চিন্তার দর্পণে চিন্তাশীলের মুখ

মাত্রাতিরিক্ত কুচিন্তায় অন্তর হয় অসুখী, উপকারী ও ইতিবাচক চিন্তায় অন্তর হয় সুখী। কঠিন পরিস্থিতিতেও ভালো কাজ উত্তম অনুভূতি তৈরি করে, আর নিরাশ ও অবিশ্বাসী অন্তর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ভুগে।

জিহ্বা থেকে ভুল করে কথা যত বেশি বের হয়, তত বেশি মর্যাদা কমে। জিহ্বা থেকে সঠিক ও যথার্থ কথা যত বেশি বের হয়, তত বেশি মর্যাদা বাড়ে।

যারা মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, তারা মানুষের প্রশংসা না পেলেই কাজে আগ্রহ হারায়। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, মানুষের অভিযোগ বা সমালোচনা তাদের কাজের গতিকে আরো বৃদ্ধি করে।

আল্লাহ যাকে তুলে ধরেন, তিনি শতবার পিছলে গেলেও নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। যিনি আল্লাহকে জেনে-বুঝে মানেন না, তিনি একবার বোঝা অনুভব করলে বা মূল্যহীন মনে করলেই জীবনের অর্থ বা বেঁচে থাকার কোনো মানেই খুঁজে পান না।

পৃথিবীতে বেশি দুর্নীতি করছে শিক্ষিত লোকেরাই। অর্থাৎ শিক্ষা প্রকৃত মানুষ বানাতে পারেনি। সত্যিকারের গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে যত শক্তিশালী, সেখানে সিস্টেম ততই দুর্নীতিমুক্ত। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা দুর্নীতির প্রবল জোয়ার তৈরি করে।

যেখানে ধর্ম চর্চা যত বেশি দুর্বল আর অশ্লীলতা ও অবাধ মেলামেশা যত বেশি সহজলভ্য, সেখানে পারিবারিক ব্যবস্থা তত বেশি ভঙ্গুর। মা-বাবার সংস্পর্শ ছাড়া বেড়ে ওঠা শিশুরা মানুষের গুণাগুণ পায় না; ফলে তাদের নেতৃত্ব পৃথিবীর ধ্বংসকেই ত্বরান্বিত করবে।

পারিবারিক জীবন অটুট রাখা ছাড়া শুধু সামাজিক জীবন মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক বিকাশে মোটেই যথেষ্ট নয়। পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়া মানেই আবেগশূন্য- বিবেকশূন্য-হীনমন্যতাবোধ সম্পন্ন অমানুষ স্বার্থপরদের বৃদ্ধি ও বিকাশ।

যারা মিথ্যা বলা ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়াকে স্বাভাবিক মনে করেন, তারা ইসলামের ধারক-বাহক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে ব্যক্তিজীবনে লাভবান হলেও আদর্শের বড় ক্ষতি করেন। অনেক ক্ষেত্রে কাফের-মুশরিকদের চেয়েও মুনাফিকরা মুসলমানদের বড় শত্রু হয়ে যায়।

পৃথিবী যোগ্য মানুষের। এই যোগ্যতা সমাজ পরিচালনার, প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার, সংগঠনে নেতৃত্বদানের। শুধু ভালো মানুষ পরকালের আশা করতেই পারেন, তবে ইহকালে যোগ্যতা না থাকলে আশা না করাই ভালো।

ইলম ছাড়া ঈমান নড়বড়ে আর আমলও অপরিপূর্ণ। ইসলামের প্রকৃত অনুসরণ ও অনুকরণের মধ্য দিয়ে সমাজে ভালো মানুষের অভাব পূরণ হতে পারে।

নীতি-নৈতিকতা ও শুদ্ধতার চর্চা ব্যক্তিজীবনে সীমাবদ্ধ রাখলে মৃত্যুর পরে জান্নাত লাভে তা সহায়ক হলেও, এসবের সামগ্রিক ও সামষ্টিক চর্চা ছাড়া এই জগতে নরক যন্ত্রণার তীব্রতা দিনদিন বাড়বেই।

ধর্মের বিধিবদ্ধ নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাগুলো বাস্তবায়ন না হলে বিবেক কখনোই সঠিকভাবে কাজ করে না। নিজের জীবনে বাস্তবায়ন ছাড়া ভালো কথা বললে তা কেউ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে না।

যারা স্বার্থের সংঘাতেই হেরে যান সভ্যতার সংঘাতে বা আদর্শিক লড়াইয়ে তাদের বিজয় নিষ্প্রয়োজন। নৈতিকতা ও রুচির স্ট্যান্ডার্ড কুরআন থেকে নিলে তা হবে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়।

নৈতিকতা শুধুমাত্র মানুষের জন্যই। মানুষেরই রয়েছে বিবেক ও চিন্তা-কর্মের স্বাধীনতা। নৈতিক শিক্ষা এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে এছাড়া ভালো মানুষ বা ভালো মুসলমান কোনোটাই হওয়া যায় না। নৈতিকতার মানে যে উত্তীর্ণ নয়, মানবিক দায়িত্ববোধ তার থাকে না।

আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান প্রজন্মের কিছু মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়। সাধারণত মানুষ পরিবর্তন চায়, নতুনত্বকে গ্রহণ করে, আদর্শের ভিশনকে পছন্দ করে, ভেতর থেকে সত্যকে-ভালোকে গ্রহণ করতে চায়।

সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য যোগ্যতা দরকার। এই যোগ্যতার ভিন্নতার কারণেই কেউ কট্টরপন্থী, কেউ উদারপন্থী, কেউ আস্তিক, কেউ নাস্তিক, কেউ সুপথ প্রাপ্ত, কেউ দিশাহীন।

লোহা ও তামাকে স্বর্নে পরিণত করা যায় না। তেঁতুল বীজ লাগালে আমগাছও হয় না। আত্মাকে পরিশুদ্ধ না করে আল্লাহর প্রিয়ও হওয়া যায় না। পাপে লিপ্ত ব্যক্তি পূণ্যবানের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহগার তাওবা না করলে নিজেই দুর্ভাগা, অন্যের মুক্তি-উন্নতি তার দ্বারা হবে এমনটি আশা করাও অযৌক্তিক।

শরীর অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যায়। মন অসুস্থ হলে মনোচিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু আত্মা অসুস্থ হলে যেতে হয় কুরআনের কাছে, যোগাযোগ বাড়াতে হয় আল্লাহর সাথে। যার আত্মা মরে যায়, তার দেহ-মনের বেঁচে থাকা অর্থহীন-মূল্যহীন।

পরকালের ধারণা ছাড়া সুবিচার সম্ভব নয়। ১ জনের খুনীকে ১ বার ফাঁসি দেয়া যায়, লক্ষ জনের খুনিকেও একাধিকবার ফাঁসি দেয়া অসম্ভব। ফলে সবার প্রতি সুবিচার করতে হলে এই জীবনের পর আরেকটি জীবন বা এই পৃথিবীর পর আরেকটি জগত থাকতেই হবে।

জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্যখাতে খরচ বাড়ছে, সুস্থ মানুষ মারতে অস্ত্র তৈরিতে বরাদ্দও বাড়ছে। হিটলার-গোয়েবলস-মুসোলিনি ও তাদের অনুসারীরাই ২টি বিশ্বযুদ্ধ ও ইরাকে সিরিয়ায় আফগানিস্তানে মিয়ানমারে ফিলিস্তিনে ইউক্রেনে মানুষ মারছে।

মানুষের পরিকল্পনা সব সময় নিখুঁত নয়, তবে আল্লাহর পরিকল্পনা সব সময়ই নিখুঁত। মানুষের মাঝে কৃত্রিমতা বেশি, তবে ফেরেশতাদের সবই অকৃত্রিম। খারাপ কাজে শয়তানের অনুসারীদের অন্তরে জাগে আনন্দ, আর আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের অন্তরে জাগে কষ্টের তুফান।

জীবন যে উদ্দেশ্যেই পরিচালিত করি না কেন, একসময় জীবন ফুরিয়ে যাবেই। স্বার্থহীনভাবে ত্যাগ করি আর না করি, একদিন সব ফেলে যেতে হবেই। আয়োজন দুনিয়াকেন্দ্রিক হলে পরকালে নাও পেতে পারি; তবে আয়োজন পরকালকেন্দ্রিক হলেও দুনিয়ায় নির্ধারিত সবটুকু অবশ্যই পাবো।

ভুল থেকে শিক্ষা নিলে ভুল হতেও পারে আশীর্বাদ, তবে ভুল হলেও অনুতপ্ত ও অনুশোচনা না জাগলে নিশ্চিতভাবেই ভুল হয় অভিশাপ। যিনি আলো খুঁজেন, তিনি আলোর দেখা পান; যিনি অন্ধকারকে মেনে নিয়ে তৃপ্ত থাকেন অন্ধকারেই রয় তার বসবাস।

যারা পেছনে টানে, তাদের পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। যাদের অন্তর স্বার্থপরতা নয় ভালোবাসা দিয়ে ভরা, তাদের পাশে থাকুন ও পাশে রাখুন। অন্যকে তুচ্ছ ভেবে যিনি উপেক্ষা করেন, তার অন্তর ব্যক্তিত্ববান ও মর্যাদা সম্পন্নদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নয়।

অল্প সময়ের প্রশিক্ষণেরও প্রভাব থাকতে পারে আজীবন। প্রশিক্ষণ হতে পারে আধ্যাত্মিকতার উন্নয়নে, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার লক্ষ্যে, ব্যক্তিগত জীবনকে সুন্দর করতে, পারিবারিক সুখ নিশ্চিত করতে, সামাজিক দক্ষতার বিকাশে, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র ও সুনাগরিক গঠনে, শান্তিময়- বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ায় বৈশ্বিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে।

আদম আ. শুধু প্রথম মানুষই নন, প্রথম নবীও। মানব সভ্যতার শুরু নবুওয়াতের শিক্ষায়। ইসলামের যাত্রা-প্রতিষ্ঠা মানব ইতিহাসের জন্ম থেকেই । মুহাম্মদ সা. এর মাধ্যমে সেই ইসলাম সম্পূর্ণ-পরিপূর্ণ হয়েছে।

শুধু বক্তৃতা দিয়ে-শোনে প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন করা যায় না। বাস্তবে ভালো-যোগ্য মানুষ হিসেবে নজির স্থাপন করা ছাড়া শুধু সোস্যাল মিডিয়া কাপিয়ে নৈতিকতার বিপর্যয় বা অবক্ষয় রোধ করা যাবে না।

মিথ্যা বলা ও মিথ্যারোপ করা সহজ। মিথ্যা প্রচার করাও সহজ। মিথ্যা দ্রুত ছড়ায় বাধাহীনভাবে। মিথ্যার কোনো সীমা নেই। খেয়ালখুশি মতো ইনিয়েবিনিয়ে বলা আজগুবি কথাবার্তা সাময়িকভাবে অনেকেরই ভালোলাগে। মিথ্যার মায়াজাল-বেড়াজাল যাকে সম্মোহিত করে সে মানুষ হিসেবে পিছিয়ে যেতেই থাকে।

সত্য কঠিন হলেও বড়ই প্রয়োজনীয়। সত্যকে প্রচার-প্রকাশ-উপস্থাপন করা কঠিন। সত্য বলতে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। তবে সত্যের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক থাকায় সত্যের শক্তি অসাধারণ। সত্যের শিকড় অনেক গভীরে; কেউ সত্যকে গ্রহণ করলে সাধারণত কখনো ছেড়ে দেয় না। বিজ্ঞান সত্যকেই গ্রহণ করে বলে সত্যই টিকে থাকবে।

ধর্মহীন জীবন আসলে ভিশন ছাড়া জীবন; যে জীবনের সুনির্দিষ্ট কোনো চূড়ান্ত লক্ষ্য নেই। যিনি প্রকৃত ধার্মিক তিনি বস্তুবাদ-ভোগ-বিলাস ত্যাগ করতে পারেন, এমনকি রাজা-বাদশাহ হলেও সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন।

মুসলমানদের অধঃপতনের মূলে রয়েছে নিজেদের অনৈক্য, বিভ্রান্তি ও দলাদলি। ঐক্যের ভিত্তি কুরআনকে আঁকড়ে না ধরার কারণেই পরস্পরের এত কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি।

যে মেধাবীরা দেশ ধ্বংস করে, জাতির ক্ষতি করে; সেই সকল মেধাবীর কোনো প্রয়োজন নেই। যে পেশাজীবী দেশের সেবা বা মানুষের সেবাকে গৌণ ভেবে শুধু টাকাকেই প্রাধান্য দেয়; সবার ওপরে টাকাকেই স্থান দেয়া সেই পেশাজীবীর কোনো দরকার নেই।

অস্থায়ী শান্তিকে স্থায়ী শাস্তির কারণ বানানোর চেয়ে অস্থায়ী কষ্টকে স্থায়ী শান্তির উপায় হিসেবে নেয়া উত্তম। কেউ যদি বুঝতো অন্যের ক্ষতি করায় নিজের কত বড় সর্বনাশ আর অন্যের উপকার করায় নিজের কত বেশি কল্যাণ- তাহলে নিজের ক্ষতি স্বীকার করে হলেও পরের কল্যাণে নিবেদিত হতো।

অন্তরে রোগ-ব্যাধিমুক্ত মুসলিম, দৃঢ় অঙ্গীকার সত্যে পরিণতকারী মুমিন, অধিক ইনসাফপূর্ণ আচরণকারী বিনয়ী, সংকল্পে অনঢ় সত্যনিষ্ঠ, পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রীতে অনাগ্রহী দানশীল, ত্রুটি-বিচ্যুতিমুক্ত থাকায় আন্তরিক ধৈর্যশীল এবং আল্লাহকে ভয়কারী মুত্তাকিরাই পরকালমুখী ও জান্নাতী।

মানুষ হয়ে মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করা, মানুষের রচিত পথ অনুসরণ করা, মানুষের একনিষ্ঠ আনুগত্য করা, মানুষকে ভয় করে অভিভাবক বানানো, মানুষকে গোলাম করে রাখা- মূলত স্রষ্টাকে উপেক্ষা করে শয়তানের ক্রীড়নকে পরিণত হওয়ার নামান্তর।

যারা কথাবার্তায় অবান্তর, দুর্বলদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, অহংকারবশত অসদ্ব্যবহার করে, অবজ্ঞাভরে বাক-বিতণ্ডা করে, চলাফেরায় অসংযত, মন্দ কাজে অগ্রগামী, অসদ্ভাবে বসবাস করে; তারা সঠিক পথের পথিক নয়।

শান্তি-সুখে আমোদ-আহলাদে ভুলে যায় জীবনে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হতে পারে! অনুগ্রহ পেয়ে অকৃতজ্ঞ হয়ে বিদ্রোহী আচরণও করে। আনন্দ বেদনায় রূপান্তর হলে রাত্রির গাঢ় অন্ধকারের মতো মুখমন্ডল হয় মলিন!

বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উদ্দেশ্য হবে- যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দান, সময়োপযোগী চিন্তা-চেতনার উন্মেষ, বহুমুখী কাজের সমন্বয় সাধন, ছোটখাটো বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সম্ভাবনার বিকাশ ও চিন্তার জগতে ঐক্যমত আনয়ন।

অপকর্মে জড়িতরা কল্যাণকর কাজে নিয়োজিতদের অধিকারের ব্যাপারে উদাসীনই হয়। তারা চায় জীবনে সুখ, সম্পদের নিরাপত্তা ও সম্মান-মর্যাদার নিশ্চয়তা। চাকচিক্যময় কাজকর্মে তাদের বাড়াবাড়ি আমলকে অসুন্দর করে, শান্তি-প্রশান্তিকে নষ্ট করে।

অন্যের রুচি নিয়ে বিদ্রুপ-সমালোচনা করার পূর্বে নিজের রুচি নিয়ে আত্মসমালোচনা করা দরকার।

পরের জুলুমের শিকার হলে মজলুম জুলুমকারীকে চিনতে-বুঝতে পারে; কিন্তু নিজের প্রতি জুলুমকারী অধিকাংশ সময়ই জুলুমের ব্যাপারটি বোঝতেই পারে না।

চিন্তার পরিশুদ্ধি না থাকলে সেই চিন্তার ওপর নির্ভর করে যথার্থ কাজ হয় না। যে চিন্তা বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য নয়, সেই চিন্তা থেকে বাস্তবতা বিবর্জিত পরিকল্পনা আসে; যা কোনো কাজেই লাগে না।

চুলগুলো সাদা হয়। হাড়গুলো দুর্বল হয়। তবুও দাম্ভিক-অবাধ্যরা দয়া-মায়া দেখায় না, জীবন যাপনে পবিত্রতার চর্চা করে না। স্রষ্টা যাকে কল্যাণকর জ্ঞান দান করেনি, গুমরাহীর মধ্যে থাকা সে বড়ই হতভাগ্য।

যিনি নিকৃষ্ট কিছুর বিনিময়ে উৎকৃষ্ট কিছু সংগ্রহ করে আর যিনি উৎকৃষ্ট কিছুর বিনিময়ে নিকৃষ্ট কিছু সংগ্রহ করে- দু’জন সমান নয়। নেক কথা ও নেক কাজ পূণ্যবানদের অবস্থানকে সুদৃঢ়-বিস্তৃত করে। মন্দ কথা ও মন্দ কাজ গুনাহগারদের অবস্থানকে ভিত্তিহীন-দুর্বল-অসাঢ় করে।

যে যে ধরনের পথ খুঁজে সে সে ধরনের পথই পায়। যে স্রষ্টায় ভরসা করে সে স্রষ্টার সাহায্য পায়। যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে সে শুভসংবাদ পায়। হারাম উপার্জনকারীর মৃত্যু হয় যন্ত্রণাময়। জালিমদের আমল হয় অসুন্দর। বিপথগামীদের জীবন হয় অর্থহীন।

ভুল উপদেশ পথহারা করে। অকৃতজ্ঞতা কঠিন শাস্তিতে পিষ্ট করে। বক্রপথের পথিকের জটিল আকাঙ্ক্ষায় গোমরাহী বাড়ে। বিভ্রান্তিকর সন্দেহ নিন্দিত করে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে তিরস্কার বাড়ে।

কেউ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসে, কেউ আলো থেকেও অন্ধকারের দিকে যায়। আলোর পথই মুক্তির পথ, অন্ধকারের পথ ধ্বংসের পথ। কুৎসিত পথে বিজয় সন্ধানে মিলে চূড়ান্ত ব্যর্থতা!

যাদের কপালে স্থায়ী দুর্ভোগ রয়েছে তারা অস্থায়ী জীবনকেই সেরা মনে করে; যাদের কপালে স্থায়ী শান্তি ও সুখ রয়েছে তারা অস্থায়ী জীবনকে সেরা মনে করে না।

শয়তানের কাজ- বিভেদ সৃষ্টি করা, ষড়যন্ত্র করা, অবজ্ঞা করা, অবিশ্বাস করা, অপবিত্র কাজ করা, মিথ্যা বলা এবং পরিণাম চিন্তা না করে অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করা।

কাহিনী বানাতে উদ্বুদ্ধ প্রবৃত্তি মিথ্যা বলে, মনগড়া কথা বানায়, মিছামিছি গল্প করে, সত্যবাদী ও সৎকর্মশীলদের তুচ্ছজ্ঞান করে। যারা নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে বেখেয়াল; তারা অপদার্থ, বিচারবুদ্ধিহীন ও জ্ঞানহীন।

অসৎকর্ম, নির্লজ্জতা ও আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে লাগে বিশুদ্ধ হৃদয়; আর ছলনা, কূটকৌশল ও অপরাধের জন্য লাগে উন্মাদনা ও ভ্রান্তি।

দুনিয়ায় নিষ্পাপ মানুষকেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে যেতে হয়, প্রতিহিংসায় পড়ে বিনাঅপরাধেও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়! তবে পরকালে হীন লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে শুধুমাত্র প্রকৃত পাপী-অপরাধীরাই।

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শয়তানের নিয়মনীতি পরিত্যাগ করায় তৃপ্তি পায়; আর শয়তানের অনুসারীরা আল্লাহর বিধিবিধান লংঘনের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেয়।

অধিকাংশ মানুষ ভুল পথে থাকলে সেই পথটি সঠিক হয়ে যায় না; আর কম মানুষ সঠিক পথে থাকলে সেই পথটি ভুল পথ হয় না।

কিছু বিশ্বাসঘাতক তাদের কৌশলের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয় না। কিন্তু যখন সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে তখন তারা আর মর্যাদাশীল ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিগণিত হয় না।

 

লেখাটি আনিসুর রহমান এরশাদ এর ফেসবুক স্টাটাস থেকে সংগৃহীত

 

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *