স্ক্রিন আসক্ত প্রজন্মে মেধাশুন্য জাতি!

screen addiction

ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠী মেধাশুন্য ও অন্তসারশূণ্য হবার আশঙ্কা বাড়ছে। ঘরবন্দি-গৃহবন্দি জীবন, কঠোর শাসন, খেলার মাঠের অভাব, সহপাঠী বা বন্ধুদের সাথে মিশবার সুযোগহীনতা, বাবা মায়ের কর্মব্যস্ততার ফলে সময় পার করতে ডিভাইস ব্যবহার শুরু করে আস্তে আস্তে আসক্ত হচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের ঝুঁকি বাড়ছে। কিশোর ক্রাইম মানসিকতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। রেগে যাওয়ার প্রবণতা ও অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সব ধ্যান-জ্ঞান থাকে স্ক্রিন কেন্দ্রিক। ফলে স্মার্টফোনের স্ক্রিন ছাড়া খাওয়া-দাওয়া হয় না, পড়তে বসা হয় না, ঘুমাতে যাওয়া হয় না; যা নীরব ঘাতক।

স্ক্রিন আসক্তির ফলে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ ও দেরিতে কথা বলার সমস্যা। স্ক্রিন এডিকশনের ফলাফল খুবই ভয়াবহ। তারা প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছে না। বিকাশের জন্য যথাযথ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নেই। স্বাভাবিক আলোর অভাব দেখা দিচ্ছে। বাইরের আলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। বাইরের আলো-বাতাসের পৃথিবী ভুলে যাচ্ছে। আর্টিফিসাল বা কৃত্রিম আলো চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশের মারাত্মক ক্ষতি করায় অন্ধত্ববরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা বাড়ছে। দৃষ্টি ও শ্রবণেন্দ্রিয়ে জটিলতা এবং অন্ধত্ব যেন এক অন্ধকার ভবিষ্যতের হাতছানি!

শিশুদের অনিদ্রা, হতাশা, অ্যানোরেক্সিয়া, আগ্রাসী মনোভাব, বান্ধবহীনতা, আত্মবিশ্বাসহীনতার অন্যতম কারণ স্ক্রিন আসক্তি। মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। স্মার্টফোনের স্ক্রিনে সেঁটে থেকে পড়াশোনাতে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, অল্প সময়ে অধৈর্য হয়ে যায়, বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কমে যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না, সামান্য বিপদে দিশাহারা হয়ে যাচ্ছে।

অ্যাপে গিয়ে ইচ্ছেমতো খেলা বা গেম পেয়ে স্ক্রিনে আসক্ত হওয়ায় শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে, অরুচি ও ক্ষুধামন্দার শিকার হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, স্থূলতা বেড়ে যাচ্ছে, সৃজনশীলতা ও স্বাভাবিক চিন্তনদক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে। বড়ই এলার্মিং সময়! এসবের ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে জানতেন বলেই অ্যাপলের স্টিভ জবসের বাসায় বাচ্চাদের আইপ্যাড ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। মাইক্রোসফটের বিল গেটস তার মেয়েকে ১৪ বছর বয়সের আগে মোবাইল দেননি। ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ, ইউটিউবের স্টিভ চেন ও জাভেদ করিম, গুগলের ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন সন্তানদের ডিজিটাল স্ক্রিন বা গ্যাজেট থেকে দূরে রাখলেও অসচেতন অভিভাবকরা এসব সরবরাহ করে সর্বনাশ করছেন।

বিভিন্ন ডিভাইসে ক্রিন আস্ক্তদের মনোনিবেশ খুব গাঢ় থাকায় কথা বলতে পারছে না, কথা বলার চেষ্টাও করছে না, শ্রবণ প্রতিবন্ধি থেকে বাকপ্রতিবন্ধি হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা বাড়ছে। জীবনের ছন্দপতন ঘটছে। সামাজিকীকরণ হচ্ছে না। সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। শারীরিক স্থবিরতার কারণে স্থুলতা বাড়ছে। হাড়ের গঠন দুর্বল হচ্ছে। নানা রকম রোগব্যাধি ও অসুস্থতা অল্প বয়সেই শরীরে বাসা বাঁধায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাচ্ছে। স্ক্রীনের সময় বৃদ্ধি মানে জীবন থেকে জীবন হারিয়ে যাওয়া। স্ক্রিন আসক্তি মানেই আশেপাশের মানুষ ও প্রকৃতিও অনেক দূরে চলে যাওয়া।

স্ক্রিন আসক্তরা প্রতিদিনকার রুটিন মানতে পারে না, গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না, ছড়া-কবিতা-গান বলতে পারে না, শব্দ-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় না, নানান রং-এর অ্যানিমেশনে মোহাবিষ্টতায় জগত হয়ে যায় অর্থহীন। পরিবার বা সমাজ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। তাদের কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেতে থাকে। স্ক্রীনের সময়টাকে সঠিকভাবে আচরণ গঠনে ব্যবহার করতে এবং আসক্তিটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় চোখের সামনে অভিভাবকদের স্বপ্ন-আশা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

ইন্টারনেট ব্যবহার, গেইমসের অ্যাপ ডাউনলোড, ভার্চুয়াল গেইমস খেলা, দিন-রাত ইউটিউবে বিচরণ, ডিজিটাল দুনিয়ায় ডুবে নীলের দুনিয়ায় প্রবেশ। স্ক্রিনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয়া, বিকেলে মাঠে খেলতে না যাওয়া, পড়ালেখার মান অবনতি, রাত জাগা, স্বাস্থ্যের অধঃপতন, বায়োলজিক্যাল ক্লক ওলটপালট হওয়া। অবাধ্য, অস্থির, জেদী, বেয়াদব ও অসামাজিক মানুষে পরিণত হওয়া। ডিভাইস আসক্তি থেকে ইন্টারনেট আসক্তি ধীরে ধীরে পর্ন আসক্তিতে পরিণত হওয়া ভয়ংকর ব্যাপার।

আগে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে যে বয়সীরা ঘুমিয়ে যেতো এখন রাত বারোটা বেজে গেলেও তাদের চোখে ঘুম আসে না! স্ক্রিন সরিয়ে নিলে চিৎকার করে গলা ছেড়ে হাত-পা ছুড়ে অনবরত কান্না, কারো সাথে মিশতে না পারা, ঠিকমতো কথা বলতে না পারা, কমিউনিকেট করতে না পারা, ইন্সট্রাকশন ফলো করতে না পারা, শুধু তোতা পাখির মতো কিছুই আওড়ানো! স্ক্রিন আসক্তির কারণ চিহ্নিত করে এর প্রভাব ও প্রতিকার স্পষ্ট হওয়া দরকার।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top