ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের উদ্যোগে সদস্য লেখকদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। লেখকদের হাতে ক্রেস্ট, উত্তরীয়, সনদপত্র ও সম্মানি তুলে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে প্রথমবারে মতো আয়োজিত ‘লেখক সম্মাননা-২০২২’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইসির সভাপতি মামুন ফরাজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর।
অনুষ্ঠানে কবিতা, ইতিহাস-গবেষণা, গল্প-উপন্যাস, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য, ভ্রমণ-বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে ৯৬ জন নির্বাচিত লেখককে সম্মাননা দেয়া হয়।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বক্তব্য
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখনই বিদেশ সফর থেকে আসেন, তার পরপর তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের সকল প্রশ্নের জবাব দেন। খুব কম দেশের প্রধানমন্ত্রী আছেন, যারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশে সাংবাদিক যে নির্যাতন হয় না, এমন কথা বলা যাবে না। সাংবাদিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা বাংলাদেশে আছে। এমনকি সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও এ দেশে আছে। এগুলোর কোনটাই আমরা অস্বীকার করছি না। নানান সময় নানান সরকার এই কাজগুলো করেছে।
২০০৪ সালের বোমা হামলায় আমাদের খুলনার মানিক সাহা নিহত হয়েছিলেন। তিনিই তো সাংবাদিক জগতের দৃষ্টান্ত। সত্য প্রকাশের জন্য তিনি বাধা পেয়েও আপসহীন ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমন ১৫-২০ জন সাংবাদিককে একটি সরকারের (বিএনপি) আমলে জীবন দিতে হয়েছে।
এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাংবাদিকরা যে আর্থিকভাবে ভালো আছেন সেটাও জোর গলায় বলা যাবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি, নিঃসন্দেহে তাদের বেশির ভাগই সংবাদপত্রসহ টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর নির্ভর করি। রাজনীতিবিদদের সাংবাদিকদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি।
আধুনিক, সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কয়টি কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মাধ্যম। এই সংবাদপত্রের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের খবর আমরা জানতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি বিষয়ে সাংবাদিক লিখতে চেয়েছেন। কিন্তু তার অফিস তা নিষেধ করেছে। বিশেষ করে যখন তখন বিশেষ জায়গা থেকে এ সকল বিষয় সংগ্রহ করা হয় তখন বলে দেওয়া হয়, এতটুকু লেখা যাবে, আর এতটুকু দেখানো যাবে।
আমি বিশ্বাস করি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ কখনও জেনেশুনে অন্যায় করতে পারেন না। অন্যায় দেখে চুপ থাকার প্রশ্নও আসে না। এই কারণে লেখক ও সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের বিবেক। সাংবাদিকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক। নানা ঝুঁকির মধ্যে থেকেও আপোসহীনভাবে কাজ করে যান তারা। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। আর সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে মনে করা হয়। সংবাদপত্রের কারণে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের খবর আমরা জানতে পারি। কোথায় কী ঘটছে, কোথায় কী হচ্ছে, কী হওয়া উচিত-সব কিছুই আমরা জানতে পারি। এভাবে সমাজের ভালো-মন্দ চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমেই আমরা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। আর এজন্যই তাদের সঙ্গে আমাদের একটা সুসম্পর্ক আছে।
সমাজের বুকে যখন দমন-পীড়ন নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন কলম শাণিত করে লেখকরা উচ্চারণ করেন প্রতিবাদের ভাষা। এর মাধ্যমে লেখকরা ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা করতে চান, দূরীভূত করতে চান অন্ধকার। তবেই শহিদদের রক্তের বিনিময়ে বহু দাম দিয়ে পাওয়া এই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র।
কাঙ্ক্ষিত সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রয়াসে লেখকদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। লেখকের তীক্ষ্ণ কল্পনাশক্তি, গভীর আবেগ পাশাপাশি তাদের বাস্তববোধ সৃষ্টির প্রেরণায় গতিশীল। লেখক হবেন সার্বজনীন। কোনো সংকীর্ণতা তাদের আবদ্ধ করতে পারবে না। সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি আপনাদের দায়বদ্ধতার পরিধি অনেক বেশি। আপনারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পত্রিকার পাতায় তুলে আনেন নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতির খবর। আপনাদের কলমে উঠে আসে যুক্তিবোধের নানা অনুষঙ্গ। এই কারণে লেখক সমাজনিষ্ঠ একজন সৈনিক।
সাংবাদিকরা জনকল্যানমূলক দাবিগুলো সবার সামনে তুলে ধরবে- এটি জাতি আশা করে। ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সদস্যরা নিজেদের ঐক্য আরো সুদৃঢ় করে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা করি। আমার বিশ্বাস সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সামনের অনুষ্ঠানে আরও বেশি লেখা পাওয়া যাবে। এ ধরনের অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আজকের এই সম্মাননা আপনাদের লেখক জীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। কাঙ্খিত সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রয়াসে লেখকের সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল লেখনি অব্যাহত থাকুক।
যারা সম্মাননা পেলেন
কবিতা বিভাগে লেখক সম্মাননা-২০২২ পেয়েছেন অতনু তিয়াস, আলমগীর নিষাদ, সুরাইয়া ইসলাম, পুলক হাসান, মহসিন হোসাইন, চৌধুরি ফেরদৌস, আব্দুর রহমান মল্লিক, মু আ কুদ্দুস, দীপক ভৌমিক, দীপংকর দীপক, তুহিন তৌহিদ, জিয়া হক, নাদিম নিশাত, জোবায়ের আহমেদ নবীন, বিউটি হাসু, মোহাম্মদ আলম, সাজু আহমেদ, নূরে আলম জীবন, আ ফ ম মশিউর রহমান ও নাসরিন গীতি।
ইতিহাস ও গবেষণা বিভাগে লেখক সম্মাননা-২০২২ পেয়েছেন মোহাম্মদ নূরুল হক, দীপংকর গৌতম, কাজী আলিম-উজ-জামান, অঞ্জন আচার্য, মুস্তফা মনওয়ার সুজন, কায়কোবাদ মিলন, লিয়াকত আলী, শরীফ আবদুল গোফরান, জাকির আবু জাফর, রীতা ভৌমিক, শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ, আহমাদ মতিউর রহমান, ইমরান মাহফুজ, আনিসুর রহমান এরশাদ, জহির উদ্দিন বাবর, আল মামুন, রনি আধিকারী, ফিরোজ এহতেশাম, সানজিদা সুলতানা, কাওসার বকুল ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ।
গল্প ও উপন্যাস বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন শান্তনু চৌধুরী, লাবণ্য লিপি, কামাল হোসেন টিপু, ইমন চৌধুরি, রনি রেজা, মফিদা আকবর, আশরাফুল ইসলাম, আরিফ মজুমদার, জামাল উদ্দিন জামাল, সাখাওয়াত হোসেন, মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ, অশোকেশ রায়, শতাব্দী আলম, রণজিৎ সরকার, জিয়াউদ্দিন খোকা, সাবিরা ইসলাম, তাসনিম সুলতানা, আবুল হোসেন খোকন, রেজাউল রহমান রিজভী, নীলা মল্লিক, তানভীর আলাদীন, হোসেন শহীদ মজনু, শান্তা ফারজানা, ইব্রাহিম খলিল জুয়েল, শামীম ফেরদৌস, শফিক হাসান, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল হক জাহাঙ্গীর, সাইফ বরকতুল্লাহ ও মাহতাব শফি।
অনুবাদ বিভাগে লেখক সম্মাননা পেয়েছেন প্রমিত হোসেন, সাহাদত হোসেন খান, মাহফুজুর রহমান মানিক ও মলয় পাঁড়ে।
শিশু সাহিত্যে অদ্বৈত মারুত, আশিক মুস্তাফা, মনসুর হেলাল, মামুন রশীদ, আবিদ আজম, নাসির হেলাল, শেখ আব্দুল্লাহ নূর, মাসউদুল কাদির, ইমরুল ইউসুফ, আজরা পারভীন সাঈদ, সাইফুদ্দীন ও ফারহানা তানিয়া লেখক সম্মাননা-২০২২ পেয়েছেন।
ভ্রমণ ও বিজ্ঞান বিভাগে লেখক সম্মাননা পেয়েছেন জাহাঙ্গীর সুর, আসিফ, সুমন ইসলাম, নাজমুল হক ইমন, শর্মিলা সিন্ড্রেলা, এখলাছ হক, কাজী রফিক ও কে এম শহীদুল হক।
মিনার মনসুর এর বক্তব্য
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বলেন, ‘যারা সাংবাদিকতা করতে আসেন, তারা মনে করেন তারা সাংবাদিক হয়ে সমাজ-দেশের জন্য কাজ করবে। শোষিত-নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর হবে। আসলে কি তাদের স্বাধীনতা আছে? পরাধীনতার বেদনা তাদের আছে।’
মামুন ফরাজী এর বক্তব্য
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সভাপতি মামুন ফরাজী বলেছেন, আমাদের দেশের সাংবাদিকেরা এমন ব্যস্ত জীবন কাটান, তাদের যে সংসার আছে সেটা ভুলে যান।
তাদের (সাংবাদিকদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। দিনে কিংবা রাতে যেখানে যে ঘটনাই ঘটুক, তাকে ছুটে যেতে হয়। এভাবে তারা প্রতিদিন ব্যস্ত রুটিন কাটান৷ তাদের যে সংসার আছে সেটাও ভুলে যান।
সমাজের বুকে যখন দমন-পীড়ন নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন কলম শাণিত করে সাংবাদিকরা উচ্চারণ করেন প্রতিবাদের ভাষা। এর মাধ্যমেই সাংবাদিকরা ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা করতে চান, দূরীভূত করতে চান অন্ধকার। যার কারণে অনেক সময় ভুলে যেতে হয় সংসার জীবন।
সাংবাদিক হলেই লেখক হওয়া যায় না। আমরা কিছু তথ্যসহ কাজ করি।লেখক হলো তারাই যারা নিজস্ব চিন্তা দিয়ে, ভাবনা দিয়ে দেশের জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে। আজকের এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
হাসান অরিন্দম এর বক্তব্য
কথাসাহিত্যিক হাসান অরিন্দম বলেন, ‘সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আলাদা ভালোবাসা আছে আমার। আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী ছিলাম। সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটে-বলে মেলেনি। তবে সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের যেমন ভালোবাসা-বিশ্বাস আছে।
এই আয়োজন আমাকে আশান্বিত করেছে। সাব-এডিটরদের মধ্যে এত প্রতিষ্ঠিত ও গুণী লেখক আছেন, তা আমাকে আশান্বিত করেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।’
কবির আলমগীরের বক্তব্য
ডিএসইসি লেখক সম্মাননা-২০২২ এর আহ্বায়ক কবীর আলমগীর বলেন, ‘সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার অর্থ হলো কাজ করা। সে ব্যাপারে আমি সবসময়ই আন্তরিক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের দুই যুগ পেরিয়েছে। তবে এবারই প্রথম এমন আয়োজন। যারা বই জমা দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। জুরি বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা খুব আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমন আয়োজন বারবার হোক—এমন আশা রাখি।
সাব এডিটররাই হলেন একটি সংবাদের রূপকার মন্তব্য করে লেখক সম্মাননা উপকমিটির আহ্বায়ক কবির আলমগীর বলেন, আমরা (প্রতিবেদক) মাল-মশল্লা এনে রেডি করে দেই। তারা (সহকারী সম্পাদক) সেটি রান্না করেন। আর সেই রান্নার ওপরেই নির্ভর করে সেটি কতটা পরিবেশনযোগ্য। সুতরাং এই সহকারী সম্পাদকের ওপরেই একটি সংবাদ পরিপূর্ণতা লাভ করে।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে। লেখালেখি একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সমাজের নানা অসংগতি, ভালো মন্দ লেখালেখির মাধ্যমেই উঠে আসে। অনেক বড় বড় লেখকের পেশা ছিল সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা করেও বড় লেখক হওয়ার অনেক রেকর্ড আছে। যার উদাহরণ হিসেবে মারকেসের কথা বলা যায়৷’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যারা
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়ের সঞ্চালনে বক্তব্য দেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি কায়কোবাদ মিলন, সাবেক সভাপতি কেএম শহিদুল হক, সাবেক সভাপতি শাহ মুহাম্মদ মোতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ খানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সদস্য ও লেখকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দেশের বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধিত লেখকদের মধ্যে আসিফ, সানজিদা সুলতানা ও জাহাঙ্গীর সুর বক্তব্য দেন।
জুরি বোর্ড ও উপ-কমিটি
জুরি বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস শামীম, কবি প্রাবন্ধিক-গবেষক মজিদ মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ড. হাসান অরিন্দম, কবি ও গবেষক আমিনুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার।
নির্বাহী কমিটিতে (জুরি) ছিলেন মামুন ফরাজী, আনজুমান আরা শিল্পী, আবুল হাসান হৃদয়, লাবিন রহমান, মনির আহমাদ জারিফ, মামুনুর রশিদ মামুন, জাফরুল আলম, হালিমা খাতুন, আরিফ আহমেদ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান আহমেদ।
লেখক সম্মাননা উপ-কমিটিতে ছিলেন কবীর আলমগীর, শিবলী নোমানী, প্রতীক মাহমুদ, নাজিম উদ দৌলা সাদী, মো. নঈম মাশরেকী।
আনিসুর রহমান এরশাদ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস
আলহামদুলিল্লাহ। ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল এর লেখক সম্মাননা ২০২২ গ্রহণ করছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে উক্ত সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন এর সম্মানিত মেয়র জনাব এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) লেখক সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এরকম আয়োজন না হলে অজানাই থেকে যেতো সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে এতো এতো লেখক আছেন।
চমৎকার অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি অভিভূত। নিঃসন্দেহে এটি ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সেরা একটি আয়োজন। যেভাবে সংগঠনটি তার লেখক সদস্যদের সম্মাননা দিলো তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সম্মাননা প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। যারা ব্যস্ততার মধ্যেও উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমন্ডিত ও সার্থক করেছেন তাদের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আসলে সমাজের সর্বস্তরে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। এতে পরিশীলিত-পরিণত হবার উৎসাহ বাড়ে। আসলে লেখকের বড় আনন্দ-প্রশান্তি পাঠকের ভালোবাসায়, পুরস্কার-সম্মাননা-স্বীকৃতিতে নয়। তারপরও আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করছি সংগঠনটি লেখক সম্মাননা প্রদান কর্মসূচি ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। গঠনমূলক ও সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি বাড়লে লেখক সদস্যরা আরো আত্মবিশ্বাসী হবে, প্রতিভা বিকশিত হবে।
লেখালেখির ক্ষেত্রে আমি মনে করি, পড়া থেকেই লেখা । পাঠক থেকেই লেখক। লিখতে হলে পড়তে হয়। লেখালেখিতে কখনোই থামার সুযোগ নেই। লেখককে পাঠকের চেয়ে অনেক বেশি পড়তে হয়, নিয়মিত পড়া ও লেখা চালিয়ে যেতে হয়। তারই লেখার সময় থাকে, যার পড়ার সময় থাকে।
লেখালেখির ক্ষেত্রে স্বতস্ফূর্ততা লাগে, ভেতর থেকে আসতে হয়। কখনো লেখালেখিতে যদি বাধ্যবাধকতা চলে আসে, তখন লেখক তার ভালোলাগা-ভালোবাসার স্বাভাবিক গতিপথ হারায়। আত্মতুষ্টিও লাগে। মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হয়। লেখালেখির ক্ষেত্রে ধরাবাধা কোনো সূত্র নেই। একজন সফল লেখকের পন্থা-পদ্ধতিও আরেকজন লেখকের সাফল্যের ক্ষেত্রে সহায়ক নাও হতে পারে।
যার পড়তে ভালো লাগে না, তার লিখতে আসা ঠিক না। আর পড়া মানে শুধু বই পড়া নয়; জীবনকে পড়া, জগতকে পড়া, সমাজকে পড়া, সৃষ্টিকে পড়া, স্রষ্টাকে পড়া ইত্যাদিও হতে পারে।
কখনো কখনো পড়ার জন্য চোখ লাগে, আবার কিছু কিছু পড়ার জন্য মন লাগে। অর্থাৎ অনুধাবন, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি লেখালেখিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কল্পনা শক্তি দরকার, বিশ্লেষণী ক্ষমতা দরকার, ভাষাগত দক্ষতা দরকার।
সব পড়ে ফেলতে হবে বা সবসময় পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে বিশ্লেষণ করতে হলে, উপলব্ধি ক্ষমতা বাড়াতে হলে পড়তে হবেই। পড়া ও লেখা যাকে ক্লান্ত না করে আরো প্রাণবন্ত ও উদ্যমী করে তারা খুব সহজেই লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারে।
কারো কারো কলম দিয়ে ঝরঝর করে লেখা বেরোতে থাকে। আর কেউ কেউ মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুড়ি ছড়ান। লেখালেখির ক্ষেত্রে যখন যেটা মনে আসে, তখন সেটা লিখে ফেলতে হয়; যা মনে আসে তা ভুলে গেলে আর লেখাটা হবে না। জানা বিষয়ে লিখতে শুরু করতে হয়।
কে কী বলবে, কে কী ভাববে- এসব সংকোচ দূর করতে হয়। লেখালেখির অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রতিদিন লিখতে হয়। ফুরফুরে মনে ঝরঝরে মেজাজে লিখতে হয়। লেখালেখির জন্য বড় মাপের পণ্ডিত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক বড় মাপের পণ্ডিতও গুছিয়ে লিখতে পারেন না। মনের ভাব প্রকাশে দরকার চর্চা।
অনেক বক্তা আছেন যাদের বক্তৃতায় শ্রোতা বিরক্ত হয়। তেমনি জোরালো শব্দে অনুভূতি ফুটিয়ে তোলতে না পারলে লেখাও পাঠকের বিরক্তি উদ্রেক করে। অনেকে মানসিক প্রশান্তির জন্য মনকে ব্যথাতুর করে তোলার অনুভূতিগুলো লিখে ফেলেন। অনুভূতি সহজভাবে প্রকাশের মাধ্যমে মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়।
লেখালেখি আত্ম-সচেতন করে, আত্ম-নিয়ন্ত্রণের চর্চায় সাহায্য করে। চিন্তাশীল লেখা কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করে। তবে এজন্য নিরন্তর মাথা খাটাতে হয়। মৌলিক লেখার জন্য অফলাইনে থাকা তথা ইন্টারনেট সংযোগহীন কম্পিউটারে বসে লেখা দরকার। আবার গবেষণাধর্মী লেখার ক্ষেত্রে অনলাইনে থাকা তথা ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারে বসে লেখা দরকার।
একজন লেখক যখন লেখেন, তখন মানুষের জন্যই লেখেন। লেখালেখির জন্য নির্জনতার দরকার হয়, নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগের দরকার হয়। ভেতর থেকে আসতে হয়। লেখালেখির করার কিছু বিপদ আছে। ঝুঁকি আছে। কারণ এতে প্রতিক্রিয়া হয়। নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। এই বিড়ম্বনা কখনো মিষ্টি মধুর, কখনো অম্ল মধুর। মন্তব্য প্রদান করে ভুল বুঝাবুঝিও হয়।
লেখক একজন ব্যক্তির চোখেই সবকিছু দেখেন না; তিনি সমাজের চোখে দেখেন, জাতির চোখে দেখেন, সময়ের চোখে দেখেন, ধর্মের চোখে দেখেন, সংস্কৃতির চোখে দেখেন, ইতিহাসের চোখে দেখেন! ব্যাপারটা আসলে লেখকের ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক জীবনের অতীত-বর্তমানের অংশ সবসময় নয়। দেখতে হবে যে লেখক যে সমাজ-সংস্কৃতি-সময়ে বসবাস করছেন সেখানে এমন ঘটনার অস্তিত্ব আছে কি-না!
আসলে যারা লেখালেখি করেন; হোক তা কবিতা-গান-গল্প কিংবা নিবন্ধ! অনেকে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলেন কিংবা বিষয়টাকে স্পষ্ট করেন। এতে আবেগ থাকে, কল্পনা থাকে! নিজের যাপিত জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাও থাকে আবার অন্যের জীবন ও জগতকে পর্যবেক্ষণও থাকে।
লেখকরা মনের আনন্দেও লেখেন, মনের দুঃখেও লেখেন, ক্ষোভে-ক্রোধেও লেখেন! কেউ শখে লেখেন, কেউ দায়ে লেখেন। কেউ লেখেন বৈষয়িক সুবিধার বিবেচনায়, কেউ লেখেন মানসিক চাহিদার তাগিদে। কেউ লেখেন ভালো লাগে বলে, কেউ লেখেন নিজেকে প্রকাশের উদ্দেশ্যে!
লেখক ইচ্ছায়ও লেখেন, লেখালেখিই পেশা হলে অনেকসময় অনিচ্ছায়ও লেখেন! নিজের মন চাইলেও লেখেন, অন্য কেউ প্রকাশনার জন্য চাইলেও লেখেন! টাকার বিনিময়েও লেখেন, বিনিময় ছাড়াও লেখেন! উদযাপনেও লেখেন, প্রতিবাদেও লেখেন! উৎসাহিত করতেও লেখেন, নিরুৎসাহিত করতেও লেখেন! সচেতনতা বাড়াতেও লেখেন, বোকামি বুঝাতেও লেখেন!
প্রাণের সংগঠনের জন্য শুভ কামনা অবিরাম। সবার ভালোবাসায় একরাশ মুগ্ধতা। আপনার দোয়া ও ভালোবাসায় রাখবেন। সবার সুস্থতা ও নেক হায়াত কামনা করছি।