জ্ঞানভিত্তিক সমাজের রূপরেখা

আনিসুর রহমান এরশাদ : জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী বিষয়বস্তু শিক্ষা দেয়া মানে শুধু কনটেন্টকে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারঅ্যাকটিভ করা নয়, কার্যকর ও সময়োপযোগী নতুন প্রশিক্ষণ ব্যাপকভাবে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। ডিজিটাল পদ্ধতি দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করে ডিজিটাল ডকুমেন্টে রূপান্তর করে তা সংরক্ষণ ও বিতরণ করে কাগজের ব্যবহার কমানোর মানে সব সেক্টরেই ডিজিটাল যন্ত্র-ব্যবস্থা ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ মানে শুধু ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা বা সব কর্মকাণ্ড অনলাইনে প্রকাশ করা নয়; জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী করে গড়া- আইনগুলোকে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে, সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ও অধিদপ্তরগুলোকে এবং সব খাতগুলোকে। মেধাসম্পদ রক্ষা ও ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ।

জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কখনোই দুর্নীতিবাজ আমলা, ভুঁইফোঁড় রজনীতিবিদ ও প্রতারক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হবে না; এই সমাজে দাপট থাকবে সৃজনশীলদের, উদ্ভাবকদের ও আবিষ্কারকদের। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে বাড়বে জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি, জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ, জ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা, জ্ঞানভিত্তিক সংস্কৃতি, জ্ঞানভিত্তিক কর্মকাণ্ড, জ্ঞানভিত্তিক সেবা, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে নীতি ও আদর্শ

যে সমাজে মাত্রাতিরিক্ত বৈষম্য থাকে এবং জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সব ব্যবস্থা থাকে না- সেই সমাজ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ হতে পারে না। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে নীতি ও আদর্শ থাকে, সবাই অঙ্গীকার পূরণ করে, বিভাজন-বিভেদের চেয়ে ঐক্যে মনোযোগ থাকে। যে সমাজের মানুষ মন ও মস্তিস্কের শক্তিগুণে জ্ঞান সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে সচেষ্ট থাকে, সেই সমাজের মানুষ পেশীশক্তি প্রয়োগ করে বা ধান্ধাবাজি করে ওপরে ওঠতে চায় না।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রবেশ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রবেশ মানেই যথার্থ জ্ঞানার্জনের শিক্ষা পদ্ধতির আধুনিক অগ্রযাত্রা, চিন্তায়-মননে-রুচিশীলতায়-দৃষ্টিভঙ্গিতেও সমৃদ্ধি-উন্নয়ন-অগ্রগতি লাভে সক্ষম করা, আলোর পথের দিশারিদের আবিস্কার ও উদ্ভাবনের ফলভোগী হওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতা বিকাশের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির অবারিত সুবিধা। যে সমাজে জ্ঞান সৃষ্টি হয় না, জ্ঞানের পরিচর্যা নেই, গুণীর সম্মান নেই, সত্যের কদর নেই, বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের সক্ষমতা অর্জন হয় না- তা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নয়।

 জ্ঞানরাজ্যে সমৃদ্ধি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রজ্ঞাবান মানুষ বেশি, নবতর কিছু সৃষ্টি করে সমস্যা নিরসনে নতুন পথ নির্দেশ করার সক্ষমতা বেশি, জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ বেশি, ভেতরের শক্তিকে জাগরিত করার ব্যবস্থার গুরুত্ব বেশি, গবেষণা ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করার নীতি-নির্ধারক বেশি। জ্ঞান বিনির্মাণে সহায়তার মাধ্যমে জ্ঞানরাজ্যে সমৃদ্ধি এলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করা সহজ হয়।

জ্ঞানরাজ্যের দিগন্ত বিস্তৃত

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে গুরুত্ব পায়- মানসিক বিকাশ লাভ, মননের শক্তি শানিত করা এবং অনুভূতি বা বোধশক্তিকে সমৃদ্ধ করা। যেই সমাজে জ্ঞানরাজ্যের দিগন্ত বিস্তৃত হতে পারে না, মননের চর্চা দ্বারা জ্ঞানের সাধনাকে ইতিবাচকভাবে নেয়া হয় না সেই সমাজ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ হতেও পারে না।

জ্ঞানভিত্তিক সিস্টেমে জ্ঞানদক্ষতা

বিদ্যমান সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে- সমাজের মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে ও মানবসত্তাকে জাগ্রত করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সিস্টেমে জ্ঞানই প্রকৃত শক্তি। যার জ্ঞান আছে, সে-ই ক্ষমতাবান। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য জ্ঞানদক্ষতায় নজর দেয়ার কোনো বিকল্প নেই; ব্যক্তিগত পর্যায়েও জ্ঞান ও দক্ষতার মূল্য এত বেশি যে জ্ঞানই ভবিষ্যত।

 মনের খোরাক মেটাতে বই

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে কার দক্ষতা কী সেটাই তার পরিচয়; আভিজাত্য ও বংশপরিচয় গৌণ। যে যা জানেন, সেটাই তার শক্তি। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে মনের খোরাক মেটাতে বই পড়ার চর্চা- অভ্যাস বাড়াতে হবে, সভ্যতার সেতুবন্ধন গ্রন্থাগারকে আধুনিক অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুবিধাসম্পন্ন করতে হবে, বই সংরক্ষণ করতে হবে, মানসম্মত বই লেখায় উৎসাহিত করতে হবে, বইয়ের ক্রেতা ও প্রকাশক বাড়াতে হবে।

ডিজিটাল রূপান্তর

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হলে- অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হবে, কর্মপোযোগী গবেষক ও প্রয়োগযোগ্য গবেষণা আরও বাড়াতে হবে, প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল রূপান্তর যথাযথ হতে হবে, মানবসম্পদ বিশ্বমানের হতে হবে, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, জীবনধারা উন্নত হতে হবে, অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে হবে, উন্নয়ন টেকসই হতে হবে, কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হবে।

জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি

যে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা নেবে; তার ডিজিটাল সরকার মানে জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী স্বচ্ছ-দুর্নীতিমুক্ত সরকার, ডিজিটাল শিক্ষা মানে সময়ের উপযোগী যথার্থ শিক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি মানে শিল্প-কল-কারখানা-ব্যবসা-বাণিজ্যে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ-বৈষম্যমুক্ত-ভেজালমুক্ত-প্রতারণামুক্ত জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, ডিজিটাল সমাজে ডিজিটাল জীবনধারা মানে সুস্থ-সুন্দর-নিরাপদ শান্তি-স্বস্তির আধুনিক জীবনধারা।

দক্ষতা অর্জন

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে যুগের চাহিদা পূরণের দক্ষতা অর্জনে উপযোগী করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণকেও বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে সক্ষম সৎ-যোগ্য-দক্ষ সুনাগরিক গড়ায় সক্ষম হতে হবে। যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস ও রোবোটিক্স এর পরিবর্তিত অবস্থায়ও সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিতে পারে। প্রয়োজনীয় খাতে যথাযথ উচ্চ দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন বাড়াতে হবে সম্ভাবনার যথাযথ বিকাশের স্বার্থেই।

কর্মক্ষেত্রে দক্ষ জ্ঞানকর্মী

ডিজিটাল যুগের শিক্ষা দিয়ে এমনভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলতে হবে যাদের নৈতিকতা থাকবে, মানবপ্রেম থাকবে, দেশপ্রেম থাকবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে কর্মক্ষেত্রকে এত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে- যাতে কেউ বেকার-পশ্চাৎপদ না থাকে। মানবসম্পদ সৃষ্টির ধারাকে এমনভাবে নতুন রূপে গড়তে হবে- যাতে জনগোষ্ঠী প্রস্তুত হয় দক্ষ জ্ঞানকর্মী হিসেবে। জ্ঞান যেহেতু কেউ কেড়ে নিতে পারে না, তাই নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে কিছু বিনিয়োগ করতেও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষের আপত্তি থাকে না।

 ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার

জ্ঞানকর্মীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম হবে এবং ডিজিটাল কাজে সুদক্ষ হবে। প্রচলিত কাজ করার দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমশক্তি বানানোর চেয়ে নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানকর্মী বানানোর কাজকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমেই বেকারত্বের যন্ত্রণায় ভোগা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। অবশ্য শিক্ষকের যোগ্যতা, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার বিষয়বস্তুতে ইতিবাচক পরিবর্তন না আনলে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা জ্ঞানকর্মী তৈরিতে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারবে না।

ডিজিটাল যন্ত্রের সহজলভ্যতা

শুধু ডিজিটাল যন্ত্র সহজলভ্য হলেই হবে না, যথাযথ ব্যবহার করা শেখানোও নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সংশ্লিষ্টদের আয়ত্তের মাঝে আনলেই হবে না, ইন্টারনেটের অপব্যবহারও রোধ করতে হবে। স্কুলের অবকাঠামোকে ডিজিটাল ক্লাসরুমের উপযুক্ত করে তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষকদেরকেও নতুনত্বকে আয়ত্বে নিতে হবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও দেশীয় বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখেই পাঠক্রম ও পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী করতে হবে।

গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার থাকবে, পরিবারগুলোতে পারিবারিক লাইব্রেরি থাকবে, সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকবে, এমন কোনো গ্রাম থাকবে না যেখানে গ্রন্থাগার থাকবে না, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও গ্রন্থাগার থাকবে, শহরে এমন কোনো উঁচু উঁচু দালান থাকবে না যেখানে কমন পাঠক কর্নার বা রিডার কর্নার থাকবে না।

জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ সনদমুখী শিক্ষাতে সন্তুষ্ট হয় না, গবেষণায় মনোযোগী ও জ্ঞানচর্চার স্বার্থে প্রতিষ্ঠান গড়তে উৎসাহী, জ্ঞানচর্চার জোয়ারে পঠনপাঠন ও চিন্তা-ভাবনা বাড়াতে আগ্রহী। এই সমাজে নানা ধরনের বিষয়ভিত্তিক সংগ্রহশালা ও বিভিন্ন দরকারী যন্ত্রপাতি বেশি মূল্য পায়।

প্রকৃত জ্ঞানচর্চা গুরুত্বপূর্ণ

যারা সত্যিকারার্থেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার তাগিদ ভেতর থেকে অনুভব করেন- তারা মুখস্থবিদ্যার সম্প্রসারণের চেয়ে যুক্তিবাদী মন তৈরিকে গুরুত্ব দেন, যথাযথ ব্যাখ্যা হাজির করতে সচেষ্ট থকেন, কোনো বিষয়ে খণ্ডিত-আংশিক-বিচ্ছিন্ন ধারণার চেয়ে সম্পূর্ণ জানাকে দরকার মনে করেন, প্রশ্ন উত্থাপনকে উৎসাহিত করে উত্তর দানে আন্তরিক থাকেন, সমালোচনায় সময় নষ্ট না করে তুলনামূলক আলোচনা ও গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকেন; প্রকৃত জ্ঞানচর্চা প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়।

নতুন জ্ঞান সৃষ্টি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ- অন্যের জ্ঞানের দাসত্ব করে না, অন্যে জ্ঞানের অনুকরণ করে না, নিজেরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে, স্বাধীনভাবে জ্ঞানচর্চা করে। জ্ঞানচর্চায় আছে মানেই প্রাণবন্ত আছে, প্রাণশক্তি আছে, কৌতূহল আছে, অনুসন্ধিত্সা আছে, জিজ্ঞাসা আছে, জ্ঞানের জগতে মৌলিক অবদানের সাহস আছে, হাতে-কলমে পরীক্ষা করার মনোভাব আছে।

সামগ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক নির্দেশনা

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে বিজ্ঞানের ল্যাবভিত্তিক কাজগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয় না, সমাজবিজ্ঞানের কাজকেও অবহেলা করা হয় না, কলা ও মানবিকী বিদ্যা জাগতিক চর্চাকেও মূল্যহীন ভাবা হয় না। সমাজবিজ্ঞান ও কলা অনুষদের বিভাগগুলোতে অধ্যয়নকারীদের চাকরির বাজারে দাম অপেক্ষাকৃত কম হলেও জাতির সামগ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক নির্দেশনা তাদের কাছ থেকেই আসে বলে এদের প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি।

প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও যথার্থ অবকাঠামো

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টরা মুখিয়ে থাকেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকার মাধ্যমে, বিজ্ঞানচর্চার যথার্থ অবকাঠামো তৈরি করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি সম্ভব। জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রকে গুরুত্ব এমনভাবে দিতে হবে যে ফ্ল্যাটগুলোতেও পড়াশোনার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকবে; এমন কোনো বসতবাড়ি থাকবে না যেখানে পড়াশোনার জায়গা থাকবে না।

বইপড়া  সামাজিক আন্দোলন

নিয়মিত বই কিনে বইকেনার প্রবণতা উৎসাহিত করতে হবে, নতুন নতুন বই না আসলে বইপড়ার প্রবণতা নিরুৎসাহিত হবে। কম্পিউটার ল্যাব বা লাইব্রেরি গড়ে তোলা দায়সারা ভাবে না করে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে সার্বিক কৌশল এমন হবে যে বইপড়া একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হবে, সচেতনতা বাড়াতে সমন্বয় বাড়বে ও চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবানুগ দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতা সুদৃঢ় হবে।

মেধাভিত্তিক আলোকিত সমাজ

পেশাগত কাজকে সূচারুভাবে সম্পন্ন করতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্স প্রবর্তন করে একটি মেধাভিত্তিক আলোকিত সমাজ গড়ে তোলতে হবে। মেধাজাত সম্পদ সৃষ্টি, তার সুরক্ষা এবং বিকাশের মাধ্যমে অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু অঙ্গীকার যথেষ্ট নয়; সকলেরই তথ্য ও জ্ঞানে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা দরকার।

মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা

দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ সৃষ্টি করলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। সমাজে সৎ ও শিক্ষিত মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় নেই। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম আলোকিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকশিত করা, সমাজের বাস্তব চিত্র থেকে শেখানো, উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে জ্ঞানের আলোকে আত্মস্থ করানো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং জীবনের জন্য যথাযথ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জ্ঞানের বিকাশ ও মানবিক মূল্যবোধ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ও মানবিক মূল্যবোধের বিষয় খুবই গুরুত্ব পায়। মানুষেরা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে সীমাবদ্ধ জ্ঞানকে প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা-সাধনা করেন, দীর্ঘ মেয়াদে জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞানের গভীরতা বাড়ান, জ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের পরিবর্তন-উৎকর্ষতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সচেষ্ট থাকেন।

উন্নত ও সর্বজনীন চিন্তাশক্তি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে মানুষ ইতিহাস বিকৃতি করে না, মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ায় না, জ্ঞানবিচ্যুতি ও পশ্চাৎপদতা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাদের থাকে উন্নত ও সর্বজনীন চিন্তাশক্তি, তাদের জ্ঞান বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তারা জ্ঞানের অনেক অজানা বিষয় ও জগৎ সম্পর্কে ভাবে এবং তাদের মন ও মানসিকতাও ইতিবাচক-শুদ্ধ-সুন্দর।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের নাগরিক

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকে, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা থাকে, সামাজিক সম্প্রীতি থাকে, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকে এবং রাজনৈতিক ঐক্যের শক্তি থাকে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের নাগরিকরা উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলতে নিবেদিত থাকে, প্রতিটি সেক্টর সুচিন্তিত-সুপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়।

সামনে এগিয়ে চলতে গবেষণা

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষের মানসিকতা হয় উন্নত, দৃষ্টিভঙ্গি হয় ইতিবাচক, রুচিবোধ হয় সুন্দর; এরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, ঐতিহ্য ও শিকড়কে ভুলে যায় না ও দেশীয়-স্বজাতীয় নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে সামনে এগিয়ে চলতে গবেষণা হয়, বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরশ্রীকাতরতা নেই

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরশ্রীকাতরতা থাকে না, গীবত থাকে না, আরেকজনের উন্নতিতে ঈর্ষা করার সংকীর্ণতা থাকে না, গোঁড়ামি ও মানুষের গোলামির মানসিকতা থাকে না। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ হয় স্বার্থহীন, সংস্কারমনষ্ক, উদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন, সাহসী ও মানসিকভাবে দৃঢ়তা সম্পন্ন; যারা মিথ্যা-অন্যায়ের পথে যাতে সমাজ এগিয়ে না যায় সেজন্য স্বতস্ফূর্ত-সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

সমাজ রাষ্ট্র স্রষ্টার প্রতি দায়বদ্ধতা

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়াই এমন যে, এই সমাজের মানুষ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র-স্রষ্টার প্রতি দায়বদ্ধতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সমাজব্যবস্থাকে আরো অগ্রসরমাণ করে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞান আহরণের সুযোগ বেশি, যেখানে জ্ঞান বাণিজ্যিকীকরণের চেয়ে জ্ঞান বিতরণই প্রাধান্য পায়।

 সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মনোযোগী

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ জ্ঞানে যেমন সমৃদ্ধ তেমনি মানুষের মানসিকতাও খুবই সমৃদ্ধ। এরা প্রয়োজন ও সমস্যার সাময়িকভাবে সমাধানের চেয়ে স্থায়ীভাবে সমাধানে বেশি মনোযোগী। এরা উৎস যাচাই না করে তথ্য বিশ্বাস করেন না, কারণ না জেনে গুজব-মিথ্যা প্রপাগান্ডায় কান দেন না, বিশ্লেষণ না করে গ্রহণ করেন না, গভীরতায় না গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন না ও বিকল্প পন্থাগুলোও জেনে-বুঝে যাচাই-বাছাই করে বিবেচনা করেন।

প্রকৃত জ্ঞানে সমৃদ্ধ জ্ঞানী বৃদ্ধি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের একজন মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণ-মঙ্গল চিন্তা করেন, নিজের স্বার্থের চেয়েও পরের স্বার্থের ব্যাপারে এদের বোধবুদ্ধি বেশি টনটনে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রকৃত জ্ঞানে সমৃদ্ধ জ্ঞানীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, অনেকেরই স্বকীয়তা ও উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি থাকে, নীচু-হীন মানসিকতা কমে যেতে থাকে, জ্ঞানী-গুণীদের কদর-সম্মান-মর্যাদা থাকে।

নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্নরা গুরুত্বপূর্ণ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রতিটি সেক্টরেই নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্নদের গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। ডিগ্রি অর্জনের সার্টিফিকেটের চেয়ে একজন মানুষের মানবীয় গুণাবলি, আচার-আচরণ, দেশের প্রতি তার আনুগত্য, নীতি-নৈতিকতা, জীবনাচরণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, কর্মক্ষেত্রে তার সাফল্য ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

সম্পর্কের উপাদান বিশ্বাস ও মূল্যবোধ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, পরস্পরের যৌক্তিক আচরণগুলোও ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায় এবং ব্যক্তির নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা অক্ষুন্ন থাকে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ক্ষমতাভিত্তিক সমাজ নয়, এখানে সবাই যার যার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিক এবং জ্ঞানচর্চার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিষয়টি দুর্বল।

জীবনে শুদ্ধাচার চর্চা

জ্ঞানভিত্তিক সমাজকাঠামোতে জীবনে শুদ্ধাচার চর্চার মাত্রার ওপর গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা নির্ভরশীল, কলুষমুক্ত উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকার ওপরই সামাজিক স্বীকৃতি নির্ভরশীল। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে বলেই মাদককে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে দেখা যায় না। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ভারসাম্য ও সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা দেখা যায়। উন্নত মানসিকতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেকপূর্ণ মনোভাবাপন্ন প্রকৃত জ্ঞানপিপাসুদের অগ্রযাত্রার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।

আধুনিক স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন হয় দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর মাধ্যমে, জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার মাধ্যমে, অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতার মাধ্যমে, মনোবলকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্রে থাকে জনগণের সেবক সরকার, আধুনিক সময়ের উপযোগী নীতিমালা, যথাযথ দক্ষতা সম্পন্ন দেশপ্রেমী প্রশাসন এবং জনবান্ধব মানসিকতার মানবদরদী জনপ্রতিনিধিরা।

নাগরিকের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে অন্যায্য বৈষম্য থাকে না, সকল নাগরিকের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সকল ব্যবস্থা করা হয়। কর্মহীন-অন্নহীন মানুষ থাকে না, সবার বস্ত্রের নিশ্চয়তা থাকে, বিশ্বমানের শিক্ষায় মানসম্মত মানবসম্পদ গড়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকে, চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে এবং সবার নিরাপদ বাসস্থান থাকে।

থাকে সামাজিক সুবিচার

জ্ঞানভিত্তিক সমাজে সাজানো মামলায় প্রহসনের বিচার থাকে না, সন্ত্রাসীদের পৃষ্টপোষকতা থাকে না, দুর্নীতির জয়জয়কার থাকে না ও আদর্শহীনতার কারণে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির ব্যাপকতা থাকে না।  এখানে সামাজিক সুবিচার থাকে, সর্বত্র ন্যায়বিচার থাকে, বঞ্চিতদের হাহাকার থাকে না, আলোকিত মহৎপ্রাণদের নেতৃত্ব থাকে, সাধারণ মানুষেরও দেশপ্রেম-মানবপ্রেম থাকে।

মৌলিক ও বিশেষ সমস্যাগুলোর সমাধান

একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানচর্চার পরিবেশ ও গবেষণা থাকে, জাতির মৌলিক ও বিশেষ সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে নানা ধরনের পরিকল্পনা থাকে। অধিকাংশ মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো থাকায় বাইরের যাবতীয় অন্ধকার দূরীভূত হয়। কল্যাণ ও মঙ্গল চেতনার আলোকে উদ্ভাসিত অন্তর থাকায় কল্পনা ও সৃজনশীলতার জগৎ গুরুত্ব পায়। গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার হয়ে উঠে সকলের পথ চলার পাথেয়, প্রজন্ম হয় মেধানির্ভর প্রযুক্তিনির্ভর।

 শান্তিপূর্ণ মনোভাব ও ইতিবাচক আচরণ

মানবিক মুল্যবোধহীন মানুষদের দ্বারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ অসম্ভব। শান্তিপূর্ণ মনোভাব ও ইতিবাচক আচরণে অনভ্যস্তদের দ্বারাও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন হবে না। প্রযুক্তি শিক্ষা এমনভাবে হতে হবে যাতে সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত হয়। নতুন প্রজন্ম যাতে মেধাবী, সুশৃঙ্খল, সুস্থ, পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়েম ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে।

পদ্ধতিগত উপায়ে সমৃদ্ধ হওয়া

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তথ্য ভিত্তিক সমাজ। এই সমাজে পদ্ধতিগত উপায়ে সমৃদ্ধ হওয়া সহজ, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সহজ, জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো সহজ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করাও সহজ। এই সমাজের মানুষের নৈতিক ব্যবহার ভালো, এরা লেখার ক্ষেত্রে কুম্বীলক বৃত্তি এড়িয়ে চলেন, বলার ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেশন এড়িয়ে চলেন, কাজের ক্ষেত্রে চুরি করা এড়িয়ে চলেন।

দেখান সভ্যতা, দেখেন সমৃদ্ধি

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ বলেন শুদ্ধ, লেখেন শুদ্ধ; তাই করেন যা করা উচিত, তাই বলেন যা বলা উচিত, তাই লেখেন যা লেখা উচিত। এরা দেখান সভ্যতা, দেখেন সমৃদ্ধি, করেন টেকসই উন্নয়ন। এরা তৈল মর্দনে পারদর্শী না হয়েও বিপ্লব ঘটান, নকলে সেরা না হয়েও সৃজনশীল কর্মসৃষ্ঠির মাধ্যমে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছান। এরা নিজে স্বীকৃতি না পেলেও অন্যকে স্বীকৃতি দেন, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মে সঠিক উপায়ে পরিচালিত হন এবং দেশ বিনির্মাণের অগ্রবর্তী সৈনিকদের পরিচালনা করেন।

চাহিদা বাড়ে, যোগানও বাড়ে

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষের নৈতিকতাই তাদের সৌন্দর্য, মানবিকতাই তাদের শক্তি, আদর্শই তাদের প্রেরণা। একদিকে তারা জ্ঞানপিপাসু, আরেকদিকে চাহিদা মেটাতে সর্বাত্মক চেষ্টায় বিশ্বাসী। ফলে তাদের যতই চাহিদা বাড়ে, ততই যোগানও বাড়ে। জ্ঞান ও জানার পরিধি বাড়িয়ে মূলত তারা সেবার মান ও সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়েই চলে। প্রচণ্ডভাবে যান্ত্রিক হয়ে হয়েও তারা সমালোচনাকে নেয়ার মতো মানবিকতায় থাকে, বিতর্কেও ক্রুদ্ধ হয় না।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের আলোকিত মানুষ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষকে আলোকিত করে জ্ঞান, মনের খোরাক জোগায় জ্ঞান, মনের তৃষ্ণা মেটায় জ্ঞান, দরকার পূরণ করে জ্ঞান, জীবনকে পাল্টে দেয় জ্ঞান, আত্মার খোরাক জোগায় জ্ঞান, শ্রেষ্ঠ আত্মীয় জ্ঞান, ভালো সম্পর্ক থাকে জ্ঞানীর সাথে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষ আলোক পথচারী, আলোকিত মানুষ; যাদের বুকে সুন্দরের তৃষ্ণা, মনে ভালোবাসার মন্ত্র,  সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাকারী।

তথ্যসূত্র

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে করণীয়, ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, কালের কণ্ঠ, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এক দূরের স্বপ্ন, আবুল মোমেন, ২৬ জুলাই ২০১৮, প্রথম আলো
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে করণীয়, মো. মোস্তাফিজার রহমান, সমকাল, ২২ ফেব্রুয়ারি ২২
জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের পথে, মোস্তাফা জব্বার , যুগান্তর, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বই পড়ার চর্চা বাড়াতে হবে: রাষ্ট্রপতি, বাসস, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
একুশ শতক ॥ জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা, জনকণ্ঠ, ৪ জানুয়ারি ২০১৫
জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কৌশল, জাগো নিউজ, মোস্তফা জব্বার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
কী করে গড়া যায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, সরকার তা ভাবে , জাগো নিউজ, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

গ্রন্থাগার ও একটি হাজার বছরের পরিকল্পনা, ফিরোজ মিয়াজী, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
পাঠাগার : প্রসঙ্গ শিশুদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ, এম এ খালেক, ০৭ জুন ২০২১
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে পাঠাগার, ইমরান হোসাইন, দৈনিক আমাদের সময়, ১১ মার্চ ২০২২
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে নজর দিতে হবে : পলক, টেকশহর ডটকম, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বুক ডোনেশন ক্যাম্পেইন করছে লাইটশোর, ইত্তেফাক অনলাইন , ০৬ এপ্রিল ২০২২
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া, আনিসুর রহমান এরশাদ, জিনিউজবিডি ডটকম
জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানচর্চা, আনিসুর রহমান এরশাদ, শিক্ষাবার্তা ডট কম
জ্ঞানভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন, আনিসুর রহমান এরশাদ, ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্স

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *