বর্তমানে দুর্বল ভারসাম্যহীন পরিবার সমাজে ঘুণ ধরাচ্ছে। এক দুই যুগ আগেও মানুষের আশা-আনন্দ-বিনোদনের কেন্দ্র জুড়ে ছিল পরিবার। এখন পারিবারিক সম্পর্কগুলো খুব ঠুনকো, খুব অনাত্মীয়ধর্মী; বন্ধন ঢিলেঢালা। পরিবারে রক্তের ও বৈবাহিক সম্পর্কের বন্ধন ভুলে গিয়ে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে। মূল্যবোধ লোপ পাওয়ায় নিজেদের পরিবারের প্রতিও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। ছোটরা গুরুত্ব দিচ্ছে না পরিবারের বড়দের, স্নেহসুলভ আচরণ করছে না বড়রা ছোটদের প্রতি। অথচ শিশুর একমাত্র ভয় হওয়া উচিত তাদের মাতা-পিতার আদর স্নেহ হারানোর ভয়, দৈহিক শাস্তি বা হুমকি বা ব্যথার ভয় নয়।
আমরা চাই পরিবার ও পারিবারিক জীবন হবে প্রেম-ভালোবাসা, দরদ-মায়ায় ভরপুর। থাকবে না দ্বন্দ্ব-কলহ, সন্দেহ, অমিল-অশান্তি, পারিবারিক নির্যাতন। ‘ফাদার ডে,‘মাদার ডে’ আর ‘ফ্যামিলি ডে’ পালন করাই শুধু নয়, পরিবার ও পারিবারিক জীবনে সুখ থাকবে প্রতিদিন, নিরাপদ অভিবাসন থাকবে। গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, পরস্পরে শ্রদ্ধাবোধ, আদব-কায়দা থাকবে; পরিবার ব্যবস্থায় থাকবে না অত্যাচার, লাঞ্ছনা, অন্যায় ও অবিচার।
প্রত্যেকে প্রাপ্য অধিকার পাবে, লাভ করবে পারস্পরিক নির্ভরতা, পাবে কর্মের প্রেরণা এবং নিজ নিজ কাজে অগ্রসর হয়ে যাবে উদ্যমপূর্ণ গতিতে; যা মানবতার বৃহত্তর অগ্রগতিকে সম্ভবপর করবে। মানব প্রকৃতির মধ্যকার কাক্সিক্ষত উপাদানগুলো আলোড়িত ও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে। পারিবারিক জীবনে অনাবিল শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে পরিবার হয়ে ওঠে সব উদ্যম, প্রেরণা ও প্রশান্তির ক্ষেত্র। তাই সন্তানকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এবং স্বামীকে স্ত্রীর আদর-সোহাগ থেকে বঞ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন হবে না।
বর্তমানে পরিবারগুলো নৃশংস ও অযৌক্তিকভাবে বহুমুখী আক্রমণের শিকার হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব ও চরম বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা, আধুনিক প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব, কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধির কারণে পরিবারকে সময়দানের সুযোগ কমে যাওয়া, নতুন ধরণের যৌন প্রবণতা, মাদকাসক্তি, ভ্রুণ হত্যা, অপহরণ, ধর্মান্ধতা, তালাকের হার বৃদ্ধি, বিধবা বা অবিবাহিতদের সংখ্যা বৃদ্ধি, অশ্লীল বিনোদনে আসক্তি, অপহরণ, শিশু ও নারী পাচার, প্রতিবন্ধী ও শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। নয়া সঙ্কটে পারিবারিক ব্যবস্থা মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলছে।
পাশ্চাত্য সভ্যতায় ব্যাপকভাবে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হচ্ছে, বৃদ্ধাশ্রম বিরোধী প্রচারণা জোরদার হচ্ছে। সময় থাকতে আমাদেরকে এখনই এ ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। পারিবারিক বিপর্যয়রোধে গ্রহণ করতে হরে কার্যকর ব্যবস্থা। কারণ গুরুজনদের অনৈতিকতা, দুর্নীতি ও মিথ্যাচার দেখে ফ্ল্যাট নামক জেলখানায় গৃহকর্মীদের হাতে বেড়ে উঠছে এখনকার প্রজন্ম। ভেজাল খাবার খেয়ে, দূষিত আবহাওয়া আর অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মধ্যে বড় হচ্ছে।
যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় অল্প বয়সেই নিরিবিলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে খারাপ সাইটগুলো দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এক দেশের টিভিতে প্রচারিত ক্রাইম পেট্রোলে দেখানো সত্য কাহিনিগুলোর সাথে আরেক দেশের কিশোর বা শিশুদের অপরাধ মিলে যাচ্ছে। এ সময়ের এসব নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় পরিবারকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।