মাওলানা মো. সাইদুর রহমান। গহীন গ্রামের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা যার আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠাকে ঠেকাতে পারেনি। তিনি ফজরের পর হাটা শুরু করে সারাদিন হেটে রাত্রে টাঙ্গাইলে পৌঁছেছেন। ১ টাকা হাত খরচ, সাড়ে সাত কেজি চাল আর তরকারির জন্য আড়াই টাকায় চলতো মাস। দিনে দুই বেলা খাবার খেয়েও চলেছে অনেক দিন। ছাত্রাবস্থায় বিয়ের পর লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন জীবনযুদ্ধ শুরু।
নরসিংদী বাবুরহাট থেকে লুংগী ও গামছা পাইকারী কিনে গ্রামের বাড়িতে বিক্রি করেছেন। কয়েকটি রিক্সা চুরি হবার পর রিক্সার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বই-খাতা বিক্রির ছোট দোকানের পাশাপাশি লন্ড্রির কাজও করেছেন। সকালে নিজের লেখাপড়া করে ৮-১০টি টিউশনী করতেন। টিউশনীর জন্য সকালে বাসা থেকে বের হতেন আর রাত নয়টা থেকে দশটার দিকে বাসায় ফিরতেন। এত পরিশ্রমের পরও মাসে আয় হতো মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। বিদেশে যাবার জন্য পাসপোর্ট করে কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রতারক দালালের খপ্পরে পরে অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েই আগামীর পথে এগিয়ে চলছেন বীরদর্পে। বার বার হোঁচট খেয়েও জীবন সংগ্রামে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মো. সাইদুর রহমান। একজন হাফেজে কোরআন। দাওরা-ই-হাদিস পাস আলেম। পড়াশোনা করেছেন আলিয়া মাদ্রাসায়ও। ২০০৬ সালে সৌদী সরকারের অধীনে হজ ভলেন্টিয়ার হিসেবে সৌদি আরব গমন করেন।
৬ মাস পর দেশে ফিরে কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে ডেভেলপার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর বেশ ভালো উন্নতি হতে থাকে। এর পাশাপাশি সৌদি আরবে হজ ও উমরার কাজ অব্যাহত রাখেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মানুষটি শৈশবে কৈশরে অভাব দেখেছেন।
অনেকেকে দুবেলা খাবার জোগার করতে হিমশিম খেতে দেখেছেন। অনেককে না খেয়ে থাকতে দেখেছেন। লাঙ্গল জুয়াল নিয়ে মাঠে কাজও করেছেন। তাইতো গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের প্রতি তার অপরিসীম দরদ। এত এত দুঃখ কষ্টের পরও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তৈরি করেছেন তিনি।