উন্নত জাতি, সুন্দর-সুখী-সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে চাইলে বক্তিগঠনের কোনো বিকল্প নেই। জাতির প্রত্যেকটি সদস্যকে সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকটি মানুষকেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে , কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে । শারীরিক অসুস্থতা, মানসিকভাবে দুর্বল, জ্ঞানগত ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ, থেকে অলসতা ও আরামপ্রিয়তার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হলে তা মোটেই সুখকর নয় ।
ভোগবাদী-স্বার্থপর চিন্তা নয়, ত্যাগের মানসিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। আপনি চিন্তা করুন, যদি কোনো জাতির সকল মানুষ শিক্ষিত হয়, সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম হয়, হিংসা-বিদ্বেষ-সংকীর্ণতামুক্ত হয়, প্রত্যেকে যদি নিজের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে সচেতন হয় তবে ব্যক্তিকপর্যায়ে উন্নতির প্রচেষ্টার ফলাফল বৃহৎ আকারেই দেখা যাবে। যেমন-১৫ কোটি মানুষ, মাথাপিছু গড়ে সবাই যদি বৎসরে ৩ টি করে গাছ লাগান-৭৫ কোটি বৃক্ষ রোপিত হয়। যারা শিক্ষিত যদি বৎসরে প্রত্যেকে ১ জন করে নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞানদান করে করেন তবে নিরক্ষর আর থাকে না।
প্রতিটি স্বচ্ছল পরিবার যদি বৎসরে একটি অস্বচ্ছল পরিবারকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করেন তবে অনেক পরিবারেই সুখ-শান্তি নিশ্চিত হবে। টাকা হলে হজ্ব করতে হয়, দান-খয়রাত-যাকাত দিতে হয় তাহলে শিক্ষা-জ্ঞান অর্জন করলে নিঃস্বার্থভাবে তা অন্যকে দেয়াটাও কর্তব্য নয় কী ? আপনার সুস্থ থাকাটাই অসুস্থের সেবা করার প্রেরণা হওয়া উচিত।
আচ্ছা-আপনি একান্ত নিজের জন্য কিছু করেন, পরিবারের জন্য কিছু দায়িত্ব পালন করেন, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশির সাথে সংশি¬ষ্ট কর্তব্য পালন করেন। তাহলে যে প্রকৃতি পরিবেশ আপনাকে জীবন বাঁচাতে, বেড়ে উঠতে বাতাস,পানি আলো সরবরাহ করছে তার প্রতি আপনার যে দায়িত্ব সেটাকে কীভাবে অবহেলাভরে উপেক্ষা করবেন?
প্রতিটি ব্যক্তির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, অন্ন, বস্ত্র, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র-সবারই দায়িত্ব রয়েছে। তাই জাতির উন্নয়নে সকল পর্যায় থেকেই কাক্সিক্ষত মানের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সকলেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হবে। এটাই এ সময়ের প্রত্যাশা। ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশের মাধমে, ব্যক্তিগঠন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করণে-
চাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিমিত ঘুম
সারাদিন রাত পড়া মুখস্ত করলে ভালো মনে থাকা সম্ভব নয়। কিছুটা পড়ার পর একটু মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন। সময় মতো বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত জরুরী। সুন্দর ঘুমের জন্য শোবার ঘরটাকে নিস্তব্ধ রাখা, আরামদায়ক তাপমাত্রায় রাখা দরকার। এলকোহল পরিহার ও ধূমপান ত্যাগ করা বড়ই মঙ্গলজনক। বিছানায় যাবার আগে মনকে শান্ত করুন।
ঘুম না হলে প্রথমে চোখের তলায় কালি পড়ে। দীর্ঘদিন হলে ত্বকের রং কালো হয়ে যায়। ঘুম না হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং ব্রুণ হতে পারে। ঘুম কমে যাওয়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তিও কমে যেতে পারে। সৌন্দর্যহানির সাথে সাথে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের মাধ্যমে শরীর বিশ্রাম পায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে, তা সংরক্ষিত হয়।
তাই শোবার ঘরকে সুরক্ষা দিন , দিবানিদ্রা পরিহার করুন, ঘুমের ওষুধ পরিহার করুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন। অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে জাগার অভ্যাস থাকা ভাল। আর হ্যাঁ ঘুমের সময় রাত্রিই, দিন কর্মব্যস্ত থাকার সময়।
খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা কাম্য
স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জীবনটা দুর্বিষহ মনে হয়। সুখী জীবনের প্রথম শর্তই হলো সুস্থ শরীর। সঠিক খাবারই পারে আপনার শক্তি বাড়াতে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং আপনার সঠিক সময়ে সঠিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে। পুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখতে।
দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। দিনে কিছুক্ষণ পরúর অল্প অল্প করে খাবেন, একেবারে বেশি খাবেন না। কর্মব্যস্ত মানুষেরা অনেকেই অত্যন্ত মানসিক চাপের মধ্যে দিন যাপন করেন এবং সেই সাথে ঠিকমতো খাবার গ্রহণ করেন না, এতে করে তাদের কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং ক্লান্তিকর দিন পার করেন। সুস্থ হৃৎপিণ্ডের আদর্শ খাবার হলো প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি এবং খুব কম সম্পৃক্ত চর্বি।
স্রেফ স্বাস্থ্যকর, চমৎকার সুষম খাবার আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে। বাড়ির বাইরে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন । পথে ঘাটে খোলা খাবার খাওয়া উচিৎ নয় ।খাবার গ্রহণের সময় আপনাকে খাবারের বড় চারটে জিনিস গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও পানি ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাতেই কল্যাণ
শরীর, পোশাক-আশাক, বিছানাপত্র সবকিছুই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এতে মনে প্রফুল¬তা আসে এবং রোগ-জীবাণু থেকে বাঁচা যায়। পড়ার টেবিল থেকে শুরু করে বুকসেলফ, আলনা, খাবার রুম, পড়ার রূম, শোবার রুম সহ পুরো বাসাটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলে মন ভাল থাকে, মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়।
অগোছালো জীবন যাপনের বিড়ম্বনা অনেক। প্রয়োজনের সময় দরকারী জিনিস হাতের কাছে পাওয়া যায় না ফলে সময় অপচয় হয়। অপরিচ্ছন্ন, নোংরা পরিবেশ আর বিশৃঙ্খল জীবনাচরণকারী ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। তাই এক্ষেত্রে সচেতন থাকাই উন্নত রুচিবোধ ও সুন্দর মানসিকতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কার্যকর।
প্রয়োজনীয় কাজে আগ্রহী হওয়া
প্রয়োজনীয় কাজে নিজেকে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রথম প্রথম অবশ্যই একটু সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করতে হবে। এটা অভ্যাস হয়ে গেলেই দেখবেন যে আর চেষ্টা করার দরকার হচ্ছে না। ব্যাপারটা আপন আপনিই ঘটে যাবে। মনে রাখার জন্য আগ্রহ আর পরিশ্রম-এ দুটোর ঘাটতি হওয়া একেবারেই চলবে না।
একাগ্রতা হলো মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা। একাগ্রতা অভ্যাসের বিষয়। মানুষ যা পছন্দ করে তাতে সজেই মন দিতে পারে। এর জন্য প্রধানত প্রয়োজন মনোযোগের বিষয়কে মনোগ্রাহী করে তোলা। টিভি দেখা বা গান শোনার ক্ষেত্রে লাগে নিস্ক্রিয় মনোযোগ। কিন্তু বই পড়ার জন্য প্রয়োজন সক্রিয় মস্তিষ্কের ব্যবহার।
স্বাভাবিক মানুষের একাগ্রতা বাড়ানোর উপায়-বহিরাগত বিষয়গুলোকে হতে হবে চমকপ্রদ। অর্ন্তগত বিষয়ের প্রতি ভালবাসা আগ্রহ তৈরি করতে হবে। আগ্রহের বদলে একাগ্রতা আনতে পারে প্রয়োজনবোধও। বড়দের ক্ষেত্রে অনেক সময় একাগ্রতার পেছনে আগ্রহের বদলে প্রয়োজনবোধই অধিক ক্রিয়াশীল।
পড়াশুনায় একাগ্রতা বাড়াতে- লেখার ও ভালবই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। আর কাজের একাগ্রতা বাড়াতে-নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করা, আবেগ দূরে সরিয়ে কাজ করা, উদ্বেগও টেনশন মুক্ত থাকা, কাজের পরিমাণের চেয়ে তার মানকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। একাগ্রতা বাড়ানো একদিনে সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা দরকার।
সফলতা পেতে মনোযোগ বাড়ানো
প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগী হতে হবে। হাজার হাজার প্রত্যক্ষের উপাদান আমাদের দুটি ইন্দ্রিয়ের কাছে আছে। সবগুলো সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখি না। যাদের যেমন মনে, যেমন চোখে দেখি তারা তেমনভাবেই মনের ঘরে জায়গা পায়। মনোযোগ না থাকলে কোন কাজে সফলতা অসম্ভব।
মনোযোগ কেড়ে নেয় টিভি, আরামদায়ক চেয়ার, অন্যলোকজনে ঘর ভর্তি, গান-বাজনা, অন্যদের কথাবার্তা-গল্পগুজব, খিদে, ঝিমুনিভাব, বিরক্তি, পড়াশুনায় অনিচ্ছা, পড়তে ভয় বা উদ্যমের অভাব, পড়তে বসে দিবাস্বপ্ন, ব্যক্তিগত নানা সমস্যা, আর নেতিবাচক মনোভাব, ভয়-বিরক্তি বা যে কোনো বিষয়ে কারো ভালো না লাগা উদ্যমের অভাব, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকা, বাইরের গোলমালে পরিবেশ ,শব্দদূষণ হলে একাগ্রতা থাকে না। তাই এক্ষেত্রে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা বাড়ানো
সারাদিন বসে কাজ করা, কায়িক পরিশ্রম না করা মেদ বাড়ায়। নিয়মিত সকালে ব্যায়াম করলে তা আলস্য কাটিয়ে সজীব হতে সহায়তা করে। ব্যায়াম সৃজনশীলতা এবং মৌলিকতা বাড়াতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শাস্তি নব যৌবন ফিরে পায়। দৈনিক কমপক্ষে আধঘণ্টা হাটা উচিত। কেননা রোগ প্রতিরোধে হাঁটা অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যায়াম খোলা বাতাসে করতে পারলে ভাল। ব্যায়াম ছাড়া খেলাধুলা ও দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা বজায় না থাকলে শুধুমাত্র ঘরে বসে একাগ্রতা বাড়ানোর উপায় অভ্যাস করলে, বিপরীত ফল হতে পারে। নিয়ম মাফিক কাজ করা, সান্ধ্যকালীন চা-কফি পান থেকে বিরত থাকা, প্রতিদিন অন্তত দুবার গোসল করা, ঘরের ভেতর রোদ আসতে দেওয়া প্রয়োজন।
কখনোই দুশ্চিন্তা নয়
দুশ্চিন্তা কোনো কাজের সমাধান করে না বরং নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা ঘটার তাতো ঘটবেই। শুধু দুর্ভাবনা করে কী লাভ। তাই দিনগুলো উদ্বেগাপূর্ণভাবে না কাটিয়ে একটু শান্ত হওয়া প্রয়োজন। দুশ্চিন্তা সমস্যার সমাধান করে না, বাড়ায়। তাই বাস্তববাদী হতে হবে। কোনো প্রকার অন্ধ আবেগকে প্রশয় দিবেন না। জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন।
প্রাণখুলে হাসা
শারীরিক সুস্থতায় হাসি গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন বাস্তবতার তাগিদে আমরা হাসতে ভুলে যাই। কিন্তু সুস্থতার জন্য হাসি অপরিহার্য। শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ দূরে রাখতে বা দূর করতে আমাদের দরকার হাসি-আনন্দে দিন যাপন করা।
বদ অভ্যাস বর্জন করা
গরমের দিনে ধূমপানে শরীর আরও গরম হয়ে উঠে, ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে তাই ধূমপানের বদলে খান একটি করে ভিটামিন সি ট্যাবলেট, সজীবতা বাড়াবে। রোদে বাইরে বেরুলে সানগ্লাস পড়া ভালো। ধূসর, সবুজ, বাদামি রঙের কাচ সূর্যালোককে প্রতিহত করে। দুবেলা দাঁত ব্রাশ করা, প্রতিদিন গোসল করা খুবই ভাল অভ্যাস। আর দাঁতদিয়ে নখ কাটা, অপরিচ্ছন্ন থাকা খুবই খারাপ।
শব্দদূষণের ফলে কানের শ্রবণ শক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায় , শব্দদূষণযুক্ত এলাকাবাসীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং এরা প্রচুর এন্টাসিড ও ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করে। শব্দ দূষণের ফলে কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে অসচেতন থাকার মত মূর্খতা আর নেই।
সুন্দর মনের অধিকারী হউন
যেকোনো শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানানোতেই সুন্দর মনের পরিচয়। মহৎ উদ্দেশ্যে কাজ করার মধ্যেই সত্যিকারের মানসিক প্রশান্তি লাভ সম্ভব। কোনো কাজে সফল হতে হলে সে কাজকে ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ। যার মন সুন্দর, তার চিন্তা সুন্দর। যার চিন্তা সুন্দর তার আচরণ ও কাজকর্ম অবশ্যই সুন্দর হওয়াটাই যৌক্তিক।
মনের চোখ শক্তিশালী না হলে কোনো দেখাই পরিপূর্ণ হয় না। ক্ষুদ্র মনের মানুষ মহৎ ব্যক্তির বৃহৎ আয়োজনেরও ইতিবাচক কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। তাই তো সুন্দর মনের মানুষ ছাড়া সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। কেননা অসুন্দর মন কোনো কিছুতেই সুন্দরের দেখা পায় না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয় , মনের সমৃদ্ধিই শ্রেষ্ঠতম সফলতার নির্ধারক। মনকে সুন্দর বানান, জীবনটা সুন্দর ও স্বার্থক হবে।
সচেতনতা বাড়ানো
সচেতন ব্যক্তির পক্ষেই অতীত অভিজ্ঞতা থেকে উত্তম ও আলোকোজ্জ্বল উচ্চারণ করা সম্ভব। অসচেতন ব্যক্তি কখনোই জাতির বৃহৎ কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পারে না। অসচেতন ব্যক্তির গভীর সংস্পর্শ সচেতন ব্যক্তির বড় বিড়ম্বনা। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সামনে এগিয়ে চলা
যতই বাধা আসুক তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। সমস্যার কাছে আত্মসর্মপনই সমাধানের বড় প্রতিবন্ধকতা, তাই থেমে যাওয়া যাবে না। সমস্যা সৃষ্টি করে সমাধানের প্রচেষ্টা আর সমস্যার জনককে সংকট নিরসনে ত্রাণকর্তার ভূমিকার অবতীর্ণ দেখাটা হাস্যকর।
মনে রাখতে হবে, যেখানে ঝুঁকি বেশি, সম্ভাবনা ও সফলতা সেখানে বেশি। তাই যেহেতু সংকীর্ণ চিন্তা নিয়ে বৃহৎ কিছু করা যায় না। তাই সাফল্য পেতে ব্যর্থতার চাদর উন্মোচনে স্বপ্ন ও সাধনার কোনো বিকল্প নেই ।
বড় স্বপ্ন দেখা
সৃষ্টির আনন্দ অফুরন্ত, সৃষ্টির জয়গান সর্বত্র, চিরঞ্জীব, যদি না তা ধ্বংসাত্মক হয়। লক্ষবিহীন জীবন জীবনই নয়, কাক্সিক্ষত লক্ষে পৌঁছতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। স্বপ্ন বড় না হলে বড় মানুষ হওয়া যায় না। জীবনকে আলোকিত ও বিকশিত করাটা বড় চ্যালেঞ্জিং।
এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণেই বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ। যে স্বপ্ন দেখে না সে প্রাণহীন, আবেগশূন্য। অথচ আবেগে পরিপূর্ণ অন্তরই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে। আবেগের সাথে বিবেকের সমন্বয় সাধনেই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়। আর মহৎ উদ্দেশ্য ক্ষুদ্র প্রয়াসকেও বিশালতার পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে।
পরিকল্পিত জীবন গড়া
অপরিকল্পিত জীবন যাপনে শুধু সাধারণ মানুষই তৃপ্তি পায়। মানুষ তার স্বপ্ন আশার সমান বড়। বিশাল স্বপ্ন বড় কাজে সাফল্য অর্জনে সাহায্য করে। সফলতা অর্জনের কৌশল ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। কিন্তু স্বপ্ন ও পরিকল্পনা ছাড়া প্রকৃত সফল ও বড় মানুষ হওয়া অসম্ভব।
নিঃস্বার্থ মনই সৌভাগ্যবান
জীবনকে সুন্দর ও সফল করতে পরিকল্পিত কর্মতৎপরতা বাঁধার মুখোমুখি হয়। এথেকে উত্তরণে প্রয়োজন সাহসিকতা, ধৈর্য ও পরিশ্রম। আর দ্বন্দ্বমূলক জীবনের অবসান ঘটিয়ে সহজ-সরল জীবন যাপনেই লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
নিঃস্বার্থ সেবাদানের মধ্যদিয়ে আনন্দের স্বাদ প্রাপ্ত আত্মাই সর্বোৎকৃষ্ট। দীর্ঘ আয়ু নয়, শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণিত হয় কর্মফল দ্বারা। সেহেতু সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন পূরণে যে মেধাগুলো কাজে লাগবে নিঃসন্দেহে তারা সৌভাগ্যের অধিকারী।
এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করলে ইতিবাচক ফলাফল অবশ্যম্ভাবী। তাই স্বার্থভুলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিবেচনায় রেখেই বর্তমান প্রজন্মের কাজ করে যাওয়া উচিত।
চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সফলতার চূড়া স্পর্শ করার ক্ষেত্রে জাতিকে উদ্দীপ্ত রাখার প্রধান উপায়। অভিজ্ঞতা থেকে ভাল কিছু গ্রহণের মানসিকতা না থাকলে ভাল কিছু করা যায় না। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ গঠনমূলক উদ্যোগে সাহসী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ। অতৃপ্ত হৃদয় স্রষ্টা কিংবা সৃষ্টি কারোরই প্রিয় হবার যোগ্য নয়। ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলে চলবে না।
নিরুপায় মানুষই মানসিক প্রশান্তি পেতে বিধিলিপির আশ্রয় নেয়। জীবন সফল মানুষেরা মস্তিষ্ক দ্বারাই সিদ্ধান্ত নেয়। যাদের মস্তিষ্ক পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা সদা নিয়ন্ত্রিত তারা স্বকীয়তাবোধ সম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্বের মানদণ্ডে সম্পূর্ণ অনুত্তীর্ণ।
যারা পরনির্ভরশীলতার নতুনধরণ সৃষ্টি করেছে ভাগ্যোন্নয়নের দায়িত্ব তাদের কাঁধেই তুলে দেয়া ভ্রান্ত পদক্ষেপ। যে ব্যক্তিসত্তা সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হন তার উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনঢ়, অবিচল থাকতে হবে এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে হবে।
নিজেকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা
‘যোগ্য একক ব্যক্তির’ পরিপূরক কখনই দশকোটি অযোগ্য ব্যক্তিও হতে পারে না। তীব্র অনভূতিশীল চেতন হৃদয়েই ইতিবাচক পরিবর্তন দ্রুত সম্ভব। অবশ্য প্রতিভাবানের ক্ষিপ্রতা সাধারণ অনেকের কাছেই পাগলামো বৈ কিছুই নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অনুপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে প্রতিভা ধ্বংসের বৈধ প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেকার সৃষ্টি নয়, মানব সম্পদ তৈরির কারখানায় পরিণত হলে জাতির উন্নতি দ্রুত সম্ভব হতো। তা না হওয়া পর্যন্ত, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক নানান কর্মতৎপরতার মাধ্যমে যোগ্য মানুষ গড়তে হবে। কেননা অযোগ্যের জন্য যোগ্য মানুষের অধীনতা অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। যোগ্যতায় অনগ্রসর হয়ে চেতনায় অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে পুরোপুরি কল্যাণ হাসিল অসম্ভব।
যোগ্য মানে শুধু জ্ঞানী নয়। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধীনতা জাতীয় মর্যাদার পরিপন্থি। আর অজ্ঞতার চেয়ে নগ্নতা মোটেই কম বিপজ্জনক নয়। নৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, কিছু মানুষই বিভ্রান্তিকে বৈধতা দিতে ধর্মের আশ্রয় নেয়। অবশ্য, সরল চিন্তার দর্পণে জটিল বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটা অসম্ভব।
জাতিকে উঁচু করতে চাইলে সব দিক থেকেই যোগ্য হতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতি সময়ের দাবীপূরণে ব্যর্থদের প্রান্তিক করে ফেলে। উন্নয়নের নানা কৌশল কিছু সংখ্যক মানুষের জন্য সুখপ্রদ হলেও অধিকাংশের জন্যেই মরণ ফাঁদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় ব্যক্তির উন্নতি মানেই জাতির উন্নতি কী-না সেটি বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। তবে এটি বিতর্কের উর্ধ্বে নিজেকে সময়োপোযোগী করে গড়ে তুলতে না পারলে জাতির বৃহত্তর কল্যানে আত্মেিনয়াগ করে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনের চিন্তা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়।
সুন্দর আচরণ করা
এমন মানুষ আছে যারা একদিকে তাদের সৌন্দর্য দ্বারা আমাদের ইন্দ্রিয়কে মুগ্ধ করে, অন্যদিকে তাদের আলাপচারিতার সাবলীলতা ও মাধুর্য দ্বারা আমাদের চিত্তকে জয় করে নেয়।
একজন মানুষের মধ্যে বেশ কিছু আকর্ষণীয় গুণ থাকতে পারে যার উপস্থিতি সম্পর্কে সে অসচেতন কিংবা যাকে সে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে না। তার সামনে সেসব তুলে ধরা বিশেষ আনন্দদায়ক।
প্রশংসা করা
নির্বাচিত ব্যক্তিটির দেহ ও মনের প্রতি প্রশংসার অনুভূতিকে ভিত্তি করে ভালোবাসা গড়ে ওঠে এবং নিঃসন্দেহে তা প্রগাঢ়তম আনন্দ দেয়। প্রশংসা করুন, লাভবান হবেন।
চাই আশাবাদী মনোভাব
সফলতা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সাফল্যের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সফল হতে চাই লক্ষ্য, চাই উদ্দেশ্য, লক্ষ্যকে রূপান্তরিত করতে হবে তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। সে জন্য চাই স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্ম যাদের রয়েছে আশাবাদী মনোভাব।
যারা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে ভালোবাসে, পৃথিবী যেমন তার চাইতে ভিন্নরকম করতে চায়, তাকে পূর্ণসৃষ্টি করতে চায় নিজের চিন্তা-ভাবনার আলোকে এবং সুযোগ ঘটলে চেষ্টা করে ওই চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবরূপ দিতে । তাদের মন মেজাজের পরিবর্তন নির্ভর করে বর্হিজগতকে জয় করার ক্ষেত্রে তার সাফল্য অথবা ব্যর্থতার ওপর। তাদের স্বাভাবিক প্রবণতায় বাঁধা দেয়া ঠিক নয়।
একটি অবিচলিত স্বভাব, ধৈর্য এবং বিশেষভাবে রসবোধ সুখের অন্বেষণে খুব মূল্যবান গুণাবলি। যেখানে সুখ আছে সেখানে সুখ বিকশিত হয়। চাপ এবং হতাশা অথবা বিষাদের পরিবেশে ভালোবাসা দ্রুত শুকিয়ে যায়। নিরাশাবাদী লোক অন্যেরও ক্ষতির কারণ হয়। তাই আশাবাদী মনোভাব থাকা প্রয়োজন।
বিশ্বাস করা
ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস অথবা জীবনের একটা কর্মের প্রয়োজনীয়তা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে দুজনের বিশ্বাস এক রকম হলে ভালোবাসা বিস্ময়করভাবে সংহত ও শক্তিশালী জয়। সঙ্গী যদি আপনার কোনো বিশ্বাসেরই অংশীদার না হয়, তাহলে তার জন্য একটা স্থায়ী আবেগদীপ্ত অনুভূতি পোষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে আপনি যদি একজন প্রগাঢ় বিশ্বাসী হন।
লেগে থাকা
দুশ্চিন্তা কখনোই নয়। ধৈর্য সহকারে এবং নিরন্তর প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদেরকে চূড়ান্ত উৎকর্ষের কাছাকাছি পৌঁছবার চেষ্টা করে যেতে হবে। দুশ্চিন্তা প্রসূত ভালোবাসা একটা বিশেষ আকারের কাঁটার মতো। আপনি যত সেটা টেনে তুলতে চেষ্টা করেন তত গভীরভাবে সেটা আপনার মাংসের মধ্যে ঢুকে যায়।
বন্ধুকে মূল্যায়ন করা
বন্ধুকে নিজের মতো করে গড়ে নিতে চেষ্টা করা, তার ওপর নিজের রুচি ও ধ্যান-ধারণা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টায় নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ পায়। যাকে দেখে আমরা স্মিত হাসি হাসতে পারি না তাকে আমরা পুরোপুরি ভালোবাসতে পারি না।
বন্ধুত্ব গভীর ভালোবাসার মতো। একটি মহৎ আবেগ। বন্ধুত্বের অর্থ হলো পরিপূর্ণ স্বার্থহীনতা, যে মানুষ তার কাজে লাগবে ভেবে বন্ধু খুঁজে বের করে এবং কাজটি করে দেবার পর তাকে অবহেলা করতে শুরু করে তার সঙ্গে কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায় না।
সহজেই বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট হয় এমন মানুষ কখনো ভালো বন্ধু হতে পারে না। একজন প্রকৃত বন্ধুকে প্রতারিত করার চাইতে একজন কপট বন্ধু দ্বারা নিজে প্রতারিত হওয়াও ভাল।
অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো
যারা বিশ্বকে রূপান্তরিত করার মতো কিছু উদ্ভাবন করতে পারলে সুখী হয়, আইডিয়ার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তারা সহজে অন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করেনা। অভিজ্ঞতা তখনই মূল্যবান হয় যখন তা দুঃখে ও কষ্টের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয় ; যখন দুঃখ-কষ্ট দেহ ও মন দুটোর ওপরই ছাপ রেখে যায়।
জাতিকে নিয়ে ভাবলে জাতির প্রতিটি সদস্যকে নিয়েই ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, প্রান্তিক মানুষের জন্যও পরিকল্পনা থাকতে হবে। শুধু উপরেই দেখা নয়, নীচের দিকেও তাকাতে হবে। প্রত্যেকেই মানুষ, প্রত্যেকেরই খেয়ে পড়ে বাঁচার অধিকার আছে। আর সেই অধিকার পূরণের দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের বা সরকারের নয়।
আপনার অতিরিক্ত পোশাকটি একজন উদাম গায়ের মানুষকে আপনি দিতে পারেন। সবাই ব্যক্তিক পর্যায় থেকে যদি সপ্তাহে ১ জন দুঃখী মানুষের মাথায় হাত বুলায়ে সান্ত্বনা দেয়, চোখের অশ্র“-মুছে দেয়, সম্ভাবনাময় কাউকে বড় হবার স্বপ্ন দেখায় ; রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এতটুকু করতে বিরাট বড় উদ্যোগের প্রয়োজন হবে।
‘আপনি শুরু করুন, অন্যরা ঠিকই বদলাবে’ কিংবা ‘অন্ধকারকে দোষারোপ করার চাইতে একটি মোমবাতি জ্বালানোই উত্তম’ এসব বিবেচনা করে শুধু অন্যের সমালোচনায় সময় ব্যয় না করে নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার মধ্যেই সত্যিকার কল্যাণ নিহিত। তবে হ্যাঁ, অন্যকেও উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে, নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেমালুম ভুলে যাওয়া চলবে না।