আনিসুর রহমান এরশাদ
মাদক জীবন থেকে জীবনকে কেড়ে নেয়, জীবনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করে, ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে নিয়ে যায়। মাদক এমন মরণব্যাধি, আত্মঘাতিমূলক জীবন প্রবাহ, আত্মহননের অসৎ এবং কুৎসিত পথ; যা দুর্বিষহ করে জীবন, অন্ধকার আনে পরিবারে, ধ্বংস করে পারিবারিক সম্প্রীতি, কুয়াশাচ্ছন্ন করে ভবিষ্যৎ, অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করে, মেধা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, নষ্ট করে পারিবারিক শৃঙ্খলা, কলুষিত করে সমাজ, বাড়ায় জ্ঞানবুদ্ধিহীন মানুষ, ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করে।
মাদকের কারণে দেখা দেয়-পরিবারে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, সামাজিক উন্নয়নে বাধাগ্রস্ততা, মানব সম্পদের অপব্যবহার, অপরাধমূলক কাজের ব্যাপকতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়। একজনের মাদক গ্রহণ আরেকজনকেও ঠেলে দেয় মাদক গ্রহণের ঝুঁকিতে।
নেশা-গ্রস্ত এবং নেশাখোররা ধর্ম মানে না, দেশের আইন মানে না, সুন্দর-সুখী পরিবার গড়ে তোলতে পারে না। মাদক গ্রহণের ভয়ঙ্কর ফাঁদে একবার জড়ালে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়। দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ও বিধ্বস্ত হয়ে যায় মনের স্বাস্থ্য, পুড়ে যায় আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক চিত্রে নেমে আসে দুর্যোগ।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি শিক্ষিত হলেও মূর্খের মতো আচার-আচরণ করে, ভদ্র ঘরের সন্তান হলেও অভদ্র ব্যবহার করে, তেলাপোকা দেখে ভয়ে লাফিয়ে ওঠলেও ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে, মুরগী জবাই দিতে হাত কাপলেও মা-বাবার মতো নিকটজনের গলায় ছুঁড়ি চালাতে পারে, মেয়েদের চোখে চোখ পড়লেই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া ছেলেটিও ধর্ষণ করতে পারে।
কারণ মাদক গ্রহণের পর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, মায়া থাকে না নিজের প্রতি কিংবা অন্যের প্রতি। তাই যেকোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বিবেক বাধা দেয় না, মিথ্যা কথা বলা হয় স্বাভাবিক বিষয়, কোনো ধরনের অপরাধবোধ তাদের স্পর্শ করে না, ধর্মের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে, ভালোবাসা- স্নেহ-মমতাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না।
মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল। শতকরা ৮০ ভাগ খুনের সঙ্গে মাদকাসক্তরাও কোনো না কোনোভাবে জড়িত। মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা পরিবারকে ধ্বংস করছে; সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে।
মাদকাসক্তি নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে খেয়ে ফেলে। জীবনবিধ্বংসী এ নেশায় সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হয়, অনিষ্টকারিতা-অপকারিতার মতো গুরুতর মহাপাপ বৃদ্ধি পায়, পাপাচারে লিপ্ত করে, পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটায়। নেশার কারণে শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়, চাকরিচ্যুত হতে হয় কাউকে কাউকে। যেসব পরিবারের কোনো সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন।
উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে— মাদকের সহজলভ্যতা, মাদকের প্রতি কৌতূহল ও নিছক মজা করার প্রবণতা, পারিবারিক অশান্তি, বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি, অবহেলা, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের কুপ্রচারণা, অসৎ সঙ্গ, মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রকৃত ধারণার অভাব, আমি ইচ্ছা করলেই মাদক ছাড়তে পারি এমন ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, মানসিক টানাপড়েন, ব্যবসায় ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল করা, নানা রকম হতাশা ও আকাশ-সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব ।
পারিপার্শ্বিক কারণ—মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা, উইথড্রয়াল ইফেক্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি। ব্যক্তিত্বের কিছু সমস্যা যেমন এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশের সমস্যা, পারিবারিক কারণেও মাদক গ্রহণের জন্য দায়ী। ধূমপানই মাদকের জগতে প্রবেশের মূল দ্বার খুলে দেয়। সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে মদ্যপানও। ।
যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে যে নেশা কোনো রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং এটা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। মাদকাসক্তির কারণে স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, যকৃত, ফুসফুস, প্রজননতন্ত্র, কিডনি, লিভার, পাকস্থলীসহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিরায় মাদক গ্রহণের কারণে হেপাটাইটিস বি, সি, যৌনবাহিত রোগ ও এইচআইভি সংক্রমণ হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় লেখাপড়া, স্লিম থাকা ও বেশি সময় যৌনক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, মডেলকন্যা ও অভিনেত্রী কিংবা সুন্দরী গৃহবধূরা ব্যাপক হারে ইয়াবা আসক্ত হয়ে তাদেরও জীবন বিপন্ন করে তুলছে। মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতি তাদের গড় আয়ু অনেক কমে যাওয়া; স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া। কুকুর-নিধন বিষের মিশ্রণে তৈরি ইয়াবা খেলে খাবারের রুচি কমে যায়, ঘুম কমে যায়, না খেতে খেতে তারা রোগাটে হয়ে যায়, বছরখানেক ব্যবহারের পর যৌন ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
তাই মাদকের আগ্রাসন থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। সন্তানের ওপর অভিভাবকদেরও সতর্ক ও সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকতে হবে। অভিভাবক সন্তানকে নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তার গতিবিধি লক্ষ্য করবেন। সন্তানের বাড়ি ফেরা, ঘুম, জেগে ওঠা দেখে মাদকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক সচেতন হলে সন্তান মাদক গ্রহণ করতে পারে না।
মাদকমুক্ত পরিবার গড়তে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পারিবারিকভাবেও সময়োপযোগি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদক বিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারণার সাথে বড়দের যুক্ত থাকতে হবে, মাদকাসক্তদের স্বাবলম্বি করতে হবে। এমন লেখালেখি ও সিনেমা-নাটকের সাথে পরিচিত করাতে হবে, যাতে মনে মাদকের খারাপ দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। মাদকমুক্ত পরিবার গড়তে পারলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব হবে। জীবনমান গড়ার জন্য, আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলার জন্য পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাদকনির্ভরতা একটি ক্রনিক রিল্যাপ্সিং ব্রেইন ডিজিজ। তাই অভিভাবকদের মাদকাসক্তকে শনাক্ত করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে, সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সময়মত মোটিভেশন করতে হবে, যথাযথ কাউন্সিলিং করতে হবে, মেডিটেশন করাতে হবে, প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণ করতে হবে।
চিকিৎসার পর মাদকাক্তদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাকে নিঃসঙ্গ রাখা যাবে না। তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হলে কিংবা অবহেলা করলে ফের মাদকের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও অভিভাবকদের ভূমিকা জরুরি। মাদকের অপব্যবহার বন্ধ করতে হলে পারিবারিকভাবে পর্যায়ে উদ্যোগী হয়েও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদকাসক্তকে ঘৃণা না করে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে, বিভিন্ন কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে সর্বনাশী মাদকের কুফল থেকে ফেরাতে হবে।
মাদকাসক্তির লক্ষণ হচ্ছে- চিন্তা ও আচরণের পরিবর্তন, চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠা, কোনো কিছুতে বেশিক্ষণ মনোসংযোগ করতে না পারা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, অবাধ্য হয়ে ওঠা। ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, সারারাত জেগে থাকে আর পরদিন দুপুর ২টা-৩টা পর্যন্ত ঘুমায়। খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম দেখা যায়। খিদে কমে যায়, বমিভাব দেখা দেয়। বাসায় ঠিকমত খায় না, গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থাকে, কোনো কোনো দিন বাসায়ই ফিরে না। কারণে-অকারণে মিথ্যা কথা বলে।
প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নানা উছিলায় বাবা-মার কাছে টাকা চায়, টাকা না পেলে রাগারাগি করে। শরীর ভেঙে পড়ে, দুর্বল হয়ে যায়। হাত-পা কাঁপতে পারে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, পড়ালেখার মান কমে যায়, চাকরি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। বাথরুমে বেশি সময় কাটায়। নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবী তৈরি হয়, পুরনোদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। ঘন ঘন মোবাইলের সিম বদলায়। ঘরের ভেতর মাদক গ্রহণের বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। বাসার জিনিসপত্র/ টাকা-পয়সা/মোবাইল ফোন চুরি হতে থাকে।
অনেক সময় বিনা কারণে খুব উৎফুল্ল বা খুব বিষণ্নতা দেখা দেয়। অসংলগ্ন কথা বলা বেড়ে যায়। স্ত্রী-স্বামীর সঙ্গে সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে, স্বাভাবিক যৌনজীবন ব্যাহত হয়। সবসময় উৎকণ্ঠা বা অহেতুক ভীতির মধ্যে থাকে। নিজেকে গুটিয়ে রাখে, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বর্জন করে। শখের পরিবর্তন ঘটে। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্যকে অহেতুক সন্দেহ করা শুরু করে। উপরের সবগুলো লক্ষণ একসঙ্গে যেমন সব মাদকাসক্তের মধ্যে থাকে না, তেমনি উপরের লক্ষণগুলো মাদকাসক্তি ছাড়াও ভিন্ন কারণে হতে পারে।
মাদকাসক্তির চিকিত্সার বেশক’টি ধাপ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চিকিত্সার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, মাদকাসক্তির ধরন নির্ণয় করা হয়। শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর তার ‘উইথড্রয়াল’ সিনড্রোম এবং মাদক প্রত্যাহারজনিত শারীরিক সমস্যার চিকিত্সা করা হয়। শরীর থেকে মাদকের ক্ষতিকর রাসায়নিক অংশগুলো বের করে দেয়া হয়, এ ধাপটিকে বলা হয় ‘ডিটক্সিফিকেশন’। এসময় তার পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়।
মাদকমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্বীকৃত ওষুধ নির্দিষ্ট নিয়মে মনোচিকিত্সকের পরামর্শে সেবন করা লাগতে পারে। পরবর্তী ধাপে তাকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদকমুক্ত থাকার প্রেরণা দেয়া হয়। আবার যাতে মাদক গ্রহণ না করে সে বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া হয়, ফের আসক্ত হওয়ার জন্য যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা হয়, নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও উত্সাহিত করা হয় চিকিত্সাধীন আসক্তজনকে।
আসক্ত হওয়ার আগের যোগ্যতা ও গুণাবলী ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পুনর্বাসনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। মাদকাসক্তি চিকিত্সার ধাপগুলো বেশ দীর্ঘমেয়াদি। তাই ধৈর্য ধরে চিকিত্সা করাতে হয়। অপরিপূর্ণ চিকিত্সার কারণে আবার আসক্তি (রিল্যান্স) হতে পারে। ফ্যামিলি কাউন্সেলিংও চিকিত্সার একটি জরুরি ধাপ।
মাদক থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে প্রতিটি পরিবারের করণীয় হচ্ছে- পারিবারিক পরিবেশ ধূমপানমুক্ত রাখা। সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখা। সন্তানরা যেসব জায়গায় সবসময় যাওয়া-আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানা। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা, যাতে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করে।
পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন। ধৈর্য ধরে সন্তানদের সব কথা শোনার জন্য অভিভাবকরা নিজেদের প্রস্তুত করবেন। সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট সময় দেবেন। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না।
পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, প্রায়ই তারা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। ‘গুড প্যারেন্টিং’ বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে বাবা-মাকে।
অনেকেরই মনে আছে- ঐশী নামের মেয়েটি ইয়াবাসেবী ও মাদকাসক্ত হয়ে জীবনের খুব আপনজন জন্মদাতা মাতা-পিতাকে খুন করেছিল। মাতা-পিতার অবহেলা, পারিবারিকভাবে অ-বন্ধুসুলভ আচরণে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ, অবাধ চলাফেরার সুযোগ, খারাপ বন্ধু-বান্ধবের সাথে অবাধভাবে চলাফেরার কারণে ঐশী নিজের সুন্দর জীবন ধ্বংস করেছে।
নিজের সাময়িক রঙিন মুহূর্তকে গুরুত্ব দিয়েছে। এভাবে নিষ্ঠুর নির্মম আচরণে একটি পরিবার চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না যদি প্রতিটি পরিবারের সচেতনতা, ভালোবাসা, দৃঢ় অঙ্গীকার ও সক্রিয় ভূমিকা মাদকাসক্তি নামক বিভীষিকাকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে।
এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূতিকাগার হতে হবে পরিবার। সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও সৌন্দর্যের জন্য মাদককে নিয়ন্ত্রণ করাই হোক আমাদের মূলমন্ত্র!