স্বপ্নপূরণে কাজ শুরু করার উপযুক্ত সময় এখনই

কোনো শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয় তোমার জীবনের লক্ষ্য কী বা তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? অনেকে বলবে ডাক্তার হতে চাই, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, পাইলট হতে চাই, বিসিএস ক্যাডার হতে চাই, ব্যাংকার হতে চাই, লেখক হতে চাই, গবেষক হতে চাই, বিজ্ঞানী হতে চাই ইত্যদি। কেউ বলবে না ভালো মানুষ হতে চাই, ভালো মুসলমান হতে চাই। অথচ আপনার শরীর সুস্থ হলে, মানসিক সুস্থতা থাকলে এবং আত্মিকভাবেও পরিশোধিত হলেই কেবল শিক্ষা যথার্থ হয়েছে বলা যায়।

এই যে জীবিকা অর্জনের একটা উপলক্ষ্যকে জীবনের লক্ষ্য বানানো এতে মানুষ খুব ছোট হয়ে যায়। পেশার সাথে সম্মানের কিছু নাই। পেশার কারণে কেউ সম্মানিত বা অসম্মানিত হতে পারে না। ভালো মানুষ হওয়াকে যদি ১ ধরা হয় বাকি একেকটির জন্য ডানে এক এক করে শূণ্য বসে বড় সংখ্যা হয়, জীবনটা মূল্যবান হয়। কিন্তু পদ-পদবী-ক্ষমতা ক্যারিয়ার যাই হোক, ভালো মানুষ না হলে এসবের জন্য যা পাওয়া তা অর্থহীন শূন্য মাত্র!

সব মানুষকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। সকল পেশাকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। হোক সে গৃহকর্মী, গাড়ির ড্রাইভার, বাসার দারোয়ান কিংবা অফিসের পিয়ন; তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারো বাবা-মা যদি কায়িক পরিশ্রমও করে তার জন্য গর্বিত হতে হবে, লজ্জিত হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে- সম্মান আসে জ্ঞান, চরিত্র, সততা, পরোপকারিতা, ভালো ব্যবহার, মহানুভবতা থেকে; যার অর্থ-সম্পদ বেশি, বিত্ত-বৈভব বেশি সেই সম্মান পাওয়ার বেশি উপযুক্ত নয়।

আমরা বর্তমানে যে বড় দুইটি সমস্যা মোকাবেলা করছি তা হচ্ছে দুর্নীতি ও অসৎ নেতৃত্ব। প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি কারা করছে? শিক্ষিত মানুষেরা করছে। ফলে ভালো মানুষ হওয়াটা হচ্ছে সবার আগে। আপনি যদি আগে ভালো মানুষ হতে পারেন, তারপর আপনি ডাক্তার হন, ইঞ্জিনিয়ার হন কিংবা যাই হোন তাতেই মানুষের কল্যাণ হবে।

প্রতিটি কাজকে সম্মান করবেন। কোনো কাজই তুচ্ছ নয়, কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করবেন না। যে কাজ নিজে করতে পারেন সে কাজের জন্যে অন্য কারো ওপরে নির্ভর করবেন না। কাজে লজ্জা নেই। লজ্জা অলসতায়। লজ্জা প্রতারণায়। লজ্জা কর্মহীনতায়। হযরত আদম (আ.) চাষ করতেন, কৃষিকাজ করতেন। হযরত হাওয়া (আ.) সুতা কাটতেন। হযরত ইদ্রিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও লুত (আ.) কৃষক ছিলেন। হযরত সালিহ (আ.) ছিলেন ব্যবসায়ী।

হযরত মুসা (আ.) এক দশক ধরে শোয়াইব (আ.) এর অধীনস্থ হাউজকীপার ছিলেন। রাখালের কাজও করতেন। হযরত শোয়াইব (আ.) ছিলেন রাখাল। হযরত ইউসুফ (আ.) গৃহপরিচারকের কাজ করতেন, ডমেস্টিক ওয়ার্কার ছিলেন। হযরত নূহ (আ.) নৌকা নির্মাতা শ্রমিক ছিলেন, কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হযরত দাউদ (আ.) কর্মকার ছিলেন, ঢাল-তরবারী-বর্ম তৈরি করতেন। নিজ হাতের কামাই খেতেন।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) রাখালও ছিলেন। বালতি দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে খেজুর বাগানে পানি দিতেন। নিজে মেষচারণ করেছেন, কাপড় সেলাই করেছেন, ঘর ঝাড়ু দিয়েছেন, রান্নার কাজও করতেন। হযরত খাদিজার (রা.) সহকারী হিসেবে বাণিজ্য করেছেন। ইমাম আবু হানিফার দাদা ছিলেন একজন ক্রীতদাস। কিন্তু তারা বিখ্যাত হয়েছেন, পৃথিবীকে অনেক বড় কিছু দিয়েছেন।

আপনারা যে যেখান থেকেই ওঠে আসেন না কেন, যে পরিবারেরই হন না কেন, আপনার বাবা-মা যে পেশায় বা যে কাজেই নিয়োজিত থাকুক না কেন; আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন আপনি বড় হবেন, তাহলে চেষ্টা করলে ইনশাআল্লাহ আপনি বড় হতে পারবেন।

কাঠুরিয়ার ছেলে আর মুদি দোকানদার হয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। হোয়াইট হাউসে গিয়েও প্রেসিডেন্ট লিংকন নিজের জুতো নিজেই পালিশ করতেন। বস্তির ছেলে নোংরা পোশাকের কারণে যে পাবলিক পার্কে প্রবেশ করতে পারেননি, সেই এন্ড্রু কার্নেগীই তা কিনে নিয়েছিলেন।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো নদীর পাড়ে সস্তা ভাড়ার বস্তিতে থাকতেন। গরিব পরিবারের এই সন্তান প্রেসিডেন্ট হয়েও দামি পোশাক পরেন না, পায়ে দেন না দামি জুতা। স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী শুরুতে নিজের অফিসের দারোয়ান, ঝাড়ুদার, কেরানির সব কাজ নিজ হাতেই করতেন। গামছা পেতে দোকানে দোকানে তোলা চাঁদায় ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।

এসব ব্যক্তিত্বের জীবনের ঘটনাগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি, মানুষ যদি আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করে, সাধনা করে, স্বপ্ন দেখে তাহলে সে শুধু নিজেই প্রতিষ্ঠিত হয় না; সে তার পরিবারের মুখ উজ্জল করতে পারে, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, সমাজের জন্য কিছু করতে পারে, দেশকেও কিছু দিতে পারে।

বড় স্বপ্ন দেখতে না পারলে বড় মানুষও হওয়া যায় না। আপনি যা স্বপ্ন দেখেন তা পূরণের জন্য আপনাকে চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন নয়, যা পূরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে গিয়ে আপনি ঘুমোতেই পারেন না তাই প্রকৃত স্বপ্ন। আপনার ভাগ্য আপনাকেই গড়তে হবে। আপনার বাবা-মা আপনার পড়াশোনা করে দিবেন না, আত্মীয়-স্বজন আপনার ক্যারিয়ার গড়ে দিতে পারবে না।

দেখবেন একই শিক্ষকের কোনো শিক্ষার্থী ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে, আর কেউ ঝরে যাচ্ছে, পড়াশোনাই চালিয়ে যেতে পারছেন না। এজন্য দায়ী কে? শিক্ষক নন, বাবা-মা নন; দায়ী হচ্ছেন শিক্ষার্থী। আবার ভালো রেজাল্ট করলে, ভালো ক্যারিয়ার হলে তার কৃতিত্বও সবার আগে আপনারই।

আপনার অতীত যাই থাকুক থাক, বর্তমানকে কাজে লাগান, ভবিষ্যতে ভালো করবেন। ইতালির সাবেক প্রেসিডেন্ট মুসোলিনি মুচির কাজ করেছেন। জার্মানির সাবেক প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার মেথরের কাজ করেছেন। মিসরের বাদশা ফেরাউন কবর খানায় কাজ করেছেন। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ. পি. জে আবদুল কালাম পত্রিকার হকার ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন খেয়াঘাটের মাঝি ছিলেন। হান্ডুরাসের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জেয়লা মুরগী চোর ছিলেন। লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফীর এক পা ছিল না তবু জনপ্রিয়তা ছিল। শ্রীলংকার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা বন্দরনায়েকে কুমারাতুঙ্গার একচোখ অন্ধ ছিল বলেতো ক্ষমতা কম ছিল না। প্রথম দিকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন।

পরিশ্রম করতে হবে। মহানবী সা. ৫৫ বছর বয়সেও রমজান মাসে ৭০ মাইল পাহাড়ী রাস্তা হেঁটে বদর যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। বিজয়ের জন্য ১৫ বছর ধ্যান করেছেন, ১৩ বছর ধৈর্য ধরে দাওয়াত দিয়েছেন, ১০ বছর সংগ্রাম চালিয়েছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ইবাদতে কাটাতেন। ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণের সময়ও সবার সাথে মাটি কাটায় অংশ নিয়েছেন, মাটি বহন করেছেন।

এসব বরেণ্য মানুষেরা এসব কাজ করেছেন অথচ তাদের সম্মানহানী হয়নি, মর্যাদা কমেনি। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা মশারিটা পর্যন্ত টানাতে চায় না; জুতাটি পর্যন্ত মাকে পরিষ্কার করে দিতে হয়। এসব কাজ না করার মানসিকতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। অন্যকে দিয়ে নিজের কাজ করানোর দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পরিহার করতে হবে।

হযরত আবু বকর (রা.) খলিফা হবার পরও কাপড়ের বোঝা মাথায় করে বিক্রির জন্য বাজারে যেতেন। হযরত ওমর (রা.) খলিফা থাকাকালে গরীবদের ঘরে গম এবং খেজুরের বোঝা মাথায় করে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী (রা.) খলিফা হয়েও মুসাফিরের বোঝা বহনকারী কুলি হতে লজ্জা পাননি। ইমাম বুখারী রহ. একটি হাদীস সংগ্রহে ৩০০ মাইল হেঁটেছেন।

চীনের মাও সেতুং সর্বপ্রকার কায়িক পরিশ্রম করতেন। টমাস আলভা এডিসন দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করেছেন। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ৫বার পরাজয়ের পর মাকড়সা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্কটল্যান্ডের রবার্ট ব্রুস ৬ষ্ঠবারে জয়লাভ করেছিলেন। মাকড়সার কাছ থেকে তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন, আত্মশক্তিকে বলিয়ান হয়েছিলেন।

১০০০ নতুন বিষয়ের আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন ২ বছরে ১০ হাজার বার ব্যর্থ চেষ্টা করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালতে পেরেছিলেন। তার আবিষ্কার মানুষের জীবনকে কত স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে! আমেরিকার সেরা ধনী জন.ডি.রকফেলার ঘন্টায় ৪ সেন্টের বিনিময়ে আলুক্ষেতে কাঠফাটা রোদে কোদাল দিয়ে কাজ করেছেন।

এই মানুষগুলো যদি এত কষ্ট না করতেন, হাল ছেড়ে দিতেন, ধৈর্য ধরে লেগে না থাকতেন, তাহলে কী তারা বড় হতে পারতেন? কখনই পারতেন না। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে পারেন- এগুলো থেকে আমরা কী শিক্ষা নেব? আমাদের করণীয়ই বা কী?

আপনাদের এখনই শুরু করতে হবে। আপনি যদি এখন শুরু না করেন, আপনার বয়সী অনেকেই শুরু করে দিয়েছে। কেউ ইংরেজি শিখছে, কেউ কম্পিউটার শিখছে, কেউ ধর্ম শিখছে। তারা এগিয়ে যাবে, আপনি কিন্তু পিছিয়ে পড়বেন। আপনাকে এখনই শুরু করতে হবে, এখন শুরু করার উপযুক্ত সময়।

মহানবী সা. সমাজ সংস্কারে হিলফুল-ফযুল গড়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে। আলী রা. রাসূলের সঙ্গী হয়েছিলেন ১১ বছর বয়সে। নেপোলিয়ান ইতালি জয় করেছিলেন ২৫ বছর বয়সে। আইনস্টাইন আপেক্ষিক মতবাদ নিয়ে চিন্তা করেছিলেন ১৬ বছর বয়সে, প্রমাণ করেছিলেন ২৬ বছর বয়সে। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১১ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন। হুমায়ুন ২৩ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন।

সম্রাট আকবর ১৩ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। এদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৪ বছর বয়সে ভাষণ দিয়ে জাদরেল বক্তাদেরকেও মাত করে দিয়েছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালিন ভারতবর্ষব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ১ম হয়েছিলেন। ড. আবদুল্লাহ আল মুতি ১৮ বছর বয়সে কিশোর পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন।

অতীত থেকে বর্তমানে প্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যতকে গড়তে হবে। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় মুসলমানরা মার খাচ্ছে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছে। এটা বর্তমান কিন্তু অতীত অত্যন্ত গৌরবোজ্বল। মুসলিম উম্মাহ হিসেবে প্রেরণা নেয়ার কত কিছুই তো আছে। কর্ডোভাতে পৃথিবীর ১ম বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানরা স্থাপন করেন। যখন ইউরোপে খ্রিস্টানদের বড় লাইব্রেরিতে বই ছিল ২০১টি, তখন কায়রোতে মুসলমানদের পাঠাগারে ছিল ১০ লাখ বই।

কাগজ, ঘড়ি, বারুদ, মানচিত্র, ইউরোপ থেকে ভারতের রাস্তা এমনকি আমেরিকার আবিষ্কর্তা মুসলমানেরা। আল খারিজমী ছিলেন আজকের বীজগণিতের জনক। আল-কিন্দী দর্শনের প্রথম পরিচায়ক ও ভাষ্যকার। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড এর পথ প্রদর্শক। খালিদ বিন অলিদ, তারেক বিন যিয়াদ, স্পেন বিজয়ী মুসা, মুহাম্মদ বিন কাসিম, বখতিয়ার খিলজী এরা মুসলমানদের অনুপ্রেরণা।

বাংলাদেশী হিসেবেও আমাদের গর্ব করার মতো আছে অনেক কিছুই। বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কুমিল্লার ময়নামতির শালবন বিহার। আমেরিকা যখন গোসল শিখেনি, তারও আগে আমরা সাবান ব্যবহার করতে শিখেছি। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সভ্যতা ও স্বাধীনতার ইতিহাস। আমরা কখনো গোলামিকে মেনে নেইনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে, অধিকার আদায়ে সংগ্রাম হয়েছে।

আমাদের এফ. আর. খান বিশ্বের সর্বোচ্চ দালানের স্থপতি। আমাদের গর্ব ঈসা খাঁ, তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ। শাহজালাল, শাহ মখদুম, খানজাহান আমাদের প্রেরণা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের গৌরবের।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বের অবদান অনস্বীকার্য।

ফলে মুসলমান হিসেবে, বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের গর্ব করার অনেক কিছু আছে। আজকে হয়তো নীতিনির্ধারকেদের দূরদর্শিতার অভাবে, জাতির মধ্যে একতার অভাবে আমরা অনেকভাবেই পিছিয়ে পড়ছি। কিন্তু আপনাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে এ সমাজকে সুন্দর করার, এই দেশটাকে সুন্দর করে গড়ার। এটা বড়রা করতে পারবে না আপনাদেরকেই করতে হবে। আপনাদের মাঝ থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, তুরস্কের রজব তাইয়ের এরদোগানের মতো নেতৃত্ব; যারা দেশকে বদলে দিয়েছে, জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছে।

সময়কে কাজে লাগাতে হবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কমোডে বসেই পত্রিকা পড়া শেষ করতেন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকায় সময় বেশি লাগতো। শেখ সাদী ঘুমে স্বপ্নে পেয়েছিলেন ‘সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি’। এমন অনেক ঘটনা আছে। অনেক মানুষ আছে, যারা ঘুমিয়েও কাজ মুক্ত থাকতেন না; ২৪ ঘন্টা কাজ করতেন।
তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান হচ্ছে- ভালো বই পড়বেন, ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকবেন, ভালো শিক্ষকের গাইডলাইন নিবেন আর বাবা-মায়ের দোয়া পাবার উপযুক্ত আচার-ব্যবহার করবেন; অবশ্যই আপনি বড় হবেন, ভালো মানুষ হবেন ইনশাআল্লাহ।

বি.দ্র.  ৯ জুন ২০২২, জিটিএফসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জিনজিরা ক্যাম্পাসের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আনিসুর রহমান এরশাদের  বক্তব্যটি লিখিতভাবে এখানে তুলে ধরা হলো।

About আনিসুর রহমান এরশাদ

শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

View all posts by আনিসুর রহমান এরশাদ →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *