বাংলাদেশে সুপার মার্কেট শিল্প

আগোরা, স্বপ্ন এবং মীনাবাজার¬-এ তিনটি প্রধান সুপার মার্কেট বাংলাদেশে সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০১ সালে আগোরা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে সুপার মার্কেট শিল্পের পথচলা শুরু হয়। ২০০২ সালে মীনা বাজার প্রতিষ্ঠা হয় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের দেশে ২৫টি সুপার মার্কেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-আলমাস, ট্রাস্ট ফ্যামেলি নিডস, সিএসডি, নন্দন, এস.এস. স্টোর, প্রিন্স-বাজার।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী যেমনঃ- মাছ, মাংস, শাক-সবজি, সাবান, খেলনা, শুষ্ক খাবার হতে শুরু করে সিরামিক, শিশুর খাদ্য এবং ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদি সুপার মার্কেটে সহজলভ্য। গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থায় যা ক্রয় করতে বিভিন্ন দোকানে যেতে হয়। সুপার মার্কেট হচ্ছে এমন এক ধরনের মার্কেট যেখানে বৃহৎ পরিসরে একই ছাদের নিচে বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন পণ্যের সমাহার লক্ষ্য করা যায়।

আগোরা

আগোরা, বাংলাদেশের সুপার মার্কেট জগতের পথ প্রদর্শক, প্রতিষ্ঠা করেছেন মোঃ এম. হাসান আলী ২০০১ সালে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সুপার মার্কেটটি উত্তরোত্তর উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহর ঢাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দিতে আগোরা একটি মাল্টি সুপার মার্কেট হিসেবে আত্মনিয়োগ করেছে।

বর্তমানে আগোরা বাংলাদেশের অন্যান্য মেট্রো শহরগুলোতে নিজেদের কার্যক্রমের প্রসার ঘটিয়েছে। গ্রাহকের কাছে ন্যায্য মূল্যে ভালমানের পণ্যের নিশ্চয়তা প্রদান আগোরার মূল উদ্দেশ্য। আগোরা প্রধানত খাদ্য পণ্যের বিশেষ করে বিভিন্ন মাছ হতে শুরু করে মাংস, শাক-সবজি, ফল, বেকারী, দুগ্ধজাত, গৃহস্থালী ও অন্যান্য মুদি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে।

পণ্যের মান এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টি-এ দুয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে আগোরা তার বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্রেশ পণ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করতে আগোরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরবরাহকারীদের তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করছে। গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আগোরা বিশাল পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে যা গ্রাহকদের সুবিধা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় বা বাজার করার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে।

গ্রাহককে সর্বোচ্চ সুবিধা এবং পণ্যের সঠিক মান নিশ্চিত করতে আগোরা প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে।আগোরার স্টোর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বিতরণ কেন্দ্র ভিত্তিক। বিভিন্ন গ্রামীণ ফার্ম যেমনঃ শাক-সবজি, পোল্ট্রি ফার্ম, মাশরুম, দুগ্ধজাতপণ্যসহ অন্যান্য ফার্মগুলোর সাথে আগোরা চুক্তিবদ্ধ থাকে- যারা প্রতিদিন, দিন অন্তর, সপ্তাহ অন্তর কিংবা প্রতি মাসে পণ্য সরবরাহ করে থাকে।

বিভিন্ন ফার্ম থেকে পণ্য প্রথমে বিতরণ কেন্দ্রে আসে সেখান থেকে পরে বিভিন্ন আউটলেটে প্রেরণ করা হয়। কৃষিজাত পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য গৃহস্থালী ও সাজসজ্জার উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্কয়ার, কেয়া, ইউনিলিভার বা কোহিনূর কেমিক্যালসসহ বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আগোরা চুক্তিবদ্ধ। এক্ষেত্রেও প্রথমে পণ্য গুদামে পাঠানো হয় এবং পরে গুদাম থেকে বিভিন্ন আউটলেটে পাঠানো হয়। ফলে এর মধ্যবর্তী কোন প্রতিষ্ঠান বা মধ্যপন্থী নেই।

আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে আগোরা দু’ভাবে পণ্য সংগ্রহ করে থাকেঃ (ক) কোন মধ্যপন্থী ছাড়াই সরাসরি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য আমদানি অথবা (খ) আমদানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে। আগোরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। যেমনঃ পচনশীল দ্রব্যের দাম নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি।

প্রতিটি আউটলেটে প্রয়োজনের কম লোকবল থাকাতে গ্রাহকের পণ্য ক্রয়ে অধিক সময় ব্যয় করতে হয়। পণ্যের ভালমান, স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশ, ছাড় প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক আউটলেট স্থাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করে বিশ্বপ্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আগোরাকে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

মীনাবাজার

বাংলাদেশের সুপার মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুপার মার্কেট মীনাবাজার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। অনুকূল পরিবেশে ওয়েবভিত্তিক শপিংয়ের সুবিধাসহ এটি বাংলাদেশের বৃহৎ সুপার মার্কেটগুলির একটি যা ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ন্যায্য মূল্যে বিশাল পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করাই মীনাবাজারের অন্যতম্য উদ্দেশ্য। গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় রেখে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে মীনাবাজার তার কার্যক্রমের ব্যবস্থা প্রসারিত করে চলেছে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সুপার মার্কেট শিল্পে বৈচিত্র্য আনয়নে মীনাবাজার বেশ ভাল জায়গা দখল করে নিয়েছে।ব্যবসায়িক সংঘটনের ক্ষেত্রে নিয়মিত জরিপ কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করে গ্রাহকের সন্তুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজার তার পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি মাথায় রেখে কাজ করে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরিবর্তন পরিবর্ধন করার মাধ্যমে গ্রাহককে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে।

স্বপ্ন

স্বপ্ন, এসিআই লজিস্টিকের একটি বিশেষায়িত ইউনিট এবং বাংলাদেশের বড় সুপার মার্কেটের অন্যতম। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বপ্ন এখন আগোরা এবং মীনাবাজারের পাশাপশি অবস্থান করছে সুপার মার্কেট শিল্পে। আলাদা আলাদা ভাগে পণ্যের জোগান এবং অধিক মজুদ পণ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে স্বপ্ন অন্যতম।

ফ্রেশ মাছ-মাংসসহ ফরমালিন মুক্ত পণ্যের সরবরাহে স্বপ্ন সকলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও কৌশলগত বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সুপার মার্কেট শিল্পে স্বপ্ন একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছে।প্রতিনিয়ত জরিপের মাধ্যমে চাহিদাকৃত পণ্যের যোগান দিতে স্বপ্ন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন আউটলেটগুলোর গ্রাহকের চাহিদা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিপোর্ট করে থাকে। প্রধান কার্যালয় সে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহের চেষ্টা করে থাকে তাদের সকল আউটলেটগুলোতে। তাজা শাক-সবজি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে তাদের সাধারণত সরাসরি স্থানীয় নির্বাচিত কৃষকের সাথে চুক্তি থাকে।

এর ফলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পেয়ে থাকে এবং ভাল মানের পণ্য সরবরাহে সচেষ্ট থাকে। স্বপ্ন সাধারণত কিছু পণ্য সরাসরি বাইরে থেকে আমদানি করে থাকে। তবে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় স্বপ্ন স্থানীয় বাজার সাধারণত কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি বাজারের উপর নির্ভর করে থাকে।

প্রিন্স বাজার

২০০৪ সালে মিরপুর আউটলেটের মাধ্যমে প্রিন্স বাজারের যাত্রা। এই সুপার শপের আয়তন ২০০০ বর্গফুট। মিরপুর ছাড়াও মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির বিপরীত পাশে এই সুপার শপের একটি চেইন শপ রয়েছে।

সপ্তাহের সাতদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। সার্বক্ষনিক শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সহজ যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও মান সম্পন্ন পণ্য প্রাপ্তির প্রত্যাশায় মিরপুর-১ ও মিরপুর-২ এলাকার অধিবাসীগণ তাদের সাপ্তাহিক বা মাসিক বাজার এখান থেকে সেরে থাকেন।

মিরপুর-১ নং সনি সিনেমা হল থেকে মিরপুর-১ নং ওভারব্রীজের দিকে ২০০ গজ সামনে গিয়ে হাতের বাম পাশে বাণিজ্যিক প্লট- ৬ এন্ড ১১, ব্লক- বি, প্রধান সড়কে বাটার শোরুমের সাথেই প্যারাডাইজ প্লাজার নিচ তলাতে প্রিন্স বাজারের অবস্থান।

প্রিন্স বাজারের প্রধান এই শাখাতে কসমেটিকস, শোপিস ফ্যান্সি আইটেম, গ্রোসারী সামগ্রী, স্টেশনারী, বেবীফুড, ক্রোকারিজ, ড্রিংকস, ড্রাইফুড, টয়েজ, ফাষ্টফুড, সুইটমিট, গার্মেন্টস, ড্রিংকস, হারবাল পণ্য, ফ্রোজেন ফুডস, শাক-সবজি, ফলমূল, নিজস্ব উৎপাদিত চাল, আটা, মাংস (গরু, খাসি, মুরগী, কবুতর) এবং রুই, চিংড়ি, কাতলা, ইলিশ, রূপচাঁদা ছাড়াও দেশী প্রজাতির ছোট মাছও পাওয়া যায়। এখানে তাদের ও অন্যান্য খাবার পাওয়া যায়।

নিত্য পণ্য হচ্ছে- হাড়যুক্ত গরুর মাংস, গরুর মগজ, গরুর পায়া, গরুর কলিজা, খাশির মাংস, খাশির আস্ত মাথা (প্রতি পিছ), দেশী মুরগী, ফার্মের মুরগী, মুরগীর গিলা কলিজা, দেশী রুই (মাঝারী), দেশী কাতলা, দেশী চিতল, রূপচাঁদা, ইলিশ মাছ (ছোট সাইজ), ইলিশ মাছ (মাঝারী সাইজ), ইলিশ মাছ (বড় সাইজ), দেশী ছোট মাছ। ক্রেতার চাহিদা মত প্রিন্স বাজারে মাছ-মাংস কেটে দেওয়া হয়।

পণ্যসামগ্রীর মূল্য পরিশোধের জন্য প্রিন্স বাজারের প্রধান শাখার প্রবেশ মুখে পাশাপাশি মোট ৬টি ক্যাশ কাউন্টার রয়েছে। এই কাউন্টারগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ক্যাশমেশিন, হিসেব করার জন্য কম্পিউটার, প্রিন্টার, বারকোড রিডার এবং পেমেন্ট কার্ড রিডার রয়েছে। এখানে ভিসা কার্ড, মাষ্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডসহ দেশের সকল ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও বিল পরিশোধ করা যায়।

প্রিন্স বাজারে সেলফ অনুযায়ী দুই শিফটে মোট ৪০ জন গাইড দায়িত্ব পালন করে। পণ্য সম্পর্কে ক্রেতার প্রশ্নের উত্তর ও তা খুঁজে পেতে সাহায্য করে গাইডগণ।এই শাখাতে পণ্য পরিবহনের জন্য ক্যাশ কাউন্টারের পাশেই ১৫০ টি ট্রলি সারিবদ্ধভাবে রক্ষিত থাকে। এছাড়া এখানে টয়লেট, ফায়ার এক্সিট ওয়ে এবং সিকিউরিটি দরজা রয়েছে। তবে এখানে কোন কিডস জোন নেই। এই শাখার গ্যারেজে প্রায় ৩৮-৪০ টি গাড়ী বিনা চার্জে পার্কিং করা যায়।

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *