জীবন অর্থই শুদ্ধ জীবন, উন্নত-উত্তম জীবন। অশুদ্ধ জীবন আসলে জীবন নয়। জীবনের পরিশুদ্ধি আসে শুদ্ধ জীবন গড়ার স্বপ্ন ও চেষ্টা থেকে। উত্তম কাজ ও গুণগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে উন্নত জীবনই সার্থক। শুদ্ধ হওয়া বিষয়টি চর্চ্চার ওপর নির্ভরশীল। মানুষটি সৎ ও শুদ্ধ না হলে সিস্টেম অকার্যকর হয়ে যায়।
শুদ্ধ এর বিশেষণ পদ- শোধন বা নির্মল করা হয়েছে এমন, নির্দোষ, নির্মল, শুচি, শোধিত, পবিত্র, নির্ভুল, খাঁটি, নির্ভেজাল, ভ্রমহীনতা ভেজালবিহীনতা; Pure; clear; clean; holy; purified; faultless; genuine; unadulterated; right; correct; simple; only; net ইত্যাদি। বিশেষ্য পদ- শুদ্ধতা, শুদ্ধত্ব। শুদ্ধশীল মানে নির্মল চরিত্রবিশিষ্ট। শুদ্ধচিত্ত বা শুদ্ধমতি মানে পবিত্র হৃদয়বিশিষ্ট, পবিত্র হৃদয়।
শুদ্ধ
- যা-কিছু ভালো
- যা-কিছু কল্যাণকর
- যা-কিছু সত্য
- যা-কিছু সুন্দর
- যা-কিছু শুভ
- যা-কিছু ন্যায়
- যা-কিছু মানবিক
- যা-কিছুতে ধর্ম
অশুদ্ধ
- যা-কিছু মন্দ
- যা-কিছু অকল্যাণকর
- যা-কিছু অসত্য
- যা-কিছু পঙ্কিল
- যা-কিছু অশুভ
- যা-কিছু অন্যায়
- যা-কিছু জুলুম
- যা-কিছু অমানবিক
- যা-কিছুতে অধর্ম
শুদ্ধাচার
- ভালো মানুষের ভূষণ
- পবিত্র বা নির্দোষ আচরণ
- ধর্মের ফলিত রূপ
- ধার্মিকের আচার-আচরণ
শুদ্ধাচারী মানুষ
- ভালো মানুষ
- প্রিয় মানুষ
- সুখী মানুষ
- ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানেন
- ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে জানেন
- ন্যায়-নীতির ব্যাপারে অটল
- ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দৃঢ়চেতা
- করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে জানেন
- কথা ও কাজকে নৈতিকতার কষ্টিপাথরে যাচাই করেন
- যা করণীয় তা করেন
- যা বর্জনীয় তা বাদ দেন
- পরিশীলিত আচার-আচরণ
- থাকে আন্তরিকতা ও চেষ্টা
- উন্নত কাজ বা উত্তম কর্মে আগ্রহী
- উন্নতির জন্য মনে-প্রাণে চেষ্টা-সাধনাকারী
- সততার চর্চা করেন ও নিষ্ঠাবান হন
শুদ্ধাচারের চর্চা
- মানব মনের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়, আত্মার উন্নতি হয়
- শুদ্ধতম জীবন গড়া যায়, প্রাণের উজ্জীবন ঘটে
- শুদ্ধাচারী জাতি নির্মাণ সম্ভব হয়
- দুর্নীতি বন্ধ হয়
- অনাচারমুক্ত দেশ গড়ে উঠে
- সম্পদের সুষম বণ্টন হয়
- ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন-অগ্রগতি টেকসই হয়
- সাধারণ মানুষ লাভবান হয়
- ভালো মানুষ হওয়া যায়
- পারস্পরিক ভালোবাসা বাড়ে, সংযম বৃদ্ধি পায়
- জীবনের মহিমা বেশি পরিস্ফুটিত হয়
- ধৈর্য বাড়ায়
শুদ্ধ মানুষ কিভাবে চেনবেন?
- একে অপরকে ডিঙাতে চায় না
- সীমাহীন স্বার্থপরতা পছন্দ করে না
- দৃষ্টি লোভাতুর নয়
- উদগ্র ভোগবাদে বিশ্বাসী নয়, বস্তুবাদি নন, বিপথগামি নন
- আকাঙ্ক্ষার শীর্ষে আরোহণে বক্রপথ খোঁজে না
- অর্থোপার্জনই জীবনের উদ্দেশ্য নয়
- শুদ্ধতম জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন
- সুন্দর ও শান্তিময় জীবন প্রত্যাশা করেন
- সফল জীবনের চেয়ে সার্থক জীবন কামনা করেন
- জীবনকে নিয়মের মাধ্যমে চালান
- ভালোবাসা দ্বারা অনুপ্রাণিত
- জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত
- মানুষের স্বার্থে তথা মানবতার সেবায় জীবন বিলিয়ে দেন
- মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা বলেন
- উত্তম কাজের ওপর বেশি প্রাধান্য দেন
- ভালোবাসা, সহযোগিতাও সহমর্মিতার চর্চা করেন
- অহংবোধ নেই , গরিব -সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মিশেন
- সময়ের অপচয় করে না
- নিজের জীবনকে এবং অন্যকে ভালোবাসেন
- অনৈতিক অর্থের প্রতিযোগিতায় ছুটেন না
শুদ্ধ মানুষের অভাবে কী হয়?
- দুরাচার বেড়ে যায়
- অধর্ম দেখা যায়, অধার্মিকের সংখ্যা বাড়ে
- অসুস্থ প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়
- মনোজগতে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, মানসিক বিকাশ হয় না
- অশান্ত হয়ে ওঠে জনপদ
- অনিরাপদ হয়ে পড়ে সমাজ
- তৈরি হয় অমানবিক পৃথিবী
- চারপাশে অশান্তি বাড়ে
- মানবতার অধঃপতন হয়, মানবতার বিকাশ হয় না
- পরিপূর্ণতা আসে না, অপূর্ণতা ও শূন্যতায় ভরে যায় সবকিছু
- অর্থের দাসত্ব বাড়ে
- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যায়
- অস্বস্তি ও অকল্যাণ সাধনা বৃদ্ধি পায়
- জীবনে অগ্রগতি থেমে যায়, জীবন অবাঞ্ছিত হয়ে পড়ে
- আমি সবার চেয়ে বড়—এমন উগ্রচণ্ডী মানসিকতা বেড়ে যায়
- প্রেম, ভালোবাসা আর মমতা
- প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও অরপরাধ প্রবণতা বাড়ে
পরিবার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- ব্যক্তির শুদ্ধাচার চর্চার লালনভূমি পরিবার
- শুদ্ধাচারের চর্চা পরিবার থেকেই শুরু করতে হয়
- পরিবারে শুদ্ধাচারের চর্চা ছড়িয়ে পড়ে সমাজে
- ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জাতীয় জীবনে
- শুদ্ধ মানুষই পারে সমৃদ্ধ পরিবার গড়তে
- শুদ্ধ মানুষই পারে সুন্দর সমাজ গড়তে
আমরা কী করছি?
- পরিবেশ ধ্বংস করেছি
- শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট করেছি
- ইতিবাচক উদ্যোগগুলোরও গলা টিপে ধরেছি
- নতুন পরিবর্তনকে গ্রহণ করছি না
- যা বলছি তা করছি না। যেখানে বলা উচিৎ সেখানে নিরব থাকছি। যেখানে চুপ থাকা কল্যাণকর সেখানে সমালোচনার জোয়ার বয়ে দিচ্ছি।
আমাদের আহ্বান
ধার্মিক দুরাচারী হতে পারে না, দুরাচারীও ধার্মিক হতে পারে না।মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বের গুণাবলিসম্পন্ন বানিয়েছেন। আল্লাহ্ আদমের ভেতরে রুহ ফুঁকে দেয়ার ফলে মানুষের ভেতরে পরমাত্মা বা আল্লাহর গুণাবলি প্রবেশ করে। যেহেতু মানুষ নফস্ তথা জীবাত্মা এবং রুহ তথা পরমাত্মার সমন্বয়ে তৈরি। সেহেতু মানুষের দেহেও পশুর মতই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য- এ ষড়রিপু বিদ্যমান। আবার পবিত্র হৃদয়, নির্দোষ আচরণ, নির্মল চরিত্রও বিদ্যমান। কিন্তু পৃথিবীর মোহ-মায়ায় পড়ে সৃষ্টিকর্তার দানকে ভুলে যাওয়ার কারণেই পরিণাম হয় করুণ।
তাই আত্মশুদ্ধি দরকার আগে! ভেতর গুণগত পরিবর্তন না হলে বাইরে পরিবর্তন আনবে কি করে! মানুষের অন্তর যদি হয় কলুষতায় ভরপুর, মানবিক ও সুন্দর সমাজের স্বপ্ন সেখানে দূরাশা দূরাকাঙ্ক্ষা। ব্যক্তিপর্যায়ে শুদ্ধাচারের অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। আল্লাহ বলেন, ‘নিজেকে যে শুদ্ধ করে, সে-ই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।’ (সুরা : আশ-শামস, আয়াত : ৯-১০)
আসুন ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবেগপ্রবণ না হয়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেই, সব ধরনের অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকি, আমানতের ব্যাপারে সতর্ক থাকি, অঙ্গীকার পূরণে দৃঢ়তা অবলম্বন করি, দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন না করি।
শুদ্ধাচারী হয়ে উঠুন । শুদ্ধাচারী হলে আপনিও প্রিয় হবেন। সুখী হবেন। আপনার জীবনও সার্থক হবে, সুন্দর হবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, প্রথম আলো, manner.quantummethod.org.bd , বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বিবিসি
আপনার লেখাটি আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, নতুন অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এমন লেখা সত্যি মানুষকে অনেক সাহায্য করতে পারে। আমি নিজেও আপনার লেখাটি নোট করে রেখেছি, কিছু কিছু বেপার আসলে মানুষকে অনেক সাহায্য করতে পারে।
আমি আশা করব আপনি আপনার লেখা চালিয়ে যাবেন।
এমন একটি লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!