শিশুর জন্ম পরবর্তী সময়ে শিশুর জন্য রুটিন মাফিক জীবন করতে পারা সবচেয়ে বড় সাফল্য।এই পরিকল্পনা শিশুর জন্ম হবার এক মাস আগে লক্ষ্যে পরিনত করা দরকার।নইলে শিশুরা ঘুম দিনে ঘুমিয়ে হলেও সামলে নিতে পারে।মা আর বাবার ঘুমের ঘাটতি হয়ে যায়।যা একসময় সংসারে চরম হতাশা আনতে পারে।
প্রথমেই খেয়াল করি শিশু কেন ঘুমাতে চায় না বা পারে না। শিশু যে শিশু তাই সে কোনো বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখে না।অনেক শিশু সারাদিন ঘুমিয়ে রাত দশটা বাজলে খেলতে শুরু করে।তার এই খেলাকে ক্লান্ত না হওয়া মনে করলে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়।
তাহলে কি হবে? শিশুদের এই ঘুমের ছ্যাড়া বেড়া অবস্থা নবজাতক থেকে দুই মাস বয়সের মধ্যে সারিয়ে তুলতে হবে।
সমস্যা দূর করবার জন্য সমস্যাকে চিনে নেয়া সব চেয়ে বেশী উপযুক্ত ব্যবস্থা। শিশু অবাক। শিশু বিস্মিত। সে পৃথিবীতে এসে পড়েছে। এখানে এখন তার জামা কাপড় পড়তে হয়।মুখ দিয়ে খেতে হয়।তার শরীরে আগে কেউ আদর দেয় নি। এখন আদর দেয়।
এতদিন সে মায়ের কথা শুনতে পেয়েছে এখন সে মাকে দেখতে পায়। ছোট্ট মানুষ টা একসাথে এতো অভিজ্ঞতা পেয়েছে। এখন সে কি করতে কি করবে ঠিক নাই। তাই ছয় সপ্তাহ বয়সে তাকে বুঝে নিয়ে একটা রুটিন থাকা তাকে এসব চিন্তা র ভিতরে নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
নবজাতকের কাজ কি? খাওয়া , ঘুম,গোসল,ব্যায়াম। এই কাজগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালনা করা দরকার। নবজাতক বি এম ছাড়া কিছুই খায় না। তাই তার খাওয়া শেষ করে পেট থেকে বাতাস বের করলেই খাওয়া পর্ব শেষ।
এবার তাকে শোয়ানো হলেই সে ঘুমিয়ে যায়।এই সময়টা মনে করি সকাল ছয়টা।তারপর তার জেগে ওঠার সময়ে খেতে দেয়ার জন্য এই সময়ে মা নাস্তা করে নিবেন।
পরিবারের সমর্থনের ভিত্তিতে খেয়ে নিজেও একটু ঘুমিয়ে নেয়া মায়ের স্বাস্হ্যের জন্য রক্ষা কবচ।
তারপর দুজনে এক সাথে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে শিশু কে খেতে দিতে হবে। এভাবে সারাদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর খাওয়া দিয়ে দিয়ে রাত দশটার সময় শিশু কে সেদিনের শেষ খাওয়া দিতে হবে।মায়ের মনে দৃঢ়তা এবং ভরসা থাকতে হবে যে আমার সন্তান টানা ঘুমে সকাল করবে।তাকে সকাল ছয়টায় আবার খেতে দেয়া যাবে কারণ রাতের খাবার দেরী করে হজম হয়।
তাহলে যে শিশু ঘুমাচ্ছে না তার ফয়সালা কি? যখন একজন মায়ের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করে “হয়ত ঘুমাবে না, এবার আর ঘুমাবে না” এ জাতীয় ভাবনা থাকলে শিশু ঘুমাবে না।
ভয়, দ্বিধা দ্বন্দ্ব প্যারেন্টিং আচরণের সমর্থক আচরণ না।মানে আমি বলতে চাই সন্তান সম্পর্কে যে কোনো নেতিবাচক মনোভাব সন্তানের নেতিবাচকতা তৈরী হবার প্রথম কারণ।
আরেকটা কারণ হলো শিশু পৃথিবী দেখেনি।এখানে সে নতুন এসেছে।এখনে কখন ঘুম কখন খাওয়া এসব নিয়ে তার ধারণা নাই।তাকে ধারণা দেয়া আমাদের কাজ। শিশু কে শেখাবো How to act. কোথায় কখন কি করতে হবে।” আন্টি কে সালাম দাও” এ শিক্ষা যেমন দিবো।এখন ঘুমের সময় আমরা ঘুমাবো এ শিক্ষা ও আমাদেরকে ই দিতে হবে।
শিশুর ঘুমের অনিয়ম কে ঠিক করতে হলে দুই মাস বয়সের মধ্যে বাচ্চাদের ঘুমাতে নিয়ে চোখে নিজের দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে চোখ বন্ধ করতে শেখানো যাবে।সবাই বলবেন আগে তো একাই ঘুমিয়েছে। এখন কেনো চোখ চেপে ধরতে হবে।এখন চেপে ধরতে হবে কারণ তাকে জানাতে এবে এটা রাত। এটা ঘুমের সময়।
বাংলাদেশে অনেক শিশু রাত এগারোটা থেকে ভোর চার টা পর্যন্ত ঘুমাতে যায়। (আমি জরিপ করেছি।) এটা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পর্যাপ্ত ঘুম সঠিক জীবন যাপনের অন্যতম চাবিকাঠি।ঘুমে ঘাটতি হলে ব্রেণ শুকাতে শুরু করে।
(চিকিৎসক যারা আছেন তারা আরো স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে একটা ভিডিও দিয়েছেন । যেখানে উনিপ্রত্যেকটা কথা শিশুর ঘুমের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।) ঘুম থেকে শিশুর ব্রেণ ডেভলপমেন্ট হয়।কাজের ক্ষমতা পায়।
শরীর ও মন ভালো থাকার জন্য ঘুম খুব মূল্যবান। ঘুম কম হলে আমাদের শরীর মন ভালো না থাকার গল্প এক আধটা সবার জীবনেই আছে। শিশু ও আমাদের মত মানুষ।তার ঘুম কোনো ব্যাতিক্রম নয়।আমি ঘুমাই।বেবী ঘুমায়।এটাই স্বাভাবিক।
প্রাক্তন ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রবাসী শিশু প্রতিপালন বিশেষজ্ঞ