সুস্থ কর্মক্ষেত্র ও আনন্দময় কর্মপরিবেশ

আনন্দময় কর্মক্ষেত্র, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সুখী কর্মী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক। কর্মপরিবেশ তৈরির উপায় হচ্ছে- কর্মীদের মূল্যায়ন করা, প্রতিটি কর্মী যাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তা নিশ্চিত করা। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করা, গোছানো উপায়ে কাজ করা, কর্মীদের মধ্যে কাজের আগ্রহ তৈরি করা, অতিরিক্ত বিধি-নিষেধপূর্ণ না হওয়া জরুরি।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনতা

মতামত দেওয়ার সুযোগ দিলে এবং মতামতের গুরুত্ব দিলে কর্মীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়, তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠানের একজন অংশীদার মনে করে। কাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রতিটি কর্মী মেনে চলবে, তবে কী উপায়ে কাজ করা হবে সে বিষয়ে কর্মীদের স্বাধীনতা থাকবে। কাজের কৌশল চাপিয়ে দিলে কাজের গতি কমে, হীনমন্যতা বাড়ে। আর পছন্দসই উপায়ে কাজের সুযোগ দিলে কাজ দ্রুত হয় আর আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।

কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা

ভালো কাজের প্রশংসা, কর্মীর সফলতা উদযাপন কর্মীর কাছে বেশি সম্মানজনক। কর্মীদের কাজে অনুপ্রেরণা যোগাতে ও উদ্দীপনা দিতে শুধু বেতন-ভাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকা ঠিক নয়। কাজের জন্য প্রশংসা ও পুরষ্কৃত করলে আরও ভালো কাজ করার স্পৃহা তৈরি হয়। প্রশংসা ও পুরষ্কার সকলের সামনে দিলে কর্মীর কর্মোদ্দম বাড়ে, অন্যদের মাঝেও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোললে কাজের পেছনে ব্যয় হওয়া সময় কমে এবং আরও বেশি কাজ একই সময়ে করা সম্ভব হয়।

কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা

কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতার সঙ্গে আস্থাশীল অবস্থান গড়ে তোলার জন্য সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা অত্যন্ত জরুরি। সুসম্পর্ক ভালোভাবে কাজ করার মানসিক শক্তি দেয়, কাজের উদ্যমতাও বাড়িয়ে তুলে। স্বস্তিকর পরিবেশ কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়। সহকর্মীদের সঙ্গে সহায়তামূলক আচরণ গড়ে তোলতে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রাখতে হয়, বিপদে বা সমস্যায় এগিয়ে আসতে হয়, প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলতে হয়, অফিস রাজনীতি পরিহার করতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব

নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হয়। সহকর্মীর কোনো কাজ খারাপ লাগলে নিন্দা না করে সরাসরি তাকেই বলতে হয়। সহকর্মীর ভালো কাজকে ঈর্ষা না করে তার কাছ থেকে শিখে দক্ষতা বাড়াতে হয়। তোষামোদ নয় কৃতিত্বপূর্ণ কাজের প্রশংসা করুন, স্বীকৃতি দিন। কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না।  সহকর্মীদের বিশেষ দিনগুলো মনে রেখে জন্মদিনে উইশ করুন, সঙ্গে ছোট্ট একটা উপহার, কার্ড বা ফুল দিন।  মনের প্রফুল্লতা বাড়াতে চা বা কফি পান করতে করতে সহকর্মীর সঙ্গে ইতিবাচক আড্ডা বা কুশল বিনিময় করুন। নিজের এবং অন্যের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন।

কর্মক্ষেত্রে কর্মীবান্ধব পরিবেশ

প্রতিষ্ঠানে কর্মীবান্ধব পরিবেশ সবার মধ্যে গতিময়তা রাখায় সহায়ক। কোনো কর্মী যদি বিপদে পড়ে, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় বা তার পারিবারিক সমস্যা তৈরি হয় তখন তাকে অফিস সহযোগিতা করতে পারে। এতে  প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়ে, ব্যক্তির উন্নতির কাজ হয়, কর্মী ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিবেদিত প্রাণ হয়, কাজ করে আনন্দ পান, কাজটাকে ভালোবাসতে পারেন।

কর্মক্ষেত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকলে কাজে উদ্দীপনা আসে না, ভালো বেতন পায় না, চাকরি চলে যায়, নতুন চাকরিও পায় না। কাজের পরিবেশ কাজের স্পৃহা বাড়িয়ে তোলে। কর্মক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হলে শান্তি বিদায় নেয়। কর্মক্ষেত্রে কাটানো সময়টাই অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারণ করে সার্বিক ভালো থাকা, না থাকা।

কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ

কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ কাজে ভুল-ত্রুটি হ্রাস করে, উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, উদ্ভাবন বৃদ্ধি করে, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং অনুপস্থিতি হ্রাস করে।  কাজের পরিবেশ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হওয়া সন্তুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যের বড় অংশ নির্ভর করে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের ওপর। দিনের বেশিরভাগ সময় কর্মক্ষেত্রে থাকার কারণে প্রত্যেকেরই কর্মক্ষেত্রের কর্মপরিবেশ ভালো হওয়া জরুরি।

কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যেন দ্বন্দ্বমুখর না হয়, প্রতিযোগিতামূলক না হয়, হয়রানিমুখর না হয়, বিদ্বেষমূলক না হয়। কেউ যেন কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে, বিদ্বেষে জড়িয়ে না পড়ে, হয়রানি করতে না পারে, প্রতারণা করতে না পারে, বিশ্বাসঘাতকতা করতে না পারে। এজন্য নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করা, সবার সঙ্গে একই ধরণের আচরণ করা, সবাইকে সমান চোখে দেখা, দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজের চাপ না দেয়া, কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করা- কর্মক্ষেত্রে কর্ম পরিবেশ স্থির রাখে। কর্মক্ষেত্রে যেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি না হয় সেজন্য পরস্পরের সঙ্গে কোনো সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে সবুজের ছোঁয়া

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। কাজের জায়গায় সবুজের ছোঁয়া কাজের সময়ে ক্লান্তি দূর করবে, মানসিক চাপ কমাবে, চোখের উপকার করবে, মনোযোগ বৃদ্ধি করবে, শোভা বাড়াবে, কাজের মান বাড়িয়ে দিবে আর সবুজ হয়ে ওঠবে মন।  অফিসে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ থাকলে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো থাকে, কর্মক্ষেত্রজনিত উদ্বেগ-চাপ-স্ট্রেস কমে।

সামান্য একটু প্রাকৃতিক ছোঁয়া কাজে আগ্রহ ও এনার্জি বাড়ানোর মতো উপকারও করে।  কাজ করতে করতে ভালো লাগে না, কাজে মনোযোগী হতে পারেন না, ডেস্কে কাজ করতে একঘেয়ে লাগছে, কাজের ওপর বিরক্তি ধরে গেছে, কাজের একটা পর্যায়ে চোখ জ্বালাপোড়া বা মাথা ধরার সমস্যা হলে- অফিসের ডেস্কে তথা টেবিলের এক কোণায় টবে ছোট্ট একটি সবুজ গাছ রাখুন।

কর্মক্ষেত্রে ভালো কর্মসংস্কৃতি

কর্মসংস্কৃতি সব জায়গায় সমান নয়। কর্মসংস্কৃতি খারাপ হওয়ার দায়ও সবার সমান নয়। দশটা পাঁচটা অফিসে হাজির থাকলেই কর্মসংস্কৃতির ধ্বজাও ওড়ে না। ভালো কর্মসংস্কৃতি থাকার মানেই- কাজে ফাঁকি নেই, দুর্নীতি নেই, কাজের অভাব নেই, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশও কাঙ্ক্ষিত মানের। চাকরিদাতারা কাজের পরিবেশ সৃষ্টিতে অক্ষম হলে কর্মসংস্কৃতি তলানিতে ঠেকে।

কর্মসংস্কৃতি কোথাও বেশ খারাপ, কোথাও মোটামুটি ভালো, কোথাও ভালো, কোথাও খুব ভালো। যেখানে কর্মরতরা কাজে খুব অবহেলা করেন, সিটে থাকেন না, অফিসে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে যান ব্যক্তিগত কাজে, দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রাখেন, কোনও প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর দেন না, পরিশ্রম করতে উন্মুখ দক্ষ কর্মচারীরও প্রায় কোনো কাজ থাকে না, প্রচুর ভুল করেন, প্রয়োজনের থেকে বেশি লোক থাকে, উপর মহল থেকে নীচের তলা পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা থাকে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল স্বাভাবিকভাবে যায় না; সেখানে কর্মসংস্কৃতি মোটেই ভালো থাকে না।

কর্মীদের উৎপাদনশীলতা মূল্যায়ন

দিনে আট ঘণ্টা অফিসে থাকা বা রাখাই যথেষ্ট নয়, কর্মীদের উৎপাদনশীলতার মূল্যায়ন করাও জরুরি। যে সব অফিসে কাজের ধরণই এমন যে, কাজে সহকর্মীর উপর নির্ভরশীলতা বেশি; সেখানে সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হয়।  কারণ পরস্পর নির্ভরশীলতার পরিবেশে একজনের নিষ্ক্রিয়তায় আরেকজন সক্রিয় কর্মীরও কর্মের গতি হ্রাস হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী ছোট ছোট দল তৈরি করে কাজ করলে, ফাঁকি ধরা পড়ে চট করে এবং অন্যের ঘাড়ে কাজের ভার চাপিয়ে পালিয়ে যাওয়া যায় না। উৎপাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে ‘ইনসেন্টিভ’-এর ব্যবস্থায়ও উৎপাদন বাড়ে।

কাজের অসুস্থ পরিবেশ

কাজের অসুস্থ পরিবেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কাজের দক্ষতা হ্রাস করে, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে, চাপ-হতাশা-উদ্বেগ বাড়ায়। সহকর্মী মানসিকভাবে খারাপ আছেন বুঝা যায়- কর্মস্থলে প্রায়ই অনুপস্থিতি বা সময়মতো না আসলে। কাজের গুণগত মান কমে গেলে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে। নিজেকে গুটিয়ে নিলে। কাজে প্রায়ই ভুল করলে। মনে রাখতে না পারলে। সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বা সম্পর্কের অবনতি ঘটলে। আচার-আচরণ বা ব্যবহারের দৃশ্যমান পরিবর্তন হলে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়া কমে গেলে।

কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও উৎসাহমূলক হলে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন জড়িয়ে রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকাটা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বসের সঙ্গে, সহকর্মীদের সঙ্গে, অধ:স্তন কর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের মাধ্যমে মনের শান্তি সুখ নিশ্চিত করা যায়।  কর্মীকে ভালো কাজের জন্য বাহবা, প্রমোশন, পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; তবে এসব যাতে কাউকে অহংকারী বা দাম্ভিক না বানায় সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কর্মীর যেন চাকরির প্রতি সন্তুষ্টি থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কর্মজীবীদের চাহিদা পূরণ

কর্মজীবীদের কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ দিতে হবে। কর্মীদের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ না হলে যথাযথ কাজের পরিবেশ তৈরি হয় না কর্মক্ষেত্রে। পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য আলাদা টয়লেট, সাবান, তোয়ালে, টয়লেট পেপার, বিশ্রাম নেওয়ার কক্ষ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। সব প্রাপ্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের অধিকারসচেতনতাও প্রয়োজন। ভালো কাজের পরিবেশের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। ব্যবস্থাপকদের ইতিবাচক মানসিকতা দরকার, কর্মীদের সহযোগিতাও দরকার। কাজ সঠিকভাবে সহজে করার জন্য নিয়মগুলো সহজ হতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা

বেতন বেশি, চমৎকার পরিবেশ ও নানা সুযোগ-সুবিধা ফিকে হয়ে যায় জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া না হলে বা কাজের পরিবেশ নিরাপদ না হলে। যথাযথ বায়ু চলাচল, সঠিক তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত আলো ও জায়গা থাকলে কাজের সময় সুবিধা হয়। কর্মক্ষেত্রে চাপযুক্ত পরিবেশ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অনেকে বলেন- ঠাকুর যে ফুলে খুশি তারে সেই ফুল দিয়েই পুজো করতে হয়; কর্মক্ষেত্রে রিপোর্টিং বস যেমন চান সেরকমই করার চেষ্টা করতে হয়।  যেখানে পরিবেশ খারাপ সেখানে একা কিছু করা যায় না, তবে ভালো পরিবেশে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হয়। বিচক্ষণতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও একাগ্রতার ছাপ রাখতে হয়।

নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র

নারীকর্মী নিয়োগ দিলে আর নারীকর্মী বাড়ালেই কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব হয়ে যায় না। নারী সহকর্মীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হয়; তাদের পিরিয়ডকালীন সময়ের নানারকম সমস্যা বিবেচনায় রেখে।  অফিস সময়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারেন গর্ভবতী নারীর জন্য এমন নির্দিষ্ট কক্ষ থাকতে হয়। শিশুকে দুগ্ধপান করানোর জন্য দুগ্ধবতী মায়েদের জন্য ব্যবস্থা থাকতে হয়।

মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকতে হয়। বাচ্চা লালন-পালনের জন্য অভিজ্ঞ বেবি সিটারের ব্যাবস্থা করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে শিশুর দেখাশুনার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে মাকে শিশুর জন্য চিন্তিত থাকতে হয় না, কাজ হতে নিজেকে পরিহার করতে হয় না বা চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। নারী কর্মীদের জন্য ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে আচরণ

সুস্থ কর্মক্ষেত্র ও আনন্দময় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সবার ব্যক্তিগত আচরণ হতে হবে যৌক্তিক ও কাঙ্ক্ষিত মানের। নিজের খেয়াল-খুশীমত কাজ করা যাবে না। নিজ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কাজ করা যাবে না। কর্মরত কারো মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে এমন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করা যাবে না।

ছাত্র জীবনের মেধা নিয়ে অহংকার করা যাবে না। কাজের প্রতি অবহেলা, শিথিলতা ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। নিজ দায়িত্ব/কর্তব্য সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা রাখা যাবে না। অফিসের কাজে পরিবার-পরিজন দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। কথাবার্তা, হাটাচলার মধ্যে অপরিশীলিত ও অসংযোম বোধ থাকা যাবে না।

কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার

বদলী বিষয়ে তদবীর করা যাবে না। সৎ নীতিবান কর্মকর্তা হিসেবে নিজের অহংকার প্রকাশ বা অন্যকে হেয় মনে করা যাবে না। নীতি ও সততার প্রশ্নে আপস করা যাবে না। নিজের যে গুণ আছে তার উৎকর্ষ সাধনে অবহেলা করা যাবে না।  মিথ্যা কথা বলা যাবে না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ এবং আক্রোশের কারণে সুযোগ পেলেই অধঃস্তনকে বকাবকি করা যাবে না।

ধর্ম নিয়ে গোড়ামি বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব পোষন করা যাবে না। সহকর্মীদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এমন আচরণ করা যাবে না। ব্যক্তিগত চাল-চলন ও পোষাক পরিচ্ছদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা যাবে না। কথায় ও কাজে অসহনশীলতা প্রর্দশন করা যাবে না। অফিস সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরৎ না দেয়ার মানসিকতা রাখা যাবে না। দায়িত্বহীন ও বেফাস কথা বলা যাবে না। অফিসে বসে নিজস্ব কাজ করা যাবে না।

কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা

সহকর্মীদের ব্যক্তিগত দুর্বলতার স্থানে আঘাত করে কথা বলা যাবে না । আত্মপ্রচার করা যাবে না। ভ্রমণকালে যানবাহনে ভাল সীট দখল করা এবং অন্যদের অসুবিধা করা যাবে না। চাটুকারিতা করা যাবে না। পরিস্থিতি খারাপ হয়- অমানবিক আচরণ করলে। মতামতের ও কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে। অদক্ষ লোককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করলে। অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে। প্রকাশ্যে অন্যের সামনে বকাবকি করলে। কারো অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা বা নিন্দা করলে।

কর্মক্ষেত্রে ঈর্ষা

প্রয়োজন ব্যতীত কর্মকর্তাদের নিজের রুমে ডেকে কাজের ক্ষতি করে গল্পের জন্য বা চায়ের আড্ডায় বসিয়ে রাখলে। এছাড়াও ক্ষতিকর ফল বয়ে আনে- সহকর্মীর কাজের সাফল্যে ঈর্ষা করলে। অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে। অধীনস্তদের কাজের তদারকী না করলে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যের ক্রুটি খোঁজলে। অফিসে ধুমপান করলে ও পান চিবালে। কর্মচারীকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলে। বেয়ারাদের অযথা ডাকাডাকি করলে। রুটিন কাজে অযথা তাড়াহুড়া করলে ও টেনশন সৃষ্টি করলে। অধঃস্তনদের অবহেলা করলে।

কর্মক্ষেত্রে নীতি

কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আচরণ হবে চমৎকার। ফোনালাপ হবে সংক্ষিপ্ত। কাজ করা হবে মনোযোগের সাথে একাগ্রচিত্তে। নিজ দায়িত্ব, কর্তব্য, অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকবে। পরিবার-পরিজন ও নিকট আত্মীয়দেরকে বিধি বহির্ভূতভাবে কোনো সুযোগ সুবিধা না দেবে না। অফিসে কথা-বার্তা, হাঁটা-চলা, বসার মধ্যে পরিশীলতা ও সংযমবোধ বজায় রাখবে। পরিবর্তনে হতাশ না হয়ে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে। কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে কাজ করে। নীতি ও সততার প্রশ্নে কাজ করতে হবে আপোষহীনভাবে।

কর্মক্ষেত্রে উৎকর্ষতা

নিজের গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধন এবং বিকাশের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। ব্যক্তিগত চাল-চলন এবং পোশাক-পরিচ্ছদে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে। ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। কর্মক্ষেত্রে দরকার- সব সময়ে প্রাণবন্ত ও হাসিখুশী থাকা। কারও উপকার পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

সব সময়ে সৃষ্টিকর্তা দেখছেন স্মরণে রেখে অপরাধমুক্ত থাকা। নিজের ভুল হতে পারে এরুপ মনোভাব পোষণ করা।  নির্মল চরিত্রের অধিকারী হওয়া। ভ্রমণকালে রুচিশীল পোশাক পরিধান করা। নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য চাটুকারিতা না করা। সত্যবাদী এবং স্পষ্টবাদী হওয়া। যে কোনো পরিস্থিতিতে সহনশীল হওয়া । ব্যক্তিগত ক্ষোভকে বশীভূত করা ।

কর্মক্ষেত্রে কর্মোৎসাহ

কর্মক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে করণীয় হচ্ছে- প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া। ক্রটি করলে আলাদাভাবে ডেকে সংশোধনের জন্য বুঝিয়ে বলা। দক্ষ লোককে কাজে লাগানো। কর্মবিমুখ ব্যক্তিকে কর্মোৎসাহী করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রেষণার ব্যবস্থা করা। নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়েও কাজের উপযোগী করে তৈরী করে নিতে না পারলে বিদায় দেয়া। সৌহার্দমূলক ও সহমর্মিতামূলক আচরণ করা। অন্যের কাজের সাফল্যে প্রশংসা করা। দক্ষ করে তোলার জন্য সহযোগিতা করা ।

কর্মক্ষেত্রে শিষ্টাচার

কর্মক্ষেত্রে অধঃস্তনদেরকে- কাজের ব্যাপারে যথাসম্ভব সহযোগিতা ও উপদেশ প্রদান করতে হবে। কর্মবন্টন তদারকী করতে হবে। প্রণোদনার মাধ্যমে কর্মচাঞ্চল্য জাগিয়ে তোলবে। কাজের সুবিধার্থে মাঝ মাঝে তাদের কর্মস্থলে যাবে। হেড অফিসে কর্মরতরা মাঠ পর্যায় থেকে আসা সহকর্মীর কাজ সর্বাগ্রে করে দেবে। ছুটি মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সহানুভুতি প্রদর্শন করবে। যখন অফিসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সভা বা ভোজসভায় কেউ যায়, তখন সে কর্মক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই আচরণ হতে হবে মার্জিত। পোশাকের ব্যাপারে হতে হবে সতর্ক ।

কোনো আলোচনা বা মিটিং-এ সভাপতির অনুমতি না নিয়ে কথা বলা যাবে না।  বক্তার বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শ্রবণ করতে হবে। বক্তব্য শেষ হওয়ার পর অনুমতিক্রমে প্রশ্ন করা যাবে। নিঃশব্দে খেতে হবে। শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রেখে আহার গ্রহণ করতে হবে। যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো কারণে নির্ধারিত সভায় না গেলে অপারগতার কারণ আগেই জানিয়ে দিতে হবে। সুচিন্তিত ও স্বচ্ছ মতামত প্রদান করতে হবে। একতরফা কথা না বলে অন্যকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সাবলীল ও প্রাঞ্জলভাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা

সৃজনশীল বা উদ্ভাবনীমূলক কাজে মানুষ নিজের যোগ্যতা এবং পারদর্শিতার বিষয়টি অনুভব করে। কাজ কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য নয়; কাজ জীবনকে অর্থবহ করে, জীবনকে লক্ষ্যমুখি করে, ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করে, যোগ্যতা আর সামর্থকে সক্রিয় করে, মর্যাদার অধিকারী করে, লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে, মানুষের পরিচয় গঠনে ভূমিকা রাখে। কর্মব্যস্ততা সত্য অর্জনে সহায়ক, সুস্থ বিনোদনে সহায়ক। ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ ও প্রতিভার লালন পালনে অপরিহার্য উপাদান কাজ।

কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা

কর্মক্ষেত্রে কাজের দায়িত্ব পালন করতে হয় সচেতনভাবে। অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে মনোযোগী হতে হয়। রীতি-নীতি মেনে চলতে হয়। কর্মোপযোগী পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়। কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ এবং আন্তরিক হতে হয়। সময়ে সময়ে কাজের পরিকল্পনা ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হয়। সময়মত যোগদান করতে হয়। সময়মত উপস্থিত হতে হয়। বিলম্ব হলে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হয় । গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে শৃংখলা

কর্মক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারও ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়কে অফিসের সাথে সম্পৃক্ত করা উচিত না। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কাজকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হয়। প্রতিটি কাজে মাত্রাজ্ঞান রাখতে হয়। গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। নতুন দায়িত্ব গ্রহণের সময় কাজের পরিধি সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হয়।

অসমাপ্ত কাজের তালিকা রাখতে হয় এবং সমাপ্ত করতে উদ্যোগী হতে হয়। সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। প্রশাসনিক শৃংখলা রক্ষায় সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়। চেইন অব কমান্ড এর বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে অহেতুক তাড়াহুড়া করার প্রবণতা দূর করতে হয়। কোনো অসন্তোষ বিরাজ করল তা সুষ্ঠুভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে টীম স্পিরিট

দক্ষ ও সৎ কর্মীকে পুরস্কৃত করতে হয়। টীমের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হয় । টীম স্পিরিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করতে হয়। সুস্পষ্ট ভাষায় আদেশ দিতে হয়। পত্র লেখার ক্ষেত্রে যথাযথ ভাষা প্রয়োগ করা। নাতিদীর্ঘ পত্র লেখা। চিঠিতে প্রাপকের নাম ও ঠিকানা সঠিকভাবে লেখা। ভ্রমণসূচী পূর্বে জানানো। আর্থিক ব্যবস্হাপনায় স্বচ্ছতা প্রদর্শন করা। চিঠিপত্র ও প্রকাশনা নির্ভুলভাবে করতে উৎসাহিত করতে হয়।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সামনে যাওয়ার আগে শার্ট বা কোটের বোতাম অবশ্যই ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে। দৌড়ানোর জুতা পরে অফিসে যাওয়া উচিৎ নয়। অফিসের সবসময়ই মাপ-মতো বানানো পোশাক পরা জরুরি। নিজের মাপের চেয়ে ছোট বা বড় পোশাক পরা উচিৎ নয়। অফিসে সবচেয়ে সাধারণ, জনপ্রিয় এবং চলতি রংয়ের পোশাক পরুন। ক্লাসিক পোশাক  পরুন। ঘড়ি, টাই, জুতা, ব্যাগ ও গয়নাও এমন হবে যাতে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলে। সব ঋতুতেই মানানসই কাপড় এবং রংয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

কর্মক্ষেত্রে সঠিক অভ্যাস

কর্মক্ষেত্র যেমনই হোক, অসুস্থ শরীর ও মন নিয়ে ভালো পারফর্ম করা সম্ভব নয়। তাই সুস্থ থাকতে সঠিক অভ্যাস জরুরি। দুপুর বেলা ঘরে রান্না করা হালকা মসলা ও কম তেলের তৈরি খাবার এবং ঘর থেকে আনা বিকেলের নাস্তা খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। হালকা স্ন্যাকস বা নাস্তার জন্যও ফাস্টফুড কিংবা ভাজাপোড়া বেছে নেয়া ঠিক না। অফিস কক্ষে আলো কম থাকলে উজ্জ্বল আলোকিত পরিবেশের তুলনায় খাওয়ার মাত্রা বাড়ে। অফিসে আলো ও তাপমাত্রা কম হলে কিছুক্ষণ পর পর বাইরে থেকে হেঁটে আসতে পারেন। কাজ করার সময় খাওয়া বেশি উপযোগী।

কর্মক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস

দীর্ঘসময় অফিস ও একসঙ্গে একাধিক কাজের চাপ- হরমোনকে প্রভাবিত করে, মানসিক চাপের সময় শরীরে নিঃসৃত কর্টিসল হরমোনের ফলে ক্ষুধা পায় ঘন ঘন, বাড়ায় ক্লান্তি। জাঙ্কফুড থেকে দূরে থাকতে সঙ্গে রাখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বাদাম। এছাড়াও সমাধান হতে পারে শারীরিক নড়াচড়া, ব্যায়াম, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা, কিছুক্ষণ পরপর চেয়ার ছেড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করা, বাসায় এসে পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি। পানি কম আর চা-কফি বেশি পান করলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, বাড়ে ওজন, কমে কর্মস্পৃহা। পানি পানের কথা মনে রাখতে অফিসে নিজের টেবিলে অবশ্যই পানি ভর্তি বোতল রাখুন এবং দিনে তিনবার শেষ করার চেষ্টা করুন।

কর্মক্ষেত্রে সুস্থতা

বেশিরভাগ সময় চেয়ার-টেবিলে কাটলে পিঠব্যথা বা চোখের রোগ ছাড়াও দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যা। এ থেকে পরিত্রাণে অতিরিক্ত চা ও কফি থেকে দূরে থাকুন; এগুলো উচ্চ ক্যাফেইন সমৃদ্ধ হওয়ায় গ্যাস্ট্রিক উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। সকালে নাস্তা না করার প্রবণতা খুবই বাজে ও ক্ষতিকারক অভ্যাস। দীর্ঘ বিরতিতে খাবার খেলে খালি পেটে গ্যাস হয়। ভাজাপোড়া, ঝাল ও অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়।

খাওয়ার পর পরই বসে থাকার কাজে যোগ দেয়া খাবার হজমের ক্ষেত্রে ভালো নয়। খাওয়ার পর সামান্য হাঁটাচলা পরিপাকের পক্ষে বেশ ভালো। অতিরিক্ত কোমল পানীয় বা কার্বনেইটেড পানীয় পাকস্থলীতে যাওয়ার পর চাপ সৃষ্টি করে ও গ্যাস নির্গত হয়। হজম প্রক্রিয়া সঠিক দেহভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। খাওয়ার পর সোজা হয়ে বা উঁচু হয়ে বসা খাবার হজমে সাহায্য করে, অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায় ও বুক জ্বালাপোড়া কমায়।

আনন্দময় কর্মক্ষেত্র

কর্মক্ষেত্রে আনন্দময় কর্মপরিবেশের পাশাপাশি শরীর ও মনের সুস্থতা দরকার। কর্মক্ষেত্র মানসিক চাপ বাড়ে কর্মক্ষমতার অতিরিক্ত কাজের চাপে, অনেক কাজ অল্প সময়ে স্বল্প ব্যবস্থাপনার মধ্যে করতে হলে, জটিল কাজ বেশি থাকলে বা কাজ কম থাকলে। বিষণ্নতা তৈরি হয়- ব্যক্তির দক্ষতা ঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে, কাজের সঠিক মূল্যায়ন বা স্বীকৃতি না পেলে, সম্মান ও মর্যাদা না পেলে। মানসিক চাপ না থাকলে ফুরফুরে মেজাজে থাকা যায়, কাজে একঘেয়েমি আসে না। উদ্দীপনাহীন কাজ বিরক্তি ও উদ্যমহীনতা তৈরি করে। অপছন্দের কাজ মনের ওপর চাপ ফেলে।

কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

কাজে অনাগ্রহ আসে অনির্দিষ্ট দায়িত্বে, অনির্ধারিত কাজে, প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির ব্যবধান বাড়তে থাকলে,  প্রত্যাশাগুলো দায়িত্বের সঙ্গে খাপ না খেলে, মূল্যায়িত না হওয়াকে চাপদায়ক মনে হলে, পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হলে, কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ অপর্যাপ্ত থাকলে, বস অবিবেচক হলে, উর্ধ্বতনরা কর্তৃত্বমূলক হলে, সুপারভিশন অতি কঠোর হলে, মানসিকভাবে হেনস্তা হলে, প্রকাশ্যে সূক্ষ্ম সমালোচনা হলে, অশোভন মন্তব্য পেলে, যৌন হয়রানির শিকার হলে, ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি কৌতূহল দেখালে বা অহেতুক নাক গলানো। কাজের চারপাশে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, ধুলা-বালি, অন্ধকার-স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, তীব্র আলো, অধিক কর্মঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বাড়ায়। মানসিক উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়ায়- ব্যক্তিগত বিষয়ে কর্মক্ষেত্রের অসহযোগিতা, কাজের বিষয়ে পরিবারের অসহযোগিতা।

কর্মক্ষেত্রে হতাশা

মানসিক চাপে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনঃসংযোগ কমে যায়, কাজে অনুৎসাহ বাড়ে, আত্মবিশ্বাস কমে, হতাশা বাড়ে। এছাড়া মাথাব্যথাসহ শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা, পেটে সমস্যা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি বমি ভাব, ঘুমে সমস্যা দেকা দেয়; যা ব্যক্তিকে কাজে অনাগ্রহী করে। অনেকেই একটু পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অথচ কর্মক্ষমতা বাড়াতে শরীরের যত্ন নিতে হয়, নিয়মিত হাঁটতে হয়, ব্যায়াম করতে হয়, পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়, নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমাতে- ইতিবাচক আবেগের চর্চা, রসবোধ চর্চা, নিজের ভালো লাগা-মন্দ লাগা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ, ক্ষমা করে দেওয়া, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কিছু না করা,  নিজেকে ছোট করে এমন কাজ না করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা।

কর্মক্ষেত্রে আত্মিক যত্ন

কর্মক্ষেত্র শুধু কাজের জায়গা নয়, আত্মিক যত্নের জায়গাও। অর্থপূর্ণ কাজ করলে, অর্থবহভাবে সময় কাটালে, মূল্যবোধের চর্চা করলে কর্মজীবনও সুন্দর হয়। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করতে হলে মনকে মুক্ত রাখতে হয়, কৌতূহলী হতে হয়, সজাগ ও সৃজনশীল রাখতে হয়, প্রতিদিন নতুন কিছু জানার ও শেখার চেষ্টা করতে হয়। সামাজিক জীবন সুন্দর করতে হলে পরিবারকে সময় দিতে হয়, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতে হয়, সহকর্মীদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম দিতে হয়।

কর্মবান্ধব ও কর্মীবান্ধব কর্মক্ষেত্র

কর্মক্ষেত্র আনন্দদায়ক রাখতে হলে- অফিসের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে হয়। ব্যক্তিগত জীবন এবং অফিসের কর্মজীবন আলাদা রাখার অভ্যাস করতে হয়। ব্যক্তিগত মতভেদের মধ্যে সহকর্মীদের না জড়ানো। সোশাল মিডিয়াতে কোনো ‘পোস্ট’ দেওয়ার আগে সতর্ক হোন। কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে তৈরি হয়ে নিন। কাজ আর্থিক নিরাপত্তা দেয়, নিজস্ব আত্মপরিচয় তৈরি করে এবং আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। কাজের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, সামাজিক অবস্থান দৃঢ় হয়, মেধা-মনন-দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ ঘটে। কর্মক্ষেত্রে শান্তি ও কাজের পুরো পরিবেশটা কর্মবান্ধব-কর্মীবান্ধব হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ

কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ

মানুষ কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে কেউ বেশি টাকার জন্য, কেউ বেতন নিয়ে হতাশায় ভোগে, কেউ উন্নত জীবন-যাপনের আশায়, কেউ কর্মক্ষেত্রের সাম্যাবস্থা না দেখে ও কেউ কিছু ভালো সুযোগ সুবিধার জন্য কিংবা কেউ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করায় অনাগ্রহী হওয়ায়। কেউ কেউ সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, কেউ কেউ চাহিদাগুলো উপরস্থদের সাথে আলোচনা করতে না পেরে। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উপভোগ্য হলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। ফর্মাল জব পছন্দকারীদের জন্য উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সঠিক নয়।

About আনিসুর রহমান এরশাদ

শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

View all posts by আনিসুর রহমান এরশাদ →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *