লিভ টুগেদার ভয়ঙ্কর ক্রাইম, সামাজিক বিকৃতি, ভয়াবহ ব্যাধি, সামাজিক অপরাধ। শহরে সমাজে যা হু হু করে বাড়ছে এবং বিপর্যয় নেমে আসছে। পবিত্র সমাজব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে। বংশধারার স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে বিকৃত দুজন নারী পুরুষ শুধু নয় দুটি পরিবার খুন হচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধ খুন হচ্ছে। সমাজকেই নিঃশব্দে বিকৃতির অতলে টেনে নিচ্ছে।
লিভ টুগেদার কী?
লিভ টুগেদার মানে বিবাহ বহির্ভুত নর-নারীর একসঙ্গে বসবাস, বিয়ে না করেও এক ছাদের নিচে একসাথে থাকা, বিয়ের আগে যুগলদের স্বামী স্ত্রীর মতো থাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্ব নেয়া এড়াতেই পশ্চিমে লিভ টুগেদার উৎপত্তি। যদিও বিয়ের বন্ধন ছাড়া একসাথে থাকার কোনো সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আইনি স্বীকৃতি নেই।
লিভ টুগেদার যেভাবে?
বিয়ে বা সামাজিকভাবে স্বীকৃত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের একত্রে বসবাসের শুরুটা হচ্ছে এমন যে- দুইজনের পরিচয় হলো। ভালো লাগা শুরু হলো। ক’বছর রিলেশনে থাকা হলো। পার্মানেন্ট রিলেশনে যাওয়া বা বিয়ের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার সময় পরস্পরকে আরো গভীরভাবে বোঝার জন্যে একসঙ্গে থাকা শুরু হলো। বিয়ে করার আগে মনের মিল হবে কি না তা বোঝতে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা হলো। মনের মিল হয়ে গেলে তারপর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
কাদের মাঝে বেশি দেখা যায়?
মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত- তথা সমাজের সব স্তরেই লিভ টুগেদারের চর্চা দেখা যাচ্ছে। লিভ টুগেদার করছে সদ্য গ্রাম থেকে এসে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া ছেলেমেয়েরা, পড়াশোনা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি- এমন ছেলেমেয়েরাও। অনেকে সামাজিক স্বীকৃত বিবাহিত বউ থাকা অবস্থায়ও লিভ টুগেদার করছে।
ঢাকায় আশঙ্কাজনকহারে লিভ টুগেদার বাড়ছে। লিভ টুগেদার করছে- বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চাকরিজীবী, সাধারণ কর্মচারীরা; প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজগুলোর অবিবাহিত ছাত্র-ছাত্রীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লিভ টুগেদারকে গর্বের বিষয়ও মনে করেন এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লিভ টুগেদারের কথা শিক্ষার্থীরাও জানে ।
শোবিজে লিভ টুগেদার সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। জাতীয়ভাবে পরিচিত শোবিজের অনেক স্টার বা সেলিব্রেটিরা লিভ টুগেদার করেছেন এবং করছেন। কজন মডেল অভিনেতা, অভিনেত্রীর লিভ টুগেদার করার কথা আলেচিতও হয়েছে। অনেক চিত্রনায়ক, চিত্রনায়িকা লিভ টুগেদার করলেও বিয়েকে ক্যারিয়ারের বড় বাধা মনে করে সম্পর্কটাকে সামাজিক রূপ দেন না।
লিভ টুগেদার করে তাদের গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয়। গ্রুপের সদস্যদের সবাই একই মন-মানসিকতা ও চিন্তাধারার। এই গ্রুপে সদস্য যোগ করার ক্ষেত্রে যাচাই করে নেয়া হয়। গ্রুপের সদস্যদের বেশিরভাগই ঢাকার ধানমণ্ডি, গুলশান, নিকেতন, বনানী, বারিধারায় থাকেন। মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায়ও অনেকে আছেন। বাংলাদেশের অনেক ছেলে মেয়ে দেশের বাইরে লিভ টুগেদার করে বেড়াচ্ছেন।
লিভ টুগেদার কেন করে?
লিভ টুগেদারের অন্যতম কারণ নারী-পুরুষ কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না অথচ জৈবিক চাহিদা মেটায়। বেশিরভাগই শুধুমাত্র তাদের জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য লিভ টুগেদার করেন। কেউ কেউ বিয়ের আগে নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়ার জন্য করেন। লিভ টুগেদার করাটা অনেকের শখ। লিভ-টুগেদার পরকীয়ার ফলও। পরকীয়ায় মত্তরা লিভ টুগেদার করে। সমাজে কিছু উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে।
স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকা এদেরকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন কেন এমন জীবন বেছে নিয়েছেন? কেউ বলবে পরিবারে অনেক দায়িত্ব রয়েছে তাই এখন বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ বলবে আমি এখনি বিয়ে করতে চাই না। কেউ বলবে আলাদা ভাড়া বাসা না নিয়ে একসাথে থাকায় দুজনের খরচ কমেছে বা আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে। কেউ বলবে দম্পতি হিসাবে কেমন হবো, বোঝাপড়া কেমন হবে, সেটা পরিষ্কার হতে। কেউ বলবে একাকীত্ব সময়টাও ভালোভাবে কাটানোর জন্য করছে।
জৈবিক চাহিদা মেটাতে লিভ টুগেদার
কেউ বলবে শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য। অনেক ছেলেরা কেবলমাত্র জৈবিক কারণে লিভ টুগেদার করছেন। তারা পরিবার গঠন করে শারীরিক চাহিদা মেটাতে না চাওয়ার মূল কারণ হলো- পরিবার মানে দায়িত্ব, আত্মত্যাগ, শেয়ার করা। এখানে একে অন্যের দায়িত্ব নিতে হয়। পছন্দ না হলেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। সেক্রিফাইস করতে হয়। এরা বিয়ের চেয়ে লিভ টুগেদারকে বেশি পছন্দ করছে। এতে তাদের জৈবিক চাহিদাও মিটছে আবার সামাজিক নিরাপত্তাও পাচ্ছে। তারা সুখে দুঃখে একজন আরেক জনের সঙ্গী হচ্ছে।
ক্যারিয়ার গড়তে লিভ টুগেদার
লিভ টুগেদার করছেন এমন কয়েকজন মেয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে, নিজেদেরকে ইউরোপ-আমেরিকা বা দেশের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তাঁরা এখনই বিয়ে করে ছেলেমেয়ের ভার নিতে চান না। টানতে চান না সংসারের ঘানি। ওইসব মেয়ে নিজেদেরকে বিবাহিত বলে পরিচয় দিলে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন। অনেক যুবক-যুবতী এখন ফ্যামিলিকে একটা বার্ডেন মনে করে, বিয়েকে তাদের ক্যারিয়ারের অন্তরায় মনে করে।
বাড়ি ভাড়া নিতে লিভ টুগেদার
বাইরে থেকে পড়তে আসা বা চাকরি করতে আসা যুবক বা যুবতীকে বাড়ির মালিক আলাদা আলাদা বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। সে ক্ষেত্রে এরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এক সঙ্গে থাকছেন, লিভ টুগেদার করছেন। অনেক ছেলেমেয়ে মনে করছে লিভ টুগেদার করে কয়েক বছর কাটিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারা আবার অবিবাহিত পরিচয়ে সমাজে ফিরে যাবে যাতে সমাজে তাদের মর্যাদা ঠিক থাকে। তবে এতে সমস্যা হচ্ছে সমাজে এক ধরনের ক্রাইম তৈরি হচ্ছে, কোন কারণে বনিবনা না হলে খুন হয়ে যাচ্ছে মেয়ে বা ছেলেটি।
একাকিত্ব কাটাতে লিভ টুগেদার
অর্থবিত্তে বা চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেকে লিভ টুগেদার করছে কেবলমাত্র সমাজে তাঁর একজন সঙ্গীকে দেখানোর জন্য, নিজের একাকিত্ব কাটাতে ও জৈবিক তাড়নায়। অনেকে বিয়ের প্রতি প্রচণ্ড রকম অনাগ্রহ থেকেও লিভ টুগেদার করছেন। ওয়েস্টার্ন সোসাইটির প্রতি এক ধরনের অন্ধ আবেগ ও অনুকরণের পাশাপাশি জৈবিক চাহিদা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছেলেমেয়েরা লিভ টুগেদার করছেন।
দেশের আইনে লিভ টুগেদার
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো নারী-পুরুষ যদি একসঙ্গে বসবাস করতে যায়, তাহলে তাকে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বিবাহিত হতে হয়। মুসলিম আইন অনুযায়ী তাকে রেজিস্ট্রেশনও করতে হয়। কেউ রেজিস্ট্রেশন না করেও ধর্মীয় বিধান মেনে সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করলেও গ্রহণ করা হয়। বিবাহিত ব্যক্তি যদি কোন বিবাহিত বা অবিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে লিভ টুগেদার করে, আইনে সেটারও নানা শাস্তির বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশের আইনে লিভ টুগেদার বৈধ নয় বরং অপরাধ। দন্ডবিধি ১৮৬০ সালের ৪৯৭ ধারার অপরাধ কে লিভ টুগেদার বা ব্যাভিচার আপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি ৭ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম ও জরিমানা। তবে এই আপরাধে নারী অপরাধী হয় না অপরাধী হয় পুরুষ।। দুইজন অবিবাহিত বা বিবাহিত হলে প্রকাশ্য স্থানে অশ্লিলতার কারনে অপরাধী হবে।পুলিশ তাদের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করতে পারবে।দন্ডবিধি ২৯০ ধারার অধীনে।
লিভ টুগেদারের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিকোণ
লিভটুগেদার ইসলামের দৃষ্টিতে এতটা মন্দ যে, যদি একজন নারী ও একজন পুরুষ এ নিয়্যতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, কয়েক বছর পর প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে আমরা পরস্পরে আলাদা হয়ে যাবো, তাহলে এ বিবাহটিও বৈধ হবে না। তাই এই গুনাহ করা থেকে মুক্ত থাকতে হবে, মনকে পবিত্র করতে হবে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে।
বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে ইসলামী পরিভাষায় ‘জিনা’ (ব্যভিচার) বলা হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। ’ (সুরা ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২) যিনার নিষেধাজ্ঞার বিধান মানুষের স্বাধনিতাকে রক্ষা করে। এই নিষেধাজ্ঞা ডিভোর্সি, অবিবাহিত নারী ও সন্তান পালনের অনুপযুক্ত নারী-পুরুষের সন্তানের সংখ্যা সীমিত রাখে। এতে করে শিশুর ও সমাজের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।
ব্যভিচার এতটাই অশ্লীল কাজ যে তা মানুষের লজ্জা-শরম ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নেয়। অথচ ব্যভিচারকারীও ব্যভিচার করা নিজের মায়ের জন্য পছন্দ করে না, নিজের মেয়ের জন্যও পছন্দ করে না, নিজের বোনের জন্যও পছন্দ করে না, নিজের ফুফুর জন্যও পছন্দ করে না, নিজের খালার জন্যও পছন্দ করে না।
অনেকে ভাবতে পারে, কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্কে না জড়িয়ে একসঙ্গে থাকলে তা ব্যভিচারের পর্যায়ে পড়বে না বা গুনাহ হবে না। এটা ঠিক নয়। শয়তান কোনো না কোনোভাবে তাদের ব্যভিচারে লিপ্ত করবেই। শারীরিক সম্পর্কে কেউ না জড়ালেও অন্তত তারা একসঙ্গে থাকার দরুন, দেখা হবে, কথা হবে, আড্ডা হবে, গান হবে। এগুলোর মধ্যেও রয়েছে ব্যভিচারের গুনাহ।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের জিনা (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের জিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)
লিভ টুগেদারের পরিণতি
লিভ টুগেদার করার পর অনেকে বিয়ে করেন, কারো কারো সম্পর্ক ভেঙ্গেও যায়। অনেক সময় বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একত্রে বসবাস করার পর বিয়ে করতে রাজি হন না। সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলে অনেক সময় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। অনেকে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন কারও সঙ্গে সম্পর্কও করেন। অনেকে আত্মহত্যা করেন। অনেকে নিজের অপরাধকে গোপন করতে সঙ্গীকে খুনও করেন। অনেক ভ্রুণ হত্যা হয়, অনেক জারজ সন্তানের জন্ম হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকার পরেও একত্রে গোপনে বসবাসের কারণে অনেকে অপরাধবোধেও ভোগেন, অপরাধবোধ কাজ করায় হীনমন্যতায় ভোগেন।
লিভ টুগেদার করে সমাজচ্যুত হওয়া
বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক বা একত্রে থাকা সামাজিকভাবে স্বীকৃত নয়; সামাজিকতার কথা ভেবে পরিচয় প্রকাশ করেন না, হাতেগোনা খুব কয়েকজন কাছের বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না।পরে জানাজানি হলে সামাজিকভাবে সম্মান- মর্যাদা শেষ হয়ে যায়। অনেকে পারিবারিক স্বীকৃতির কথা না ভেবেও একসাথে থাকা শুরু করেন; অথচ দুজনের পরিবার তাদের একত্রে থাকার বিষয়ে জানে না। পরে জানলে পরিবারের সাথে দূরন্ত তৈরি হয়, নানা দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি তৈরি হয়। লিভ টুগেদার পারিবারিক বন্ধন নষ্ট করে৷ ধর্মীয়ভাবেও লিভ টুগেদার গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে সবমিলিয়ে কখনো কখনো সমাজচ্যুত হতেও হয়।
লিভ টুগেদার থেকে আত্মহত্যা
মেয়েরা বেশি সেনসিটিভ হয় সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে, ভালোবাসে সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে, বিশ্বাস করে গভীরভাবে; এজন্য সম্পর্ক খারাপ হলে অনুভূতিবোধ থেকে আত্মহত্যাও মেয়েরাই বেশি করে। অনৈতিক সম্পর্ক বা লিভ টুগেদার করতে যার আপত্তি থাকে না, কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে অনীহা দেখায়। বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত জানতে পেরে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় বাবা-মাকে ছেড়ে আসা মেয়ে আত্মহত্যা করে।
লিভ টুগেদারে অপরাধবোধ ও মানসিক যন্ত্রণা
কখনো নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হলে, অপরাধ বোধ নাড়া দেয়। সামাজিক স্বীকৃতি চাওয়ার মাধ্যমেই সে নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা ও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে চায়। সামাজিকভাবে মেয়েদের বেশি নিন্দা সহ্য করতে হয়। নারীটিকেই বেশি দায়ী বলে মনে করা হয়। ছেলেরা কোনো দায় নিতে চায় না। সন্তানের মা মেয়েরাই হয়। ভ্রুণ হত্যার মতো অপরাধের সম্পূর্ণ দায়ও তাকে নিতে হয়। ফলে নারীটি অপরাধবোধে ভোগে বেশি।
লিভ টুগেদার ও বিচ্ছেদ
লিভ টুগেদারে থাকা নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিবাহের চেয়ে কম টিকে। গবেষক স্ট্যানলি ও রোডস এর গবেষণা জানায় যারা বিবাহের পূর্বে লিভ টুগেদার করে তারা নিজেদের বিয়ে নিয়ে কম সন্তুষ্ট থাকে, ফলে ডিভোর্সের সম্ভাবনা বাডে। তারা দেখেছেন বাগদানের আগে যারা স্বামীর সাথে লিভ টুগেদার শুরু করে তাদের ডিভোর্সের হার ৪০% বেশি।
ড. শীলা কেনেডি ও ল্যারি বাম্পাস এর গবেষণা জানাচ্ছে, লিভ টুগেদারের ফলে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের ৬৫% তাদের বয়স ১২ হওয়ার আগেই পিতা-মাতার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; বিবাহিতদের ক্ষেত্রে এই হার ২৪%। সমাজবিজ্ঞানী মাইকেল পোলার্ড ও ক্যাথলিন এম. হ্যারিস গবেষণায় দেখেছেন, লিভ টুগেদারে থাকা পুরুষ তার নারী সঙ্গীর তুলনায় সম্পর্কের প্রতি কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।
ড. জন কার্টিসের গবেষণা থেকে জানা যায়, লিভ টুগেদারকে নারীরা বিবাহের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখলেও, পুরুষরা টেস্ট ড্রাইভ বা মেয়েটাকে একটু চেখে দেখার জন্য লিভ টুগেদার করে।ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ম্যারেজ সেন্টারের পরিচালক ডব্লিউ. ব্রাড উইলকক্স বলেন: বিবাহের সাথে তুলনা করলে, লিভ টুগেদারে অঙ্গীকার, স্থিতি, যৌননিষ্ঠা যেমন কম; তেমনি প্রেমসঙ্গি ও তাদের সন্তানদের নিরাপত্তাও কম।
মনোমালিন্য বা প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে মেনে নিতে না পেরে মেয়ে আত্মহত্যাও করে।ঘন ঘন তাদের লিভ টুগেদারে বিচ্ছেদও ঘটছে। সহসা আলাদা হয়ে যাচ্ছে।এভাবেই লিভটুগেদারের শেষ পরিণাম ভালো হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এই ‘লিভ টুগেদার’ এর শেষ পরিনতি হয় বিচ্ছেদ। ফেসবুকে যে মানুষটাকে নিয়ে ‘ইন এ রিলেশনশিপ’ স্ট্যাটাস চেঞ্জ হয়েছিলো এক সময় সেই মানুষটার শেষ পর্যন্ত স্থান হয় ব্লক লিস্টে।
লিভ টুগেদার ও প্রতারণা
লিভ টুগেদারের পরিণতি হয় ভয়াবহ। প্রেমিক যদি প্রেমিকাকে ব্লাকমেইলের ভয় দেখিয়ে লিভটুগেদারে বাধ্যও করে। ভালোবাসার দুর্বলতার সময়ের ছবি তুলে নিয়ে স্বাধীনতা হরন করে।ভালোবাসার ফাঁদ ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিতা মেয়েরাও ব্লাকমেইলড হয়!
লিভ টুগেদার ও ধর্ষন
কোনো কারনে যদি মেয়েটি অভিযোগ করে ছেলেটি রাতের পর রাত মেয়েটিকে ধর্ষন করেছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তবে ছেলেটির জীবন শেষ। এসব ক্ষেত্রে মেয়েটি ইচ্ছে করলে একবার যদি ধর্ষনের মামলা দিয়ে দেয় তবে ছেলেটির ঘর হবে জেলে আর মেয়েটি তখন কিছু সময়ের জন্য সামাজিকভাবে হেয় হলেও কিছুদিন পরে মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে যেহেতু সে ভিকটিম কিন্তু ছেলেটির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি অনেক গুরুতর হয়ে যাবে।
লিভ টুগেদার ও খুন
লিভ টুগেদারের ঘটনা অহরহ। তবে অনেকের সম্পর্কই প্রকাশ্যে আসে যখন এর দ্বারা সমাজে কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়। রাজধানীতে সংঘটিত নারী হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেরিয়ে এসেছে পেছনে লিভ টুগেদারের কারণ। স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। এক পর্যায়ে মেয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিলেই এড়িয়ে চলতে শুরু করে ছেলে। মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে তাঁকে খুন করে পালিয়ে যান ছেলে।
লিভ টুগেদার ও আতংক
পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কোন আইনগত বা সামাজিক সম্পর্কের বাইরে গিয়ে একত্রে বসবাস সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কমায় এবং নানাবিধ ঝামেলা-জটিলতা বাড়ায়। যারা লিভ টুগেদার করেন তাদের মধ্যে সব সময় ধরা পড়ার একটা ভয় কাজ করে। বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি থানা পুলিশের ভয় কাজ করে।
লিভ টুগেদার ও চরিত্রহীনতা
লিভ টুগেদার করলে মেয়েটি চিহ্নিত হয় পতিতা হিসেবে। আর পুরুষ হয় পতিতার দালাল। পোশাক বদলের মতোন পার্টনার বদল করার আনন্দে বিকৃত রুচির পরিচয়। একবার যে চরিত্রহীন বারবার আজন্ম সে চরিত্রহীন। দায়-দ্বায়িত্বহীনভাবে বহু নারী ভোগের জন্য পুরুষদের এই ব্যবস্থা নারীত্বের জন্য চরম অবমাননাকর ব্যাপার। এ’জন্যই নারীরা এটা সহ্য করতে পারে না।
লিভ টুগেদার ও জারজ সন্তান
২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০% নবজাতক হলো জারজ সন্তান। ইউরোস্ট্যাট এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপিয় ইউনিয়নে ২০১৬ সালে জন্মানো বাচ্চাদের প্রায় ৪০%জারজ বাচ্চা! ফ্রান্সে প্রতি ১০ জনে ৬ জনই জারজ বাচ্চা! বিয়ের আগেই যৌনকর্মে লিপ্তদের ছেলে-মেয়েদের ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় ৩ গুণ বেশি।
লিভ টুগেদার ও শিশুদের সমস্যা
ভঙ্গুর পরিবারে জন্মানো শিশুরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং সামাজিক নানা সমস্যার কারণ হিসেবে কাজ করে। ভঙ্গুর পরিবারগুলোতে বাচ্চারা যথাযথ যত্ন পায় না, পড়াশোনার সুযোগ কম পায়; এরা কগনিটিভ টেস্টে কম নাম্বার পায়। পাশাপাশি এদের আচরণও মারমুখী হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। এদের একটা বড় অংশ নানা রকম অপরাধ ও নেশায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরো সমাজের ওপর এই বিবাহ-বহির্ভূত কামের খারাপ প্রভাব পতিত হয়।
লিভ টুগেদার ছাড়ুন
কেউ যদি নিজের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার দিকে তাকায় তাহলে এসব লিভ টুগেদারের দিকে না গিয়ে বিয়ে করাই ভালো মনে করবে। লিভ টুগেদার করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার কোনো মানে হয় না। অনেকে বলে লিভ টুগেদার করা ছাড়া বিয়ে করলে ডিভোর্সের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে এত জানা এবং চেনার পরও ইউরোপ-অ্যামিরিকায় ডিভোর্সের হার এত বেশি কেন? অন্যদিকে একজন আরেকজনকে প্রায় না জেনে বিয়ে করেও কেন প্রাচ্যের বিয়েগুলো টিকে থাকছে বছরের পর বছর এবং এর অধিকাংশই সুখী অথবা আপাত সুখী?
বিয়ে করুন ও বাচ্চা নিন
সুখী হবার জন্য কোনো নারী পুরুষকে বহুজনের সাথে কাটাতে হয় না। এটা চারিত্রিক দুর্বলতা, সুখী হবার অধিকারের নামে নষ্টমনের ইচ্ছে পূরণ। তবু বহুজনে বহুগামিতার বিকৃতিই দেখায়। সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। দেশের প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, আইন-কানুন, বিধিবিধান কোনো কিছুই একে সমর্থন না করলেও এর বিস্তৃতি ঘটছে দ্রুত গতিতে।একযুগ আগেও গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড, ব্রেকআপ শব্দগুলো বাঙালি সমাজে ছিল না, কিন্তু আজকালকার নগর জীবনের বাস্তবতায় এ যেন ব্যাধি রূপেই আবির্ভূত হয়েছে। লিভ টুগেদার নয়, বিয়ে করুন, বিয়েকে সহজ করুন এবং বাচ্চা নিন৷ তাই প্রতিটি মানুষের উচিত সমাজে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী এই অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।