বড় হবার জন্য প্রয়োজন আত্মশক্তির। শক্তিশালী হাতিকে সামান্য রশির সাহায্যে খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। বাচ্চা বয়সে চেষ্টা করে শিকল খুলতে বিফল হওয়ায় এই অভ্যাস তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। সে শক্তি প্রয়োগ করে না। আর এভাবেই নানান সংকট, সমস্যা, সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে অকালেই নক্ষত্রের পতন ঘটে, সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়। বড় কাজ করার যোগ্য ব্যক্তিও ছোট কাজ করেই প্রশান্তিতে থাকে। আসলে এটা শুধু ব্যক্তির সমস্যা নয়, দেশ ও জাতির উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধকতা।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই জাগ্রত হয়। মানুষের বিবেককে জাগানো, অচেতন মনে চেতনা জাগলে, হৃদয়কে আলোকিত করা, অন্তরে যা-সুন্দর, ভাল, কল্যাণকর তার প্রতি আকর্ষণবোধ তৈরি করা, পূণ্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং যাতে পাপ, যেখানে পঙ্কিলতা তা বর্জন করার মানসিকতা তৈরি হয় ধর্মীয় জ্ঞান থেকে। যদিও বর্তমানে জ্ঞানের সাথে বাস্তব চিত্রে বেশ অমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ধর্মীয় জ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জকারীদের মধ্যেও জ্ঞানীর চেয়ে জ্ঞানপাপীদের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। তোতা পাখির মত মুখস্ত করে ধর্মীয় গভীর জ্ঞান উপলব্ধি হয় না। অনেক হাফেজে কুরআনেরও ধর্মের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। ধর্মের যে দাবি, যে বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি সেটি স্পষ্ট রূপে না বুঝায় অনেক ধরণের কুসংস্কার ও গোঁড়ামী মিলে তৈরি হয় ধর্মান্ধতা।
নানা অন্ধবিশ্বাস আর অস্পষ্টতার সমন্বয়ে সৃষ্ট সংকট আর জটিলতার ঘূর্ণাবর্তে অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে প্রয়োজনীয় মনে করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্বহীন মনে করে-ফলে ঘোলাটে পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়। অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয় ডেকে আনে। অপ্রত্যাশিতভাবে বয়ে আনে অভিশাপ। সৃষ্টি হয় নানা বিভ্রান্তির।
চাই প্রকৃতির মত উদারতা
যারা দিকভ্রান্ত মানবতাকে পথের দিশা দেবে, পথহারাকে পথ দেখাবে তারাই নানা কৃত্রিম জটিলতার মধ্যে দিয়ে গরলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সঠিক পথে যিনি নিজেই চলতে ব্যর্থ। তিনি অপরকে সঠিক সুন্দর পথের দিকে আহ্বান জানালে তা ফলপ্রসু না হওয়াই যৌক্তিক। ধর্মীয় জ্ঞানে বিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিত্ব যদি সিনেমা হলে যান, কোনো মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখেন তবে সেটি অস্বাভাবিক দৃষ্টিকটু হয়ে উঠে।
যিনি অপরকে সত্য বলতে ও সত্য পথে চলতে উৎসাহিত করবেন। জীবনটাকে সুন্দর সঠিক করতে পরামর্শ দেবেন। তিনি নিজেই যদি সেগুলো আমল না করেন তবে তার সুফল না পাওয়াটাই বাস্তবতা। নিজের পরিবারে যদি পর্দা না থাকে, রোজগারে যদি ভেজাল থাকে, পঙ্কিলতার যদি ছোঁয়া থাকে তবে সেখানে কাক্সিক্ষত ফলাফল আশা করা বোকামী। যিনি নিজেই মানুষ হতে পারেন নি তিনি আরেকজনকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাতে পারেন না। চালালে সেটি হবে হাস্যকর।
আলোকে উদ্ভাসিত হৃদয়
মাঝে মাঝে অবাক হই যে ধর্মীয় শিক্ষিত ব্যক্তি ও ঘুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়েন, পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করেন, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন। অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞানের কোনো প্রভাব তার চিন্তা-চেতনা, মনমানসিকতায় প্রতিফলন ঘটে না। উদ্দেশ্যের দিক থেকে কুরআন হাদীস পড়ুয়া আর পদার্থ-রসায়ন পড়ুয়া দুটি ছেলের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই পার্থক্য নির্ণয় করা দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। এটি সুখকর নয়।
নিয়্যাত যদি দুনিয়া কেন্দ্রিকই হয় তবে তার ফলাফল একই রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। চন্দ্র, সূর্য যেমন সবাইকে আলো বিলায়ে থাকে। প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্য যেমন সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। স্রষ্টা যেমনি সবার জন্যে, সৃষ্টিও তেমনি সবার। স্রষ্টা প্রদত্ত জ্ঞানও সবার জন্য। সুতরাং সে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত হৃদয় সবার। ব্যক্তিস্বার্থ, সংকীর্ণতা, হীনমন্যতার ছোঁয়া সেখানে বেমানান। উদার মুক্ত আকাশের মত বিশাল হৃদয় আর আলোক উদ্ভাসিত হৃদয়ই আমাদের কাম্য।
চাই আত্মসম্মানবোধ
আত্মসম্মানবোধই ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপনে কার্যকর। আত্মমর্যাদা সংকটে ভোগে বিশালতাকে উপলব্ধি করা যায় না। আচরণেই প্রকাশ পায় ব্যক্তির সত্যিকার রুচিবোধ, মনমানসিকতা, ব্যক্তিত্ব। ব্যবহারিক ক্ষেত্রই ব্যক্তিকে সঠিকভাবে বুঝার ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকর।
কে কত বড় মহৎ, বড় মাপের মানুষ তা ফুটে উঠে তার ব্যবহারে, আচার-আচরণে। যার জ্ঞানের কোনো আলো নেই, সামাজিককোনো মর্যাদা নেই, ব্যক্তিত্বের ইমেজ নেই সে অনেক কিছুই করতে পারে যা যৌক্তিকতার মানদণ্ডে বিচার করা যায় না। মন যার বিশাল, হৃদয় নিয়ে ব্যক্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট হয়, অপরের সাথে আচরণ করে।
উন্নত আচরণ কাম্য
অনেকেই জ্ঞানে অর্থে বড় হয় কিন্তু সে অনুপাতে হৃদয়কে বড় করতে পারে না। মনটা ছোট থেকে গেলেই সমস্যা। আচরণে তার প্রকাশ পায়। সুতরাং আমাদেরকে সবদিক থেকেই বড় হতে হবে, ছোট থেকে, সংকীর্ণ মন নিয়ে ভাল কিছু করা যায় না। ভালো কিছু করতে গেলেও তা ক্ষতির কারণ হয়। জাতির সামগ্রিক আচরণে বিশালতার বহিঃপ্রকাশ ঘটুক সেটাই প্রত্যাশা।
নিজ কর্মোদ্দীপনা সাফল্যের পূর্বশর্ত
ছোট শিশুটি একদিন বড় হয়। ক্ষমতাহীন ক্ষমতাবান হয়। বিত্তহীন বিত্তশালী হয়। অশিক্ষিত শিক্ষিত হয়। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ কিছুর সৃষ্টি হয়। এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দেহ বাড়ে মন বড় হয়, জ্ঞান বাড়ে চিন্তা শক্তি তীব্র হয়। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণটা সমান হয় না। অর্থ বাড়লেও অনেক সময় অনেক কঞ্জুস দিলের অবস্থা অপরিবর্তনীয় থেকে যায়। সমস্যা এখানেই।
সবাই মানুষ। কিন্তু সবাই সমান নয়। জ্ঞান, সম্পদ, ক্ষমতা নানা পার্থক্য সৃষ্টি করে। তবে প্রত্যেক ব্যক্তিত্বই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্ব মহিমায় চিরভাস্বর, কেউ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাউকেই তুচ্ছ মনে না করে উপযুক্ত সম্মান করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে। বড় হবার জন্যে নিজেকেই উদ্যোগ নিতে হয়, প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাতে হয়, সাধনা করতে হয়। সবাই সমান সফলতা অর্জন করতে পারে না। এটাকে শুধু কপালের লিখন, ভাগ্য বলে চালায়ে দেবার প্রচেষ্টা অযৌক্তিক।
আর হ্যাঁ-ফুলে সুরভী আছে, সৌন্দর্য আছে, হৃদয় মন কেড়ে নেয়ার আকর্ষণীয় ক্ষমতা আছে। তবে এ ফুলের পেছনে মালির ভূমিকা কি কম গুরুত্বপূর্ণ? মোটেই নয়। তবে ফুলের সাথে তো আর মালির তুলনা চলে না। যারা কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের সন্ধান লাভ করেন তাদের সফলতার পেছনে অনেকের অবদান থাকতে পারে।
তবে হ্যাঁ-নিজেকে গড়ার জন্য সবচেয়ে নিজের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৃথিবীর সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালায়েও আমি ছোট থাকতে চাইলে কিছুতেই বড় বানাতে পারবে না। তবে আমি যদি বড় হবার চেষ্টা করি তার সাথে অন্যদের সহযোগিতা একত্র হওয়ায় বিরাট কল্যাণ হাসিল হতে পারে।
সুদূরপ্রসারী চিন্তায় অর্থবহ জীবন
সেদিন বেশ চমকে উঠেছিলাম যেদিন ছেলেটে বলেছিল যে সে তিনদিন সেহরী না খেয়ে রোজা রেখেছে এবং সেই বাঁচানো টাকা দান করেছে। পুণ্য হাসিলের এ সুতীব্র প্রত্যাশা, নেক কাজ করে সওয়াব লাভের এ পেরেশানী অনেকটাই আমাকে আশ্চযান্বিত করেছে। তবে আমার বিস্ময়ের কারণ শুধু এটিই নয়, তার শরীরের প্রতি, স্বাস্থ্যের প্রতি অসচেতনতাও আমাকে হতবাক করেছে।
কেন জানি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা এ কাজটিকে খুব ভালো কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কারণ শরীরের চাহিদা আছে, হক আছে। না খেয়ে খেয়ে যদি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগাক্রান্ত হলে শরীর কষ্ট পাবে, ব্যাপারটির এখানেই সমাপ্তি নয়। শারীরিক দুর্বলতা থাকলে জ্ঞানার্জন করা যায় না, মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় না, মনোযোগের সাথে কাজ করা যায় না, ফলে জীবনের মূল্যবান সময়ের কিছু অংশ অনর্থবহ হয়ে পড়ে।
খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে অমনোযোগী হবার পর রোগী হয়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিলে, কিংবা চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হলে সেটা কোনভাবে বিবেচনা করা হবে ? পাঁচ টাকা বাঁচাতে গিয়ে পঞ্চাশ টাকা খরচ হলে সেখানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ-পরের জন্যে ত্যাগ স্বীকার করা, নিজের চেয়ে অপরের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া মহৎকর্ম এতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। নিজের চিন্তাশক্তি, শারীরিক মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব অন্য কারো নয়।
আমার প্রতি নিজের, নিজ পরিবারের, আত্মীয় স্বজনের, সমাজের, দেশের, বিশ্বমানবতার কিছু অধিকার রয়েছে। ব্যক্তিগত অসচেতনতার কারণে এসব অধিকার পূরণে সাধ্যানুসারে যতটুকু করা সম্ভবপর ছিল তা না করলে শুধুমাত্র ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। অন্যের অধিকার পূরণ হয় না। ফলে বড় ধরনের লোকসান হয়। সম্ভাবনা সঠিকভাবে বিকশিত না হলে নানা সমস্যার উদ্ভব ঘটে, সংকট সৃষ্টি হয়। তাই একজন ব্যক্তিকে নিজের জন্য না হোক বৃহত্তর স্বার্থে পরের জন্যে হলেও স্বাস্থ্যের প্রতি, সময়ে সদ্ব্যবহারের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হয়। সংকীর্ণ চিন্তা ও আবেগ নির্ভর সিদ্ধান্ত সব সময় বাস্তবিক পক্ষে সুফল বয়ে আনে না। তাই সতর্কতার সাথে এ ব্যাপারগুলো-বিবেচনায় আনতে হবে। তবেই সেটা যৌক্তিকও কাক্সিক্ষত হবে। আর হ্যাঁ যেহেতু স্রষ্টা উদ্দেশ্য ও নিয়্যাতের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টির কাজকর্ম মূল্যায়ন করবেন সেহেতু নিয়্যাত ঠিক থাকলেই হলো।
লাইব্রেরীকে ভালোবাসুন
লাইব্রেরী আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। নিরিবিলি পরিবেশ আমার চিন্তাশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে হ্যাঁ শুধু ভাবুকজীবনই আমার পছন্দ নয়। আমি স্বপ্নের জগতেই রাজত্ব করা নয় বরং বাস্তব জীবন ও জগৎ সম্পর্কে দারুণ কৌতূহলী। আমার অনুসন্ধিৎসু মন নতুনত্বেরর সন্ধানে সদা উদগ্রীব হয়ে থাকে। মনের টানে প্রাণের টানে আমি স্বভাবগত অর্জন। এখানে নেই কোনো বাধ্যবাধকতা। বাধ্য হয়ে অবাস্তব কল্পনাবিলাসী নয় মোটেও।
জ্ঞানের জগৎটা বিশাল। জীবন ও জগৎ থেকে, প্রকৃতি থেকে, বাস্তবতা থেকে শিখার আছে। জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য শুধু বই পড়াই যথেষ্ঠ নয়। এতে জ্ঞান পরিপূর্ণ হয় না, শুধু তত্ত্ব তৈরি হয়; সে তত্ত্বের প্রয়োগের জন্য উপযোগী জ্ঞানের শূন্যতা বিরাজ করে। তবে হ্যাঁ তাত্ত্বিকেরও প্রয়োজন আছে; সেটি আমি অস্বীকার করি না। জ্ঞানের আলোকে সর্বস্তরে ছড়ায়ে দিতে হলে জ্ঞানাহরনের পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। সীমিত সিলেবাস সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন অনেকের ।
পৃথিবীতে অনেকেই নিজেকে সীমাবদ্ধ একটা পরিসরে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলতে চায় না, সীমানা বা সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায়। লাইব্রেরীর সংস্পর্শ আমাকে দেয় বিশালতার সন্ধান। মহানায়কদের ঘটনা আমাকে বিরাট পরিধিতে কার্যক্রম পরিচালনার মানসিক প্রস্তুতি জোগায়। প্রেরণা নেয়ার এ এক সর্বোত্তম ঠিকানা যেখান থেকে চর্মচক্ষুর চেয়ে মনের চক্ষু বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নতুন আশা, বিশ্বাস, উদ্দীপনা পাওয়া যায়। নিজের সীমাবদ্ধতা দুর্বলতা আবিষ্কার করি, সম্ভাবনার বিশালতা অনুধাবণ করি। হতাশা ভুলে আশায় স্বপ্ন দেখি। দারুণ এক অসাধারণ তৃপ্তি লাভ করি। মানসিক প্রশান্তি শরীরকেও সতেজ করে। সকল দিক থেকেই অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠে।
যেখানেই জ্ঞান লাভ হয় সেখানেই আমার আনন্দ। ভালবাসার টানে আমি ছুটে বেড়াই হাসিমুখে, চলি দূর দূরান্তে। ভ্রমণ আমার অনেক প্রিয়। আমার শান্তি সুখের নীড় লাইব্রেরী। কারণ এখানে নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার। সীমিত এ জীবন শেষ হবে তবু জ্ঞানের বিশাল মজুত থেকে নেয়ার পরিমানটা সর্বোচ্চ পরিমান হবার নয়। যদি বলেন যে সমস্যা কী শুধু ধারণ ক্ষমতার বলব-না। সেটি সবদিক থেকেই।
লাইব্রেরীতে জ্ঞানাহরণের মহৎ উদ্দেশ্যে অনেকে ছুটে আসে। মহৎ উদ্দেশ্যই ব্যক্তিকে মহৎ করে তুলে। সুতরাং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে যারাই আসে তারা মহৎ নিঃসন্দেহে। আর এসব মহৎ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ, কথাবার্তা সৌভাগ্যের ব্যাপার নিঃসন্দেহে, লাইব্রেরী আমার সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা, পছন্দের জায়গা। মনটা সর্বদা এখানেই থাকতে চায়। বাস্তবতার কারণে সেটা অসম্ভব হলেও দু’একটা বই সব সময় সঙ্গে থাকেই, যাতে সুযোগ পেলেই পড়া যায়।
বেশি বেশি বই পড়া
আমি বই প্রেমিক, বই আমার ভালবাসা, আমার প্রেম। বই হচ্ছে আনন্দ ও অবসরের সঙ্গী। বই আমার জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমার অস্তিত্ব আমি, বই ছাড়া কল্পনা করতেও অপছন্দ করি। কখনো গাড়িতে উঠি। অনেক সময় প্রচণ্ড ভীড় হয়। বসাও যায় না। কাউণ্টারে লাইনেও অনেক সময় দাঁড়ায়ে থাকতে হয় দীর্ঘসময়।
বই পড়তে পারি না, ভীষণ কষ্ট হয়। সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতির কারণে নষ্ট হয়। প্রয়োজন অনুুভব করি নিজস্ব গাড়ির। তাহলে যানজট যতই হোক সময়টাতো কাজে লাগানো যেত, বই পড়া যেত। আমার জীবন অনেক মূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত দামী। অহেতুক স্বল্প সময় ব্যয়ও ক্ষতিকর; এতে কোনো কল্যাণ নেই। আড্ডা, গল্প আমার তেমন একটা হয় না। হলেও খুব স্বল্প সময়ের।
চিন্তা করি, যারা লিখে বিশ্বজোড়া সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়েছেন, মানুষকে আলোকিত করেছেন, সমাজকে শান্তিময় করতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের লেখা পড়লে, জীবনী পড়লে অনেক কিছুই জানা যাবে, শিখা যাবে; জ্ঞান উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হবে। হৃদয়ের সর্বোচ্চ ভালবাসায় সিক্ত স্থানে সমাসীন বইয়ের সাথে মিতালী করি। যেন মুক্ত বাতাসে দম নেই, প্রশান্তির নিঃস্বাস বের হয়। সময় ও যুগের দাবি পূরণের উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠার স্বপ্ন দেখি, চেষ্টা করি।
নিজেকে গড়ে তুলুন
পৃথিবীতে মানুষের পরিচয় নির্মিত হয় অনেক বিষয়কে কেন্দ্র করে। যেমন-ধর্ম, ভৌগোলিক অবস্থান,রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, জাতিসত্তা, ভাষা সহ আরো অনেক কিছুই। তবে হ্যাঁ শুধুমাত্র এসব পরিচয় দিয়েই ব্যক্তির অবস্থান ও ব্যক্তিত্ব নির্ণিত হয় না। ব্যক্তির মধ্যকার আভ্যন্তরীণ গুনাবলীই তার স্বকীয়তা বিনির্মাণ করে। ব্যক্তির চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচিবোধ ব্যক্তির পরিচয় সুস্পষ্ট করে। একই ভাষার, একই দেশের, একই এলাকার অন্তর্ভুক্ত সব মানুষের মূল্যায়নও একই রকম হয় না। এর মধ্যেও ভিন্নতা তৈরি হয়।
নানান পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক, শিক্ষা বা জ্ঞানগত কারণে ব্যক্তিতে বক্তিত্বে পার্থক্য বা অন্যতা দেখা দেয়। বৈষম্য সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণই থাকতে পারে। একজন ব্যক্তির বড় পরিচয় সে ব্যক্তিই তৈরি করে। ব্যক্তির কর্ম পরিসর, জীবন-প্রণালী সামগ্রিক কার্যক্রমেই প্রমাণিত হয় ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, দক্ষতা কতটুকু। সে কোন্ মাপের, কোন্ মানের কোন্ পর্যায়ের।
পিছিয়ে থাকা নয়
সবাই মানুষ কিন্তু সমান উন্নতি অর্জন হয় না। কেউ এগিয়ে যায়, কেউ পিছিয়ে পড়ে। আত্মপরিচয় সংকট সবচেয়ে বড় অভিশাপ। আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তিরা কখনোই বড় ব্যক্তিত্ববানরূপে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন না। আর যে নিজের আত্মপরিচয় দিতে ইতস্তত বোধ করে, দ্বিধা-সংকোচ থাকায় সে একটি নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করতে পারে না। ব্যক্তির এগিয়ে যাওয়া কিংবা পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যক্তির নিজের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যক্তির কার্যক্রমই তার অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক। নিজেকে গড়ার যাবতীয় প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই কাম্য। নিজের পরিবর্তনের জন্য নিজেই যথেষ্ঠ। তবে কেউ যদি নিজে পরিবর্তন চায়, নিজেকে গড়তে চায়, সে জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালায় পারিপার্শ্বিক অনেক শক্তিই তার সহায়ক হয়। উদ্যোগী হলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ঘটনা শুধু প্রত্যক্ষ না করে ঘটনা সৃষ্টিও করতে হবে। পিছিয়ে থাকা নয় এগিয়ে যেতে হবে সামনে।
নামে নয় কাজে পরিচয়
যার মন যত বড়, মানুষ হিসেবে সে তত বড়। হৃদয়ের বিশালতা দিয়েই ব্যক্তির বিশালতা অনুধাবণ করা সম্ভব। অন্তর যেখানেই থাকুক না কেন সেখানেই সুগন্ধ ছড়ায়। সূর্য উদয়ের সাথে সাথে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কারো অস্তিত্ব সক্রিয় হলে কারো বা অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। একই প্রেক্ষাপটে আমরা বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করি।
যে জিনিসের যে কাজ। সে জিনিসের দ্বারা যদি সে কাজ না হয় তবে তা মূল্যহীন। কলমের কাজ লেখা। সবকিছুই কলমের ঠিক আছে, শুধু কালি ফুরিয়ে গেছে। অর্থাৎ কালি না থাকায় লেখার কাজে সে ব্যবহৃত হতে অক্ষম। সে মূল্যহীন। তাপরপরও যদি সেটিকে ‘কলম’ বলে পরিচয় দেয়া হয় তবে তার সাথে ‘খালি’ শব্দটা যোগ হয়ে হয় ‘খালি কলম’।
‘মুসলমান’ অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী, এখন আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান না মানলে ‘খালি’ যোগ হয় ‘খালি মুসলমান’ বা ‘নামে মুসলমান’। মুসলিম নাম রেখেই মুসলমান হওয়া যায় না, কাজে কর্মে তার প্রমাণ দিতে হয়। চোর যদি চুরি করে বেড়ায় আর নিজেকে ‘ওলী-দরবেশ’ বলে পরিচয় দেয়, পকেটমার যদি অন্যের পকেট মারে আর অযৌক্তিক আচরণ।
সুতরাং মুসলমান পরিচয় দিলে আলাদা কিছু গুণ অর্জন করতে হবে। কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। নামে নয় গুণেই পরিচয়। কাজে-কর্মে বাস্তব রূপদান করেই মুসলমান পরিচয়টা যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। নামে না হয়ে কাজের মুসলমান হতে হবে। তবেই সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে।
স্বপ্নকে বাস্তবায়নে পরিকল্পনা
স্বপ্ন দেখা আর বাস্তবতায় অনেক তফাৎ। মন অনেক কিছুই চায় তবে পায় খুব কমই। কল্পনায় শুধু বড় না হয়ে কাজকর্মে বড় হতে হবে। সীমাহীন আশা-আকাক্সক্ষা, সব তো পূরণ হয় না। তাই শুধু স্বপ্ন ও কল্পনার জগতের সুখী বাসিন্দা হওয়া বাস্তবজগতের দুঃখকে ভুলে থাকার প্রচেষ্টা মাত্র। দুঃখের সাথে গলাগলি ধরেও অনেকে সুখের সাথে সম্পর্ক গড়তে পেরেছেন।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ধ্যান করে বর্তমান সময়কে নিষ্কর্মভাবে কাটায়ে দিলে তা মূর্খতার পরিচয়ই বহন করে। যিনি শুধু কল্পনাবিলাসী বাস্তবিক জীবনে তিনি চলার অযোগ্য। ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে ধ্যানী সাজলে পেটের ক্ষুধা মিটবে না। প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখাও যত সহজ, স্কুলের কেরানী হওয়াও বাস্তবে অত সহজ নয়। তাই সময়ের মূল্য সত্যিকারভাবে দিয়েই সফল হতে হয়।
সফলতা কখনোই অলসদের জীবনে আসে না। উদ্দেশ্য মহৎ কি-না সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিদের পক্ষেই। দুধের সাথে প্রস্রাবের সংমিশ্রণ যেমন যৌক্তিক হতে পারে না বিশাল চিন্তা ও সংকীর্ণ হৃদয়ের সমন্বয় তেমনি অযৌক্তিক। মহৎ কাজ করার জন্য বিশাল হৃদয়ের প্রয়োজন। আর ঐ দুটোর সমন্বয়েই জন্ম নেয় অন্তর্চক্ষু।
মনের চোখ শক্তিশালী হলেই স্বপ্ন, বাস্তবতা ও পরিকল্পনার যৌক্তিক দৃঢ়তা অনুধাবণ করা সম্ভব। রঙ্গীন চশমা দিয়ে কখনোই সত্যিকারের রং প্রত্যক্ষ করা যায় না। বড় মনের মানুষদের যৌথ প্রচেষ্টাতেই যে কোনো বৃহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হতে পারে।
ধৈর্য ধরা
নারী ও পুরুষের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সন্তানের আবির্ভাব ঘটে। সে জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। কেউ দৈহিক সম্পর্কে না গিয়েই সন্তান প্রার্থনা করলে ব্যাপারটা যেমন হাস্যকর হবে ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষা না করে দ্রুত সন্তান পেতে চাওয়াটাও পাগলামো হবে। আর এই পাগলামোর ফল হতে পারে এরকম যে, নতুন প্রাণের আবির্ভাবই ঘটবে না অথবা নতুন প্রাণের উৎপত্তির স্থানটাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এখন যদি এ ধরনের পাগলামী করে পুরুষ বা নারীর বীর্যে সমস্যা বলা হয়, দোষারোপ করা হয় তবে ভাল কাজ হবে বলে মনে হয় না।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই একটু বেশি তাড়াহুড়ো করি। ধৈর্য কম থাকলে আক্ষেপই করতে হয়-এটাই স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিটা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সরল ব্যাপারটাও সঠিকভাবে বোঝার বিবেচনা শক্তিও থাকে না। উদ্যোগ নিতেই হবে পরিবর্তন চাইলে। ১০০% সফলতা নাও আসতে পারে। সেটি মানতেই হবে।
ধরুন, বীজ বপন করলে গাছ জন্মানো কিংবা ফল ধরার সম্ভাবনাও থাকে। এখন কেউ যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময়টুকু অপেক্ষা না করে তবে কী ঘটনা ঘটতে পারে। সে অঙ্কুরেই অথবা পরিপক্ক হতে না হতেই গাছকে বিনষ্ট করবে। এতে করে বীজ, গাছ বা মালি যাকেই দোষারোপ করা হোক না কেন-আসলে কে দোষী সাব্যস্ত হবে? বীজ বপন না করলে তো ফল পাওয়া নিশ্চিত অসম্ভব ছিল। কিন্তু বীজ বপনকারীকে মর্যাদা দেয়া হয় না। মূল্যায়ন করা হয় না; শুধু নেতিবাচক সমালোচনাই বেশি করা হয়। সব ক্ষেত্রেই এমনি। তাই তো আমরা পিছিয়ে।
থেমে যাবেন না
সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন (!) কেউ যদি বলে আমার কান চিলে নিয়েছে শুনেই কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে ছুটেছি-তাহলে পাগল বলে আর আলাদা কোনো পরিচয়ের অস্তিত্ব থাকে না। অনেকে সহজেই স্বার্থের টানে পরের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে তৃপ্তি পায়। নিজের সম্মান, ব্যক্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও অপরের আত্মমর্যাদায় আঘাত দিতে পারলে আনন্দ লাভ করে। এরা মানুষ হিসেবে খুব বড় হতে পারে না।
যে সত্যিকারের বিজয়ী হয়, সফল; সেই ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত থাকে। সে ব্যর্থতা আসলেই ভেঙ্গে পড়ে না, হতাশ হয় না। পরাজয় আসলে সেখান থেকেও শিক্ষা নিয়ে সমৃদ্ধ হয়। সমস্যা চিহ্নিত করে, ত্র“টিগুলো খুঁজে নেয়, সমাধান কৌশল আবিষ্কার করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আর জয়ের আনন্দ, কাক্সিক্ষত সফলতা আসলে তো কথাই নেই। নতুন করে প্রেরণা পায়, সঞ্জীবনী শক্তি পায়, সজীবতা লাভ করে। শক্তিশালী হয় হৃদয়, হয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।