নেতিবাচক মানুষদের স্বভাব হচ্ছে- উপদেশ দিতে পছন্দ করে, নিতে নয়। কথা বেশি বলতে পছন্দ করে, শুনতে নয়। কাজ কম করতে পছন্দ করে। অহেতুক কথা বলতে পছন্দ করে। অন্যের দোষ ধরতে পছন্দ করে। আকাজ বেশি করে। নিষেধ করলে বেশি করে। নিজের পায়ে কুড়াল মারতে পছন্দ করে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভংগ করতে পছন্দ করে।পরের খারাপ শুনলে সমস্যা নেই, কিন্তু নিজের খারাপ শুনলে সমস্যা। সত্যি শুনলে গা জ্বলে।
পরশ্রীকাতরতা
শেখ মুজিবুর রহমান অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আরেকটা হল, আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না,’পরশ্রীকাতরতা’।
পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।’
প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। প্রত্যেকে দ্বিগুণের কাছাকাছি বেতন পেয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত আর নেই। তারপরও দেখি কেউ কেউ অসন্তুষ্ট। তাদের অসন্তোষ যায় না। কেন অসন্তোষ এটা আমার কাছে বোধগম্য না।
পেটে যখন খাবারের টান থাকে, তখন পেটের খাবারের কথা চিন্তা থাকে। সেই পেটের খাবারের চিন্তা আমরা দূর করে দিয়েছি বলে, এখন প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি- এটাই বাঙালির স্বভাব। কোনো কিছুতেই বোধ হয় সুখী করা যায় না, এটাই বোধ হয় আমাদের দুর্ভাগ্য। যতই দেই, কিছু কিছু লোক কেন জানি সুখী হয় না। কেন হয় না সেটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার বিষয়।’
কার্পণ্যতা
বাঙালির অনেক কিছুতে এখনো কার্পণ্যতা দেখা যায়। কার্পণ্য দেখা যায় ভালোবাসতে, প্রশংসা করতে, পড়ালেখায়, হাঁটতে, হাসতে, কথা বলতে, গাছ লাগাতে, সম্মান দিতে, বাগান করতে, সালাম দিতে, আদব দিতে, আগ বাড়িয়ে কথা বলতে, সৌজন্যতা দেখাতে, জানার ক্ষেত্রে, বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, উচ্চাশার ক্ষেত্রে, গ্রহণের ক্ষেত্রে, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে, চিন্তার ক্ষেত্রে, কাজের ক্ষেত্রে এবং হাততালি দিতে। প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে আমাদের কার্পণ্য।
অসহায়ত্ব
ইংরেজ টমাস ব্যাবিংটন মেকলে বাঙালি বলতে বুঝিয়েছিলেন,’বাঙালিরা শারীরিক দিক থেকে মেয়েদের ন্যায় দুর্বল এবং মনের দিক থেকে অসহায়’।
রুগ্নতা
বাঙালি অহমিকাপরায়ণতা প্রবল। রুগ্ন জনগোষ্ঠির আছে দরিদ্রতা, সংকীর্ণ মানসিকতা; কুপমন্ডুকতা।আর্থিক দারিদ্র মানুষকে মানসিকভাবে গরিব করে। অহমিকারোগে ভোগা, নিজেকে বড়ো ভাবার ব্যাধিতে আক্রান্ত অনেকেই।
বাচালতা
বাচাল ও বাকসর্বস্বরা অপ্রয়োজনেও প্রচুর কথা বলে। কথা বলে উঁচু গলায়, উচ্চকণ্ঠে, গলার আওয়াজ চড়ায়ে। প্রচন্ড আওয়াজ সৃষ্টির কারণে আলোচনা পন্ড হয়ে যায়। আলাপে উঁচু কন্ঠ যুক্তিপরায়ণ ব’লে গণ্য হয়। কথায় ভুল শব্দ ব্যবহার, বাক্য সম্পুর্ন না করা, অযুক্তি পেশ করা, ফিশফিশ স্বরে চক্রান্ত করা, এক কথা বলে অন্য কথা বুঝানোর প্রবণতা দেখা যায়। দৃষ্টিকটু কাণ্ড ঘটাতে পারে, বলতে পারে অশ্রাব্য কথা।
বাঙালি ‘যত কয় তত নয়’। বাকসর্বস্ব বাঙালির চরিত্র নিয়ে এ-জাতির প্রধান প্রধান কবিবৃন্দও কম বাক্য ব্যয় করেন নি। এমন কি দেশজননীকে কবি এই বলে অভিযুক্ত করেছেন যে, “সাতকোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।”
অভদ্রতা
স্বভাবত অভদ্ররা সুবিধা আদায়ের সময় অনুনয় বিনয়ের শেষ সীমায় যেতে পারে। প্রতিটি অচেনা মানুষকে নিজের থেকে ছোটো মনে করা, আগন্তুক মাত্রকেই ভিখিরি মনে করা, আগন্তুকের দিকে মুখ তুলে না তাকানো বা মনোযোগ না দেয়া, নানা অকাজে মন দেয়া, অপ্রয়োজনে টেলিফোন করা, পাশের টেবিলের কাউকে ডেকে বাজে কথা বলা, অন্যকে অপমান করে নিজেকে সম্মানিত করা এবং সামনে কোনো আসন থাকলেও আগন্তুককে বসতে না বলা স্বভাব যেন! সৌজন্য ভীতি বা স্বার্থচেতনাপ্রসূতরা সামাজিকভাবে ভদ্র ও সৌজন্যপরায়ণ নয়।
সন্দেহ প্রবণতা
চিন্তা-চেতনা, মনে-মননে, কর্মে ও শ্রেষ্ঠত্বে পিছনে পড়ে থাকার কার- সকল কাজে সন্দেহ খোঁজা। অহেতুক সন্দেহ, অযথা জটিলতা বাড়ায়। মন-মানসিকতা আর কর্মে বড় হতে পারে খুব কম জনই।
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন-‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’
ভীরুতা
শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেন, যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে?
বিশ্বাসঘাতকতা
উইলিবান্ট বলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।’
আড্ডাবাজি
হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, বাঙালিকে একটি একাডেমি দাও, বাঙালি সেটিকে গোয়ালে পরিণত করবে।
টাকার লোভী
হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, আমার প্রতিভাকে প্রশংসা করলেও ওই পুজিঁপতি গাধাটাকেই আসলে পছন্দ করো তুমি।
বেপরোয়া
হুমায়ূন আহমেদ বলেন, বাঙ্গালীকে বেশি প্রশংসা করতে নেই। প্রশংসা করলেই বাঙালি এক লাফে আকাশে উঠে যায়। আকাশে উঠে গেলেও ক্ষতি ছিল না- আকাশ থেকে থুথু ফেলা শুরু করে।
কাণ্ডজ্ঞানহীনতা
হুমায়ূন আহমেদ বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমাদের যখন গুছিয়ে কথা বলা দরকার তখন টেলিগ্রাফের ভাষায় কথা বলি। আর যখন সার সংক্ষেপ বলা দরকার তখন পাঁচ শ পৃষ্ঠার উপন্যাস শুরু করি।
নরমের যম
হুমায়ূন আহমেদ বলেন, বাঙালি গরমের ভক্ত নরমের যম। একটু নরম দেখলেই উপায় নেই- ঝাঁপ দিয়ে পড়বে। তারা যত ঝাঁপ দেবে পুলিশ তত বিপদে পড়বে। বাঙালি জাতির যত রাগ খাকি পোশাকের দিকে। পুলিশের দিকে ঢিল মারতে পারলে তারা আর কিছু চায় না।
অসম্মান করা
হুমায়ূন আহমেদ বলেন, আমাদের মধ্যে সম্মান করা এবং অসম্মান করার দুটি প্রবণতাই প্রবলভাবে আছে। কাউকে পায়ের নিচে চেপে ধরতে আমাদের ভালো লাগে, আবার মাথায় নিয়ে নাচানাচি করতেও ভালো লাগে।
দালালি
হুমায়ূন আজাদ বলেন, এ-বদ্বীপে দালালি ছাড়া ফুলও ফোটে না, মেঘও নামে না।
সুবিধাবাদী
হুমায়ূন আজাদ বলেন, বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, আর সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
চরিত্রহীন
হুমায়ূন আজাদ বলেন, আমাদের অধিকাংশের চরিত্র এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল গালাগাল করা হচ্ছে।
সংকীর্ণতা
কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে- বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে।’ এদের উদার প্রেম নেই, বৃহৎ ভাব নেই, প্রবল মানসিক বীর্য নেই, অন্যকে বুঝিবার ইচ্ছে নেই, সম্মান রক্ষা করবার আয়োজন নেই, প্রাণসঞ্চার করবার উদ্যম নাই । আছে আলস্য, জড়তা, বিকৃত অর্থলিপ্সা।
অসৌজন্যতা
হুমায়ূন আজাদ বলেন, বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কী চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুকমাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’। বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।
সিংহাসনকে শ্রদ্ধা
ভারতে মোগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা জহির-উদ-দীন মুহাম্মদ বাবর তার আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’য় লিখেছেন—‘বাংলাদেশে অদ্ভুত রীতি আছে, এখানে জনগণ সিংহাসনকে শ্রদ্ধা করে। রাজাকে হত্যা করে যেকোনও ব্যক্তি সিংহাসনে বসুক না কেন, তাকে সকলে রাজা বলে স্বীকার করে।’
বিদেশিদের সম্মান করা
ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ বনাম নবাব বাহিনীর যুদ্ধে জনতা নীরব দর্শক হিসেবে ইংরেজদের সিংহাসন দখলকে উপভোগ করেছে।
ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ লিখেছেন: ‘২৯ জুন, তিনি ২০০ ইউরোপীয় ও ৫০০ দেশীয় সৈন্য নিয়ে বিজয়গর্বে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেন। এই উপলক্ষে লাখো দর্শক উপস্থিত হয়। তারা ইচ্ছা করলে শুধু লাঠি ও ঢিলা দিয়েই ইউরোপীয় সৈন্যদের মেরে ফেলতে পারতো। কিন্তু বাঙালিরা তা করেনি।’
লজ্জাহীনতা
বাঙালির লজ্জাবোধ কমেছে সমান তালে। পাকিস্তান আমলের শেষদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’-এর লেখক ড. আবদুল হাই ট্রেনে কাটা পড়ে মরেছিলেন। তার বিরুদ্ধে নাকি ডিপার্টমেন্টের একটি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এবং সে কারণে লজ্জায়-অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে কতই বা হবে সেই টাকার পরিমাণ!
অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির স্টিকার কপালে সাঁটানোরা কী সুন্দর ঘুরে বেড়াচ্ছেন! চারদিকে যে অনাচার-অবিচার দেখে চলেছি আমরা, লজ্জাবোধের অভাব তার অন্যতম বড় কারণ। আজকাল পাত্রের বেতন নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ, জানতে চায় হবু জামাই বসে কোন্ চেয়ারে। বেতন আবার কী! শুধু ঘুষ নয়, হত্যা-ধর্ষণ-জালিয়াতি-প্রতারণা-নকলবাজি, এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশু ধর্ষণ- কোনো অভিযোগেই লজ্জিত নয় অভিযুক্ত অথবা তার নিকটাত্মীয়রা।
বদরাগী
বাংলাদেশের সর্বত্রই এখন রাগের ছড়াছড়ি। কাজের চাপ বাড়লে নাকি রাগও বাড়ে। হবে হয়তো। কাজের চাপ বেড়েছে বলেই না জিডিপি বেড়ে এখন ৭.৩ শতাংশ। রাগও বেড়েছে সমান তালে। বড় কর্তা রাগ দেখাচ্ছেন মাঝারি কর্তাকে, মাঝারি ছোটকর্তাকে। পিওন যে পিওন, সে-ও রেগে উঠছে ঝাড়–দারের ওপর।
নিয়ম লঙ্ঘন
ফুট ওভারব্রিজ থাকতেও বাঁশ আড়াআড়ি করে দিয়ে ডিভাইডার বন্ধ রাখলেও নিচু হয়ে, চিত হয়ে, বিভিন্ন কসরৎ করে, সেখান দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন কিছু বিবেকহীন মানুষ! এদের সিংহভাগ তরুণ, যারা কোনো অজুহাতও দেখাতে পারবেন না। আলোর নিচেই অন্ধকার। এদের স্বভাব মরলেও যাবে না!’
ভোজনরসিক
বাঙালি হল ভোজনরসিক। আবার বাঙালিকে মাছে-ভাতে বাঙালিও বলা হয়। বাঙালির সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও আড্ডা যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কোনও বিয়ে বাড়ি হোক বা কোনও শোকের বাড়ি বা কোনও পার্টি সবেতেই জমিয়ে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার নামই হল বাঙালি। মিষ্টি খাওয়া বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাঙালির সুসংবাদে মিষ্টি, আতিথ্যে মিষ্টি, ভদ্রতায় মিষ্টি, বিয়েশাদি- এমনকি কুলখানি বা মিলাদেও মিষ্টির ছড়াছড়ি। বাঙালির মন ভরাতে কিন্তু ভাত-মাছ-ভর্তা-ভাজির সাথে কোনো আপোষ নাই!
উচ্ছ্বাসে বাড়াবাড়ি
কৃতী মানুষদের সুকৃতির গুণগান গেয়েই নিজেদের দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেতে এবং মানুষ হওয়ার দায় থেকে মুক্তি পেতে চাই। বাড়াবাড়ি রকমের উচ্ছ্বাসের বন্যায় কৃতী মানুষদের ভাসিয়ে দিই। তাদের সম্পর্কে এমন স্তুতিবাক্য উচ্চারণ করি যাতে তারা ‘অতিমানুষ’ হয়ে যান।
ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থিত সেই অতিমানুষের মূর্তি বানিয়ে তাঁর পূজা করা যায়। এ-রকম অতিমানুষের পূজো করে ও প্রশস্তি গেয়েই স্বস্তি পাই। সাধনায় মানুষ হয়ে উঠেছেন যারা, তাদের পথ ধরে হেঁটে নিজেরাও মানুষ হয়ে উঠবো—এমন কোনো সাধ অন্তরে অন্তরে পোষণ করি না।
ঈর্ষাকাতরতা
যারা মানুষ হয়েছেন তাদের প্রতি দারুণ ঈর্ষা যারা মানুষ হতে পারেনি তাদের। সীমাহীন ঈর্ষা তাদরকে টেনে নামিয়ে সমান করে নিতে চান। পারলে আরও নীচু বানিয়ে ফেলতে চান। কৃতী মানুষের কৃতিকে অস্বীকার করা, সততাকে অক্ষমতা, মহত্ত্বকে দুর্বলতা ও আত্মত্যাগকে মতলববাজি বলে প্রচার করা হয়। মানুষের ছিদ্রান্বেষণে আনন্দ, চরিত্রহননে অপার উৎসাহ।
কাজ শেষ না করা
কবিগুরু অন্যত্র বলেছেন, ‘আমরা (বাঙালিরা) আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি, তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি, তাহা পালন করি না; ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা করিতে পারি, তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; পরের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।’
পথ হারানো
অধুনা নীরদ চৌধুরীর আত্মঘাতী বাঙালি শীর্ষক বইটির এক জায়গায় লিখেছেন, ‘বাঙালির বাঙালি বলিয়া যত দিনের ইতিহাস আছে তাহার সবটুকু জুড়িয়া ভালো বাঙালি শুধু আপনভোলা বাঙালির মধ্যেই দেখা দিয়াছে। বাকি যাহারা ধন, মান, ঐহিক ক্ষমতা বা প্রতিষ্ঠা চাহিয়াছে, তাহাদের বাসনা যখন শক্তির অল্পতা বা সমাজের ভয়ের দ্বারা সংযত থাকে নাই তখন তাহারা নামে চোর-ডাকাত না হইলেও চরিত্র ধর্মে তাহাই হইয়াছে।’
প্রতারণা
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ প্রশাসনের ইস্পাত-কাঠামোর স্থপতি লর্ড মেকলে, ‘বাঘের কাছে থাবা যা, মৌমাছির কাছে হুল যা, মহিষের কাছে শিং যা, মহিলাদের কাছে সৌন্দর্য যা, একজন বাঙালির কাছে প্রতারণাও তা।’
রসবোধ
বাঙালির রসবোধও অত্যন্ত প্রখর। পাশ্চাত্যে ওরা হাসে ভরাপেটে, যে কারণে ওদের ‘আফটার-ডিনার স্পিচ’গুলো থাকে হাস্যরসে ভরপুর। বাঙালি হাসে খালি পেটেও, যে কারণে বলা হয় যে বাঙালি মরলেও নাকি তার দাঁত বের করা হাসি ফুরোয় না। বাঙালিই বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বী। সে সাবানের মধ্যে যেটি নিকৃষ্টতম সেটির নাম দিয়েছে ‘বাংলা সাবান’, মদের মধ্যে যেটি নিকৃষ্টতম সেটির নাম দিয়েছে ‘বাংলা মদ’।