পেশাজীবী, পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনীতি

পেশাজীবী হচ্ছেন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সেসব ব্যক্তি যারা টাকার বিনিময়ে তাদের সেবা বিক্রয় বা প্রদান করে থাকে। এটি কোন চ্যারিটি বা বদান্যতা নয়। প্রকৃত পেশাজীবীদের থাকে- নিয়ামানুবর্তিতা  বা সময়ানুবর্তিতা, সততা, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা-নিষ্ঠা ও একাগ্রতা, কাজের সামঞ্জস্যতা এবং নিরপেক্ষতা, কথা ও কাজের মধ্যে সমন্বয় ও নীতি মেনে চলা ইত্যাদি। যে পেশা যত বেশি সংবেদনশীল, সে পেশার জন্য প্রয়োজন ততবেশি দক্ষতা।

পেশাজীবীর দায়িত্ব-কর্তব্য

প্রত্যেক পেশাজীবীর প্রথম এবং প্রধান করণীয় হচ্ছে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। পেশাজীবীদের কাজে-কর্তব্যে অবহেলা, অসাধু পন্থা অবলম্বন, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অসাবধানতা বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে জনসাধারণ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন: ডাক্তারের ভুল রোগ নির্নয় বা প্রেসক্রিপশন দেয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু বা শারীরিক অনিষ্টতা।

আইনজীবীর ভুল পরামর্শের কারণে মক্কেলের আর্থিক ক্ষতি সাধন। ইঞ্জিনিয়ারের ভুল নকশার কারণে বিল্ডিং ধসে বা বিল্ডিংয়ে এ চিড় ধরা ইত্যাদি। প্রকৃত পেশাদার সবসময় অধিক সচেতন এবং সতর্ক। পেশাজীবীদের নীতি-নৈতিকতা থাকা দরকার৷ পেশাজীবী নীতি-নৈতিকতার বাইরে গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিবেন না৷ পেশাজীবীরা পেশার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন এবং কর্মনিষ্ঠ হবেন। পেশাজীবীরা কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলে নিরলস কাজ করে।

পেশাজীবীদের অবদান

সমাজে বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী রয়েছেন। সমাজ বিনির্মাণে, দেশের উন্নয়নে ও সেবামূলক কাজে পেশাজীবীদের অবদান অনস্বীকার্য। সমাজের চাহিদা পূরণের জন্যই বিভিন্ন পেশা বিকশিত হয়েছে। কিছু কিছু পেশাজীবী সমাজে বিশেষ মর্যাদা পান, কিছু কিছু পেশাজীবী বিশেষ মর্যাদা পান না। কিছু কিছু পেশাজীবী সমাজে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে, কিছু কিছু পেশাজীবীর সমাজে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব নেই।

প্রভাব নেই বলেই গুরুত্ব নেই কিংবা গুরুত্ব নেই বলেই প্রভাব নেই- এমনটি বলা সঠিক নয়। অতিব গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীও সমাজে প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন বিবেচিত হতে পারে। আবার একই পেশার লোকও সমাজে ভিন্নমাত্রার অবদান রাখেন, এটা নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর। সমাজে নানাবিধ চাহিদা মেটানোর স্বার্থেই বিশেষ ও জটিল ধরনের পেশার প্রয়োজন হয়। পেশাজীবীদের মধ্যে কিছু মানুষ তৈরি হন, যারা সমাজকে আলোকিত করেন, সচেতনতা ছড়ান।

যেকোনো সভ্য সমাজে সব পেশাজীবীদের অবদান আছে। সব পেশার মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সবাই একসঙ্গে এবং সফলভাবে কাজ করলেই সমাজ সফল হয়। এখানে কোনো পেশাই তুচ্ছ নয়। আপাতদৃষ্টিতে যে পেশাটিকে তুচ্ছ মনে হয়, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ; কারণ সেই কাজটির ওপরও সমাজসেবা নির্ভরশীল থাকে। সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সব পেশাজীবী গুরুত্বপূর্ণ।

সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সমাজের সব পেশার মানুষের মধ্যে আন্তযোগাযোগ ফলপ্রসূ। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটা ঠিক থাকে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ায়। সম্মিলিত সহযোগিতায় বড় সমস্যারও সমাধান সহজ হয়। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজ বিনির্মাণে সব পেশার মানুষকে সততার সঙ্গে দায়িত্বশীল এবং একই সঙ্গে মর্যাদাবান করা জরুরি।

পেশাজীবী সংগঠন

একজনের পছন্দের পেশা আরেকজনের অপছন্দের হতে পারে; তবে একাধিক পেশাজীবীদের নিয়ে কাজ করতে গেলে এমনভাবে কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে সবার সম্মান-স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত হয়। এমন কোনো পেশা নেই, যাদের পেশাজীবী সংগঠন নেই৷

প্রত্যেক পেশাজীবীর পৃথক সংগঠন আছে। তারা তাদের দাবি আদায়ে মাঠে নেমে পড়েন৷ সেই দাবি ন্যায্য হোক আর অন্যায্য হোক, তারা মাঠে নামতে পারেন কিনা, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন কিনা অথবা রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিতে পারেন কিনা, এসব বিবেচনা তারা করেন না৷

পেশাজীবীরা তাদের পেশার স্বার্থে, পেশার কল্যাণে এবং নিজেদের কল্যাণে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠন করেন। এ ধরনের সংগঠনগুলো সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। পেশাজীবী সংগঠনগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না। পেশাজীবী সংগঠনগুলো সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় সংগঠন হিসেবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।

পেশাজীবী সংগঠনগুলো কী করে

পেশাজীবী সংগঠনগুলো দেশের সার্বিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং জনগণের সেবার স্বার্থে গবেষণা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে। সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

অনেক পেশাজীবীর অনেক পেশাজীবী শ্রেণির তুলনায় স্বতন্ত্র। সব পেশাজীবী গোষ্ঠীর স্বার্থ এক না৷ এমনকি কোনো গ্রুপ যখন অনৈতিক- অরাজকতামূলক কাজ করে তখন তাতে ঐ গ্রুপেরও নীতিবান সদস্যের সমর্থন থাকে না৷ সংগঠনকে পুঁজি করে অর্থলোভী কিছু মানুষ সংগঠনকে নিজ স্বার্থের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে, সকল প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দেয়৷

অনেকে সকল পর্যায়ে সর্ব সাধারণের মধ্যে পারস্পরিক একতা, সৌহার্দ্য, সম্প্রিতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মীতামূলক সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের সার্বজনীন কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হয়। দুঃস্থ, দরিদ্র ও বেকার লোকদের আর্থিক ও সেবামূলক সহযোগিতা প্রদান করে। জেলার সন্তান, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করে। গরীব অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি ও আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করে। আর্তপীড়িত, এতিম, বৃদ্ধ ও অসহায় লোকদের সাহায্যের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করে।

বেকার যুবক, যুবতীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও তাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধরণের সাহায্যে এগিয়ে আসা তথা মানবতার সেবায় ব্রতী হয়।
ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তির সঠিক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট হয়। সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ক্রীড়া ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুচিকিৎসার জন্য ফ্রি ক্লিনিকের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

রাজনৈতিক দলে পেশাজীবীরা

পেশাজীবীরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷ তবে পেশাজীবীদের রাজনীতি করার অধিকার কতটুকু আছে, সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুযোগ আছে কিনা, কতটা আছে, সেই নৈতিকতা বা বিবেচনাবোধ সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের পেশাজীবীরাও দলীয় রাজনীতির সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে গেছেন৷ এর ফলে পেশাজীবীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা বা অন্যায্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে না৷

পেশাজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন,অপমানিত-অসম্মানিত হচ্ছেন, কিন্তু তাদের সংগঠন নীরব থাকছে৷ পেশাজীবীদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না৷ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না৷  পেশাজীবী নেতা আর দলীয় রাজনৈতিক নেতার মধ্যে জনগণ কোনো পার্থক্য দেখছেন না৷ বাংলাদেশের সব পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য৷ আর পেশাহীন পেশাজীবীরা পেশার ক্ষতেই করে বেশি।

পেশাজীবী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বকীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। প্রায় পেশাজীবী সংগঠন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হয়ে কাজ করছে, নেতারা রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। পেশার প্রতি বিশ্বস্ত ও নিষ্ঠাবান থাকছে না। এভাবেই পেশাজীবী সংগঠনগুলো তাদের বৈশিষ্ট্য এবং স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। সংগঠনের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।

দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্য পেশাজীবীদের সংকটের অন্যতম কারণ। এর ফলে পেশাজীবী সংগঠনগুলো থেকে ভোটের জৌলুশ নির্বাসিত। পেশাজীবী সংগঠনগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে অক্ষম, শক্তি-সামর্থ্যও দলের অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। নেতা নির্বাচনে ভোট উধাও হয়ে যাওয়া, ভোটাভুটির মর্যাদাহানি, জাল ভোটের বিস্তার ও প্রার্থী যাচাই–বাছাইয়ে রুগ্ন প্রবণতার ফলে পেশাজীবী সংগঠনেও দূষণ প্রকট। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়া ব্যক্তিদের মনোনয়নও আসে বাইরে থেকে। একটি সংগঠনের নেতা কে হবেন তা রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্চপর্যায়ে ঠিক হয়।

পেশাজীবী সংগঠনগুলো সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির বৃত্তে বন্দী হয়ে পরবর্তীতে দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়েও উঠে। এতে রাজনীতি আরও দূষিত হয়। রাজনীতিকরণের দূষণ থেকে সংগঠনগুলো নিজেদের বাঁচাতে না পারায় পেশাজীবীদেরও নিজ অঙ্গনের বৈধ স্বার্থ বিপন্ন হয়। দলীয় পরিচয়ে করা অনেক পেশাজীবী সংগঠন পেশাগত স্বার্থ রক্ষায় কাজ না করে অবৈধ স্বার্থ বা আর্থিক স্বার্থ আদায়ে সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করে। পেশার উন্নয়নে কাজ না করে, পেশাগত ন্যায্য সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ না করে অবৈধ সুবিধা নিতে চায়৷ আর পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আখের গোছানোর কাজ করেন৷

গ্রুপ ইন্টারেস্ট কেন্দ্রিক পেশাজীবীদের অনেক সিন্ডিকেট সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, ন্যায় বিচার বা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন৷ আসলে পেশাজীবীরা দলীয় রাজনীতির অংশ হয়ে গেলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয় পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে সচেষ্ট পেশাজীবীদেরই। সরকার দলীয় রাজনীতি যখন অপরাজনীতিতে পর্যবসিত হয় তখন পেশাদারদেরও অন্যায়-অনিয়ম-অন্যায্যতা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার থাকে না। দলীয় রাজনীতির কারণে প্রকৃত পেশাজীবীদের সংকট শুধু বাড়তেই থাকে৷

সংগঠন এক সুতোয় এক এক করে এক একটা ফুল দিয়ে গাঁথা মালার মত যেখানে এক একটি ফুল হল এক একজন শিল্পী। সংগঠনকে কোন বাদ্যযন্ত্রের সাথেও তুলনা করা যায় যা কিনা সুর তুলে। অজস্র রঙের সম্মিলিত প্রয়োগে গড়ে উঠে সুন্দর ছবি। দলে নানা রঙ হয় এক একজন শিল্পী আর ছবিটা হয় একটি সংগঠন। একটি সংগঠনকেও একটি পরিবারের মতো পরিচালনা করা উচিৎ। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিকেও দলের স্বার্থে নিবেদিত হতে হয়।

পেশাজীবীদের রাজনীতি

রাজনীতি বাঙালির প্রিয় বিষয়৷ অভাবি মানুষ অভাব দূর করতে চান রাজনীতির মাধ্যমে৷ রাজনীতি তার সামনে সেই সম্ভাবনার দুয়ার উম্মোচন করে দেয়৷ রাজনীতিবদরা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখান৷ অসহায় মানুষ তা বিশ্বাস করেন৷ ভাগ্যের পরিবর্তন সাধারণ মানুষের না হলেও রাজনীতিবিদ ঠিকই বদলে যান৷ রাজনীতির ভেতরে ঢুকে যাওয়া মানুষ রাজনীতি থেকে বের হতে পারেন না, হয়ত চানও না৷

কোনো দলের নেতৃত্বে যখন পেশাজীবীরা বেশি থাকেন, তখন সে দল দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন না। রাজপথে নেমে দাবি আদায়ের জন্য লাগে সত্যিকারের রাজনীতিবিদের নেতৃত্ব। ফলে রাজপথের আন্দোলন কেন্দ্রিক নেতৃত্বের কাঠামো পুনর্গঠন না করে পেশাজীবীদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার ফলাফল ভালো হয় না।

পেশাজীবীরা ফুলটাইম রাজনীতিক নন, পার্টটাইম রাজনীতি করেন। ফলে তারা মূল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে গেলে দলটির গণমুখী রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থতা আসতে পারে। নিজেদের পেশা রেখে যেখানে পেশাজীবীরা রাজপথে নামতেই পারেন না, সেখানে সত্যিকারের রাজনীতিকরা রাজপথে নামার জন্য সদা প্রস্তুত থাকেন । নিরুদ্যমী বয়োবৃদ্ধদের পার্টটাইম রাজনৈতিক নেতৃত্ব  রাজপথের আন্দোলন গতিশীল ও বেগবান করতে পারে না।

পেশাজীবীদের সংকট

পেশাগত জীবনে সারাক্ষণ কাজের চাপ, পেশায় ব্যর্থতা কিংবা চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে না পেরে পেশাজীবীরা হতাশায় ভুগেন। রাতদিন চেষ্টা-পরিশ্রম করেও ব্যর্থ  হলে মানসিক চাপ বাড়ে। চাকরিচ্যুতির কারণে জীবনের ছন্দপতনে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ একই কাজ করতে করতে বিরক্তি বাড়ে। সংবেদনশীল কাজে আশানুরূপ ফল না পেলে নৈরাশ্য সৃষ্টি করে। ফলে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। অনেক সময় সর্বস্বান্ত হয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়।

প্রতিযোগীদের সঙ্গে  কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেক সময় জীবনের প্রতি ভালোবাসা কমতে শুরু করে। পেশাগত জীবনে ব্যর্থতার ভয়ও তাকে হতাশ ও কর্মবিমুখ করে তোলে। পেশাজীবীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেও হতে পারেন- কখনো ঘৃণিত, কখনো প্রিয়, কখনো ঈর্ষণীয়, কখনো ভীতিকর, কখনো নিরীহ, কখনো হিংস্র, কখনো নির্ভরযোগ্য, কখনো নিষ্ঠাবান, কখনো ফাঁকিবাজ, কখনো উদার, কখনো পরশ্রীকাতর, কখনো সম্মানিত, কখনো অসম্মানিত আর কখনো আপন।

বাংলাদেশের প্রতিটা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতি আছে। দায়িত্বশীলতার অভাব তো দেখা যায়ই, এমনকি নৈতিক মূল্যবোধও পড়তির দিকে। সবাই অন্যকে সমাজের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা যার যার সাধ্যমতো সম্পদ গড়ছে। লোভের কাছে নিদারুণভাবে নিজেদের মাথা সঁপে দিয়েছে। আন্তঃপেশা সংকট তৈরি হচ্ছে।  প্রতিটি পেশায় ভয়ানক রকমের পচন ধরেছে।

পেশাজীবীরা নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে সমস্যাগুলোকে একে অন্যের দিকে ঠেলে দৃশ্যমান কলহ ও বিবাদে জড়াচ্ছে, যদিও ভেতরে-ভেতরে যে যার সাধ্যমতো তহবিল তছরুপ করছে। রাজনীতিবিদরা সব পেশার সব অপকর্মকে সম্মিলিতভাবে লালন করে নিজেরা একচেটিয়া অর্থ লুটছে। নিজ নিজ দুর্নীতি ঢাকতে রাজনীতিবিদেরা সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবীদের সাময়িক সুবিধা দিচ্ছে।

অপেশাদার আচরণ

নানা ধরনের পেশাজীবী আর পেশানির্ভর লোক রয়েছে। এসব শ্রেণী-গোষ্ঠীর লোকেরা কতটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাদের পেশা অনুযায়ী জনসাধারণকে ‘পরিষেবা’ দিচ্ছে তা বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো নির্দিষ্ট পেশাকে ‘খাটো’ করে দেখার মানসিকতা থাকা যাবে না।  পেশাজীবী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করাই অপেশাদার আচরণ। একজন পেশাজীবী আত্মজিজ্ঞাসা করতে পারেন- সেবা দেয়ার নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছি না তো?

ডাক্তারের অপেশাদার আচরণ হচ্ছে- কমিশনের লোভে রোগীকে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে প্যাথলজি বিভাগে পাঠানো, রোগীর প্রতি উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা। উকিল সাহেবের অপেশাদার আচরণ হচ্ছে- আইনি সুরক্ষা জোগানোর নামে বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেয়া, অভিযুক্তদের জামিন করিয়ে দেয়া, বিচারপ্রার্থীদের ঠকানো, চাহিদামাফিক টাকা আদায় না হওয়ায় জামিন হওয়ার পরও অভিযুক্তকে জেলখানা থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করানো ।

সাংবাদিকের অপেশাদার আচরণ হচ্ছে- পেশাগত দক্ষতা ও মান অর্জন না করে নেতা হওয়ার চেষ্টা করা, পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় না রাখা, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করা,  সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *