বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের আস্থা-ভরসায় অনন্য স্টাডি সলিউশন্স

ব্যারিস্টার এরশাদ আহমেদ নিশান

তরুণ ব্যারিস্টার এরশাদ আহমেদ নিশান। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টাডি সলিউশন্স  এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। যুক্তরাজ্য এবং নিউজিল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের স্কাই টিভি, লন্ডন সাউথ ব্যাংক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউনিভার্সাল সলিসিটরস, ব্রিটিশ রেডক্রস, মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ারেস (এমএসএফ) এবং সেভ দ্যা এজ- এ কাজ করেছেন।

তাঁর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা অভিজ্ঞতার কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল সুযোগ-সুবিধা বা অসুবিধার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদেরকে পূর্বেই অবগত করায় তাকে সক্ষম করেছে।  তিনি নিউজিল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি এবং যুক্তরাজ্য থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। বহির্বিশ্বে শিক্ষার সুযোগ প্রকল্প, ব্যাবসায় ক্ষেত্রে কাস্টমারদের উপযুক্ত উপদেশ প্রদান, বাণিজ্যিক বিবাদের সমাধান, লোন সিন্ডিকেশন,বিদেশে বিনিয়োগ এবং অপরাধ মামলা নিরসনে বাংলাদেশের শীর্ষ আইন সহায়তা প্রতিষ্ঠান আজাদ এন্ড কোম্পানিতে কাজের মাধ্যমে তিনি পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জন করছেন।

স্টাডি সল্যুশন্সের লক্ষ্য অর্জনে তার অবিরাম সংগ্রাম ও সততা এবং দেশে-বিদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানে পারদর্শীতা স্টাডি সল্যুশন্সকে বিশ্বস্ত শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা সংস্থায় পরিণত করেছে। সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও শিক্ষার্থীদের সর্ব্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত মূল্যায়ন ধাপ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পেশাদারিত্ব সম্পন্ন যোগ্য ও অভিজ্ঞ কাউন্সিলর এবং অন্যান্য সাহায্য প্রদানকারী টিমের সাথে কাজ করেন তিনি।  জন্ম টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। এই বহুমুখী প্রতিভাবান-চৌকস ব্যক্তিত্বের সাথে মাসিক এডুকেয়ারের নির্বাহী সম্পাদক  আনিসুর রহমান এরশাদের আলাপ হয়,  যার অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হলো।

আনিসুর রহমান এরশাদ : স্টাডি সলিউশন্স প্রতিষ্ঠার পেছনের কারণ কী?

এরশাদ আহমেদ নিশান: স্টাডি সলিউশন্স প্রতিষ্ঠার পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে- আমি চাই বাংলাদেশের যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের বিদেশে গিয়ে পড়াশুনার তীব্র ইচ্ছা রয়েছে, তাদের ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য। আর এজন্য একটি যথাযথ প্লাটফর্ম থাকা দরকার, আর সেই প্লাটফর্ম তৈরির উদ্দেশ্যেই স্টাডি সলিউশন্স প্রতিষ্ঠা করা।

 আনিসুর: কেউ যদি বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে চায় তাহলে তার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে কী করা উচিত।

 নিশান: যদি বাহিরে উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো ড্রিম কোনো শিক্ষার্থীর থাকে তাহলে প্রথমে তাকে ঠিক করতে হবে- কোন সাবজেক্ট সে বাহিরে গিয়ে পড়তে চায়। এরপর তাকে বাছাই করতে হবে সে কোন দেশে যাবে। তারপর তাকে ঠিক করতে হবে- সে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। যে দেশে যে বিষয়ে পড়তে যেতে চায় সেই দেশে ও সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রিকোয়ারমেন্টগুলোর দিকে মনোযোগ রেখে সেগুলো পুরো করা প্রথম কাজ। তারপর আসবে তার অর্থনৈতিক অবস্থা ও ইংলিশ টেস্ট ইত্যাদি।

 আনিসুর: কোভিড ১৯ এর কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থমকে দাঁড়িয়েছে।বিশ্বের অন্যান্য দেশের অবস্থা কী?

 নিশান: করোনা পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব সারাবিশ্বের প্রতিটি শিল্পেই পড়েছে।শিক্ষাখাতও আক্রান্ত হয়েছে, এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুযোগ বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু দেশ। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া, জাপানসহ বেশ কিছু দেশ বিদেশি শিক্ষার্থী নিচ্ছে না। তবে এডুকেশন হাব হিসেবে পরিচিত কিছু কিছু দেশ তাদের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার স্বার্থে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার অংশ হিসেবে আগের মতোই বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ আরো অনেক দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে। তবে নতুন কিছু নীতিমালা করেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যদি কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যেতে চায় তাহলে যুক্তরাজ্য বা কানাডাসহ বেশ কিছু দেশে যেতে পারে।

আনিসুর: বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন দেশে পড়তে যাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হবে?

 নিশান : করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কানাডাতে আগের তুলনায় আমাদের ভিসা সাকসেস রেট অনেক কম।তবে যুক্তরাজ্যে প্রচুর স্টুডেন্ট যাচ্ছে বা যুক্তরাজ্যের সরকার নিচ্ছে।নতুন নিয়মের কারণে আগের তুলনায় এখন ইউকেতে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়েছে। বেশ কিছু ইনটেকেই আমাদের ইউকেতে ভিসা সাকসেস রেট আলহামদুলিল্লাহ শতভাগ, যেটা অন্য অনেক দেশেই হয়নি। সেনজেনভুক্ত ইউরোপের দেশগুলোর অধিকাংশেরই দূতাবাস ভারতে, সুতরাং তাদের ভিসা নিতে হয় ভারতে গিয়ে। যেহেতু করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের খারাপ পরিস্থিতির কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিসা ইস্যু হয়নি; সেহেতু ভারতে গিয়ে ভিসা করাতে হয় এমন দেশগুলোর ভিসার আবেদন স্থগিত আছে, ইউনিভার্সিটিগুলো আবেদন নিচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভারতে গিয়ে ফাইল সাবমিট করতে পারছে না। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে  আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, ‘ইউকে ইজ দ্য বেস্ট কান্ট্রি ফর দ্য বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ফর স্টাডি অ্যাবরোড’।

আনিসুর: আইইএলটিএস ছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব কী?

নিশান : থ্যাংক ইউ। এটি খুব ভালো প্রশ্ন।বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা দেখা যায়- আইইএলটিএস ছাড়া অমুক দেশে তমুক দেশে যেতে পারবে। এটা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্যে খুবই প্রাসঙ্গিক। আমি মনে কির- আইইএলটিএস এর অপরিহার্যতা নির্ভর করে কোন দেশে যাচ্ছেন এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন তার ওপর।

যদি আমি ইউকে’র উদাহারণ দেই- ইউকেতে আইইএলটিএস লাগবে কি লাগবে না এটা নির্ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর। ইউকের কোনো ইউনিভার্সিটি যদি কোনো স্টুডেন্টকে আইইএলটিএস ছাড়া নেয় তাহলে সম্ভব; এক্ষত্রে কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে ইউকের অনেক ইউনিভার্সিটিতে আইইএলটিএস না থাকলেও শিক্ষার্থীরা ইন্টারনাল টেস্ট দিয়ে যেতে পারছে। এটা একটা সুযোগ। অথবা ইদানীং বাংলাদেশের যেসব ইউনিভার্সিটির মিডিয়াম অফ স্টাডিজ ইংলিশ সেসব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্ষীদের ইউকের কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি আইইএলটিএস ছাড়া নিচ্ছে।

এমন চিন্তা করা ঠিক হবে না বা উচিত হবে না- আইইএলটিএস ছাড়া বিদেশে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করা যায় না বা তারা নেয় না। এমন না যে যারা উইদাউট আইএলটিএস এর কথা বলেন তারা ভুয়া। ব্যাপারটি হচ্ছে- যে ইউনিভার্সিটিতে যাবেন সেখানে ভর্তির যোগ্যতা দেখে নেবেন অথবা তাদের এডমিশন ডিপার্টমেন্ট থেকে নিশ্চিত হয়ে নেবেন ইউনিভার্সিটিটি আইএলটিএস ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থী নিচ্ছে কি-না বা তারা এমওআই অ্যাকসেপ্ট করছে কি-না।

যদি ইউনিভার্সিটি উইদাউট আইএলটিএসে নেয় অথবা এমওআই অ্যাকসেপ্ট করে আর আপনার যদি এমওআই থাকে তাহলে আইএলটিএস ছাড়াই যেতে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। মনে রাখতে হবে- ল্যাঙ্গুয়েজ কখনো নলেজ না। যদি কোনো স্টুডেন্টের ৩.৫ সিজিপিএ থাকে, ধরে নেয়া যায় সে ভালো স্টুডেন্ট। এই রেজাল্ট থাকলে, এমওআই থাকলে এবং মিডিয়াম অফ স্টাডিজ ইংলিশ থাকলে এবং যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাচ্ছে সেই ইউনিভার্সিটি এমওআই অ্যাকসেপ্ট করলে তাহলে তার ক্ষেত্রে আইএলটিএস থাকলে স্কলারশীপ বা অতিরিক্ত অন্য কোনো বেনিফিট সে পাবে না।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে- যদি ভিসার আবেদনপত্রের সাথে আইএলটিএস সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয় তবে দূতাবাস ঐ ফাইলের প্রতি পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। একজন শিক্ষার্থীর আইএলটিএস স্কোর রয়েছে মানেই ধরে নেয়া হয় সে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় খুবই আগ্রহী।

 আনিসুর : এদেশে এসএসসি পাস করে এইচএসসি লেভেলে কী বাইরে পড়ার সুযোগ আছে?

 নিশান : শুধু ইন্টারমিডিয়েট বা এ লেভেল শুধু না, কেউ চাইলে নাইন-টেনেও বিদেশে পড়তে পারবে।ইস্যুটা হচ্ছে কোন জিনিসটা বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয়।বাংলাদেশে সাধারণত আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েটটা বিদেশে যেয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। কানাডাতে ও ইউকেতে স্কুলিং ভিসা দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে কানাডার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী শুধু একা যেতে পারবেন না, বাবা অথবা মা যেকোনো একজনকে সাথে যেতে হবে। আর ইউকেতে কোনো অভিভাবক থাকতে হবে, যে তাকে গাইড করবে। অর্থাৎ ১৮ বছরের নীচে বয়স হলে কার কাছে বা কার তত্ত্বাবধানে ইউকেতে থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে। ইউকেতে বা কানাডাতে প্রতিবছর ১০ লাখের মতো বাজেট রাখতে হবে।

 আনিসুর : বিদেশে মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীদের সুযোগ কেমন?

নিশান : মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার অনেক সুযোগ বিদেশে রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেউ যে বিষয়ে অনার্স করেছে বাইরে সে সেই বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারবে; অথবা কেউ মাস্টার্স করেছে বিদেশে পিএইচডি করবে- এতে কোনো সমস্যা নেই।

তবে মেডিকেলের ক্ষেত্রে একটু জটিলতা আছে। যেমন বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস করেছে এখন এটার ওপরে কোনো পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি নিতে চাইলে এটা সহজ। তবে কঠিন হচ্ছে বাংলাদেশে এমবিবিএস কমপ্লিট করে বিদেশে যেয়ে আরেকটি ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসক হিসেবে সেখানে প্রাকটিস করা। মেডিকেল বোর্ডের সুনির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হতে হয়; যেমন ল্যাঙ্গুয়েজ রিকোয়ারমেন্ট, প্লাবস বা অন্যান্য। পরীক্ষা দিয়ে পাস করলে প্রাকটিস করতে পারবে। কোনো শিক্ষার্থী পোস্ট গ্রাজুয়েট করে বাংলাদেশে ব্যাক করলে সমস্যা নেই, তবে সেখানে থেকে যেতে চাইলে ঐ দেশে ডাক্তার হিসেবে প্রাকটিস করার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষায় পাস করতে হবে।

 আনিসুর : বিদেশে পড়াশুনার চিন্তা আসলে কাদের করা উচিত?

নিশান : প্রশ্নটা একটু ব্যাপক। এটা নির্ভর করে শিক্ষার্থীর কোয়ালিটি এবং তার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের ওপর। কে বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করবেন এটা তাকেই ঠিক করতে হবে। তিনিই ভেবে দেখবেন- বিদেশে যাবার মতো সামর্থ্যবান কি-না বা বিদেশ গেলে কতটুকু সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিদেশে যাওয়ার আগেই সব দিক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

আমি ২০১১ সালে ইউকেতে যাই। আমার সাথে অনেক স্টুডেন্ট ইউকেতে যায়। কিন্তু যাওয়ার পরে দেখা গেছে বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে অনেকেরই ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে। কারণ- অনেকগুলো কলেজ একসাথে বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপীয়ান কালচারের সাথে অনেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিল সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অনেকে সেখানে আর্থিক ব্যয় মেটাতে পারেনি।

অনেকে আগে ভেবেছিল- আমি যাওয়ার সময় যে খরচটা হচ্ছে সেটা দিব এবং ইউকেতে যাবার পরে নিজের খরচ নিজেই আয় করতে পারব, বাস্তবে কিন্তু পারেনি। অনেকে বাংলাদেশ থেকে অনেক ঋণ করে যাওয়ায় পড়াশুনার চেয়ে আয়-রোজগারকে প্রাধান্য দিয়েছে। সমস্যার কারণে কেউ পড়াশুনা ছেড়ে চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ে, কাউকে কাউকে বাংলাদেশে হতাশ মনে ফিরে আসতে হয়।

এসব দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সে কোন দেশে যাচ্ছে এবং কোন বিষয়ে পড়তে যাচ্ছে। একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। পোস্ট গ্রাজুয়েট বা আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে একটি দেশে পড়াশুনা করতে গেলে এক বছর থেকে ৩-৪ বছরে কত খরচ করতে চান। লিগ্যালি পার্টটাইম জবের সুযোগ আছে কি-না। থাকলে সম্ভাব্য কত ইনকাম করতে পারব। এই যে টাকার প্লাস-মাইনাস হিসাব- এসব করে যদি কেউ মনে করে যে টাকাটা ব্যয় করতে পারবে তখন তার বিদেশে পড়াশুনা করতে যাওয়া উচিত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, এডুকেশনাল ক্যাপাবিলিটি বিবেচনা করতে হবে। যেখানে মিডিয়াম অফ স্টাডিজ যদি ইংলিশ হয় এবং সেখানকার ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজও যদি ইংলিশ হয় তবে তার অন্তত এতটুকু সেন্স থাকতে হবে- আমি ঐখানে গিয়ে ইংলিশে পড়ালেখা করব। আমার পরীক্ষাগুলো ইংলিশে হবে, প্রেজেন্টেশন ইংলিশে হবে, লেকচারগুলো সবই ইংলিশে হবে- আমি এগুলো মানিয়ে নিতে পারব কিনা। যদি মনে হয় কো-আপ করতে পারব না, তাহলে ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ এমন দেশে যাওয়া উচিত না। এই দুটি দিক খুব ভালো করে দেখলেই আমার মনে হয় একজন শিক্ষার্থী নিজেই সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে।

অনেকে চিন্তা করে বিদেশে যেতে হলে মনে হয়-অনেক টাকার প্রয়োজন বা অনেক বেশি মেধাবী হওয়া লাগে। অনেক ভালো স্টুডেন্ট না হলে বাইরে পড়ালেখা করা যায় না- কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। ফুল ফান্ডেড বা ফুল ব্রাইট স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে যেতে চাইলে একাডেমিক রেজাল্ট অবশ্যই ভালো হতে হবে বা ভালো জব এক্সপেরিয়েন্স লাগবে।আর সেলফ ফান্ডেড বা প্রাইভেট ফান্ডেড পড়তে চাইলে সেক্ষেত্রে এভারেজ মানের স্টুডেন্ট হলেও বিদেশে পড়তে পারবে।

আমি বলব- আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে জিপিএ ৪ কিংবা ৩.৫ যদি হয় আর ইংরেজিতে যদি ভালো হয় তাহলে সে একাডেমক্যালি বিদেশে শিক্ষা নেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন। আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে শুরুতে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা থাকলে সে বিদেশে পড়ালেখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেল কিছু দেশে এক বছরের আবার কিছু দেশে দুই বছরের, এক্ষেত্রেও শুরুতে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার বাজেট থাকতে হবে। তারপর সে পার্টটাইম করে বা যদি খুবই পরিশ্রমী হয় তবে উপার্জন করে দিতে পারবে।

মূলকথা হলো- পড়ালেখার খরচ ও লিভিং খরচের হিসাব করে যদি নিজেকে সামর্থ্যবান মনে করে। এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে যদি সে মনে করে ইংলিশ মিডিয়াম বা সেখানকার একাডেমিক কারিকুলামের সাথে মানিয়ে চলতে পারবে তবে সে বিদেশে যাবার চিন্তা করতে পারে। এসব বিবেচনা করেই বিদেশে যাবার জন্য যোগ্য নাকি অযোগ্য, সামর্থ্য আছে নাকি নেই- তা বুঝতে পারবে।

 আনিসুর : স্টাডি সলিউশন কোন কোন ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে? সেবাদানের ক্ষেত্রে এটি কেন অন্যদের চেয়ে আলাদা?

 নিশান : বর্তমানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার আলোকে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সব ধরণের সহায়তাই দিচ্ছি। আমরা অন্যদের থেকে আলাদা- কারণ অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিভার্সিটির রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করার জন্য সহযোগিতা  থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া পর্যন্ত সবই আমরা করি। সিভি বা এসোপি আমরা মূল্যায়ন করি। যদি কোনো এডিট দরকার হয়, ইউনিভার্সিটির সাথে সমন্বয় করে স্টান্ডার্ড সিভি ও এসওপি মেইন্টেনের জন্য যথাযথ গাইডলাইন প্রদান করি।

একজন স্টুডেন্ট যখন ভিসার অফার লেটার পায় কখন তাকে দূতাবাসে আবেদন করতে হয়, আমরা সেক্ষেত্রে আমাদের ইমিগ্রেশন আইনজীবী অথবা ইমিগ্রেশন ল ফার্ম দ্বারা পুরো সাপোর্ট দেই। এসব সাপোর্ট আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। আমাদের সাথে কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন করতে হয় না। আগে বা পরে কোনো ফাইল ওপেনিং চার্জ দিতে হয় না, সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না।

ইউকেতে ১১টি ইউনিভার্সিটির সাথে আমাদের অ্যাফিলিয়েশন রয়েছে । কানাডার ২০টি ইউনিভার্সিটির সাথে আমাদের অ্যাফিলিয়েশন রয়েছে । এছাড়া মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক ইউনিভার্সিটির সাথে আমাদের অ্যাফিলিয়েশন রয়েছে । আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদিত অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতেছি; যাতে স্টুডেন্টরা আমাদের কাছ থেকে জেনুইন সাপোর্ট পায়। আমরা কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হওয়ায় এখানে কোনো মিস লীড করা হয় না, প্রতারণা করা হয় না।

আমাদের অফিসে এসে কোনো শিক্ষার্থী চাইলে ইউনিভার্সিটির এডমিশন ম্যানেজার অথবা রিক্রুটিং ম্যানেজারের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে, কোনো শিক্ষার্থী চাইলে তার সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান অথবা মডিউল লীডারের সাথে কথা বলতে পারে। সাবজেক্ট মডিউল স্ট্রাকচার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে পারে। আমরা এগুলো যোগাযোগ করে ঠিক করে দিয়ে থাকি। অর্থাৎ কেউ যদি বিদেশে পড়ালেখা করতে যেতে চায়, এজন্য আগে থেকেই যেসব ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার; আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সেসব বিষয়েই সচেতন করে থাকি।

আমরা কানাডা ও যুক্তরাজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আর আমাদের এখানে কর্মরতদের অধিকাংশই কানাডা ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন।ফলে তাদের প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করে। আমরা কোনো শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আসলে তার একাডেমিক ক্যারিয়ার ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিচার-বিবেচনা করে যথাযথ গাইডলাইন দিয়ে থাকি। এমনকি কানাডায় বা ইউকেতে যাবার পর পার্টটাইম জব পাবার জন্য যেভাবে প্রস্তুত করা দরকার, যে ধরণের তথ্য দরকার তা দিয়ে থাকি।

যেহেতু বাংলাদেশে এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের নামে অনেক প্রতারণা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। ফলে আমি মনে করি, যদি একজন শিক্ষার্থী স্টাডি সলিউসনের সাধ্যমে ভিসা প্রসেস করে তবে সে যে সাপোর্ট পাবে তা তার ভিসা পাবার ক্ষেত্রে খুবই হেল্পফুল হবে এবং ভবিষ্যতে সে যে দেশে যাবে সেই দেশে ক্যারিযার গড়ায়ও সহায়ক হবে। আমরা স্টুডেন্টের সাথে ইউনিভার্সিটির সম্পর্ক তৈরি করছি, ইমিগ্রেশন সাপোর্টও দিচ্ছি। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে স্টাডি সলিউসনের স্টাডি ইমিগ্রেশন সাপোর্ট হতে পারে সম্পূর্ণ আস্থা ও ভরসার জায়গা।

আনিসুর : স্টাডি সলিউশন নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

 নিশান : আমি চাই- বাংলাদেশের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট যারা বাইরে তাদের স্টাডিকে কনটিনিউ করতে চায় তাদেরকে বিশ্বমানের সার্ভিস দেয়া। তারা বাইরে গিয়ে যে ধরণের সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে অথবা তাদের বাহিরে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে সেগুলোর ব্যাপারে সচেতন করতে। আমি চাই শিক্ষার্থীরা বিদেশে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বমানের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। এক্ষেত্রে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের যত ধরণের সাপোর্ট নেয়া দরকার, সব সাপোর্টই যাতে স্টাডি সলিউশন থেকে পায়, স্টাডি সলিউশনকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর।

 আনিসুর : শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?

 নিশান:  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যে কাজটি করতে পারেন তা হচ্ছে- আপনি বাহিরে কোন দেশে যেতে চান, কোন সাবজেক্টে যেতে চান এটাকে প্রাথমিকভাবে ঠিক করে ফেলেন। তারপর দেখেন ইমিগ্রেশনের জন্য আপনার কী কী রিকোয়ারমেন্ট এবং সাবজেক্ট ভিত্তিক ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আপনার কী কী রিকোয়ারমেন্ট।যে রিকোয়ারমেন্টগুলো আছে সেগুলো আগে নিজে নিজে পূর্ণ করেন; তারপর যেকোনো ভালো কনসলটেন্সি ফার্মের হেল্প নিয়ে  যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাজ করেন। প্রচার-প্রপাগাণ্ডায় কান না দিয়ে নিজে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিন- কোন দেশে যাচ্ছেন, বা কোন সাবজেক্টে পড়তে যাচ্ছেন।

 আনিসুর : ব্যস্ততার মাঝেও সময়দানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 নিশান:  আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে পাঠক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top