শাইখ মো. আবু সাঈদ উদ্যমী, স্বপ্নদর্শী ও আশাবাদী মানুষ। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি। মসজিদে আল কুবার ইমাম ও খতিব। সমাজ, দেশের মাটি ও মানুষের জন্য অবদান রাখতে ভালো উদ্যোগে সম্পৃক্ততার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। রয়েছে সামাজিক উন্নয়নের বড় স্বপ্ন, মানব কল্যাণের ইতিবাচক মন, মানবতার সেবা করার আবেগ এবং সমাজসেবা করার চিন্তা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন- সাহসী, প্রতিভাবান এবং অনুপ্রেরণাদায়ক তরুণ । ঈদের ছুটি কাটাতে স্বপরিবারে গ্রামের বাড়িতে এসে নিউইয়র্ক প্রবাসী এই বাংলাদেশি জীবন সংগ্রাম নিয়ে কথা বলেন আনিসুর রহমান এরশাদের সাথে।
লজেন্স বাদাম ও পাউরুটি বিক্রেতার অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প
যার শৈশবটা ভীষণ রকমের ট্রাজেডিতে ভরা। প্রয়োজনীয় খাতা-কলমও পাননি। ক্লাস টুতেই লজেন্স বিক্রেতা ছিলেন। ক্লাস ফোরে পাউরুটি বিক্রি করেছেন। ক্লাস ফাইভে ছিলেন বাদাম বিক্রেতা।এসব কষ্টসাধ্য সংগ্রাম করেও ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত ফার্স্টবয় ছিলেন।
মাদরাসার সকল ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেন। এইট থেকে নাইনেও সারা মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম হন। পড়াশোনার খরচ ওঠাতে সস্তায় কেনা পুরাতন বই বিক্রি করতেন। মাসে ত্রিশ টাকা বেতনে টিউশনী করেছেন। ক্লাস নাইনেই চারশত টাকা মাইনেতে মসজিদের খতিব ছিলেন। ক্লাস নাইন পড়েই দাখিল পরীক্ষা দিয়েছেন। এমন নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনায় ভরপুর আবু সাঈদের জীবন।
জীবনযুদ্ধে জয়ী অদম্য মেধাবী আবু সাঈদ
শাইখ মো. আবু সাঈদের জন্ম গরিব পরিবারে। তবে তার স্বপ্ন ছিল বড়। ছাত্রজীবনে মসজিদে ইমামতি করেছেন। টিউশনী করেছেন। নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে লজেন্স বাদাম ও পাউরুটিও বিক্রি করেছেন। বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। ইসলামিক স্টাডিজে এমএ করেছেন। মাদ্রাসা থেকে ফাযিল ও কামিল করেছেন। ৮ বছরের লজিং জীবন কাটিয়েছেন। কোচিং সেন্টারে মাস্টারি করেছেন।
হাই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে পেশাদার কর্মজীবন শুরু করেন। দুটি মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। ১৯ জানুয়ারি ২০১০ সাল থেকে আমেরিকায় প্রবাস জীবন শুরু করেন। বর্তমানে স্বপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকেন। তার একমাত্র ছেলে, স্ত্রীও আমেরিকান পাসপোর্টধারী; আমেরিকান নাগরিক। কুইন্সের মাসজিদ আল কুবায় ইমাম ও খতিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
বেতনহীন শিক্ষকের লজিং থেকে চালানো কর্মজীবন
শাইখ মো. আবু সাঈদ রাজাবাড়ি হাই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৩৯ জন আবেদনকারীর মধ্যে লিখিত মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে চাকরি হয়। দুই বছর চাকরি করি। তবে বেতন হয়নি। পরে তেলিনা দক্ষিণ পাড়া দাখিল মাদ্রাসায় ইন্টারভিউয়ে ফার্স্ট হয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র পান। নিয়োগপত্র পাবার পর সেখানে জয়েন করে রাজাবাড়ি স্কুলে রিজাইন লেটার দেন।
তেলিনাতে চার বছর শিক্ষকতা করার পরে ইন্টারভিউ দিয়ে ফার্স্ট হয়ে কামালিয়া চালা সিনিয়র মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই তিনি জয়েন করেন। চাকরি ছাড়েন ১৮ জানুয়ারি ২০১০। ১৯ জানুয়ারি ২০১০ আমি আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আমেরিকায় প্রবাস জীবন শুরু করেন। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি ও তার পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আছেন। আমার একমাত্র ছেলে, স্ত্রীও আমেরিকান পাসপোর্টধারী; আমেরিকান নাগরিক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন দিক নিয়েও। জানিয়েছেন তার ভালোলাগা, মন্দলাগা, আশা নিয়ে। তার তুলনামূলক নানাবিধ ব্যাখ্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অনেক কিছুই। নানাবিধ পরিস্থিতিকে সহজবোধ্য ভাষায় বিশ্লেষণ করেছেন, বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন।