আনিসুর রহমান এরশাদ
এ জাতির বড় দুর্ভাগ্য যে- কেউ অভিযোগের বাইরে নেই। বিএনপি বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, আওয়ামীলীগ জিয়াউর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করে। ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধেও সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক কথাবার্তা মনে হয় তাঁর জন্মভূমিতেই। অনেকের স্বভাবই হয়ে গেছে, কারো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে হেনস্তা করার প্রবণতা। জাতীয় বীরদের অবদানকে বিকৃত করে সময় নষ্ট না করে আসুন যার যে অবদান তা’ স্বীকার করি। যার যা প্রাপ্য তা না দিলে কি আর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি সম্ভব?
একজন জাতীয় নেতা-নেত্রীর দোষে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ব্যক্তিগত জীবনে কারো দোষের চেয়ে সমাজের প্রতি দোষ করাটা জনগণের জন্য বেশি ক্ষতিকর। অবিশ্বাস-অভিমান এত বেড়েছে যে কোনো মর্যাদাশীল লোকই এখন আগের মতো স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। জনগণের সঙ্গে কাজ করতে গেলে একজন বলবে এইদিকে, আরেকজন বলবে ওইদিকে- এটা বাস্তবতা। তাই বলে যেমন পুরুষ নারীবিমুখ হতে পারবে না আর নারী পুরুষ বিমুখ হতে পারবে না; তেমনি জনগণও রাজনীতি ও নেতা বিমুখ হতে পারবে না আর নেতাকেও জনতা-জনগণ বিমুখ হলে চলবে না।
বলা হয়ে থাকে ‘ যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’, ‘সত্য অপ্রিয় বলে কি অপ্রিয় কথা বলতে নাই’। তারপরও বলবো- রাজনীতিবিদদের সরল থাকা উচিত। সমাজের জন্য ক্ষতিকর কাজ করা, পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক বিনষ্ট করে ঘৃণার উদ্রেক করা এবং শত্রুতার সৃষ্টি করা কোনোভাবেই যৌক্তিক না। রাজনৈতিক নেতৃত্বই সব করবে আমি এমনটি বলছি না। সমাজের সার্বিক উন্নতি-অগ্রগতির জন্যে চাকরিজীবী, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে নিয়ে রাজনীতিবিদদেরই এগিয়ে যেতে হবে। শুধু শীর্ষ নেতাদের তৈল মর্দন করে কি আর দীর্ঘসময় রাজনৈতিক ময়দানে সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখা যায়? যায় না। সবার মিলিত প্রচেষ্টায়ই একটা সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে।
সমাজটাকে এগিয়ে নিতে হলে সমালোচনার পথে না গিয়ে সংশোধনের পথে এগুতে হবে। অসত্য ভাষণ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, ইতিহাসকে বিকৃত করে, মুখে আদর্শের কথা বললেও কাজে-কর্মে আদর্শচ্যুত হওয়া কোনো সমাধান নয়। রাজনীতি নিয়ে রাজনীতি না করে মানুষের সেবা ও মুক্তির জন্য লড়াই করুন, রাজনীতি করে চান্দা তুলে খাওয়া, আয়কর না দেয়া, আয়ের বৈধ উৎস ছাড়াই বাড়ি-গাড়ি করা ভুলে যান। না হলে সামাজিক অবক্ষয় এমন পর্যায়ে যাবে যেখান থেকে ফিরে আসা হবে অসম্ভব। দেশের মানুষের শান্তি-মঙ্গলের জন্যে কিছু রাস্তা বের করুন, দলের চেয়ে দেশকে ভালোবাসুন।
মানবিক গুণাবলী সমৃদ্ধ মানুষ গঠন তখনই সম্ভব হবে যখন পুথিঁগত জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় হবে। ডিগ্রিই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মনকে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করা,যার কাছে জানা বা জ্ঞান অর্জন করার চেয়ে বস্তুগত প্রাপ্তিই বড় হয়ে ওঠবে না। মনে রাখতে হবে- পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক জ্ঞান আহরণে সীমাবদ্ধ রাখলে বা থাকলে সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হয় না। তাই অর্থপূর্ণ পরিচর্যার মাধ্যমে সকল স্তরের শিক্ষার্থীকে জীবনোপযোগী কৌশল বা দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বোঝা ও চিন্তা করার ক্ষমতা আর তোতা পাখির মতো বুলি আওড়ানোর মধ্যেই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এবং ব্যক্তিত্বহীন মানুষের প্রভেদ ধরা পড়ে।