মাতৃভাষা মানে জীবনের গল্প

কল্পনা করুন তো ভাষাবিহীন একটি পৃথিবীর কথা, একেক জন মানুষ যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, একে অপরের থেকে দূর-দূরান্ত, কেবল নিবৃাক চোখে তাকিয়ে রয়, যেখানে মা কোনোদিন সন্তানের মুখে ‘‘মা’’ ডাক শুনতে পায় না। ভাবুন তো অক্ষরবিহীন একটি পৃথিবীর কথা! জগতের সকল পুস্তক যেখানে শোকে সাদা! পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্র আর চিঠি লেখে না, রানার যেখানে অলস ঘুমায়, কিন্তু আমরা জানি এটা অসম্ভব, কথা ছাড়া পৃথিবী অচল, লেখা ছাড়া সভ্যতা স্থবির।

আমাদের ভাষা বেঁচে থাকে আমাদের কথায় আর লেখায় আর আমরা বেঁচে থাকি আমাদের ভাষায়। আমরা আমাদের মায়ের হৃদয়ের প্রাণস্পন্দন শুনেছি এই ভাষায়। আমাদের ঘুম নেমে আসে মাতৃভাষার ছন্দে। মাতৃভাষার আদরে নেমে আসতো রাতের নিরালা। ভোরের নরম আলো জ্বলে উঠে আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্যে । এখনো এই সুন্দরই আমাদেরকে তৃপ্ত করে। সুতরাং মাতৃভাষা আমাদের মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা। মাতৃভাষাকে বাদ দিলে আমাদের পরিচয় গৌণ হয়ে যায়। শেকড় ছিন্ন বৃক্ষের মতো দুর্বল হয়ে যায়।

মাতৃভাষাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

ভাষা ও বাংলা ভাষা : প্রয়োজনীয়তা ও পর্যালোচনা

মানুষ প্রতিমুহূর্তের স্পন্দন ও প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার জীবিত ও জাগার সত্ত্বাটাকে অস্তিত্বময় করে রাখে। আর তার অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি ও শক্তির অন্বয় রচনা করে। অস্তিত্বের জন্য, মনুষ্যত্ব ও মানবিক অর্জনের জন্য তার ভাষা ব্যবহার করে। ভাষার চালিত শক্তির প্রয়োগে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সঞ্চালিত হয়, মস্তিষ্ক কোটর, স্মৃতিকোষ, চেতনা- চৈতন্য, অনুভূতি ও উপলব্ধি তেমনি ক্রিয়াশীল হতে থাকে। ব্যক্তিসত্ত্বা ভাষার মাধ্যমে জাগরিত হয়-বিকশিত হয়। একটি জাতির সত্ত্বাও প্রথমত এবং শেষত ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে। ভাষা মানুষের অস্তিত্বকে ধারণ করে এবং স্পন্দমান করে। বিশ্বাসকে বাক্সময় ও বিভাসিত করে। আন্ত:সলিনার মত বয়ে যেতে থাকে অন্তর্লোকের সমস্ত অন্দর-বন্দর পেরিয়ে।

ভাষা , জাতিসত্ত্বা ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার: মানুষ ও অন্যান্য বস্তুর মধ্যে মৌলিক তফাতটি কি, আলোচনা করতে গিয়ে কোনো এক পশ্চিমা লেখক বলেছেন, মানুষের ভাষাই হচ্ছে সেই একক বৈশিষ্ট্য। মানুষ তার ভাষায় যেসব শব্দ ব্যবহার করে সেগুলো কেবল বস্তুর নাম নয়, তার বিশ্রাম, প্রত্যয়, উপলব্ধি-অনুভূতি এবং আশা-আকাক্সক্ষারও প্রতীক। মানুষ যেমন প্রতিটি বস্তুকে একেকটি নাম দিয়ে চিহ্নিত করেছে তেমনি নিজের অন্তর্লোককে প্রকাশের জন্যও শব্দ ও প্রতীক উদ্ভাবন করেছে এবং এভাবে এক মানুষের সাথে অপর মানুষের ভাব বিনিময়ের জন্য নির্মাণ করেছে সেতু। বস্তুর নামকরণে স্থান এবং পরিবেশের প্রভাব মুখ্য, কিন্তু মানুষ তার অন্তর্লোকের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য যেসব শব্দ এবং ধ্বনির আশ্রয় নেয় সেগুলোর উপর অনিবার্য প্রভাব করে তার জীবনবোধ, তার বিশ্বাস ও প্রত্যয়, তার সংস্কার ও মূল্য চেতনা। অর্থাৎ মানুষ যখন নিজেকে ভাষায় প্রকাশ করে তখন সে কেবল বস্তু বিশ্বেরই পরিচয় দেয় না তার অন্তর্লোককেও ব্যক্ত করার যে চেষ্টা করে এবং তাতে করেই তার বিশ্বাস ও জীবনবোধের রং লেগে তার প্রকাশভঙ্গি বিশিষ্ট হয়ে উঠে। অর্থাৎ মানুষের ভাষা দিয়ে তাকে চেনা যায়, তার স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত হয়।

পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব ভাষা আছে। সেটাই তার মাতৃভাষা আমাদের ভাষা হল বাংলা; যার মধ্যে মিশে আছে আমাদের হৃদয়ের সকল কথা। চোখের ভাষা বলে, মনের মত কথা, হৃদয় জুড়ে আছে শুধুই বাংলা ভাষা। কবির ভাষায়-“মধুর চেয়েও আছে মধুর সে যে আমার মাতৃভাষা।”

জীবন প্রবাহের গল্পে মাতৃভাষা

মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার মানুষ লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টা থেকে। যে মাটির কোলে যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে যে মাটির ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে। তার চোখ, মুখ, বুকের সাথে লেগে থাকে সে ভাষার গভীর আবরণ। তার স্বপ্ন সাধনা, আশা-আকাক্সক্ষা তৃপ্তি ও সম্ভাবনার সমস্ত আকাশ জুড়ে উড়তে থাকে মাতৃভাষার প্রাণময় নীল ঘড়ি।

মাতৃভাষা মায়ের ভাষা

পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব ভাষা আছে। সেটাই তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা না জন্মালে মায়ের প্রতি ও ভালবাসা প্রগাঢ় ও নিবিড় হতে অনেক প্রকার অন্তরায় সৃষ্টি হয়। নিজের ভাষার বিশ্বাস ও ভালবাসা স্থাপনের মধ্য দিয়ে আপন আত্মার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয় এবং ক্রমাগত আত্মার প্রসার ঘটে। মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত ধ্বনিই শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

মাতৃভাষা জীবন গঠনে সহায়ক

মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় আত্মপ্রকাশ করা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় জীবন চলে না, মন্থর, স্থবির ও স্থানু হয়ে পড়ে। অর্থাৎ জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয় না। মায়ের প্রতি তুলনা মা। মা ছাড়া অন্য আর কেউ হতে পারে না। মাতৃভাষার ও একই অর্থে কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে জীবনকে বিকাশ করা সম্ভব।

মাতৃভাষা আমরণ সঙ্গী

দেশ এবং দেশিয় ভাষা তথা নিজেদের মাতৃভাষা মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বড় সম্পদ। একটি দেশে একাধিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থাকতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকের মাতৃভাষাই তার প্রিয়তম সম্পদ এবং ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। এক কথায় বলতে গেলে মাতৃভাষা মানুষের অদ্বিতীয় সত্ত্বার মতো এবং আ-মৃত্যু তার সঙ্গী।

মাতৃভাষা চিন্তার ধারক

জন্মের পর যে ভাষা মানুষ শিখে, যে ভাষায় সে স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত হয়, সেই ভাষাই তার চিন্তার সমগ্র পরিসরে নিরলসভাবে কাজ করে। সরবে হোক কিংবা নিরবেই হোক, ভাষা ছাড়া বিশেষত: মাতৃভাষা ব্যতিরেকে মানুষের পক্ষে চিন্তা-ভাবনা এবং স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়। বিদেশি ভাষা শিখতে এবং সেই ভাষা শিখতে হলেও মানুষকে নিজের মাতৃভাষায়ই চিন্তা-ভাবনা করতে হয়, সেই চিন্তা ভাবনা বিদেশি ভাষায় অনুবাদ করতে হয়। মাতৃভাষা মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়।

মধুর অমৃত সুধায় ভরপুর মাতৃভাষা

মাতৃভাষা, মায়ের ভাষায় মনের কথা, প্রাণের কথা যেভাবে ব্যক্ত করা যায়, তা অন্যকোনো ভাষায় এত সহজে ব্যক্ত করা যায় না এবং তাতে শান্তি ও স্বস্তিও পাওয়া যায় না। তাই মাতৃভাষা-মধুর ভাষা, অমৃত সুধায় ভরা, স্রষ্টার দেয়া এক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

মাতৃভাষা সম্পর্কের সেতুবন্ধন

আপনসত্তার, আপন বাঁচনের মৌল তাগিদেই মানুষ একে অপরের সাথে মিলেছে প্রতিকুলতাকে রুখতে, দুশমন শক্তিকে হটাতে কাঁতার বাঁধছে। এইভাবে আপনা প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তুলেছে। বলা বাহুল্য, এইখানে কার্যকর এবং অনিবার্য ভূমিকা ভাষা-মাধ্যমে সেতুবন্ধন। মাতৃগর্ভ হতে ভূমির হয়ে মাতৃদুগ্ধ পানের সঙ্গে যে ভাষা আমাদের কর্ণপটাকে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যে ভাষা আমাদের জনসাধারণ আজীবন ব্যবহার করে, যে ভাষায় আমরা ঘরে বাহিরে, হাটে, মাঠে, ব্যবসায়, বাণিজ্যে ও বৈষয়িক কাজে ব্যবহার করি, যে ভাষায় নিদ্রাকালে স্বপ্ন দেখি তাই আমাদের মাতৃভাষা।১০

মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ অবলম্বন

লুৎফর রহমানের ভাষায়-আমি ভিখারি হতে পারি, দুঃখ অশ্র“র কঠিন ভারে চূর্ণ হতে আপত্তি নেই্ আমি মাতৃহারা অনাথ বালক হতে পারি, কিন্তু আমার শেষ সম্বল ভাষাকে ত্যাগ করতে পারি না। আমার ভাষা চুরি করে আমার সর্বস্বহরণ করো না। মাতৃভাষাকে কেমন করে ভুলব? এমন অসম্ভব প্রস্তাব করে আমার জীবনকে অসাড় ও শক্তিহীন করে দিতে চায় কে? বিদেশি ভাষায় কাঁদবার জন্য কে আমাকে উপদেশ দেয়?১১

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসারে মাতৃভাষা

মানুষের ভাষাকে কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করা যায় না। ভাষাকে ধ্বংস করাও অসম্ভব নয়। তাই ভাষার মাধ্যমেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো সম্ভব।১২

মাতৃভাষা অস্তিত্ব রক্ষার সোপান

জীব-জন্তু, সৃষ্টি জগতের সকলেরই ভাষা আছে। প্রত্যেক জাতির আলাদা আলাদা ভাষা। সে ভাষাগুলোর নানা বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্র, ও বিপুল বিভিন্নতা বিকশিত হয়েছে। মাতৃভাষায় নিজের অস্তিত্ব, অবস্থান এবং চেতনালোকের অভিজ্ঞতা প্রকাশ পেয়ে থাকে। মাতৃভাষার সম্পূর্ণ বিকাশ এবং সম্ভাবনার ওপর মানব অস্তিত্ব ও মানব সভ্যতার অস্তিত্ব নির্ভর করে। এই মাতৃভাষার সর্বত্র বিকাশের জন্য মাতৃভাষার অস্তিত্ব ও মর্যাদাকেই রক্ষা ও সংরক্ষণ করা প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।১৩

পৃথিবীতে বিভিন্ন মাতৃভাষার প্রসারতা

বর্তমান বিশ্বে ৬ হাজার মাতৃভাষা। এরই মধ্যে অর্ধেক ভাষায় কথা বলে ১,০০০ এর কম লোক। কেবলমাত্র পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ লোক কথা বলে ২০ টি প্রধান ভাষায়। ভৌগোলিক বিভাজন অনুসারে প্রচলিত ভাষাগুলোর ৩২% ব্যবহৃত হয় এশিয়াতে, ৩০% আফ্রিকায়, ১৯% প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে, ১৫% উভয় আমেরিকায়, ৩% ইউরোপে। যদিও গণনা পদ্ধতি ভেদে সংখ্যার বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলো হচ্ছে চীনা ভাষা (১.২ বিলিয়ন), ইংরেজি (৪৭৮ মিলিয়ন), হিন্দি (৪৩৭ মিলিয়ন), স্প্যানিশ (৩৯২ মিলিয়ন), রুশ ভাষা (২৪৮ মিলিয়ন), বাংলা (২৩০ মিলিয়ন), আরবি (২২৫ মিলিয়ন) এবং ফারসি ২০০মিলিয়ন ইত্যাদি।১৪

সারা পৃথিবীতে আজ যেসকল ভাষা রয়েছে তার এক একটি ভাষা এক একটি সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। কোনো ভাষার কণ্ঠরোধ করা সমীচীন নয়। সভ্যরাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রসীমায় অবস্থিত প্রত্যেক জনগোষ্ঠী যেন তাদের ভাষা ব্যবহার করতে পারে সে জন্য সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি এবং তার সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাতৃভাষা স্রষ্টার এক বিস্ময়কর লীলা। গোটা পৃথিবীতে স্রষ্টা মানুষকে রঙে-বর্ণেই বৈচিত্র্যময় করেন নি, বরং বৈচিত্র্যময় করেছেন ভাষা দিয়েও।১৫
বাংলাদেশি ইতিহাসে মাতৃভাষার প্রাধান্যতা

কিছু প্রতিবাদ-শিখা অনির্বাণের মতো, কিছু স্লোগান অমরত্বের সুরে মিশে থাকে, কিছু আত্মত্যাগ রক্তে জ্বালিয়ে দেয় অধিকারের নেশা, কিছু অক্ষর চিরদিনই অবিনশ্বর, কিছু মুখ চেতনার আলো ছড়ায় সারা বিশ্বে, সে চেতনার দৃপ্ত শপথে সত্তা জুড়ে আছ তোমরা, শুধু তোমরাই মোদের গরব। মৃত্যুবাহী বুলেটকে যারা ভয় করেনি, যারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মদান করেছিল, তারাই বাঙালি সন্তান।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারিতে যারা নিজেদের মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের রক্তে ঢাকার রাজপথ আবৃত করেছিলেন, তারাই বাংলাদেশের ধন। তারাই মাতৃভাষার গুরুত্ব যথার্থভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। শ্রদ্ধামিশ্রিত বিস্ময়ে সেদিন অনেকেই তাকিয়ে ছিল তদের দিকে। আর তাদের আত্মত্যাগের ফসলরূপে পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপস্থাপন করার জন্য ২১ শে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

UNESCO-র ঘোষণায় বলা হয়-“21 February is proclaimed international mother language day througout the world to commemorate the () who sacrificed their lives on this day in 1952.”১৬

উপসংহার

ভাষাবিহীন জীবন রূহবিহীন দেহের ন্যায়। রূহ ছাড়া যেমন দেহের কোনো মূল্য নেই, ঠিক তেমনি ভাষা ছাড়া জীবন অচল। যদি কারো ভাষাকে কেড়ে নেয়া হয় তাহলে তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। যেখানে জীবনের অস্তিত্ব সেখানেই ভাষার বহিঃপ্রকাশ। মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য প্রতিটি জাতি বদ্ধপরিকর। বাঙালি জাতি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। কৃষ্ণচূড়ার রক্তলালে রঞ্জিত আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মবলিদান। বায়ান্ন সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথে তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য।

ইতিহাস যে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতকেও গর্ভে ধরে রাখে-তার এক জ্বলজ্বলে নজীর রেখে গেছেন আমাদের ভাষা শহীদেরা। তাদের ভাষার লড়াইয়ের সূত্র ধরেই উন্মেষ ঘটে নতুন জাতীয় চেতনার। স্ফুরিত হয় ভাষাভিত্তিক এক অসাম্প্রদায়িক চেতনার। নতুন এক স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভীত গড়া হয়েছিল ভাষা শহীদেরই রক্তমাখা স্বপ্নে।১৭ মাতৃভাষাই কোনো জাতির অস্তিত্ব প্রকাশে উন্নত হাতিয়ার। ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। মানুষ জন্মগ্রহণ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভাষার বন্ধনেই বেঁচে থাকে। ভাষাই জীবনের উৎকৃষ্ট সেতুবন্ধন।

তথ্যসূত্র

১) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের প্রাণের উচ্চারণ, জাকির আবু জাফর, সচিত্র বাংলাদেশ, পৃ.৬৪, একুশে সংখ্যা
২) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আল মুজাহিদী, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৩, যুগান্তর
৩) বুদ্ধির ফসল: আত্মার আশিস, প্রবন্ধ সমগ্র ১, অধ্যাপক শাহেদ আলী
৪) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের প্রাণের উচ্চারণ, জাকির আবু জাফর, সচিত্র বাংলাদেশে, পৃ.৬৩, একুশে সংখ্যা

৫) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আল মুজাহিদী, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৩, যুগান্তর
৬) প্রাগুক্ত
৭) প্রসঙ্গ বাংলা ভাষা॥ ভাবনা-দুর্ভাবনা, ড. অনীক মাহমুদ, দৈনিক জনকণ্ঠ, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৭
৮) প্রাগুক্ত

৯) মাতৃভাষার ভালবাসার জীবনদান, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ইবনে ইউসুফ, ইত্তেফাক, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৮
১০) আল-এসলাম, আশ্বিন ১৩২৩
১১) মুহম্মদ লুৎফর রহমান, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ, ১৩২৬
১২) আন্তর্জাতিক মাতৃভাসা দিবস, আল মুজাহিদী, যুগান্তর, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৩

১৩) প্রাগুক্ত
১৪) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিব, ভূঁইয়া মোশাররফ, সচিত্র বাংলাদেশ, ২১ ফেব্র“য়ারি সংখ্যা
১৫) আন্তর্জাতিক ঘোষণায় ভাষার অধিকার, মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথম আলো, ১ ফেব্র“য়ারি ২০০৭
১৬) দৈনিক দিনকাল ২১-২০০৭
১৭) প্রথম আলো-২১-২০০৮

 

 

 

 

 

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *