হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ : নেতৃত্বের গাইডলাইন

হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ একটি অসাধারণ বই। তরুণ লেখক ও গবেষক আনিসুর রহমান এরশাদের দ্বিতীয় বই এটি। নেতৃত্ব ও হৃদয়জয়ী নেতৃত্ব বলতে কী বুঝায় এবং এটা কেমন করে সৃষ্টি হয়- তা খুবই সুন্দরভাবে বইটিতে প্রস্ফুটিত হয়েছে। সমাজের উন্নয়নের জন্য, পরিবর্তনের জন্য, মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করতে চাইলে নতুন নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন। আইডিয়ার উন্নয়ন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বইটি সহায়ক হতে পারে। হৃদয়গ্রাহী কথামালায় তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে বইটিতে।

নেতৃত্বদানের কৌশল রপ্ত করার ক্ষেত্রে বইটি সহায়ক হবে। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দরকার, তা বইটিতে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নেতা এমন হবেন যে সবার দায় তিনি বুক পেতে নেবেন, কর্মীর ওজনটা বহন করবেন। তাদেরকে স্বপ্ন দেখাবেন, মোটিভেশন দেবেন। স্বপ্ন ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবেন।

অনেক নেতা নেতৃত্ব দেন; কিন্তু জনগণের মন জয় করতে পারেন না। মন জয় করার জন্য যা যা দরকার তার রসদ এই বইয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটি পড়লে ভবিষ্যত প্রজন্মের মনোজগতে পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ বইটিতে পৃথিবীর নামি-দামি অনেক প্রতিষ্ঠিত ও সফল ব্যক্তিবর্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। সব দল-মত-পথের লোকদের কাছেই বইটি আকর্ষণীয় হতে পারে। বইটি থেকে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষ সবাই উপকৃত হতে পারেন।

লেখক চান এদেশের তরুণ এবং যুবসমাজ নিজেরা এমনভাবে গড়ে উঠুক যারা দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করবেন। তারা এমন নেতৃত্বকে বেছে নেবেন যারা আগামী দিনের বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে মানবপ্রেমী নেতাদেরকে। যারা মানুষকে ভালোবাসেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। মানুষের জন্য নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে চান। বইয়ের লেখাগুলোর চর্চা করলে তরুণ প্রজন্ম বাস্তবধর্মী নেতৃত্ব উপহার দিতে পারবে।

তরুণ সমাজকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখানোর লক্ষ্যে এই মুহূর্তে বইটি খুবই প্রয়োজনীয়-গুরুত্বপূর্ণ। নয়টি অধ্যায় রয়েছে। লেখক অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃত্বের অবস্থান ও চিন্তাকে খুব চমৎকারভাবে উল্লেখ করেছেন।

বইটি পাঠকের মাঝে এমন সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখাবে; যেখানে কোনো কষ্ট থাকবে না, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অন্যায় দূরীভূত হবে। নেতৃত্ব দানের দক্ষতার উন্নয়নে বইটি সবার জন্যই উপকারে আসবে। অদূর ভবিষ্যতে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য যে ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে ধরনের নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়া দরকার; সে বিষয়ে কথাবার্তাগুলো বইটির মধ্যে সুন্দরভাবে চলে এসেছে।

আনিসুর রহমান এরশাদ তথাকথিত জনপ্রিয় কোনো বিষয় বেছে নেননি।একটি অজনপ্রিয় কিন্তু জীবনের জন্য ও ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ইস্যু নেতৃত্ব। জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক নেতৃত্বকেই তিনি বেছে নিয়েছেন।নেতৃত্বের বিভিন্ন পন্থা-পদ্ধতি-বৈশিষ্টগুলো গবেষণা কাজের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মানুষের উপকারে আসবে। বইটি অ্যাকাডেমিকভাবেও কাজে লাগানো যাবে।

অধ্যায়ভিত্তিক সাব-টাইটেল দিয়ে খুব সুন্দরভাবে বিন্যাস করা হয়েছে। মাঝে মাঝে ছবির ব্যবহারও রয়েছে। বইটির গেটাপ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। ফুটনোটের ব্যবহার পাঠ উপযোগিতা বাড়িয়েছে।

বইটি থেকে অনেকে নেতৃত্বের ব্যাপারে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে এবং লিডারশিপ প্রসেসে এগিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি। মানুষ শুধুমাত্র সঠিক নেতৃত্বের অভাবে, নেতৃত্বের সঠিক বোঝাপড়ার অভাবে, জীবন ঘনিষ্ঠ লিডারশিপের অভাবে অনেক কষ্ট করছে। এমন নেতৃত্ব দরকার যারা মানুষের জন্য ভাববে, মানুষের সমস্যার সমাধান করবে। হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ তৈরিতে এই বইটি আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়াবে। বইটিতে সেবাধর্মী নেতৃত্ব তৈরির কথা বলা আছে।

আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, নেতৃত্বদানের কৌশল রপ্ত করা প্রত্যেকের জন্যই খুব জরুরি। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রও নেতৃত্বের কারণে বদলে যায়। নেতৃত্বের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয়তো সবার থাকে না। সেক্ষেত্রে বইটি পড়লে অনেকেই উপকৃত হবেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছে পরিবার ডটনেট থেকে। বইটি পড়ে দেখতে পারেন, ভালোলাগবে আশাকরি।

বই পরিচিতি

অর্থবহ নেতৃত্ব আলোকিত নেতায় শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে- নেতার পরিচয়, নেতৃত্বের ধারণা, নেতৃত্বের প্রকারভেদ, নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি, নেতার কার্যাবলি ও দায়িত্ব, নেতৃত্বের তত্ত্ব, নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, নেতৃত্ব প্রসঙ্গে অযৌক্তিক বিবেচনা ও নেতৃত্বের শৈলী।

সার্থক নেতায় টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও যোগাযোগ, নেতৃত্ব ও জনরায়, নেতৃত্ব ও দল, নেতৃত্ব ও জনগণ, নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব, নেতৃত্বের বৈধতা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও উন্নয়ন, নেতৃত্ব ও ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও গণতন্ত্র, নেতৃত্ব ও সংগঠন, নেতৃত্ব ও পরিবার, নেতৃত্ব ও রাজনীতি, নেতৃত্ব ও কর্মী-অনুসারী, নেতৃত্ব ও আবেগ, নেতৃত্ব ও  কর্মসূচি  ও নেতৃত্বের শিল্পকলা।

মানুষ মানুষের জন্য শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- মানবাধিকার, নারীর অধিকার, মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, শিশু অধিকার, ন্যায়বিচার, মৌলিক চাহিদা ও দারিদ্র বিমোচন।

চর্চা থেকেই নেতৃত্বের বিকাশ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে- সেবক থেকেই নেতা, সাধারণ থেকেই অসাধারণ, পেশাদারিত্বে নেতৃত্বের উন্নতি, কর্মক্ষেত্রে ঈর্ষা নেতৃত্বে বেমানান, নেতৃত্বে প্লাসপয়েন্ট লেখালেখি, কথা হবে যেমন, বক্তৃতা দেয়ার কৌশল ও নেতৃত্ব বিকাশে সমস্যা।

স্বপ্নের পথে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শীর্ষক ৫ম অধ্যায়ে রয়েছে- যা-ই হও না কেন ভালো কিছু হও। আপনার অভ্যাসই আপনার মূল্য। সময়কে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার। মন যেটা সায় দেয়, তা-ই করো। কাজ,  খাদ্য, পানি ও লবণের নিশ্চয়তা। নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান অর্জন। যত দ্রুত সম্ভব শুরু করে দিন।

সঠিক পরিশ্রম আনবে সফলতা। পথ ও উপায় বের করতে হবে। প্রচারের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি। অজুহাত যেন লক্ষ্যচ্যুত না করে। লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই করো, যা মন চায়। মানুষের চাহিদাকে গুরুত্বদান। দুর্দান্ত কী করা যায় তা নিয়ে ভাবুন। লেগে থাকতে জানতে হবে। যা পারেন তার সবই করতে হবে। বিনিয়োগের অর্থ হারানো যাবে না। সত্য কথা বলবেন। স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।

মানুষের গল্পটা শোনো। ভালোবাসার কাজটি বেছে নাও। কাজে মনোযোগী হতে হবে। আমি মানি না বলতে শিখুন। চারপাশের মানুষের জন্য কিছু করো। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। যা আছে তা থেকেই ভালো কিছু বের করে আনতে হবে। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সংকল্প। অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম হতে হবে।

উজ্জীবন উদ্ভাবন উন্নতিসাধন শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে রয়েছে- উদ্যোগ নিন, সংগঠক হোন। পরিচয় যোগাযোগ বন্ধন। পার্সোনাল ব্রান্ডিং। প্রাতিষ্ঠানিক ব্রান্ডিং। কান্ট্রি ব্রান্ডিং।

গণভিত্তি গণজোয়ার গণমুক্তি শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে- কখনো হাল না ছাড়া। বদলালে নেতা বদলায় কর্মী। কঠিনেরে ভালোবাসেন নেতা। নেতা কী করবেন, কী করবেন না। সুশিক্ষা। আদর্শ নেতা হয়ে উঠুন। স্বপ্ন ও পরিবর্তন।

গণআস্থা ও আগামীর নেতৃত্ব শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে- ক্রমোন্নতির প্রয়াস, জীবন ব্যবস্থাপনা, ভোগবাদী মানসিকতা পরিহার, নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ নেয়া, নেতৃত্ব চর্চার বাঁধা দূর করা, সমস্যার সমাধান করা, কলুষতামুক্ত হওয়া ও দ্বিধা-দ্বন্ধ দূর করা।

জননেতা থেকে প্রিয়নেতা শীর্ষক নবম অধ্যায়ে রয়েছে- অপরের জন্য কষ্ট করায় মহত্ব। তারতম্য করার অধিকার নেই। নিজের বোঝা অন্যের ওপর না চাপানো। যা ভালো-লাগে তাই দান করো। যে দিকে এগুচ্ছেন, সেটাতে মনোযোগ দিন। দক্ষ না হতে পারাই আসল ব্যর্থতা। মানবিক মর্যাদার অবনমন করা যাবে না। কাজের জন্য চড়া মূল্য হাকাবেন না। পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয় । প্রাসঙ্গিক চিন্তাধারা। গুণগত পরিবর্তন। আপনার পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নেতার যা না করলেই নয়। সবশেষে রয়েছে তথ্যসূত্র।

লেখক মো. বাকীবিল্লাহ : শিক্ষা উদ্যোক্তা, ক্যারিয়ার কাউন্সিলর ও ডিজিটাল মার্কেটিং কনসালটেন্ট

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top