মাহাথিরের পরিবার

আনিসুর রহমান এরশাদ

মাহাথির বিন মোহাম্মদের পিতার নাম মোহাম্মদ ইস্কান্দার। মায়ের নাম ওয়াং টেম্পওয়ান ওয়াং হানাপি। পিতা-মাতার নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। ভাইবোন হচ্ছে: হাবসাহ মোহাম্মদ, জোহরা মোহাম্মদ, মাহাদী মোহাম্মদ, মাশাহুর মোহাম্মদ, মুরাদ মোহাম্মদ, মুস্তাফা মোহাম্মদ, ওমর মোহাম্মদ, রাফেয়াহ মোহাম্মদ। ছেলেমেয়েরা হচ্ছে: মাইজুরা মাহাথির, মারিনা মাহাথির, মাজহার মাহাথির, মেলিন্ডা মাহাথির, মিরজান মাহাথির, মোখজানি মাহাথির ও মুখরিজ মাহাথির। পরিবার সম্পর্কে মাহাথির বলেন, ‘প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা – যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে।’

মোহাম্মদ ইস্কান্দার

মাহাথির বিন মোহাম্মদের পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দার স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন এবং পরবর্তীকালে একজন সরকারি অডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। তার পিতা ছিলেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ একজন মানুষ। শৃঙ্খলা এবং গুছিয়ে চলার যে সহজাত গুণ মাহাথিরের পরবর্তী জীবনে খুঁজে পাওয়া যায়, সেটি তিনি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। মাহাথির ছোটবেলা থেকেই দারুণ সুশৃঙ্খল জীবন পালন করেছেন। দেশের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ার এই কারিগরের জীবনের ভিত্তি কিন্তু গড়ে দিয়েছিলেন তার বাবা।

ওয়ান টেম্পওয়ান ওয়াং হানাপি

মাহাথিরের মা ওয়ান টেম্পওয়ান ওয়াং হানাপি সাধারণ গৃহিণী হলেও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন এবং মাহাথিরকে বাসায় পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিতেন। বাসায় তাদের একজন ধর্ম শিক্ষক ছিলেন যিনি প্রতিদিন বাড়িতে এসে পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্মের উপর বিশ্বাস এবং ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান শেখাতেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশ্বাস মাহাথিরের ভিতর আসে পরিবার থেকে। ধর্মীয় চেতনায় মাহাথির মাহাথিরের পরিবার তাকে ইসলামের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে শিক্ষা দেয়, কিন্তু তাদের কোন রূপ গোঁড়ামি ছিল না। মাহাথির বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম আমাদের জীবনের অংশ। একে পরিত্যাগ করার কোনো কারণ নেই। ধর্ম কখনই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। ইসলাম শুধু মাত্র সপ্তম শতাব্দীর ধর্ম নয়। ইসলাম অবশ্যই সর্বকালের ধর্ম।’

মাহাথির বিন মোহাম্মদ

ছোটবেলায় রাস্তায় কফি আর কলা ভাজা বিক্রি করতেন। কুকুরকে ভীষণ ভয় পেত সে। পথে কোনো কুকুর দেখলেই প্রচণ্ড ভয়ে দৌড়াতে শুরু করতো। এই ভয় তাকে অস্থির করে তুলতো। একদিন ছেলেটি প্রতিজ্ঞা করলো আর ভয় পাবে না সে। সিদ্ধান্ত নিলো- যখনই কুকুর দেখবে তখনই চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত কাজে দিল। এই সিদ্ধান্তই পাল্টে দিলো তার জীবনের মোড়। কারো রক্তচক্ষুই আর ভয় পেত না ছেলেটি। সমস্যা এলে ভয়ে তা থেকে পালিয়ে না গিয়ে তাকে মোকাবিলা করা, সমস্যা উৎস খুঁজে বের করা পরিণত হয় তার স্বভাবে।

এই স্বভাবই তাকে পৌছেঁ দেয় সাফল্যের চূড়ায়। যার কথা বলছি তিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার-জনক ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদ। তার মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। সদাবিনয়ী, হাস্যোজ্জ্বল ও স্বতঃস্ফুর্ত এক অসাধারণ মানুষ। বিরলপ্রজ প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব, কর্মে খ্যাতিতে অদ্বিতীয় প্রবাদপুরুষ, এশিয়ার নন্দিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববরেণ্য নেতা মাহাথির ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটর-এ এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ।

ছোটবেলায় মাহাথির খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। মাহাথির শৈশবে প্রথমে মালয় ও পরে ইংরেজি স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শুরু করেন সেবেরাং পেরাক মালয় স্কুলে। পরে আলোর সেতারের গভর্নমেন্ট ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং একটি জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। মাহাথিরের বয়স তখন ১৬। প্রথমে তিনি জাপানি স্কুলে যেতে চাননি। ঐ সময় মাহাথির একটি স্থানীয় ছোট বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু পিতার চাপে তিনি পরবর্তীতে ঐ জাপানি স্কুলে ভর্তি হন।

মালয়েশিয়ায় জাপানি শাসন প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। ১৯৪৭ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডয়ার্ড মেডিসিন কলেজে (বর্তমান সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। এসময় মাহাথির মালয় জাতির বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া ফিরে আসেন।

সিথি হাসমাহ বিনতে মোহাম্মাদ আলী

সিঙ্গাপুরে পড়ার সময় মাহাথিরের সিথি হাসমাহ মো. আলীর সাথে পরিচয় হয়। সিথি হাসমা তখন দ্বিতীয় মালয় নারী হিসেবে সিঙ্গাপুরে বৃত্তি নিয়ে একই কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ছিলেন। ১৯৫৬ সালের ৫ আগস্ট মাহাথির ও সিথি হাসমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তার বয়স ছিল ৩৩ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. সিথি হাসমার বয়স ছিল ২২ বছর।

১৯২৬ সালের ১২ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ভাইয়ের নাম ইসমাইল মোহাম্মদ আলী। তিনি ১৯৮১ সালের জুলাই থেকে ২০০৩ সালের অক্টোবর এবং ২০১৮ সালের মে থেকে ২০২০ সালের মার্র‌্য পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে প্রায় ২৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার সাবেক চ্যান্সেলরও ছিলেন।

মাহাথির-সিথি দম্পত্তির সন্তান

মাহাথির-সিথি দম্পত্তির মোট সাত জন সন্তান আছে। সন্তানরা হলেন- মারিনা, মিরজান, মেলিন্ডা, মুখজানি, মুখরিজ, মায়জুরা ও মাজহার। সন্তানদের মধ্যে তিনজনকে তারা দত্তক নিয়েছিলেন।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *