নেতৃত্ব এমন সক্ষমতা যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সমাজের মানুষকে বা কোন দলকে অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে পরিচালিত করতে পারে। একজন সফল নেতার দায়িত্ব হচ্ছে তার অনুসারীদেরকে শুধু অনুপ্রেরিত ও পরিচালিত বা তাদের দিয়ে কাজ করানোই নয় বরং তার অনুসারীদের মাঝ থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা অর্জনের প্রতিভার অন্বেষণ ও প্রশিক্ষণ। সমাজের গুনগত পরিবর্তনের আন্দোলনে দেয়া নেতৃত্বে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন একটি বিরাট ব্যাপার। বক্তৃতা ভাষণের চেয়ে বড় প্রয়োজন দক্ষতার সাথে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন। বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করেই সঠিক নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শুধু বুলি না আওড়ায়ে বাস্তবে মানুষের বৈষয়িক জীবনের কোনো কাজে আসলে সে নেতৃত্ব সমাজের গুণগত পরিবর্তনে সফল ভূমিকা রাখবে।
নেতারা এমন আচরণ করবেন, যেমন তারা তাদের অনুসারীদের কাছ থেকে আশা করেন। ভালো নেতা যা প্রচার করেন, তা-ই করেন। নেতাকে অনেক সময়েই এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা সকলের পছন্দনীয় নয়। নেতার স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি। নিজের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও নমনীয়তা নেতাকে পরিণত হতে ও শ্রদ্ধা অর্জনে সহায়তা করে। নেতা হিসাবে দলের কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্যতা আদায় করাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন। নেতাকে সর্বদাই নিজের কাজটি ভালোবেসে করা উচিত। নেতাকে দরকারি যা কিছু করা উচিত তা সবই করতে হবে, দায়সারা না করে যথাযথভাবে কাজটি করতে হবে, কাজের প্রতি সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
নেতার নিজস্ব বিশ্বাসই নেতাকে উদ্যোগী করে তোলে। সাফল্য লাভ ও অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বার্থেই নেতার সৃজনশীলতা বেশি প্রয়োজন। নেতাদের মন খোলা রাখতে হবে ও নমনীয় হতে হবে, ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টা করতে হবে ও সম্পর্কগুলি বজায় রাখতে হবে। প্রতিভাবানদের দল সাফল্যলাভ করবে তখন যখন নেতা দায়িত্বশীল হবেন, সবাই নিজের দায়িত্ব সর্বতোভাবে পালন করবেন, ইতিবাচক সংস্কৃতি তৈরি করবেন, ইতিবাচক মানসিকতা রাখবেন। অন্তর্দৃষ্টি স্বচ্ছ হলে সঠিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভালোভাবে সমন্বয় রক্ষা করা যায়, অন্যদের আইডিয়াগুলি গুরুত্ব দিলে প্রতিভাবানরা কাজ করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন।
সঠিক নেতৃত্ব তাঁর দলের সকলের ভিতর থেকেই নেতৃত্বগুণ জাগিয়ে তুলতে পারেন। নেতার অফুরান প্রাণ শক্তি ভীষণ জরুরি, যা দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। নেতা এমন কিছু ঘটান যা সাধারণভাবে ঘটার কথা নয়। যা স্বাভাবিকভাবে ঘটবে, তার জন্য নেতার প্রয়োজন হয় না। সত্যিকারের নেতা অনন্য, অসাধারণ, অতুলনীয়, অভাবনীয় কিছু সৃষ্টি করেন, বড় কাজ করেন। দুঃসাহসিকতা ও বাস্তববাদিতা নেতার গুণাবলির অংশ।অন্তর্বর্তী ও বাহ্যিক পরিবেশে প্রাপ্ত সম্পদকে সফলভাবে সমন্বয় সাধন করে তা থেকে সর্বাধিক লাভ তোলা, যে কোনো পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়া, কোনো সংস্থা বা সমাজের প্রত্যাশা পূরণকারী হন নেতা। শোনার ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা, সব স্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করায় উৎসাহদানের জন্য নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা, জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা নেতাদের থাকতে হয়।
শুধু বুদ্ধিমত্তার উপর ভরসায় বিদ্রোহী মনোভাব দেখা দেয়, শুধু মানবিকতার ব্যবহার দুর্বলতার জন্ম দেয়, অবিচল বিশ্বাস থেকেও দেখা দিতে পারে মূর্খতা। সাহসের শক্তির উপর নির্ভরতা রূপ নিতে পারে হিংসায়, অতিরিক্ত শৃঙ্খলাবোধ এবং কঠোরতা থেকে জন্ম নিতে পারে নিষ্ঠুরতা। এসব গুণ নিজের কাজে যথাযথ হলেই মানুষ নেতা হয়ে উঠতে পারেন। নেতা অন্যের সৃজনশীলতা, ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তি বিকাশের এবং তা কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় অদম্য ও অপ্রতিরোধ্যভাবে নিবেদিত। নেতা মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণাবলি বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বিকাশের পথ উন্মুক্ত করেন।