নবীন-প্রবীণ মিলন উৎসব ২০২৩ অনুষ্ঠিত

দড়ানীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দুইশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এবং দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার সৌজন্যে ১৭ মার্চ শুক্রবার নবীন-প্রবীণ মিলন উৎসব ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাও. মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে ও মাও. মো. শামছুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব জনাব মো. ইমদাদুল হক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব মো. শওকত আলী খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্কয়ার হাসপাতালের হেড অফ ল্যাবরেটরী অপারেশনস প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অব.) আলহাজ্ব মো. আব্দুর রশিদ, সৃষ্টি শিক্ষা পরিবারের ডিরেক্টর জেনারেল এন্ড সিইও জনাব মাহবুবুল ইসলাম মিরন, ১২ নং তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো. আজিজ রেজা।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকার হোসাইনিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাও. মো. সাইদুর রহমান, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স এর ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আরিফুল হক সোহান, লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এম এ মোর্শেদ আনসারী সেলিম, সাংবাদিক ও গবেষক আনিসুর রহমান এরশাদ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম সুমন, হাবলা টেঙ্গুরিয়াপাড়া ফাযিল (ডিগ্রী )মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক ড. আব্দুল্লাহ আল মানছুর,  দড়ানীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন, নলুয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মনিরুজ্জামান মনির এবং দড়ানীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ।

আনিসুর রহমান এরশাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

দড়ানীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

দড়ানীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ২০০ বছর র্পূর্তি হয়েছে। ১৮২৩ সালে নির্মিত আল্লাহর এই ঘরটি গ্রামটির সবচেয়ে পবিত্র স্থান! কতই না সুন্দর! তুলনাহীন সৌন্দর্য! সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সংযোগ তৈরির জায়গা! নিবেদিতপ্রাণ মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার জায়গা! ইসলামিক জ্ঞান অন্বেষণের জায়গা! সামাজিক কল্যাণের স্থান! বিরোধ নিষ্পত্তির স্থান! ইসলামিক জীবনের কেন্দ্র! ইসলামিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নৈতিকতাকে আত্মস্থ করার জায়গা!

মসজিদ সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবাধ জাগরণের কেন্দ্র; টেকসই মানব সম্পদ গড়ার মাধ্যমে জাতীয় জীবন উন্নয়নের মহান প্রতিষ্ঠান। এই পাবলিক প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সমাজ তথা জাতির সার্বিক উন্নয়নে মসজিদগুলোর গুরুত্ব ও অবদান অনেক। এই গ্রামটিতে বন্ধন ও শিক্ষার উৎস হিসেবে মসজিদটির প্রভাব অপরিসীম। ইসলামি নীতি ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে এবং ইসলামের গৌরব ছড়িয়ে দিতে মসজিদটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ অবদান রেখে চলেছে। মসজিদটি মুসুল্লিদের জীবনে ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

মসজিদটির সাথে একসময়ে যুক্ত থাকা মাও. আবদুস সালাম, মাও. আবদুল আলী, মাও. বাহার উদ্দিন, মাও. আব্দুল মান্নান আনসারী এখন অতীত হয়ে গেছেন। বর্তমানে থাকা মাও. আনিসুর রহমান মাদানী, মাও. আব্দুস সামাদ, মাও. শামছুজ্জামান, মাও. আবু সাঈদ- একসময় অতীত হয়ে যাবেন। কিন্তু মসজিদ টিকে থাকবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী! আযান-ইকামত- নামায চলবে কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ।

এই মসজিদের জমি যারা দান করেছিলেন, যারা মসজিদ নির্মাণে শ্রম ও অর্থ দিয়েছিলেন, যারা ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন-খাদেম হিসেবে জীবনে কখনো না কখনো দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যেসব মুসল্লিরা এই মসজিদে কোনো না কোনো নামাজ পড়েছেন- অথচ এখন আর ইহজগতে নেই সবার আত্মার মাগফেরাত ও জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করছি। বারবার সংস্কারের কাজও সফল হয়েছে অনেকের আন্তরিক ত্যাগের কারণে। যারা এখনো মসজিদটির সাথে যুক্ত রয়েছেন, মসজিদটিকে ভালোবাসেন, মসজিদটির খেদমত করেন, মসজিদটিতে ইবাদত-বন্দেগি করেন- সবার সুস্বাস্থ্য, সামগ্রিক কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করছি। আমীন।

দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসা 

দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসা নামটি খুব চমৎকার ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। দারুস সালাম জান্নাতের নাম। অর্থ শান্তির আবাস, শান্তির নীড়, শান্তির ঘর। আর সালাফিয়্যাহ হলো আকীদা-বিশ্বাসবোধ ও জীবনে চলার পথে সালাফে সালেহীনের তথা সাহাবা, তাবিঈন, তাবে-তাবেয়িন ও এবং তৎপরবর্তি তাদের আদর্শের অনুসারী আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সম্মানিত হেদায়েতপ্রাপ্ত  মহান ব্যক্তিগণ।

আমি ছোটবেলায় মসজিদ সংশ্লিষ্ট মক্তবে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ উদ্দিন সাহেবের কাছে পড়েছিলাম। তখন ত্বোয়াহা সাহেবও পড়িয়েছেন। আজ তা মাদরাসা হয়েছে। এটা দারুণ আশা জাগানিয়া। দারুণ আনন্দের।

মাদ্রাসা সভ্য পৃথিবীর অহঙ্কার; যেখানে আদর্শ মানুষ গঠন হয়। মাদ্রাসা মুসলমানের শেকড়, দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরীদের মিলনমেলা। মাদ্রাসা সার্থকতার বিচারে এগিয়ে, আল্লাহপ্রেমী বান্দাহ তৈরির কারখানা।

মাদ্রাসা ইতিবাচক দিনবদলের মহাসোপান, রাসূলপ্রেমী মুসলিম তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র। মাদ্রাসা হেরার আলোতে উজ্জল কেন্দ্র, যেখানে কাঙ্ক্ষিত জীবনের শক্তিশালী ভিত্তি। মাদ্রাসাতে তৈরি হয় টেকসই উন্নয়ন কর্মী, যেখানে ইহকাল পরকালে সফলদের আনগোনা।

মাদ্রাসার স্থান ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে, আত্মিক খোরাক আহরণের দুর্দান্ত আয়োজন। মাদ্রাসায় আছে কুরআনের সমাজ গড়ার উসতাযগণ, দ্বীনের খেদমতকারী ঈমানদীপ্ত তালেবে ইলমগণ। মাদ্রাসায় রূহানিয়াতের টানে আত্মসমর্পিত মানুষেরা, যারা তাহজিব-তমদ্দুন, কৃষ্টি-সভ্যতা সংরক্ষণে সচেতন।

সাধারণত মাদ্রাসায় যুক্তদের অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্টতা নেই, দীন-ঈমান ও ইজ্জত-আবরু সংরক্ষণে এদের লড়াই। মাদ্রাসা সৎ ও আদর্শ জাতি গঠনে রাখছে অবদান, গড়ছে নৈতিক, আদর্শিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন মানুষ। মাদ্রাসা আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ, ইসলাম রক্ষায় বড় অবলম্বন, দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য অর্জনে যার বিকল্প নেই।

আল্লাহ দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসাকে কবুল করুন। আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন আলহাজ্ব মো. ইমদাদুল হক, যিনি মাদ্রাসার জমিদাতা; তিনিসহ সংশ্লিষ্ট সবার নেক হায়াত কামনা করছি। মাদ্রাসাটি এমন কিছু মানুষ তৈরি করুক, যারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনেই কামিয়াবী হবে। যাদেরকে ভালো মানুষ ও ভালো মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলাই হবে মাদ্রাসাটির সাথে সংশ্লিষ্টদের সার্থকতা। আমি মাদ্রাসাটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক আলেম-ওলামা মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ প্রতিটি আযাদী আন্দোলনে দাড়ি-টুপিধারী আলেমগণ সমাজের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন। আলেম সমাজের সংগ্রামী অতীতকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা নির্লজ্জতা ছাড়া কিছুই নয়! আল্লাহ সকল আলেমগণের নেক কাজের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আলেমদেরকে সমাজে অসম্মান করার সুগভীর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন, আমীন।

নবীন-প্রবীণ মিলন উৎসব ২০২৩

আমি নবীন-প্রবীণের মিলন উৎসবে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত। তৃতীয়বারের মতো নবীন-প্রবীণ মিলন উৎসব চমৎকারভাবে আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রবীণের জন্য নবীন, আর নবীনের জন্যই প্রবীণ। আজকের নবীন আগামী দিনের প্রবীণ, আজকের প্রবীণ বিগত দিনের নবীন। আজকের নবীন-প্রবীণ মেলবন্ধন এবং পদচারণায় মুখরিত দৃশ্য সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।

আশা করছি, আজকের অনুষ্ঠানটি নবীন-প্রবীণের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করবে। নবীন-প্রবীণ মিলে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে। নবীন প্রবীণ সমন্বয়ে এলাকার উন্নয়নের জন্য ভালো কিছু হবে। ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন, নৈতিক জগতে-নবীনদের প্রাধান্য আর প্রজ্ঞার জগতে প্রবীণদের। পল রবসনের মতে- সবাইকে একদিন প্রবীণ হতে হবে। যুবক-যুবতীদের এ কথাটি মনে রাখা উচিত।

প্রবীণদের সাথে নবীনদের সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাওয়া লক্ষ্য হওয়া উচিত। নবীন-প্রবীণের সেতুবন্ধন থেকে অনেক সুফল মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণ উভয়ের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবীন-প্রবীণের যোগসূত্র জরুরি। সমাজে নবীনদের রয়েছে শক্তি, প্রবীণদের রয়েছে অভিজ্ঞতা। নবীন প্রবীণ সকলে মিলেমিশে কাজ করলেই সমাজ সুন্দরভাবে চলবে।

প্রবীণরা সমাজে বটবৃক্ষের মতো। প্রবীণরা নবীনদের পথ প্রদর্শক। প্রবীণরা জীবনযাত্রার দীর্ঘপথ চলার অভিজ্ঞতায় পূর্ণ ঋদ্ধ ভাণ্ডার; যারা হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস। একটি ঘর বা বাড়ি তৈরি করতে গেলে পরিপক্ক গাছের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি একটি টেকসই সমাজ উন্নয়নের জন্য প্রবীণের পরিপক্কতা প্রয়োজন। নবীন-প্রবীণের মিশেলে পাওয়া যায় পরিপূর্ণতা, পাওয়া যায় সফলতা, পাওয়া যায় সৃষ্টির উদ্দেশ্যের গভীরতা।

প্রবীণরা হলে সম্পদ। তাদের পুর্ব অভিজ্ঞতার গল্প গুলোই নবীনদের জন্য এক একটি লিসেন লার্ন। ডিসিশন মেকিং থেকে শুরু করে ফিল্ড পর্যায়ে সব কাজই নবীনরা করলেও ভুলত্রুটি ধরে দেবার জন্য অ্যাডভাইজর হিসেবে মাথার উপর প্রবীণদেরই রাখা হয়। সমাজেও সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে প্রবীণদের মর্যাদা সবার উপরে। সর্বত্র একে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে; একা একা কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রবীণদের শিক্ষা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে নবীনেরা ভালো করতে পারেন।

গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী প্রবীণরা ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করেন। প্রবীণরা আচার-আচরণের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে নবীনদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করেন। প্রবীণরা বিজ্ঞতার উপমা, অতীত সমাজ-সংস্কৃতি জানার ইতিহাসগ্রন্থ। প্রবীণদের কাছে নবীনরা পরামর্শ চায় এবং উপদেশ নেয় এবং সর্বোপরি তাদের প্রতি গভীর আস্থা রাখেন। প্রবীণরা সর্বদা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ব্যক্তি। নবীনদের কাজ প্রবীণদের সম্মান করা এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে সমাজ গড়ায় কাজে লাগানো।

নবীন-প্রবীণদের মধ্যে সামাজিক সেতুবন্ধন সুদৃঢ় হওয়া উচিত; কারণ সমাজের উন্নয়নে ও সামাজিক সমস্যার সমাধানে উভয়েরেই ভূমিকা রয়েছে। টেকসই সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণে সকল প্রজন্মের অংশগ্রহণ একসাথে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান প্রবীণদের দীর্ঘ দিনের যোগ্যতা অভিজ্ঞতা নবীন-তরুণদের অবহিত করতে হবে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে নবীনদেরই।

নবীন প্রজন্ম প্রবীণ প্রজন্মের কাছ থেকে শিখবে কিভাবে চিন্তা-ভাবনা করে ধীরস্থিরভাবে কাজ করতে হয়। আর প্রবীণ প্রজন্ম নবীন প্রজন্মের কাছ থেকে শিখবেন কিভাবে সত্যকে গ্রহণ করার জন্য চিন্তার পরিবর্তন আনতে হয়, কিভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে হয়।

পুরনো চিন্তা-ভাবনাকেই আঁকড়ে ধরে থাকা পছন্দ করা প্রবীণদের দূর্বলতা। আবেগের কারণে বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখেই সত্যকে ছেড়ে দিয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করা নবীনদের দূর্বলতা। উভয়েই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে পারে পরস্পরের কাছ থেকে শেখার মাধ্যমে।

নবীনদের বুঝতে হবে আধুনিকতা মানে যা খুশি তা করা নয়। স্মার্টনেস মানে মুরুব্বিদের সাথে বেয়াদবি করা নয়। আধুনিকতা ও স্মার্টনেস মানে ভালো পড়াশোনা, ভালো ফলাফল, ভালো ক্যারিয়ার; সর্বোপরি ভালো মানুষ হওয়ায়, ভালো মুসলমান হওয়ায়।

আমি চাই প্রবীণরা নবীনদের পথ দেখাবেন, তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন, নবীনদের ভুল সংশোধন করে তাদের উৎসাহিত করবেন। নবীনদের সৃষ্টিশীলতা, তাদের দূরন্তপনা, টেকনলোজি এ্যাডভান্সমেন্ট কে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন। নবীনদের উচিত হবে- প্রবীণদের যথাযথ সম্মান করা এবং তাদের কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব কাজ শিখে নেয়া।

সময়-স্রোতের সাথে মিলে নবীন হয় প্রবীণ, পুরানো দ্বীপ ভেঙে নদী গড়ে নতুন দ্বীপ। প্রবীণের আশার আলো নবীন। প্রবীণের আশীর্বাদে চলমান ধারা নবীন। নবীন-প্রবীণ পাশাপাশি উন্নত শির। প্রবীণের যুক্তি আর নবীনের শক্তি- দু’য়ে মিলে সমাজের মুক্তি, সমাজের উন্নয়ন।

চারটি আহ্বান

১. আয়োজকরা যাতে আয়োজনটি অ্যবাহত রাখেন। প্রয়োজনে যোগাযোগের স্বার্থে  ডাটাবেজ তৈরি করেন।

২. প্রবীণদের মধ্যে যারা অগ্রসর তারা যেন আত্মজীবনী বা চিন্তা-কর্ম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিখে যান এবং সাধ্যানুযায়ী নবীনদের পাশে থাকেন।

৩. সম্মিলিতভাবে একটি লাইব্রেরী এবং সেমিনার-কর্মশালা করার মতো একটি সেমিনার রুম তৈরি করেন।

৪. সমাজের যারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেয়ার মতো মানুষ তাদের নিয়ে স্মরণিকা বা কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করুন।

দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার জমিদাতার পরিচয়

আলহাজ্ব মো. ইমদাদুল হক। সাবেক যুগ্মসচিব। শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব, একজন সমাজকর্মী এবং একজন উদার মনের মানুষ। দড়ানীপাড়ার গর্ব, দড়ানীপাড়ার কীর্তিমান পুরুষ।মির্জাপুরের গর্বিত সন্তান। গ্রামীণ জনপদের মাটি ও মানুষের প্রিয়জন।

তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স এর বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য। আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা! ১৯৯০ সালে দড়ানীপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। মায়ের নামে করেছেন বেগম মতিজান্নেছা লাইব্রেরি। বাবার নামে করেন আতাউল হক শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প! তিনি বেগম হালিমা খাতুনের নামে দড়ানীপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ২০২২ সালে দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদরাসার অন্যতম উদ্যোক্তা।

আলোকিত মানুষটির জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৩ জুন। নিজের পরিবারকে আলোকিত করেছেন। নিজের সমাজের মানুষকেও আলোকিত করায় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। তিনি দড়ানী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৫৮ সালে মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬০ সালে সরকারি সা’দত কলেজ করটিয়া থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ ১ম বিভাগে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ রসায়নে ফাস্ট ক্লাসসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে খাদ্য অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৯০ সালে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৯২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি উপ-সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি বেসরকারিকরণ বোর্ডের সচিব ছিলেন। তিনি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে উপ-সচিব ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০১ সালের ২২ জুন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৭৭-৭৮ সালে প্রায় ১ বছর পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ভারত ও থাইল্যান্ডে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। চাকরিকালীন সময়ে বার্মা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সফর করেন।

১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল বেগম হালিমা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। চার ছেলে ও ১ মেয়ের জনক তিনি। প্রথম ছেলে মো. এনামুল হক ১৯৯৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেএমবিবিএস এবং ১৯৯৭ সালে বিসিএস করেন। দ্বিতীয় ছেলে মো. আমিনুল হক ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমফার্ম করে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান; স্বপরিবারে ফ্লোরিডায় থাকেন।

মেয়ে মাফি হক ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি করেন, ২০০১ সালে স্বপরিবারে কানাডায় চলে যান। তৃতীয় ছেলে প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল হক ১৯৯৭ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করে ২০০৩ সালে কানাডায় চলে যান; স্বপরিবারে টরেন্টোতে বসবাস করছেন। চতুর্থ ছেলে মো. আরিফুল হক সোহান বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন; বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স ও রিভেরি পাওয়ার এন্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর ভাইস-চেয়ারম্যান।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *