রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত পরিবর্তন জরুরি

politics

আনিসুর রহমান এরশাদ: যেকোনো জাতির রাজনৈতিক চিন্তার বন্ধ্যাত্বের কারণে দেশ গভীর সংকটে পড়লে তা সহজে কাটে না। দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নতি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন অনেক বেশি প্রয়োজন, প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়াটাই সব কিছু নয়। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে সকল ক্ষেত্রে সময়োপযুগী মানে এগিয়ে নেয়া এবং সবার কল্যাণ নিশ্চিত করাই বড় কথা। রাজনীতিবিদ নেতারা যদি দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তাকে বোঝেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সব দল যদি আন্তরিক থাকেন, শুধু ভোটের বাক্স ভরার চিন্তায় মগ্ন না হন, সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেন, রাজনীতিকে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতার দৌড় মনে না করে মানুষের সেবার হাতিয়ার ভাবেন- তবেই স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ঘরে ঘরে মিলবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা দেখাতে। পারেনি সংযত হতে, গণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলতে, সাংবিধানিক আচার-আচরণ রপ্ত করতে। ফলে রাজনৈতিক সংকট নানান ধরণের মানবিক সংকট তৈরি করছে। গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে গুমতন্ত্র আর পেশিতন্ত্রের উত্থানে দেশের মানুষকে আতংকিত হতেও দেখা গেছে। যেহেতু রাজনৈতিক সংস্কৃতিই দেশজ সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটায়, লালন করে, বিস্তার ঘটায় এবং নিয়ন্ত্রণ করে। সেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে অনাকাংখিত বৈশিষ্ট্যগুলো উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে তার নেতিবাচক প্রভাব জনগণের মাঝে রীতিমত আশংকার সৃষ্টি করছে।

বিরোধীদের ভালো কাজকেও মন্দ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বিরাট বাধাঁরই সৃষ্টি করে। তথ্য প্রমাণ ছাড়াই অঘটনের জন্যে প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার মাধ্যমে একের বিরুদ্ধে অপরকে উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা ছাড়া কিছু হয় না। একের পর এক আত্মসমালোচনার পথে না যেয়ে নানান ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা, সহনশীলতা ও সৌজন্যতাবোধকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিদায় দেয়া মোটেই কাম্য হতে পারে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বে নারী থাকলেই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়া বুঝায় না। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্রে নেতৃত্ব প্রদত্ত নেতৃত্ব, অর্জিত নেতৃত্ব নয়। বাবার ক্যারিশমা কিংবা স্বামীর ক্যারিশমা ধার করে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয় না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাত ও সংঘর্ষ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিপক্ষকে শত্রু ভেবে দমনের একটি প্রবণতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণত অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীনেরাই বিরোধীদের ওপর আগে চড়াও হয়। গুম-হত্যা-আগুন-অপহরণ-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-নির্যাতন-মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে রাজনীতির জটিল সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষী বানানোর অভিপ্রায়ে অপরাধ সংঘটিত করে অপরের ওপর চাপায়ে দেয়ার একটি মারাত্মক প্রবণতাও পরিলক্ষিত হয়েছে।

রাজনৈতিক স্বার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে প্রয়োজনে নতুন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক খেলার মাঠে মানুষের প্রাণও তুচ্ছ খেলনায় পরিণত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতৃবৃন্দের কর্মকান্ড এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী ছাড়া নিজেদের জানমালকে অনিরাপদ মনে করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।

একটু গভীরভাবে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী-জোরজবরদস্তি করে জমিজমা বা সম্পদ দখলকারী, চোরাচালান কারবারী, অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্তরা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক কোনো নেতার পৃষ্টপোষকতা পেয়ে থাকেন। ক্ষমতাধরদের জন্যে মাসোহারা-উপহার-উপটৌকন-ঘুষ দেয়াটা অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধী কিংবা ভিকটিমদেরকে একটু নিরপেক্ষতার সাথে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- তাদের সাথে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর করা আচরণ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন রকমের হয়। কোনো মানুষই ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নয় অথচ নিজ রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক কর্মকান্ডের সমালোচনাও অনেকে পরিহার করেন। দলীয় পূজা আর অন্ধ আনুগত্য দলের সব সিদ্ধান্ত ও কাজকে সঠিক মনে করতে ভূমিকা রাখে। নিজ দলকে বিতর্কের উর্ধ্বে তুলতে যেয়ে রাজনীতিবীদ নেতা-কর্মীগণ অনেক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনকেই কলুষিত করে ফেলেন।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দানে নিয়োজিত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদল দমনের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে না। স্বার্থ হাসিল ও সুখ প্রাপ্তিই মূখ্য হলে স্বার্থগত কারণেই সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যাহত হয়। কোনো সভ্য দেশেই আইন ব্যবস্থা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদেরই স্বার্থরক্ষা করে না। পুলিশের ভূমিকা হতে হবে দল-মত নির্বিশেষে সকল নাগরিককে রক্ষাকারীর। দেশের স্বার্থ রক্ষা ও জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যেই যদি রাজনীতি পরিচালিত হতো তবে দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের বিরোধে উন্নয়ন ব্যাহত হবার প্রশ্নই তৈরি হতো না। দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্র শক্তিশালী করণে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বশক্তি নিয়োগ করলে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সত্যিকারার্থে দেশপ্রেমিক,মানবপ্রেমিক ও নৈতিক দৃঢ়তাসম্পন্ন নেতৃত্ব ছাড়া রাজনীতি দেশের বৃহত্তর স্বার্থ নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারবে না।

ক্রসফায়ার, অপহরণ, গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবাধিকার লংঘনের মতো জঘন্য কর্মকান্ডের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা দেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতির দিকেই নিয়ে যায়। তাই বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডকে কোনোভাবেই বৈধতা দেয়া যাবে না। নেতাদেরকে তোষামদি ও চাটুকারিতা না বাড়িয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে যৌক্তিক আচরণ করতে হবে। টাকার বিনিময়ে নমিনেশন দেয়া নেয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। রাজনীতির জন্য টাকাই যাতে মূখ্য হয়ে না পড়ে। কালো টাকা ও পেশী শক্তিই রাজনীতির মূল নিয়ামক উপাদান হলে ক্ষমতার অপব্যাবহার বাড়বে।

ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতাহীন, সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল সবাইকেই দেশ ও দশের স্বার্থকে দলের স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মাঠগরম করার অশুভ রাজনীতি কাম্য নয়। হারিয়ে যাওয়া সৌজন্যতাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের প্রবল মাত্রা ক্ষতিকর। কারো যদি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের মানসিকতাই না থাকে, সমালোচনার নামে দায়িত্বজ্ঞানহীন অপপ্রচারের আত্মঘাতি প্রবণতা বেশি মাত্রায় থাকে তবে তিনি রাজনীতিতে আসবেন কেন? অন্য কোনো পেশায় যান। সেবার নেশা না থাকলে রক্তের কিংবা টাকার নেশা থাকলে তার রাজনীতিতে আসাটাই উচিৎ নয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রবণতা সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অরাজকতা, দ্বন্ধ-বিদ্বেষ যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। কপটতা, সঙ্কট, ভাবাদর্শের সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে অপব্যবহার করে উত্তরাধিকারের রাজনীতি কলুষিত করে ফেলছে দেশকে। ব্যক্তি প্রাধান্য, মৌল সমস্যার অনুপস্থিতি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যুদ্ধংদেহী মনোভাব/মাস্তানবাদ, স্ববিরোধিতা দেখা যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যমতের সংকট, আকাশ কুসুম বিপ্লবের বাণী, বিরোধিতা অশনি বার্তা বয়ে আনছে। ছাত্র সংগঠনের প্রাধান্য, বাম রাজনীতির গতিশীলতা ও ডানপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব দেখা যাচ্ছে।

অনেকে দলীয় বিবাদের বাইরে থাকতে মুখে নিরপেক্ষতার কথা বলে নৈতিক বিতর্কের বাইরে অবস্থানের চেষ্টা করেন এটা যেমন সত্য তেমনি অনেক সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করাকে অভ্যেসে পরিণত করেছেন। সমাজের অনেক মানুষ আড়ালে যাকে গালি দেন, যার সমালোচনা করেন কোনো এক অজানা স্বার্থে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। যে মানুষ কোনো রাজনৈতিক নেতাকে তার বাপ-মা তুলে গালাগাল করছেন আবার তাকেই মুখোমুখি হলে সালাম দেন, কদর করেন, গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। ক্ষমতায় সমাসীন কোনো নেতা যতটা প্রশংসা শুনেন ক্ষমতা হারানোর পর ততটাই নিন্দা শুনেন। তেলে মাথায় তেল দেয়া আর সামান্য প্রাপ্তির আশায় সাদাকে কাল আর কালাকে সাদা বলার যে খারাপ চর্চা দেখা যাচ্ছে তা মোটেই ভালো কোনো লক্ষণ নয়।

একদিকে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে রত দলের ভেতরে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ চলে আর অন্যদিকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতার মসনদে আরোহণের প্রচেষ্টা চলে। কারচুপি করে নির্বাচনে জেতা আসলে হারার চেয়েও জঘণ্য। কয়েক ধরনের চামচাদের আবির্ভাব দেখা যায় যারা স্বার্থের প্রয়োজনে সুবিধাবাদি নীতি গ্রহণ করে আজ যার সাথে বন্ধুত্ব করে কাল তারই সাথে শত্রুতা করে। পাতি নেতারা নেতার অনুগত থেকে দালালি করতে যেয়ে নিজের রুচি-ব্যক্তিত্বকেও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না।

রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি কোনো দলীয় সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছে তা বিবেচনা করে সেই দলের গুণকীর্তনে নিয়োজিত হন আর অন্য দলগুলোকে অপছন্দ করে যাবতীয় কাজ করেন তবে দেশের চেয়ে দল বড় হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি দলীয় বিবেচনা অতিমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে তবে ন্যায়বিচার ও মানবধর্মের মৃত্যু ঘটে। জাতির সেবক দলীয় সেবক হয়ে গেলে তা জাতির জন্যে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়।

গণতন্ত্রের মহিমায় জনকল্যাণ ধারণাটি সরকারের কর্মসূচিতে ঢুকলেও জনসংখ্যা ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের সংখ্যার তুলনায় জনসেবার পরিকাঠামো ও অর্থব্যয় এখনো অতি সামান্য। অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ খাতেও অর্থব্যয় করতে সরকার কখনো কখনো অনিচ্ছুক আবার কখনো কখনো অপারগ। অভাবের দেশে সকল নাগরিককে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী প্রাপ্য না দিয়ে যদি কে কে সেবা বা সহায়তা পাবে তা রাজনৈতিক সমর্থনের বিবেচনার দ্বারা নির্ণীত হয় তবে তা মোটেই আইনগত বৈধতা পাবে না। কিন্তু যখন শক্তি ও ক্ষমতা আইন বাস্তবায়ন-প্রয়োগ-প্রণয়নের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে তখন ন্যায়-নীতি হেরে যায় যা মারাত্বক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সমাজের উঁচু স্তরেও নীতিবিহীন কাজ যথেষ্ট চলে, উচুঁস্তরের মানুষদের সাথে দালাল ও চামচাদের মাধ্যমে নীচুশ্রেণির মানুষদের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অবশ্য এক রাজনৈতিক দলের লোক অন্য দলের লোকের সাথেও আত্মিয়তা করায় পারস্পরিক সুবিধাদানের রাজনীতি দেখা যায়। কেউ অর্থশক্তি দিয়ে আবার কেউ পেশি-শক্তি দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা জাহির করেন, অনেকে নিজের অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ কিংবা কোনো জাগতিক অর্জনকে নিরাপদ করার অভিপ্রায়ে বিরোধী মতের পরিবারের সাথেও আত্মিয়তার সম্পর্ক জুড়েন।

প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের প্রয়োজন হয় রাস্তার রাজনৈতিকদের, নির্বাচনে সময় কেবল নয়, ক্ষমতা সংগ্রহ ও ব্যবহারের প্রাত্যহিক ক্ষেত্রে। আবার দালাল-চামচাদের লোক জড় করার ক্ষমতা যতই থাকুক কিংবা গুন্ডা-মাস্তান-বখাটেদের সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করার শক্তি যতই থাকুক সেগুলি প্রয়োজন হয় নেতাদের প্রভাব বিস্তারের স্বার্থেই। আন্দোলন সংগ্রাম যদি দেশ গড়ার কাজে না লাগে বরং সস্তা জনপ্রিয়তা পেয়ে নেতারা যদি নিজেদেরর নৈতিক ক্ষতিসাধন করে, অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে দলের ক্ষতি করে কিংবা প্রতিপক্ষ দলের বিরোধিতা করতে যেয়ে দেশের ক্ষতি করে তবে এসব অর্থহীন হয়ে পড়ে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে আরো ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন পট পরিবর্তনের ফলে সুযোগ-সুবিধা প্রার্থীদের মধ্যে স্বার্থের সম্বন্ধ-বন্ধন আরো জোরদার হতে থাকে যা অনেক সময় রাজনৈতিক আদর্শ বন্ধন কেউ ছাড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যদি ভালো উদ্যোগ নিয়ে সৎ প্রতিযোগিতা হতো তাহলেতো ভালো হতো। কিন্তু সংকীর্ণতা সৃষ্টি করে সীমাবদ্ধতা আর তৈরি করে দ্বন্দ্ব।

ভোটারগণ ভোটের রাজনীতিতে ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠলেও নির্বাচনের পরে নির্বাচিতরা গরিব ভোটারদের কথাটা আর ভাবার দরকার মনে করে না। গরিব মানুষেরা সবসময় স্বেচ্ছায় এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার অংশীদার হয় না, তারা অনেক সময় বাধ্যও হয়। চরম রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি বৈরী পারিপার্শ্বিকতায় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে অনেকে। সংকটময় পরিস্থিতি ও অনিরাপদ ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষেরা। নূন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তারা শুধু নয় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে বড়লোক উদ্যোক্তাদেরও অতিরিক্ত ঝুঁকি বাড়ে।

যদি আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার সংকট তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তবে সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য শ্লথ কিংবা অচল হয়ে পড়ে। শুধু ব্যবসায়ীরা কেন সহিংস ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকে সব শ্রেণি পেশার মানুষই। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলের আপোসহীন মনোভাব ও বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে বাড়ছে উৎকণ্ঠা; যা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ করে ফেলেছে শান্তিপ্রিয় দেশবাসীকে।

দেশের সচেতন মানুষ ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কখনো সমর্থন করে না। শান্তিপূর্ণভাবে জীবন পরিচালনা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করতে হলে শান্তিপূর্ণ উপায়েই যেকোনো রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন হওয়া দরকার। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে গণতান্ত্রিক সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। সহিংস কর্মসূচির ফলে বাড়ে চরম হতাশা, স্থবির হয়ে পড়ে উৎপাদন, বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান যাতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। সংঘাত ও সংঘর্ষের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশকে ক্রমান্বয়ে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। এটা ঠিক যে, জনসাধারণকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি করে নেতারাও স্বস্তিতে থাকতে পারবে না।

সংঘাতময় রাজনীতি বাড়লে অর্থনীতি হয়ে পড়ে স্থবির, বিনিয়োগ হয় বাধাগ্রস্ত, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পড়ে নেতিবাচক প্রভাব, শিল্পোৎপাদন হয় ব্যাহত, রফতানি খাতে ঘটে বিপর্যয়, ব্যাংকিং ব্যবসাতে হয় নৈরাজ্যে, বীমা ব্যবসাতে নামে ধস, শেয়ার বাজারে পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। এতে দেশের অর্থনীতি হয় নিম্নমুখী, নেতিবাচক প্রভাবে দেশের কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় বড় চ্যালেঞ্জ। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের মাটি ও মানুষের স্বার্থে একসাথে বসে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বের করতে হবে।

আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, গোটা অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলে কোনোদিনই জনগণের ভোগান্তি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির লাগামকে টেনে ধরা যাবে না। হরতাল-অবরোধ-ভাঙ্চুর প্রতিবাদের একমাত্র যৌক্তিক ভাষা হতে পারে না। যদিও প্রশ্ন থেকে যায় বাংলাদেশের রাজনীতিবীদদের যে মন মানসিকতা, রাজনৈতিক দলগুলোর যে দৃষ্টিভঙ্গী তাতে দাবি আদায়ের জন্য হরতালের বিকল্প কোনো কর্মসূচি আছে কি? দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাই অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়ার একমাত্র কারণ নয়। অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণেও। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশকে গতিহীন করে দিলে এর দায়ভার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাসরোধ করে কেউ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা খুঁজে বের করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাবে এটাই দেশের মানুষ আশা করে।

রাজনীতিবিদদের মানসিকতার পরিবর্তন খুব বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের যে চর্চা রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে এটা বন্ধ করতে হবে। কখনোই সংঘাত গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়লে দেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়, যা কাটিয়ে উঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পিছিয়ে যাওয়া আর পেছনে টানার সংস্কৃতি থেকে রাজনীতিবীদদের বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা দেশকে রক্ষা করবে, জাতিকে রক্ষা করবে, ব্যবসায়ীদের শান্তিতে ব্যবসা করতে দেবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত পরির্তন সময়ের অনিবার্য দাবি। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে,

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ

সংলাপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট দূর করতে সকল রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের একসঙ্গে বসে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতার উপায় খোঁজে বের করতে হবে।

সঠিক গণতন্ত্র চর্চা

সঠিক গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দেশবাসীকেই করতে হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা সংঘের সুপারিশে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতেই হবে।

তরুণদের এগিয়ে আসা

বাইরে থেকে কেউ এসে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করে দেবেন বলে ভাবাটা নিজেদের চূড়ান্ত অযোগ্যতা এবং দৈন্যের বহিঃপ্রকাশ। রাজনীতিবিদদের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মাটি ও মানুষের কল্যাণে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সম্ভাবনাময় এবং মেধাবী তরুণরাই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করবে, যতই সংকট থাকুক শেষ পর্যন্ত সমাধানও আসবে।

সমস্যার সমাধানে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধান খুজে বের করার সুস্থ ধারা তৈরি করতে হবে। অসুস্থ লড়াই বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নে সমঝোতার মনোভাব দেখাতে হবে। গণতন্ত্রে ভিন্ন মত থাকে, সমাধানের পথও থাকে। সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনার বিকাশে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে।

স্বাধীন মর্যাদা রক্ষায় আপোষহীনতা

দেশের স্বাধীন মর্যাদার জন্য অবমাননাকর কোনো কর্মকান্ড কোনো অবস্খাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কূটনীতিকসহ বিদেশিদের উচিত তাদের সীমার মধ্যে অবস্খান করা এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলা। বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়ে কূটনীতিক তথা বিদেশীদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। অথচ রাজনীতি নিয়ে অস্থিরতার সুযোগে এ দেশের রাজনীতিবিদরাই মধ্যস্থতার জন্য বিদেশি কূটনীতিকদের সুযোগ করে দেন। দেশের লাল সবুজ পতাকার মানকে সমুন্নত রাখতে, শাপলা শালুকের বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপোষহীনতা কাম্য।

সবর্স্তরে চেতনার জাগ্রত অবস্থা

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুবাতাস লাগাতে প্রয়োজন জনতার চেতনার জাগ্রত অবস্থা। নতুন একটি পথ তৈরির জন্য দেশের জনগণকে বিভিন্ন বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেখানে সাধারণ মানুষেরা একটি নতুন মুক্তির পথ উন্মোচিত করেছিল। সচেতন তরুণ সমাজকে এই পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সর্বপ্রথম চিন্তার একটি গ্রাউন্ড তৈরি করা। রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও ঘৃণাবোধের পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে বাধ্য। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন যে, চোখের বদলে চোখ নিলে সারা পৃথিবী অন্ধ হয়ে যায়।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যে যৌক্তিক উদ্যোগ

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনীতির লক্ষ্য যদি মানুষের কল্যাণ হয় আর সরকারি ও বিরোধীদল যদি সেই রাজনীতি করে, তাহলে তাদেরকেই সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব তৈরিতেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মনোযোগ দিতে হবে। যেকোনো উপায়েই ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘ করতে চাওয়া আর বিরোধী দলের ক্ষমতা দখল করতে চাওয়া গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।

সংবিধান সম্মত পদ্ধতি অবলম্বন

নিয়মতান্ত্রিকতার পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের বিকল্প হিসেবে রাজপথের আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। সশস্ত্র আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে একটি সংবিধান বহির্ভূত পদ্ধতি। মিছিল-মিটিং, ধর্মঘট, হরতাল এবং অবরোধের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডই সাধারণত রাজপথের আন্দোলনের হাতিয়ার। এ প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ধ্বংসাত্মক রূপ নেয়। দাবি আদায়ের নামে জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীলতার চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে।

তাই যতদিন রাজপথের আন্দোলন সমস্যা সমাধানের কিংবা রাজনৈতিক দাবি আদায়ের মাধ্যম হিসেবে থাকবে, ততদিন আমাদের রাজনীতিতে সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে এবং জাতি হিসেবে নিজেদের এগিয়ে নিতে হলে বিরাজমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার বিকল্প নেই।

মালিক না ভেবে সেবক ভাবতে হবে

নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যারা যান, তারা রাতারাতি রাষ্ট্রের সবকিছুর মালিক বনে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সবকিছুই দখলে নিয়ে নেন। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে কর্মী-সমর্থক ও আপনজনদের মধ্যে ফায়দা হিসেবে বিতরণ করেন। এভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের ধারক-বাহক না হয়ে বহুলাংশে সিন্ডিকেটের রূপ ধারণ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দলবাজি এবং ফায়দাবাজির কোনো অবকাশ নেই। কারণ রাষ্ট্রের সকল সম্পদের মালিক জনগণ এবং সরকারের দায়িত্ব দল-মত নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা।

পরিশেষে এটি বলা যায় যে, বাংলাদেশের মূল সংকটটি স্রেফ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়। ব্যর্থতা নিছক গণতন্ত্রেরও নয়। বরং মূল সংকটটি মানবিক। সমস্যা এখানে বিবেকহীনতার। বহুদেশে প্রাকৃতিক সম্পদে অতি সমৃদ্ধ হলেও শিল্প-বিপ্লব,সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবও আসেনি। অথচ প্রাকৃতিক সম্পদে দরিদ্র দেশেও বিপ্লব এসেছে। ইংল্যান্ড, জার্মান, জাপান ও কোরিয়ায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের কারণ উন্নত সোসাল ক্যাপিটাল তথা মানবিক উন্নয়ন। মানব-উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন আসে না- এটাই বাস্তবতা। তাই বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে যাতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সকল নাগরিকের সুখ শান্তি নিশ্চিত করাটা সহজ হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য শ্লোগানের পরিবর্তে সময়োপযোগী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা চালু করা উচিৎ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top