প্রতিটি মানুষই নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে

আনিসুর রহমান এরশাদ

আনিসুর রহমান এরশাদ। শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

তার লেখা হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ ও পরিবার বই পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। পরিবারের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর সম্পাদক। ক্যারিয়ার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্স এর নির্বাহী সম্পাদক। শিক্ষা বিষয়ক মাসিক পত্রিকা মাসিক এডুকেয়ার এর নির্বাহী সম্পাদক। প্রতিষ্ঠা করেছেন পাবলিশিং হাউজ নলেজ পার্কতরুণ এই লেখক ও উদ্যোক্তার মুখোমুখি হয়েছিল ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্সের সম্পাদক মো. বাকি বিল্লাহ।

মো. বাকি বিল্লাহ: আপনার হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ প্রকাশিত হয়েছে। পরিবার বই প্রকাশ হয়েছে। বই লেখায় আপনি আগ্রহী হলেন কেন?

আনিসুর রহমান এরশাদ: আমি মনে করি- বই পড়া, বই কেনা, বই লেখা খুব ভালো কাজ। এসবের মাধ্যমেই আলোকিত মানুষ, গড়ে ওঠে, আলোকিত সমাজ তৈরি হয়, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন হয়, জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন  তৈরি হয়। তাছাড়া ভালো বই লেখাতো সদকায়ে জারিয়া। আমি যেহেতু প্রচুর পড়ি, ফলে পাঠক হিসেবে আমি লেখকদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। আমি আসলে লেখক হিসেবে লিখি না, আমি মূলত পাঠক। কিন্তু আমি যা পড়ছি, যা দেখছি, যা শিখছি- তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে চাই। পাঠ পরবর্তী আমার চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতিকে প্রকাশ করতে চাই। বইতো কখনো বিলুপ্ত হবে না; হোক তা ছাপানো কিংবা ই-বুক। বইয়ের শিক্ষা থেকে যাবে পাঠকের মনে।

বই পড়ায় আনন্দ অনেক। বই পড়লে বুদ্ধি বাড়ে, সক্ষমতা বাড়ে, জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। বই পড়লে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে, বাড়ে প্রশান্তি। বই পাঠ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়, কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি করে, স্মরণ শক্তি বাড়ায়, শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়, লেখনী শক্তি বৃদ্ধি করে। বই পড়লে বাড়ে ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ক্ষমতা, বাড়ে বিশ্লেষণী চিন্তা, বাড়ে সংলাপ দক্ষতা, বৃদ্ধি পায় একাগ্রতা, তৈরি হয় সহানুভূতি বোধ ও আত্মসম্মান বোধ। বই পড়ে শুধু সফলতা লাভ করা যায়- এমন নয়, বই পাঠ ভালো ঘুমাতেও সাহায্য করে।

 মো. বাকি বিল্লাহ: অনেক বিষয় থাকতে নেতৃত্ব বিষয়ে বই লিখলেন? বইটি সম্পর্কে জানতে চাই।

আনিসুর রহমান এরশাদ: যেকোনো সেক্টরেই নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে নিজে প্রচেষ্টা চালান; অন্যকে লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করেন, কাঙ্খিত আচরণে উদ্বুদ্ধ করেন, অনুপ্রেরণা দিয়ে উদ্যেগী করেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করায় উৎসাহিত করেন। এখন যে নেতার লক্ষ্যটাই মহৎ নয়, তার নেতৃত্বে একদল মানুষ কোনো মহত্তর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে না।ভালো নেতার মাধ্যমে কর্মীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। একজন দক্ষ নেতা বা গুণী নেতার কর্মীরাও দক্ষ হয়, গুণী হয়। আর অসৎ নেতা প্রভাব বিস্তার করে জোর-জবরদস্তি করে। অধিকাংশ মানুষই তাকে মন থেকে সম্মান করে না। নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন আছে। নেতৃত্বের ধরন ভেদে চ্যালেঞ্জও ভিন্ন। আগামীর নেতৃত্বকে নয়া নয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।আর বাংলাদেশে নেতৃত্বের নানা ধরনের সংকট রয়েছে। বাংলাদেশে নেতার অভাব না থাকলেও সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের সংকট প্রবল। যে দেশে জন্ম নিয়েছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতা, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মতো নেতা সে দেশে সঠিক নেতৃত্ব চর্চার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।

হযরত মোহাম্মদ (স.) এ বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও বড় নেতা মানবতার জন্য মডেল। মানুষকে তিনি পরিচালিত করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন এবং সর্বোত্তম ডিসিপ্লিন শিখিয়েছেন। সম্পূর্ণ নেতিবাচক সমাজকে ইতিবাচক সমাজে পরিবর্তন করে নতুন সভ্যতার সৃষ্টি করেন। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অনুপ্রাণিত করেছেন। এরপর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) । ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, আল-ফারুক ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব  (রা.)। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। উমর ইবনে আব্দুল আযিয (রহ)। যারা শাসক হয়েও ছিলেন নিঃস্ব।

তাদের উজ্জ্বলতম কর্মকাণ্ড পৃথিবীকে আরো এগিয়ে দিয়েছে। নিজের আরাম-আয়েশ ও সুখ-সুবিধার ওপর জনগণের প্রয়োজন ও সুখ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিতেন। নিজেরা ভালো খেতেন না, ভালো পরতেন না, আলিশান ভবনে বসবাস করতেন না, উৎকৃষ্ট জাতের বাহন ব্যবহার করতেন না। সব ধরনের বিলাসদ্রব্য পরিহার করতেন। জীবন-জীবিকা অতি সাধারণ মানুষের স্তরে নামিয়ে আনতেন। তা-ই আহার করতেন, যা একজন নিচু স্তরের মানুষ মেটাতে পারত। তেমন পোশাকই পরতেন যা একজন অতি সাধারণ মানুষ পরতো। নিজেদের সম্পদ অকাতরে বায়তুলমালে দিতেন, দান করতেন। জীবন প্রণালি ছিল সহজ-সরল। অন্যদের অধিকার যথাসময়ে প্রদান করতেন। কোনো মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না। সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে মানুষকে মর্যাদা দিতেন।

বিভিন্ন জাতির মাঝে মহান নেতা দেখা গেছে। যেমন- ভারতে মহাত্মা গান্ধী ও ইন্ধিরা গান্ধী, দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা, ইরানে ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনী (রহ​.), চীনের মহান নেতা মাও সে তুং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্টিন লুথার কিং আব্রাহাম লিংকন, ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট ও জর্জ ওয়াশিংটন, ফ্রান্সের মহাবীর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, ব্রিটেনের উইনস্টন চার্চিল ও মার্গারেট থ্যাচার, ম্যাসিডোনিয়ার আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো, জার্মানির এডলফ হিটলার, আর্জেন্টিনার চে গুয়েবারার, রাশিয়ার জোসেফ স্ট্যালিন ও ভ্লাদিমির লেনিন, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তুরস্কের মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক, আলবেনীয় বংশোদ্ভূত মাদার তেরেসা। এখনতো রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনকে, উত্তর কোরিয়ায় কিম জং উনকে, চীনে শি জিন পিংকে, জার্মানিতে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে, তুরস্কে রজব তাইয়েব এরদোগানকে মহান নেতা বলা হচ্ছে বা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে মহান নেতাতো আর দাবি করার ব্যাপার নয়, কে মহান নেতা আর কে নয় তা ইতিহাসই ঠিক করবে।

তবে আমি যেটা বলব- আসলে নেতৃত্ব আর কর্তৃত্বকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না। কর্তাই সব সময় নেতৃত্ব দেবেন আর বাকিরা অনুসরণ করবে এমন কোনো কথা নেই। পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে যে কেউ সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করার মাধ্যমে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারে। নেতৃত্বকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা না করে কাজকেন্দ্রিক চিন্তা করা উচিত। প্রতিটি মানুষই নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে।নেতৃত্বের মূল কথা কাজ। যে ব্যক্তির পদবি বড়, সেই বড় নেতা নয়। পদমর্যাদা বা আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব ছাড়াও নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। একজন নেতা যে সব সময়ের জন্যই নেতা, সব কাজেই নেতা- এমন কোনো কথা নেই। একজন মানুষই কখনো থাকতে পারে নেতার ভূমিকায়, কখনো কর্মীর ভূমিকায়, কখনো নিরব ভূমিকায়। বর্তমান বিশ্বেও পদ-পদবী-ক্যারিয়ার ছাড়াই কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা। তাদের নেতৃত্ব আরো অনেকের সৃজনশীলতা ও শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানবসমাজকে এক ও অভিন্ন হিসেবে চিন্তা করে তারা নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

 মো. বাকি বিল্লাহ: আপনার পরিবার বইটি সম্পর্কে জানতে চাই।

 আনিসুর রহমান এরশাদ: পরিবার বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা ও কাজের কারণেই ‘বন্ধন প্রশান্তি প্রেরণা ও বিকাশে পরিবার’ নামক বই লেখা। আমি মনে করি, পরিবার -জীবনে গতিপথ বদলে দিতে পারে। সার্থক জীবনের সন্ধান দিতে পারে। টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারে। ভালো মানের ও ভালো মনের সুনাগরিক উপহার দিতে পারে। আামি বলব- পারিবারিক বন্ধন ও পারিবারিক মূল্যবোধকে সবেচেয়ে গুরুত্ব দিন। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের মানসিক দূরত্ব কমান। পরিবারকে সময় দিন, পরিবারের যত্ন নিন। পরিবারের সদস্যদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটান। দুঃসময়ে সাপোর্ট দিন, সান্ত্বনা দিন।

পরিবার চিরকালের জন্য পরিবার। আপনি যেখানে কর্মরত, কর্মক্ষেত্র আপনার মৃত্যুর পর আরেকজনকে নিয়ে নেবে। কিন্তু সন্তান মাতা-পিতা পাবে না,  স্ত্রী স্বামীকে পাবে না; অনুপস্থিতি অনুভব করবে, শূন্যতা অনুভব করবে। পরিবার যদি ভালো হয়, ব্যক্তি ভালো হবে, ব্যক্তি ভালো হলে দেশ বা রাষ্ট্র ভালো চলবে। একটি অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলন পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। পরিবারকে সুস্থ ধারার বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার উর্বর ক্ষেত্র বানাতে হবে। গৃহের প্রশস্ততা, বড়ত্ব-চাকচিক্যের চেয়ে গৃহে থাকা মানুষগুলোর মানবিক মান-মর্যাদা ও সুখকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

 মো. বাকি বিল্লাহ: লেখালেখির জগতে কীভাবে আসলেন?

 আনিসুর রহমান এরশাদ: এখনতো লেখি ভেতরের তাগিদ থেকেই। আর শুরুটা যদি বলি- ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে  টা্ঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত আজকের টেলিগ্রাম পত্রিকায় ‘নকল’ কবিতাটি ছাপা হয়। ১৯৯৯ সালের ২২ এপ্রিল  ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনালী বার্তা সোনালী সাহিত্য পাতায় হাসি মুখ গল্পটি ছাপা হয়। প্রথম গল্প ও কবিতা ছাপা হয়েছিল আসলে সাংবাদিক মোজাম্মেল হক  কাকার কল্যাণে।  তবে আমার শিক্ষক ও কাকা মোঃ শামছুজ্জামানের লেখা কবিতা পড়তাম, ছোটফুফুর সাথে আবৃত্তি করতাম, আর বড় ফুফা সাইফুল ইসলাম সাগরের সুন্দর হস্তলেখায় লেখাগুলো পড়তাম-এগুলো লিখতে আগ্রহ তৈরি করে থাকতে পারে। আমার বাবা আমার পুরো ছেলেবেলাটাই প্রবাসে কাটিয়েছেন; ফলে উনি খুব সুন্দর হস্তলেখায় আমাকে ‘বাবা এরশাদ’ বলে সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। আমি চিঠির জবাব দিতাম। চিঠি লেখাও পড়াশুনার বাইরে লেখার ঝোঁক তৈরি করে থাকতে পারে। বি.এ.এফ শাহীন কলেজ ঢাকায়ও কলেজ বার্ষিকীতেও একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। নিবন্ধ প্রতিযোগীতায় পুরস্কার প্রাপ্ত একটি লেখা আদিত্য শাহীন সম্পাদিক জনভাষ্য নামের একটি সংকলন গ্রন্থে ছাপা হয়েছিল।

এরপরে ত্রৈমাসিক নতুন কণ্ঠ নামে একটি ম্যাগাজিন বের করেছিলাম।  নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম। দুলাল ভাই, তুহিন ভাই ও মাহবুব ভাই ছিলেন। প্রয়াস নামক একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেছি। অণ্বেষণ নামক নিবন্ধ সংকলন সম্পাদনা করেছি। এরপর কাদের ভাইয়ের সাথে মাসিক এডুকেয়ার নামে শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক একটি ম্যাগাজিন বের করি। নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম। এরপর হেলাল ভাইয়ের সাথে পাক্ষিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকায় কনটেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছি। তাছাড়া বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়াটা  লেখালেখিতে উৎসাহ জুগিয়েছে। আর অনলাইনে কাজের হাতেখড়ি অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য এডিটরে। এরপর সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখালেখি করা, পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন পরিবার ডটনেট চালু করা, ক্যারিয়ার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্সের সাথে যুক্ত হওয়া, বাংলাদেশ২৪অনলাইন ডটনেটে সাথে যুক্ত হওয়া। এসবের মধ্য দিয়ে অনলাইনে কাজের অভিজ্ঞতা হয়। আর এখনতো কাজ করতে করতে অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। আর লেখালেখির জগতেই যেহেতু আছি, লেখালেখি করতে ভালোলাগে, লেখালেখি করাটাইতো স্বাভাবিক।

মো. বাকি বিল্লাহ: পরিবার ডটনেট সম্পর্কে বলবেন কী?

আনিসুর রহমান এরশাদ: পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’। ‘বন্ধন প্রশান্তি প্রেরণা ও বিকাশে পরিবার’ স্লোগান নিয়ে এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবারকে সময় দান ও যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যা‌য়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করাই এর উদ্দেশ্য।

পরিবার ডটনেট চায়- সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যা‌দা-সুখ নিশ্চিত হবে। এটি মানুষের কাছে সুখ ও ইতিবাচকতা ছড়াতে চায়। পরিবার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, আত্মিক উন্নতি, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক প্রশান্তি, ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক, গতিশীল পরিবার ও সুস্থ সমাজ নিশ্চিতকরণে ভুমিকা রাখাই এর অঙ্গীকার।

পরিবার ডটনেট চায়- পরিবারকে সময় দান ও পরিবারের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি, পারস্পরিক বন্ধনগুলোক আরো সুদৃঢ় করা এবং পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যার সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে আরো সুন্দর করা। এটি চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, বন্ধন হবে সুদৃঢ় ও জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা।

আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

মো. বাকি বিল্লাহ: পরিবার ডটনেট এর পেছনের কারণ কী?

আনিসুর রহমান এরশাদ: আজকাল জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা উন্নত ক্যারিয়ারের অভিপ্রায়ে অনেকেই পারিবারিক সান্নিধ্যের বাইরে বড় হচ্ছে। স্নেহ-প্রীতি-প্রেম-ভালোবাসাময় পরিবারের আন্তরিকতার পরশ না পেয়ে একাকিত্ব নিয়ে সময় কাটছে অনেকের। শৈশব-কৈশরে কাজের লোকের আদর-যত্ন যে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যের বিকল্প হতে পারে না এটাও ‍অনেকে বুঝতে পারছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। ভিডিও গেমস খেলা, কম্পিউটার-ইন্টারনেট-সেলফোনের বিনোদন কখনো দাদি-নানির কাছ থেকে শুনা গল্প কিংবা মামা-কাকাদের শুনানো ছড়ার বিকল্প হতে পারে না। আমি অভিভাবকদের বলবো- সন্তানের চাহিদা পূরণেই তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ নয়, সন্তানকে সময় দিতে হবে; যাতে সে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে।

বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে সবাইকে সফল ও সার্থক জীবনের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা জীবনব্যাপী চলে কখনো অন্যের সাথে কখনো নিজের সাথে। জীবন সংগ্রামে বিজয়ী হবার স্বপ্ন পূরণে আমাদের ভালোবাসার নীড় পরিবার ছেড়ে বাড়ি থেকে হলে-মেসে, গ্রাম থেকে শহরে কিংবা দেশ থেকে বিদেশে ছুটে বেড়াতে হয়। এই কর্মব্যস্ততা কখনো নিজের জন্য, কখনো বাবা-মায়ের জন্য, কখনো স্ত্রী সন্তানের জন্য। এই ব্যস্ততা থাকবেই।  তারপরও বলবো- সাধ্যানুযায়ী পরিবারকে সময় দিন এবং পরিবারের যত্ন নিন।

পরিবার ডটনেট প্রত্যেক মানুষের কাছে পরিবারের গুরুত্ব ও কার কী করণীয় তা তুলে ধরতে চায়, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চায়। যদি প্রতিটি ঘরে ঘরে এমন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে যারা অন্যের অধিকারের ব্যাপারে দায়িত্ববান এবং পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার ব্যাপারে যত্নশীল; তবে সুখী পরিবারই সমৃদ্ধ দেশ ও উন্নত জাতি গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top