স্রষ্টাকে যে ভালোবাসে সে সৃষ্টিকে ভালো না বেসে পারে না। আর সৃষ্টিকে যে ভালবাসে, দৃষ্টিকে প্রসারিত করে, গভীর অর্ন্তদৃষ্টি নিয়ে ভাবে সে সংযত হয়ে থাকে। স্রষ্টাকে চিনতে হলে সৃষ্টিকে চেনার বিকল্প নেই। আমরা স্রষ্টার বিশাল সৃষ্টির ক্ষুদ্র এক অংশ।
এদেশের মাটি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা, আলো-বাতাসের আকর্ষণ, হৃদ্যতা আমাদেরকে কাছে টানে। দেশটাকে মনের মত করে গড়ে তোলার ইচ্ছা জাগে। যারা এদেশে জন্মেছে অথচ দেশের মাটি ও মানুষের সমস্যা, সম্ভাবনা ও উন্নতি নিয়ে ভাবে না সর্বদা শুধু নিজ স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকে তাদেরকে কেন জানি অনেকেরই পছন্দ হয় না ।
অর্থ সম্পদ যা না পারে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়ে তা লাভ করা যায়। এদেশের সবকিছুই আমাদের বড় আপন। মাতৃভূমির প্রতিইঞ্চি মটিই আমার ভীষণ প্রিয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কোনো খেদমত করে যেতে পারলেই জীবনটা সার্থক হবে। স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতি পূরণে নতুন প্রজন্মকে সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে । ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেই ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হতে হবে । সেক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে,
কখনোই অপরকে তুচ্ছজ্ঞান করা নয়
কারো ভালো ব্যবহারের প্রতিদানে খারাপ ব্যবহার করা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট যারা তাদের মাধ্যমেই সম্ভব। কেননা পশুও পোষ মানে, আদরের ফলে আন্তরিকতা প্রদর্শন করে। কারো আচার-আচরণ দেখে তার নিন্দা করা, ত্রটি খুঁজা, দুর্বলতা পেলেই সমালোচনা মুখর হওয়া অযৌক্তিক কাজ।
যাকে ঘৃণা করা হবে, উপহাস করা হবে তার বিশেষ কোনো একটি আচরণ দেখে সে তো সমালোচকের চেয়েও অনেক দিক থেকে ভালো মানুষ হতে পারে। আমি তো তার সব গুণ জানি না, ভেতরের সবটুকু উপলব্ধি করতে পারি না, আমার সীমাবদ্ধতাই আমাকে অপরকে তুচ্ছ মনে না করতে বাধ্য করার কথা ।
নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হোন
কেউ যদি সফলতার জন্যে চেষ্টা ও পরিশ্রম করে, কল্যাণের পথে থেকে মঙ্গল হাসিলের সাধনা করে তাহলে সে অবশ্যই কামিয়াবী হবে। স্রষ্টা কাউকেই সাধ্যাতীত দায়িত্ব দেন না। সুতরাং তিনি যে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জীব’ ‘স্রষ্টার প্রতিনিধি’ , ‘উত্তম জাতি’ এসব বলে পরিচয় করায়েছেন অবশ্যই তিনি এ পরিচয়ে পরিচিত হওয়া এবং মর্যাদা রক্ষারও যোগ্যতা দক্ষতা দিয়েছেন। যদি তিনি যোগ্যতা না দিয়েই দায়িত্ব দিয়েছেন বলে মনে মনে ধরে নেয়া হয় তবে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
কেননা অযোগ্য কাউকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া কখনোই যুক্তিসম্মত হতে পারে না। এ ধরনের ভুল মানুষের দ্বারা হতে পারে সৃষ্টিকর্তার মাধ্যমে হতে পারে না। অর্থাৎ আমাদের সবারই যোগ্যতা, মেধা, ক্ষমতা এতটুকু থাকাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যতটুকু হলে স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যায়, অন্য সকল সৃষ্টি জীবের উপর কর্তৃত্ব করা যায়, অন্য জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু আমরা নিজেদেরকে চিনতে পারিনি ।
নিজের মেধা, ক্ষমতা ও যোগ্যতাকেও অনুধাবণ করতে পারিনি। দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে সচেতন হতে পারি নি। নিজেদেরকে দুর্বল ও পরমুখাপেক্ষী মনে করায় সংকীর্ণতার অভিশাপ ডেকে এনেছি।
উত্তরোত্তর উন্নতির চেষ্টা করুন
কোনো কার্যক্রমই উত্তরোত্তর উন্নতি করার চেষ্টায় ব্রতী না হলে বৃহৎ উন্নতি হবার কথা নয়। নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিজেকেই উদ্যোগী হতে হয়, সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পরিকল্পণা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হয়। আমি নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন না চাইলে পৃথিবীর গোটা মানব সমাজের সবাই মিলে চেষ্টা করলেও আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমি তাই পাব যতটুকু আশা করব। আমি ততটুকুই সর্বোচ্চ করতে পারব আমি বাস্তবসম্মতভাবে যতটুকু করার ক্ষমতা আমার আছে বলে বিশ্বাস করব।
যে যা পেতে চেষ্টা করে সে তাই পায়। পাওয়ার পরিমাণটা নির্ভর করে পরিশ্রমপ্রিয় মানসিকতার উপর। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে পূণ্যের পথে থাকে এবং পরের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে। কেননা, ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ হাসিলের সংকীর্ণ মানসিকতা নয় বরং মানবতা ও মনুষ্যত্বের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণই স্রষ্টার বেশি পছন্দ। বৃথা সেই জীবন, যে জীবন মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয় না। দেশ, জাতি, দেশের মাটি মানুষ তথা মানবতার উপকারে আসে না, এমন জীবন হতভাগার। সৌভাগ্যশালীদের অর্ন্তভুক্ত হবার প্রত্যাশা আমাদের।
নিজেকে বিশ্ব নাগরিক ভাবুন
কাউকে যদি পছন্দই না হয় তবে তাকে ভালবাসার ইচ্ছাও জাগে না। যাকে অপছন্দ করা হয় তাকে জানা বুঝার আগ্রহও থাকে না। না জেনে না বুঝে কারো ভাল করতে চাইলেও ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই যদি দেশের জন্য, দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে কিছু করতে চাওয়া হয় তবে দেশের মাটি ও মানুষকে, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের আবেগ-অনুভূতিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
আসলে এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ থেকে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে, আমাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন ঘটেছে। তাই বিস্তৃত পরিসরে বৃহৎ চিন্তা করলে ভৌগোলিক কোন সীমানার মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রাখার প্রসঙ্গটি কাক্সিক্ষত নয়।
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিন
গোটা পৃথিবীটাই এখন যেন একটা দেশেরই মতো আর আমি যেহেতু তারই নাগরিক সুতরাং আমার চিন্তা, কর্মপরিসর, বিস্তৃতি গোটা বিশ্বব্যাপিই প্রসারিত থাকা উচিত। গড়ে তুলতে হবে বিশ্বমানের উপযোগী যোগ্য করে। না হয় জীবন অনর্থক হয়ে দাঁড়াবে, মূল্যহীণ হয়ে পড়বে। গোটা বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন করার সুতীব্র বাসনা হৃদয়ে লালনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণই কাম্য।
সততা বিসর্জন নয়
সততা বিসর্জন দিয়ে বড় হতে চেয়ে আরো ছোট হয়ে পড়তে হয়। সন্তান যদি একজন ভাল মানুষ হয় তবেই মা তার মাতৃত্বকে সার্থক মনে করে, গৌরবে চিরভাস্বর হয়।
বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথেই মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে আমাদের চিন্তা, আশা, স্বপ্ন, চেতনা ও বিশ্বাস। এদেশের মাটি, মানুূষ, লাল সবুজ পতাকা আমাদের অতি আপন। তাই অনেকেরই এদেশকে মনের মত করে গড়ে তোলার ইচ্ছে জাগে।
নিঃস্বার্থভাবে কাজ করুন
দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি নাগরিকের। এদেশকে বাদ দিয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার, জীবন, সাধনা হতে পারে না বরং সবকিছু বিসর্জন দিয়ে হলেও দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগের মানসিকতাই তীব্র।
মনে রাখতে হবে- সুন্দর মনে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে পারার মধ্যেই প্রশান্তির সর্বোচ্চ ছোঁয়া অনুভব করা সম্ভব। জীবন সুখ ও শান্তিময় হয়ে উঠে তখনই যখন শুধু নিজের জন্যে নয় পরের কল্যাণের জন্য কিছু করা যায়।
চাই স্বকীয়তা
সুকৃতির দ্বারা নিজেকে স্মরণীয় করে রাখতে পারলে সেটা অনেক বড় অর্জন। গঠনমূলক কাজ, সৃজনশীল চিন্তা ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে শেষদিন পর্যন্ত পুণ্য হাসিল সম্ভব; মানুষের কল্যাণ হবে। নিজের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে আশা পূরণের দরকার নেই। নিজের জ্ঞান, বুদ্ধিগুণে সর্বাবস্থায় স্বকীয়তা বজায় রাখতে চাই। সৌভাগ্যবান সেই যার কাজকর্ম সুন্দর, রয়েছে বেশি পরিশ্রম করার মানসিকতা।
নিজেকে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ করে গড়ে তোলা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কর্মপ্রচেষ্টা ও সাধনার গুণে বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা মিলেও নদী, নদী থেকে সাগর সৃষ্টি করতে পারে। আসলে একটি দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিঃস্বার্থভঅবে বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা সম্পন্ন লোকের প্রয়োজন হয়। যারা দেশপ্রেমিক, বুদ্ধিমান ও জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
উন্নত মানসিকতা
মোম নিজেকে নিঃশেষ করে যেভাবে অপরকে আলো দেয় সেভাবে কিছু মানুষকেও মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। নচেৎ সমাজ ও দেশ শান্তিময় হতে পারে না। অপরের কাছ থেকে পাওয়ার চিন্তা নয় বরং সাধ্যানুসারে সকলের সেবা করে যেতে হবে। উন্নত মানসিকতা থাকতে হবে।
পূর্ব পুরুষের পরিচয়ে পরিচিত হওয়াতে কৃতিত্ব নেই, বরং নিজের স্বকীয়তার বিনির্মাণ, নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা, নিজ দেশকে ভালো মতো সেবা করার মধ্য দিয়েই আত্মপরিচয়ের গ্রহণযোগ্য রূপ উদ্ভাসিত হয়। শুধু পাওয়ার মনোভাব নয়, সেবার মনোভাবই বেশি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য।
নিজেকে গড়ুন; এগিয়ে থাকুন
দৈহিক সৌন্দর্যের সাথে যদি বুদ্ধিমত্তা যোগ না হয় তবে সে সৌন্দর্য খুব বেশি কাজে লাগে না। কাজ কর্মতৎপরতার মাধ্যমেই ব্যক্তিত্বের বিশালত্ব অনুধাবণ করা যায়। অনেকক্ষেত্রে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ব্যক্তিত্বের বিশাল পরিসরকে সংকুচিত করে ফেলে। মুক্তবুদ্ধি ও সুস্থ চিন্তার শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে নেশার কারণে।
অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত বিলাসিতা, আরামপ্রিয়তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং মনের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে গিয়ে মনের দাসত্ব করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হউক সেটা কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ, মনের ইচ্ছা বাস্তবায়নকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়াটাও যৌক্তিক হতে পারে না। নিঃশর্তে বৃহত্তর স্বার্থে পরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াটাই পছন্দ, সংকীর্ণতার বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারাতেই আনন্দ নিহিত।
ভোগ নয় ত্যাগের জন্যও প্রয়োজন অর্থ, জ্ঞান, ক্ষমতা। ভাণ্ডার যত সমৃদ্ধ হবে ততই বেশি বিলানো যাবে। নিজের মাঝে শূণ্যতা, হতাশা, হায় হায় ভাব থাকলে, অপূর্ণতা থাকলে আরেকজনের মনে আশা জাগানো যায় না, অন্যের প্রয়োজন মেটানো যায় না। সে জন্য সবার আগে গড়তে হবে নিজেকে। সামনে এগিয়ে থাকার প্রত্যয় থাকতে হবে। উদার মানসিকতার প্রয়োজনীয়তা সে জন্যই অনস্বীকার্য।
সময়কে কাজে লাগান
জ্ঞানার্জনে যার আনন্দ হয় নিঃসন্দেহে সে বড় মহৎ। বই পড়া ও বাস্তব জীবন উপলব্ধিকে যে শখে পরিণত করে জ্ঞানের জগতে তারই রাজত্ব চলে। ভ্রমণের মাধ্যমেও নতুনত্বের সন্ধান লাভ হয়, অজানাকে জানা যায় অভিজ্ঞতা বাড়ে। অনুসন্ধিৎসু মন, জ্ঞানপিপাসু হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে বইপড়া ও ভ্রমণের মাধ্যমে। যার মন যত বড়, মানুষ হিসেবেও সে তত বড়।
প্রতিভার বিকাশে আন্তরিক হউন
স্রষ্টা প্রদত্ত আমানত হচ্ছে প্রতিভা। তাই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে আন্তরিক হওয়াটা নৈতিক দায়িত্ব। তকদিরে পূর্ণ বিশ্বাসই দুশ্চিন্তা মুক্ত হবার মহা ঔষুধ। স্রষ্টার উপর ভরসাই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী করে তোলে। যে তারুণ্য মহাসাগরে সাঁতার কেটে পার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ছোট খাটো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তার দ্বারা অসম্ভব নয়। সমস্যা আছে তার সমাধানও আছে।
সকল বিপদ ও প্রতিবন্ধিকতাকে হাসিমুখে গ্রহণ করে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে যে এগিয়ে চলে বিজয় ও সাফল্যের আনন্দের স্বাদ তারই প্রাপ্য। মনের শক্তির কাছে অন্য সকল শক্তিই পরাজিত হতে বাধ্য। ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই চক্ষু যাকে সফল দেখবে, কর্মে বিজয়গান ও কৃতিত্ব শুনাবে সে মানুষটি অসাধারণ নিঃসন্দেহে। গভীর রজনীতে নিঃস্তব্ধভাবে ঘুমিয়ে থাকে প্রকৃতি, জেগে থাকে জ্ঞানসাধক। কলম সৈনিকেরা মহৎ উদ্দেশ্যে ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে মানবতা ও মনুষ্যত্বের বড় বন্ধু হতে পারে ।
জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধকরণে বইপড়ার বিকল্প নেই। তাই অলসতা ও অতিরিক্ত আরামপ্রিয়তাকে বর্জন করে স্বর্ণালী তারুণ্যকে বর্ণালী করে সাজাতে সাধনা ও অধ্যবসায়কেই গ্রহণ করতে হবে। প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণে আন্তরিকতা ও উদ্যোগ বৃদ্ধি করা ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব। সময় অপচয় মানেই জীবনকে অবমূল্যায়ন-যা আনে স্রষ্টার অসন্তুষ্টি।
কলম হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার
কলমকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে আত্মনিয়োগ করা যুগের অপরিহার্য দাবি। এক্ষেত্রে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করাটাই কর্তব্য। শুধু নিজ পরিবার নয় দেশ ও জাতির কল্যাণে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে হবে। বইপড়া, জ্ঞানার্জন, ভ্রমণ ও নানা অভিজ্ঞতা লেখকদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে, লেখার গুণগত মানকে উন্নত করে।
পুষ্পকাননে বসে সৌরভ আর সৌন্দর্য অবলোকনেই লেখকরা তৃপ্ত থাকা নয় বরং প্রযুক্তিগত, ভাষাগত ও সমসাময়িক জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে আদর্শ বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। লেখকরা সমাজের দর্পণ, পথ নির্দেশক। মানবতা ও মনুষ্যত্বের বিকাশের চেষ্টা ও কল্যাণকর কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই নশ্বর ও সসীম জীবনে অমরত্ব আসে। লেখনী তৈরি জ্ঞানচর্চার উচ্চতর মাধ্যম।
বক্তার বক্তৃতা শ্রোতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও লেখকের লেখা অনন্তকাল ধরে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছায়। ভালো একজন লেখক তাই লাভ করে চির অমরত্ব। লিখতে হলে বেশি বেশি পড়ার বিকল্প নেই। গড়ে তুলতে হবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরী।
বইপাঠ বাড়াতে গ্রন্থাগার বাড়ান
বিশ্বকবি নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রন্থাগারকে ‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোলের’ সাথে তুলনা গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক নিঃসন্দেহে। লেখক হতে হলে আর অপেক্ষা নয়। ছাত্র বয়স থেকে শুরু করতে হবে। জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময় ছাত্রজীবনে সফল না হলে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার সোনালী স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয় না।
আজকের ছাত্রই আগামী দিনে জীবন সংগ্রামে হবে দিগ্বিজয়ী। গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্ব অর্জনকারীরাই পৃথিবীর সকল ফুলের সুরভী ও ঝর্নার কলতান, কোকিলের কুহুতান, শরতের শিশিরের শুভ্রতা, বাতাসের সব হিন্দোল এবং আকাশের সব তারকার তাজাল্লীর অভিনন্দন লাভ করে দেশ ও জাতিকে আনন্দিত করে। চাই দেশপ্রেমিক ও যোগ্য লেখক। জাতির জাগরণের জন্য উপযুক্ত লেখক সৃষ্টি হউক, হউক দেশ জাতি ও মানবতার কল্যাণ।
আপনিই উদ্যোগী হউন
নবীনেরাই আগামীর সম্ভাবনা। তাদের উপরই নির্ভর করছে এদেশের ভবিষ্যৎ। রাত যেমন দীর্ঘ বুক নিয়ে সোনালী ভোরের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করে; এদেশ ও জাতি তেমনি অপেক্ষমান নবীন কিশোর, তরুণ ও যুবকদের জন্যে। আমাদের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
জ্ঞানের সন্ধানে মানুষ পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চল, অপারসমুদ্র ও মহাশূন্যে বিচরণ করে অর্জন করছে নিত্য নতুন জ্ঞান। জ্ঞান আহরণে কার্পণ্য প্রদর্শন বুদ্ধিহীনতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন। যারাই পৃথিবীতে চির অমরত্ব লাভে ধন্য হয়েছেন তারা জ্ঞানহীন ছিলেন না। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী কালের ঘূর্ণিপাকের বিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যা ও সংকটাপন্ন পৃথিবী যে মহাপুরুষদের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছে তারা সবাই জ্ঞান সাধনা করেছে।
যাদের প্রেমের অমৃত সেচনে দুঃখ তপ্ত মানব-চিত্ত স্নিগ্ধ হয়, মানব সমাজের যুগ-যুগান্তরের কুক্ষিগত কালিমা ও রশ্মির মধ্য হতে সূর্যের ন্যায় উত্থিত হয়ে পাপের কুহক যারা ভেঙ্গেছেন তারা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সত্য ও প্রেমে সঞ্জীবিত করে সুন্দর জীবন পথে যিনি টেনে নেবেন তাকে গতানুগতিক হলে চলবে না। যে জ্ঞানী মানসিকভাবে স্বার্থপর ও সংকীর্ণ চিন্তাধারার অধিকারী তার দ্বারা মানবতার খুব বেশি কল্যাণ হয় না।
নিজেকে বিলিয়ে দিন
মানসিক স্বার্থপরতা জগতের কোনো কল্যাণকে সাধন করতে পারে না। স্রোতহীন নদীতে যেমন অজস্র শৈবালদল এসে নিজের স্থান দখল করে নেয় এবং স্রোতধারায় বাঁধা সৃষ্টি করে মানসিক স্বার্থপরতা তেমনি ব্যক্তির মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, উন্নতি ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। সে নবীনদের দ্বারাই সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব যাদের জ্ঞানসাধনার অদম্য স্পৃহা রয়েছে, নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেবার প্রস্তুতি রয়েছে, নিজেদের মেধা মনন ও যোগ্যতার বিকাশে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে, কর্মস্পৃহা রয়েছে।
বড় চিন্তা না করলে বড় কাজ হয় না। সুতরাং শারীরিক শক্তি, ব্যবহার করতে হবে মাটি ও মানুষের কল্যাণে। পরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মানসিকতা হৃদয়ে এক দারুণ প্রশান্তি ছড়ায়। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজে উদ্যোগী না হলে কখনোই সৌভাগ্যদান করে না। সেটি আশাও করা যায় না।
ভালো কাজে উৎসাহ দিন
যারা শত বট বৃক্ষ তৈরি করেন, ক্ষুদ্র একটি বটবৃক্ষ তৈরি করে তার ছায়ায় তাদের বিশ্রাম নেয়ার আমন্ত্রণ জানানোর চেয়ে আশ্রয়হীন, প্রখর রৌদ্রতাপে দগ্ধ ক্লান্ত পথিকদের ছায়া পাওয়ার অধিকারটাই বেশি যৌক্তিক। পরিচয়হীন, অনভিজ্ঞ নবীনেরাই একদিন হবে অভিজ্ঞ , যশখ্যাতির উচ্চ শিখরে করবে আরোহণ। সুতরাং নবীন লেখকদের লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হলে সেটি দারুণ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
আমাদের দেশে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের সুযোগ কম। অনেক প্রতিভাই সুযোগের অভাবে হারিয়ে যায়। যদি নবীনদের মধ্যে অনুপ্রেরণা দিয়ে, উৎসাহিত করা হয়; প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়, যোগ্যতার বিকাশের ব্যবস্থা করা হয়, তাদের লেখা প্রকাশের মাধ্যমে উপকার করা হয়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নবীনেরা যদি অগ্রাধিকার পায় তবেই নবীন কলম সৈনিকেরা শুধু স্বপ্নের জগতে বিচরণ নয় বাস্তব জগতেও তারা উত্তম কর্মফল রাখতে সক্ষম হবে।
লিখতে লিখতেই পরিপক্বতা আসে। দৃপ্ত শপথ নেয় ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তনের। আমাদেরকে বেশি বেশি প্রতিযোগিতা, পুরস্কার,সম্মাননা, পদক চালু করতে হবে, স্বীকৃতি না পেলে কাজে আনন্দ কমে আসে, উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে। একটু সহযোগিতা পেলে নব সভ্যতা বিনির্মাণে অগ্রপথিক রূপে অনেকেই বেড়ে উঠতে পারে। মেধা, মননশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বাড়বে।
সহযোগিতা করুন
সফলতা কর্মে নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করে। তাই সুকুমার বৃত্তিগুলোর ব্যাপারে জোর দৃষ্টি দিতে হবে। নচেৎ বিবেক বুদ্ধিতে স্বচ্ছতা আসবে না, মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়বে না। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা বাড়বে না, মেধা শানিত হবে না। তাই যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সোনালী সমাজ গড়ার সুতীর বাসনা নিয়ে মিথ্যার বেড়াজাল ছিন্ন করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
সফলতা অর্জনের জন্যেও কিছু মাধ্যম প্রয়োজন, যেমন উপরে উঠার জন্য প্রয়োজন সিঁড়ির। সে জন্য প্রতিভার বিকাশের উপযুক্ত নানা মাধ্যম গড়ে তোলার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। যা থেকে পাওয়া যাবে-সুনির্দিষ্ট উন্নত দিক নির্দেশনা, রচিত হবে সামনে এগিয়ে যাবার বর্ণালী অধ্যায়। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে দুর্বলতা নয় সবল হতে হবে।
পানি সেচ না দিলে চারা গাছ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। নিঃসন্দেহে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়ন, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের মহৎ কর্মসম্পাদনের অনন্য এক আয়োজন হতে পারে। এটা সত্য সৃজনশীল চিন্তা ও গঠনমূলক কাজ করাটা কষ্টকর। তবে এ কষ্টকর কাজ হাসিমুখে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শান্তি সুখের অন্বেষণ করাটা যৌক্তিক হবে।
সুচিন্তা ছড়িয়ে দিন
আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এগুলোকে ভালভাবে জানতে হবে। এতে আমরা বেশি সচেতন হবো। নিজেদের সম্পর্কে উঁচু ধারণার সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যৎ রচনার স্বপ্ন দেখতে, মনকে আশার আলোতে আলোকিত করতে এ ব্যাপারটিকে গুরুত্বহীন ভাবার সুযোগ নেই। অনেক মানুষের নিষ্ঠুরতা ও হৃদয়হীনতার নজীর বন্য পশুদের মধ্যেও দু¯প্রাপ্য।
এমন অনেক ধরণের হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখতে হচ্ছে অনাকাক্সিক্ষতভাবে যা কোনো সুস্থ মানুষের হৃদয়ই স্থির থাকতে পারে না, পারে না নীরবে দর্শকের গ্যালারিতে বসে এ তাণ্ডবলীলা দেখতে। তাই সিদ্ধান্ত নিন নিজের সাধ্যানুযায়ী কিছু করার এবং সাধ্য বাড়ানোর। শুধু নিজের জন্য নয় পরের জন্য কিছু করার মানসিকতা সুতীব্র। এজন্যে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আমরা চাই বা না চাই-পরিবর্তন আসবেই।
পরিবর্তনশীল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজে ছন্দ মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন যোগ্যতার। নিজের সৎচিন্তা, কল্যাণকর জ্ঞান বিতরণে উদার মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। সক্রেটিস পে¬টোকে, পে¬টো এরিস্টটলকে, এরিস্টটল আলেকজাণ্ডার দি গ্রেটকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। জ্ঞান যদি একজন থেকে আরেকজনে প্রবাহিত না হয়, তাহলে তা শুকিয়ে শেষ হয়ে যাবে।
যোগ্যতা বাড়ান
জ্ঞানই যোগ্যতার অন্যতম মাপকাঠি। যোগ্য না হয়ে যোগ্যতার সম্মান পাওয়া থেকে যোগ্য হয়ে যোগ্যতার সম্মান না পাওয়া ভালো। কারণ প্রাপ্তিতে নয়, যোগ্য হওয়াতেই আছে প্রকৃত মর্যাদাবোধ। জ্ঞানী মানুষই সত্যিকার মানুষ। চরিত্রবান, সৎ এবং যথার্থ মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষকে অর্থের দ্বারা কেনা যায় না।
অর্থের প্রভাব প্রবল হলে অনেক সময় সত্যের কণ্ঠস্বর শুনা যায় না। জ্ঞানও অর্থ আনতে পারে। এর মানে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন-এটা ঠিক নয়। চাঁদের জন্য লক্ষ স্থির করলে যদি লক্ষ ভ্রষ্টও হয় তবে অন্তত তারকা হওয়া সম্ভব।
সচেতন প্রজন্ম গড়ার প্রত্যাশাই যথেষ্ট নয়। স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্র“তি দিলেই হবেনা । আগামী প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে,প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে কাংখিত মানে গড়ে তুলার দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মকেই নিতে হবে। শুধু বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যত দেখাই যথেষ্ট নয় । সুদূর ভবিষ্যতকে মাথায় রেখেই কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে । সময়ের দাবি অনুযায়ী সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ার ক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই দেশ, জাতি মানবতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ।