বাংলাদেশ থেকে কাজের খোঁজে কিংবা বসবাসের জন্য বিদেশে যারা যান, দেখা গেছে তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ কিংবা কারিগরি ক্ষেত্রে খুব সামান্য জ্ঞান নিয়ে যান। কিন্তু এখন অনেকেই বিদেশে যাবার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা, ড্রাইভিং, রান্নাবান্নাসহ নানা ধরণের কাজ শিখে যান। এদের একটা বড় অংশ নারী, যারা বসবাসের জন্য ভিন দেশে পাড়ি দেন, কিন্তু পরিবারের বোঝা না হয়ে স্বাবলম্বী হবার জন্য রান্না শিখে যান।
রিফাত নওরীন খানের স্নাতকোত্তর শেষ হবার পরপরই বিয়ে হয়ে যায় সুইটজারল্যান্ড প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে। এ বছরের শুরুতে বসবাসের উদ্দেশ্যে তিনিও পাড়ি জমান সেই দেশে। স্বামীর ছুটিতে দেশে এসে তিনি ভর্তি হয়েছেন ঢাকার একটি রান্না শেখার স্কুলে।
উদ্দেশ্য কয়েক ধরণের রান্না পেশাদারভাবে করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া। কিন্তু তার প্রয়োজন কেন পড়লো?
একই স্কুলে কয়েক মাস ধরে রান্না শিখছেন শারমিন খান। কানাডায় স্কিলড মাইগ্রেশন কর্মসূচীর অধীনে স্থায়ী বসবাসের জন্য পাড়ি জমাতে যাচ্ছে কয়েক মাস পরে। যাবার আগে তিনি রান্নাসহ কয়েকটি কাজ শিখে যেতে চান। বাংলাদেশে এখন নারীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, যারা দীর্ঘ সময় বা স্থায়ী বসবাসের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তারা রান্নার মত কাজ শিখে যেতে চান, যাতে সেখানে গিয়ে নিজেরাই কিছু করতে পারেন।
কেউ কেউ আছেন যারা দেশ থেকে রান্না শিখে গেছেন, এখন বিদেশে ছোট পরিসরে হলেও ভালো রোজগার করছেন। এদের একজন ঢাকার আজিমপুরের জুবায়দা বারী। সাত বছর আগে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এবার ছুটিতে দেশে এসে রান্নার স্কুলে ফিরে এসে ভর্তি হয়েছেন নতুন কিছু রান্নার স্বল্পকালীন কোর্সে।
ঢাকায় এই মূহুর্তে কত নারী বিদেশে যাবার প্রস্তুতি হিসেবে রান্না শিখছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে কেবল ঢাকাতেই রান্না শেখার প্রায় ৭০টি স্কুল আছে, যাদের অধিকাংশই সরকারের সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রাপ্ত। এসব স্কুলে বেকিং, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, ইংলিশ, থাই, এবং মোগলাই রান্না শেখানো হয়। এর বাইরে রয়েছে কাবাব, সালাদ, মিষ্টি এসব রান্নার স্বল্পকালীন কোর্সও।
ঢাকায় ৩০ বছর ধরে রান্না শেখাচ্ছে আপনঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর সত্ত্বাধিকারী ও প্রশিক্ষক মুনীরা সুলতানা বলছেন, আপনঘরের মত ছোট স্কুলগুলোতে যারা আসেন তাদের বেশির ভাগই শৌখিন রাঁধুনি, যারা নিজেরা কিছু করতে চান। এর বাইরে পেশাদার রাঁধুনি বা পাচক হিসেবে বিদেশে কাজ করতে চান এমন নারীর সংখ্যাও এখন বাড়ছে বলছেন, টনি’স কালিনারি ইন্সটিটিউটের বেকারি বিভাগের প্রধান ফাতেমা বিনতে নুর।
একটা সময় নিজের ও পরিবারের লোকজনের রসনা বিলাসই ছিল শখের রান্না শেখার উদ্দেশ্য। কিন্তু আজ সেটাই হয়ে উঠছে বিদেশে বাংলাদেশি নারীদের স্বাবলম্বী হবার উপায়। সামনের দিনে এ ধরণের নারীর সংখ্যা যেমন আরো বাড়বে, প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং ব্যবস্থাও আরো বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিবিসি বাংলা