসেছিলো।
আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার শিক্ষকদের পরামর্শ মেনে চলতে। ২০১১ সালে আমার প্রিয় ঠিকানা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যেদিন জয়েন করলাম, শাহনাওয়াজ স্যার বলেছিলেন, শিক্ষকতা কোনো চাকুরী নয়, এটা একটা ব্রত। স্যারের এই কথাটি আজও গভীরভাবে অনুভব করি যা আমার শিক্ষকতার দর্শন। আমি আন্তরিকভাবেই নিজেকে শিক্ষক হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছি এবং চাই, যা নিরন্তরভাবে চলমান।
শিক্ষক হিসেবে আমার মূল দায়িত্ব ছিল পড়ানো ও গবেষণা করা (নতুন জ্ঞান উতপাদন)। বিগত দিনের শিক্ষকতা নিয়ে আমার ভেতরে কোনো অপরাধবোধ নেই। শিক্ষক হিসেবে আমার পুরোটা সামর্থ্য ঢেলে দিয়েছিলাম ক্লাসরুমে-ফিল্ডে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। যেটুকু পারিনি সেটা মানুষ হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা। গবেষণা কিভাবে করতে হয় সেটা শিখছি। প্রতিদিন শিখছি, পড়ছি আর প্রতিনিয়ত নিজের কাছেই হেরে যাচ্ছি। যতটুকু করতে পেরেছি সেটা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ইউনিক।
এই গবেষণা বাংলাদেশকে পরিচয় নির্মাণ করতে সাহায্য করছে, আঞ্চলিক যোগাযোগের আদিমতম নির্ভরযোগ্য নিদর্শন হাজির করছে। অধিপতিশীল ‘রাজ ইতিহাস’র বাইরে ‘জনইতিহাস’ জানার, বোঝার ও হৃদয়ঙ্গম করার বিশ্বাসযোগ্য বয়ান তৈরি করছে। আপনি কেমন গবেষণা করবেন সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে। আপনার শিক্ষা বিশেষত পিএইচডি যা মূলত একটি ট্রেইনিং ফর ডুয়িং রিসার্চ এবং দেশে/বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত সুযোগ। আমি নিংসন্দেহে ভাগ্যবান যে, পৃথিবী বিখ্যাত অত্যন্ত প্রতিভাবান সব শিক্ষকদের নিকট থেকে হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, করছি যার ফলাফল সুদুরপ্রসারী হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : মো. মিজানুর রহমান জামি, ডক্টরাল স্কলার (পিএইচডি), আর্কিওলজিক্যাল সাইন্স, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য এবং সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়