মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক কিংবা মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি শব্দগুলো এসেছে ‘মন’ শব্দ থেকেই। যেখানে মানুষকে নিয়ে কাজ সেখানেই আসে মানব সাইকোলজি তথা মানুষের মনস্তত্ত্ব। সুখ-দুঃখের অনুভব সব মানুষেরই আছে। সবাই সম্মান চায়। ভুলের জন্য অনুশোচনা করে। জিনিষপত্র সংগ্রহ কর রাখতে পছন্দ করে। এই ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্ব সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে। সবাই সুবিচার চায়। যা পছন্দ কর তা সংগ্রহ করা-সময়ের সাথে সাথে অভ্যাসে পরিণত হয়।
মানব মনস্তত্ত্ব
মরণাপন্ন মানুষ অনুশোচনায় পুড়েন। সুস্থ হতে পারলে ভালো কাজ করার কথা ভাবেন। বিপদের সময় মানুষ মন্দকাজ করার চিন্তা করে না। অন্ধকারে চলতে ভয় পেলে মানুষ সশব্দে গান গায়, বিপদে পড়লে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে মনে সাহস পান। বিপদের সময় মানুষ অন্যায় কাজ করতে পারেন না, বিপদের সময় পার করে ভালো কাজ করার কথা ভাবেন।
সামাজিক চেতনার মনস্তত্ত্ব
চেতনার ইংরেজি Consciousness। চেতনা মনের একটি ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য। চেতনাকে আত্মমাত্রিকতা, আত্মচেতনা, অনুভূতিশীলতা, পৃথকীকরণ ক্ষমতা, এবং নিজের সত্তা ও আশেপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতার মতো মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়। মনের দর্শন, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং বোধ বিজ্ঞানে চেতনা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়।
আধুনিক শিল্প দার্শনিকেরা বলছেন, মানুষের চেতনা সামজিক সত্তাকে নির্ধারণ করে না, বরং সামাজিক সত্তা দ্বারা নির্ধারিত হয় তার চেতনা। অর্থাৎ প্রতিটা সমাজ বিনির্মিত হওয়ার পেছনে থাকে এক ধরনের তাগিদ। এখানে শিল্পী যে জগৎ বানান তা চিরন্তন, স্থায়ী, চূড়ান্ত বা নিরপেক্ষ নয়। অবস্থানের সাথে, কালের সাথে, সম্পর্কের সাথে তার পরিবর্তন ঘটে। শিল্পী যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন তার তুলিতে ভরে উঠে সে সমাজের বাস্তব চিত্র।
ধর্মের মনস্তত্ব
ধর্মের মনস্তত্ব গঠিত হয় মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার প্রয়োগ এবং গঠনমুলক ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে যা ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ধার্মিক ও নিধার্মিক উভয় দিক থেকেই বিচিত্র ভাবে বিবেচনা করে। ধর্মের মনস্তত্ববিদরা ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন।পদ্ধতিগত বর্ণনা, বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়বস্তু, ধর্মের আচরণ, অভিজ্ঞিতা এবং অভিব্যক্তি নিয়ে; মানবজাতির সুচনার যে ইতিহাস তাতে ধর্মের প্রভাবের যে ব্যখ্যা তা নিয়ে; ধর্মীয় মনোভাব ও আচরণের জন্য সমাজ ও ব্যক্তিতে কি প্রভাব পরে তার মানচিত্র তৈরী নিয়ে।
গ্রামীণ মানুষের মনস্তত্ত্ব
গ্রামীণ সমাজে যে শহুরে হাওয়া লেগেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার, কৃষিতে প্রযুক্তির বিকাশ ও বাণিজ্যিকায়নের বিস্তার ঘটছে। শিল্পায়নভিত্তিক নগরায়ণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
অপরাধের মনস্তত্ত্ব
এমন সমাজও আছে, যেখানে অপরাধকে সাহস বলে, অত্যাচারকে পৌরুষ বলে প্রশংসিত করা হয়। এই সমাজের শিশু সোশ্যালাইজেশনের মাধ্যমে সমাজবিরোধী আচরণ, সহিংস আচরণ, অপরাধী আচরণ শেখে। বাবা হয়তো রিকশাওয়ালাদের নিয়মিতই মেরে থাকেন। বাসায় মাকেও মারেন। ছেলে বাবাকে শক্তিশালী মনে করে। সেও বাপকা ব্যাটা হতে চাইবে। সেও মারপিট শিখে নেবে। এ জন্যই অপরাধী বাবা-মায়ের সন্তানদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আবার কোনো এলাকায় সমাজের মধ্যে অপরাধের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব থাকলে সেখানকার সোশ্যালাইজেশন তেমনই হবে। ফলে শিশুরা অপরাধপ্রবণ হয়ে গড়ে উঠবে।
কোনো একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর যদি অপরাধী পুরস্কৃত হয়, যদি সুবিধা পায়, তবে তার আরো অপরাধ করার আশঙ্কা বাড়বে। এভাবে বারবার পুরস্কৃত হওয়ায় ব্যক্তির মধ্যে অপরাধমূলক আচরণ করার প্রবণতা দেখা দেয়। একবার যদি ছিনতাই করে রেহাই পায়, কেউ তাহলে পরেরবার রুজির এই পথটিই সে বেছে নেবে। ধর্ষক আরো ধর্ষণ করবে, খুনি করবে খুন। পুরস্কার (সুবিধা, বিচার হয়নি) পাওয়ার ফলে অপরাধ বাড়বে। কেউ হয়তো অপরাধ করে সুবিধা পেল, বড় নেতা হলো, সম্পদ পেল, প্রভাব-প্রতিপত্তি পেল। সমাজের অন্যরা তা দেখবে। সমাজের কেউ কেউ এমনটা করে নিজেও সুবিধা নিতে চাইবে। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা অপরাধী আচরণ শিখতে পারি। মনোবিজ্ঞানী বান্ডুরা একে ‘ভিক্যারিয়াস লার্নিং’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রজাতিগতভাবে মানুষের মধ্যে সহিংসতার প্রবণতা আছে। টিকে থাকার জন্য, সম্পদ ও খাদ্যের জন্য, প্রভাব বিস্তারের জন্য, যৌন সঙ্গীর/সঙ্গিনীর ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য, নিজের ঔরসজাত সন্তানের টিকে থাকাটা নিশ্চিত করার জন্য অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও সহিংসতা করে। অতীতে ধ্বংসপ্রবণতার ইতিহাস থাকলে, রাগী মানুষ ও সহিংসতার শিকার মানুষের মধ্যে, ক্রমাগত সহিংসতা দেখেছে এমন মানুষের মধ্যে, যাদের আত্মীয়-বন্ধুরা সহিংসতা সমর্থন করে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ফ্রয়েড-এর মনস্তত্ত্ব
ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মন প্রচ-ভাবে গতিশীল এবং এই ‘মন’ নামক মানবিক উপাদানটি সহজাত প্রবৃত্তির, তাড়না, বিরোধ, গূঢ়ৈষা, অবদমন ইত্যাদির মতো কিছু ইচ্ছামূলক ক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী মনের চেতনও অবচেতন স্তরের সমন্বয়ে তৈরি হয় একজন ব্যক্তিমানুষের অহং। সামাজিক অহং সবসময বাস্তবতায় নিয়মকানুন মেনে চলে এবং অচেতনে বন্দি কামজ ইচ্ছা/বাসনাকে সমাজ-বাস্তবতায় আসতে দেয় না।
জন-মনস্তত্ত্ব
প্রথমে একজন মারবে কি মারবে না এভাবে এগিয়ে যায়। কিন্তু একবার একজন মারতে শুরু করলে তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেটি উপস্থিত অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং তারাও পেটানোতে অংশগ্রহণ করে। এটি মব সাইকোলোজি বা জন-মনস্তত্ত্ব এবং এ মনস্তাত্ত্বিক প্যাটার্নটি যুবাদের বয়সের ধর্মের কারণে খড়ের গাদায় আগুন লাগার মতো কাজ করে। আবার অপরাধকাণ্ডের একটি নিজস্ব চরিত্র আছে।
দূর থেকে অপরাধকে অপরাধ মনে হয়, কিন্তু অপরাধের গণ্ডির মধ্যে একবার ঢুকে গেলে তখন অপরাধ অপরাধীর মনে নিজস্ব একটি যুক্তিবোধ তৈরি করে, যার ফলে অপরাধকে অপরাধীর কাছে আর অপরাধ মনে হয় না। তখন যে লোকটাকে তারা মারতে থাকে, তাকে তাদের কাছে আর মানুষ মনে হয় না, এবং তখন নৃশংসতার নিষ্ঠুরতম উদাহরণ তৈরি হয়। জন-মনস্তত্ত্বের সঙ্গে অপরাধবোধের আপাত স্বাধীনতাবোধ মিশ্রিত হলেই রিফাত শরীফ, ফেনীর রাফি বা বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়।
শিশু মনস্তত্ত্ব
শিশুর মনোজগতকে ভাল ভাবে বুঝতে হবে। শিশু মনস্তত্ত্বের পরিধি বিশাল। শিশু মনস্তত্ত্বের প্রথম ধাপ হল— তার আচার আচরণের মধ্যে দিয়ে শিশুটির মনোজগৎকে চেনার চেষ্টা করা। পারিবারিক জীবনে বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তির মতো ঘটনা একটি শিশুর উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই শিশুদের পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরির জন্য ধাপে ধাপে তার মনস্তত্ত্বকে বিকশিত হতে দিতে হবে। শিশুর কল্পনাবৃত্তির বিকাশের জন্য ও তার জগতকে সুস্থ ও সুন্দর করে তোলার জন্য বই পড়ার অভ্যাস ছোট থেকেই গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার্থী নেই, আছে শুধু পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা যতো কম থাকবে শিক্ষার্থী বেশি শিখবে। আর শিশুদের জন্য শিক্ষাকে আনন্দময় করলে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’ এছাড়া শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে প্রতিযোগিতামূলক আচরণের চাপ কমাতে অভিভাবকদেরও লাগাম টানতে হবে সন্তানকে নিয়ে উচ্চাভিলাষের।
সাহিত্যে মনস্তত্ত্ব
মনঃবিশ্লেষণের মাধ্যমে সাহিত্যের ভেতর থেকে খুঁজে পাওয়া যায় মনোবৈজ্ঞানিক কলাকৌশল― প্রত্যক্ষণ, আবেগ, চিন্তা, বুদ্ধি, প্রতিভা, স্মৃতিশক্তি, কগনিশন (অবহিতি বা সচেতনবোধ), অন্তর্গত প্রেষণা বা ভেতরের আকাক্সক্ষা, চাহিদা-উৎসাহ-উদ্দীপনা, শিক্ষণ, বিশ্বাস, স্বপ্ন ইত্যাদি। এগুলোও মনের স্বাস্থ্যের অংশ, মনঃক্রিয়া বা মনের অন্তর্লীন উপাদান। এছাড়াও রয়েছে সচেতন উপলব্ধি (কনশাস ওয়ার্ল্ড), ব্যক্তিত্ব, চেতন-প্রাকচেতন-অবচেতনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। এসব উপাদান মনস্তত্ত্বের বিভিন্ন মতবাদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মনস্তত্ত্ব ও মার্কেটিং
মানুষের পছন্দ এবং অনুভূতির খুব কাছাকাছি যেতে হয়। মানুষের ভালোলাগার অনুভূতিকে কাজে লাগাতে হয়। কোন ব্যক্তি, বস্তু বা ব্র্যান্ড ইত্যাদি’র প্রতি ভালোলাগার জন্য তার সাথে যুক্ত অন্য একটি বিষয়ের প্রতি মানুষের ভালো লাগা তৈরী হয়। একে বলে হেলো ইফেক্ট। মানুষ তার ব্যক্তিগত ভালো লাগার উর্দ্ধে উঠতে পারে না। সুন্দর চেহারার মানুষ দেখে আমরা মানষেরা তাকে বেশী সুখী, ভালো গুণযুক্ত ইত্যাদি মনে করি। অসুন্দর চেহারার হলে তার সাথে খারাপ গুন যুক্ত করে দেখি। মানুষ কারণ চায়। আপনি তাকে যত অযৌক্তিক কারণই দিন না কেন, তাতে কারণ না দেয়ার চাইতে বহুগুণ বেশী উপকার হবে।
সব ধরনের কোম্পানি, সরকার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মনস্তাত্ত্বিক উপায়ে মানুষকে প্রভাবিত করার দুইটা ধরন আছেঃ। উইন-উইন ধরনে যারা বিজ্ঞাপন দেয় বা ডিজাইন করেন তারা লাভবান হন এবং যারা ভোক্তা তারাও লাভবান হন। স্মাগলিং- যেখানে বিজ্ঞাপন দাতা কিংবা পন্য বিক্রেতাই লাভবান হন। যিনি ভোক্তা তার ক্ষতি হয়। উইন-উইন ভালো এবং স্মাগলিং অবশ্যই খারাপ।
মনস্তত্ব বুঝার দুর্দান্ত কৌশল
কারো মনস্তত্ব বুঝতে আচার-আচরণ, চাল-চলন, ব্যবহার ইত্যাদি অনুসরন করা যায়। মাঝে মাঝে তার অজান্তে পরীক্ষা করা । কাজ দিলে বা কাজ করালে মন বুঝে নেয়া যায়। বোঝার চেষ্টা করা যায়- সে কি পড়ে। সে কি দেখে। সে কোথায় ঘুরে। তার বন্ধুবান্ধব কারা। লেখাপড়া কতদূর। কারো মনস্তত্ত্ব বুঝতে হলে তার সাথে কথা বলতে হবে কম, শুনতে হবে বেশি। কথা শোনাটা খুব দরকার। এগুলো দেখে মনস্তত্ত্ব বোঝা যায়।
মনস্তত্ব ও আবেগ
আবেগের শ্রেণিবিন্যাসের একটি ধারায় রয়েছে ইতিবাচক আবেগ (যেমন ভালোবাসা, আনন্দ, মায়ামমতা, সুখ, উল্লাস ইত্যাদি), নেতিবাচক আবেগ (রাগ, বিরক্তি, দুঃখ-কষ্ট, ভয়, ঘৃণা, লজ্জা ইত্যাদি), মিশ্র আবেগ (জেলাসি=ভালোবাসা+রাগ, নিরাশা=দুঃখ+বিস্ময় ইত্যাদি), এবং তীব্রতার ভিত্তিতে আবেগের মাত্রাগত স্তর (ভয় : অস্বস্তি→খিটখিটে→সন্ত্রস্ত কম্পমান অবস্থা→অতি ভীতি সন্ত্রস্ত অবস্থা→প্যানিক ; বিরক্তি→রাগ→রাগে উন্মত্ততা ইত্যাদি)।
মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, অবনতি কিংবা ভারসাম্য শুধু শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং আমরা সামাজিক স্বাস্থ্য, পরিবেশগত স্বাস্থ্য, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপরও মানসিক স্বাস্থ্য গভীরভাবে নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক স্বাস্থ্য বলতে একজন মানুষের ভেতর শুধু কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা না থাকাকে বোঝায় না। বরং মানুষ হিসেবে নিজের সক্ষমতাকে অনুধাবন করার সক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের ভেতর দিয়ে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকা, দৈনন্দিন জীবনের পারিপার্শ্বিক চাপের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলা এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখার সক্ষমতাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলে।
মানসিক সমস্যা
কোনো ব্যক্তির মানসিক সমস্যা বোঝার উপায়গুলো হচ্ছে- ঘুম ও খাওয়ার ব্যাপারে অনিয়ম। হঠাৎ মুড চেঞ্জ হওয়া অর্থাৎ, সে স্বাভাবিক সময় যে আচরণ করে, তার বাইরে কিছু করা। হঠাৎ করে অতিরিক্ত আনন্দিত হওয়া, অতিরিক্ত কান্না কিংবা খুব বেশি রেগে যাওয়া, অর্থাৎ স্বাভাবিক সময় সে ব্যক্তির আচরণে যা দেখা যায় না, তেমন কিছু ঘটলে বুঝতে হবে সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
কোনো ব্যক্তি আগে যে কাজ করত সে কাজে মন দিতে না পারা। মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। অনেকে আবার অফিশিয়াল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। খিটখিটে হয়ে যাওয়া। খুব স্পর্শকাতর আচরণ করে কিংবা খুব বেশি রকম আবেগ প্রকাশ করে। কোনো কিছুতেই কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোও মানসিক সমস্যা।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
কিছু অভ্যাস প্রাত্যহিক মেনে চললে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। অভীষ্ট লক্ষ্যে জেগে উঠুন। যারা নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করে জীবনযাপন করেন তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকে।শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে অ্যান্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, যা আমাদের ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এই হরমোনের উৎপাদন আপনাকে রাখবে বিষণ্নতা মুক্ত। প্রকৃতির সঙ্গে ৫ মিনিট সময় কাটালে একজনের আত্মসম্মান এবং মেজাজের উন্নতি ঘটে। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানুষের বিশ্রাম ও স্বস্তি হয়। ফলে বড় কোনো কাজের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়। নিজেকে ইতিবাচক রাখুন। নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা মানুষকে মানসিকভাবে হতাশ করে।
জড়িয়ে ধরার মতো আন্তরিক ব্যবহার মানসিক চাপ থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে। রুটিন মেনে চলা আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং বিষণ্নতা থেকে দূরে রাখতে পারবে। প্রযুক্তি ব্যবহার কমিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করুন। ব্যস্ততম যান্ত্রিকজীবনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্তত কিছু সময়ের বিরতি নেয়ার চর্চাটা করতে পারেন। মানসিক চাপ কাজের ক্ষতি করে, তাই সেটা কমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অত্যাধিক কাজের চাপ, ক্রমবর্ধমান চাহিদা, পারিবারিক সমস্যা, সময়ের অভাব ইত্যাদির জন্য মানসিক চাপ ব্রেনের ওপর ভীষণ ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমনকি অতিরিক্ত চাপের ফলে উচ্চরক্তচাপ, পক্ষাঘাত এবং হৃৎপিন্ডের আকস্মিক অচলাবস্থা বা স্ট্রোকও হতে পারে। তাই এসব ছোটখাটো অভ্যাস প্রাত্যহিক মেনে চললে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে আর নিরাপদ থাকবেন।
সূত্র: এনটিভি অনলাইন, বণিকবার্তা, www.deshrupantor.com, muradulislam.me ও সমকাল