চাইল্ড কেয়ার সেন্টার : কর্মজীবী মায়েদের আশার আলো

চাইল্ড-কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, যা কর্মজীবী মায়েদের আশার আলো। উচ্চ থেকে নিম্নবিত্ত সবার জন্যই শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র প্রয়োজন। দেশে একক পরিবার বেড়ে উঠছে। সন্তান কোথায় থাকবে, এ সমস্যায়ই শিক্ষিত হয়েও একজন নারী চাকরি করতে পারছেন না।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

শিশুর দ্বিতীয় বাড়ি

কর্মজীবী নারীর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করেই শিশুর দ্বিতীয় বাড়ি খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে কর্মজীবী নারীরা কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ সহকারে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। যেসব কেন্দ্রগুলোতে সুষম খাদ্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধার মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে।

মা-বাবাকে দুশ্চিন্তা  থেকে মুক্তি

বর্তমান সময়ে ভালো চাইল্ড-কেয়ার সেন্টার দরকার। কারণ অনেক মা-বাবা ব্যস্ততার কারণে শিশুকে সময় দিতে পারেন না। গৃহকর্মী সংকটে কর্মজীবী ও ব্যস্ত মা-বাবারা দিশাহারা থাকে। সন্তানকে অশিক্ষিত আয়া বা গৃহকর্মীর কাছে রেখেও অন্তহীন দুশ্চিন্তায় ভোগে। সন্তানের দেখাশোনা, গোসল, খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা, হোমওয়ার্ক নিয়ে ভাবনার যেন অন্ত নেই।

মানসিক বিকাশে সহায়ক

ইনডোর খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, আঁকা, গান না শেখানোয় বাচ্চারা নিঃসঙ্গ বোধ করে। বাচ্চার দেখভালে নিশ্চিন্ত না থাকায় কর্মক্ষেত্রে টেনশন ফ্রি কাজ করতে পারে না কর্মজীবী মা। সারাদিন বাসায় একাকিত্বে নিঃসঙ্গ বাচ্চা মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে লোভনীয় চাকরি ছেড়ে গৃহবধূ হয় উচ্চশিক্ষিত অনেক মায়েরা। নিউক্লিয়াস পরিবারে দাদা-দাদী বা নানা-নানী না থাকায় সন্তানের দেখভাল বড় চ্যালেঞ্জ।

সঠিক পরিচর্যা ও প্রি-স্কুলিং

চাইল্ড-কেয়ার সেন্টারে থাকবে- বাচ্চার বিকাশের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, আনন্দময় সময় ও মেধার সুষ্ঠু বিকাশের আয়োজন, শিশুর রঙিন আর সম্ভাবনাময় শৈশবের নিশ্চয়তা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাচ্চাদের তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষিত লোকজনের দেখাশোনায় সঠিক পরিচর্যা ও আনন্দের সাথেই প্রি-স্কুলিংটাও হয়ে যাওয়ার সুবিধা।

শিশুর উজ্জল ভবিষ্যত

চাইল্ড-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চার একটা ডায়রি থাকবে। যেটাতে মা বাচ্চার খাবার থেকে শুরু করে সব কিছু প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন লিখে দেবে। সেটা ফলো করে ওর দেখাশোনা করা হবে। আবার প্রতিদিনকার বাচ্চার প্রোফাইল শিট দিয়ে দেওয়া হবে। যেখানে সারাদিনে ওর সবকিছু লেখা থাকবে।

শিশুর উজ্জল ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাচ্চার সাইকোলজিক্যাল, ল্যাঙ্গুয়েজ ও ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট যেন ঠিকমতো হয় সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। প্রশিক্ষিত কর্মী ও শিক্ষকরা বাচ্চার দেখাশোনা করবেন।

অন্যদের সাথে শেয়ারের মানসিকতা তৈরি

বাচ্চাকে শুধু রেখে দেওয়া নয়। বাচ্চাকে আচার-ব্যবহার শিখানো, সুন্দর করে কথা বলা শিখানো, শুদ্ধ উচ্চারণ শিখানো, অক্ষর ও সংখ্যা পরিচিতিসহ কবিতা, ছড়া ইত্যাদি শেখানোসহ অন্যদের সাথে শেয়ার করার মানসিকতা তৈরি করা হবে। বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ-নখ কাটা থেকে শুরু করে সব করানো হবে।

সামাজিক দক্ষতার উন্নয়ন

প্রি-স্কুলিংয়ের সব কিছুই সে এখান থেকে শিখে নিতে পারবে। এছাড়া সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মানসিক লেনদেন হওয়ায় শিশুর মানসিক বিকাশ দ্রুত হবে এবং শিশু দ্রুত সব কিছু শিখে নেবে। সাধারণত একটা শিশু ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে চাইল্ড কেয়ারে বাস করে। মোটামুটি এটাই তার সামাজিকতার এবং চরিত্র গঠন হওয়ার বয়স।

কতগুলো বাচ্চা যখন একসাথে এক টেবিলে খেতে বসে, হাসতে-খেলতে কখন খেয়ে ফেলে তা টেরই পায় না। বিভিন্ন বয়সী বাচ্চা একজনের দেখাদেখি আরেকজন পড়তে উৎসাহী হয়। নিজেদের মধ্যে লেনদেন শেখে, আচরণ শেখে, বন্ধুত্ব শেখে, বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে রাগে-অভিমানে, ঝগড়া-আপসে বাঁচতে শেখে এবং সামাজিক দক্ষতা বাড়ে। একটি শিশুর সামাজিকতা এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্যও অনেক সহায়ক হয়। শিশু অন্য শিশুর সঙ্গে মিশতে শিখে, শিশুর সামাজিকীকরণ ত্বরান্বিত হয়।

বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা

অভিভাবকরা শিশুকে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে দিবে কারণ- অনেক বাচ্চার বাসায় ঘুমের আর খাওয়ার রুটিন না থাকলেও এখানে থাকবে। এখানে সবার সাথে দুপুরের ও বিকেলের খাবার খাবে। বাচ্চার অসুস্থ বা জরুরি কোনো দরকারে সাথে সাথে ফোন করে জানানো হবে।

মাসে একবার আউটডোরে বাচ্চাদের নিয়ে উৎসবের আয়োজন করা হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে বিশেষ আয়োজন করা হবে। বাচ্চারা নিজেরাই খাবার নিয়ে আসবে তথা অভিভাবকরা খাবার দিয়েও যেতে পারবে। তবে বেশি প্রয়োজন হলে বাচ্চার জন্য কিছু কিছু স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও সরবরাহ করা হবে। বিশেষ করে দুপুরের খাবার এখান থেকে দেওয়া হবে। তবে সকালের খাবার সঙ্গে আনতে হবে।

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও শৃঙ্খলাবোধ

খাবার আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস, একই সঙ্গে খাওয়ার টেবিলে বসে খাওয়া, খেলার মাঠে বা বিছানায় যাওয়া, যত্নকারীর নির্দেশ মান্য করার অভ্যাস, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা ইত্যাদির ফলে শিশুদের মধ্যে খুব ছোট বয়স হতেই শৃঙ্খলাবোধ গড়ে উঠবে।

সেন্টারটিতে বাচ্চার ধারণ সংখ্যা হবে কমপক্ষে ১৫-২৫ জন। ৩ মাস থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য দ্বার খোলা থাকবে। মেয়ে-শিশুদের বেলায় আরেকটু বেশি বয়স পর্যন্তও ছাড় দেওয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাচ্চারা থাকবে। সপ্তাহে ৬-৭ দিন।

সাম্প্রতিক প্রবণতাসমূহ

এক্ষেত্রে আমরা সাম্প্রতিক প্রবণতাসমূহ দেখব। অনেক ডে-কেয়ার সেন্টারে ঘরটা খেলনা দিয়ে সাজানো হলেও তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য কোনো দক্ষ আয়া নেই।

আবার কিছু কিছু আনুষ্ঠানিক ডে কেয়ার সেন্টারে চিকিত্সক ও নার্সের সেবাও পাওয়া যায়। শিশুদের উপযোগী খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা কিছু থাকলেও আনুষ্ঠানিক ডে কেয়ার সেন্টারগুলো এক ধরনের কর্মাশিয়াল এন্টারপ্রাইজ।

ডে কেয়ার সেন্টারে  খরচ

এমনও ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলে। এক রুমে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে তিনি থাকেন। বাকী রুমগুলো ডে কেয়ার সেন্টার। একেবারে ঘরোয়া ব্যবস্থা। এমন ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ সাড়ে সাত হাজার টাকা।

মায়েদের আস্থা অর্জনে চ্যালেঞ্জ

চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার পর শুরুর দিকে ভর্তি হয় কম শিশু। এর কারণ বাচ্চার মায়েরা এখানে নিরাপত্তার বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। সবাই ভাবে আগে অন্য শিশুরা ভর্তি হোক, তারপর আমার শিশুটিকে ভর্তি করবো। এভাবে কেউ এগিয়ে না আসায় অনেক সময় শুরুর দিকে ফাঁকাও পড়ে থাকে। তবে স্বাস্থ্যগত সেবা প্রদানের জন্য একজন নার্স এবং একজন শিক্ষিকা রেখে ভবিষ্যতে মায়েদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।

পরিচালনাকারীদের সমস্যা

ঘণ্টাপ্রতি চার্জ খুব কম হলে অনেক মা তাদের সন্তানকে নিয়ে যেতে বিলম্ব করেন। এতে ডে কেয়ার সেন্টারের পরিচালনাকারীদের সমস্যা হয়। মায়েরা কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আরো কিছু কাজকর্ম সেরে শিশুকে তুলে আনতে ডে কেয়ার সেন্টারে যান। এ ধরনের প্রবণতাকে নিরুত্সাহিত করার জন্য অতিরিক্ত সময়ের জন্য পেনাল্টি হিসেবে ভিন্ন উচ্চতর হারে চার্জ করার চিন্তাভাবনা চলছে।

ডে কেয়ার সেন্টার কাম স্কুল

দেখা হচ্ছে- ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের রাখার খরচ বাজার বহন করতে পারছে কিনা। বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মজীবীদের আয় বিবেচনা করে ডে কেয়ার সেন্টারগুলোর সেবার মানে তারতম্য রয়েছে। প্লে গ্রুপের ব্যবস্থা সময়ের দিক থেকে প্রলম্বিত করে এক ধরনের ডে কেয়ার সেন্টার কাম স্কুল গড়ে তোলা হচ্ছে।

শঙ্কায় ছেয়ে যাওয়া হৃদয়েও স্বস্তি

বাড়িতে বাচ্চাকে রেখে অফিসে গিয়ে শান্তি পান না মা। মনটা পড়ে থাকে বাসায়, অফিসে এসেও কাজে মন দিতে পারে না। ঠিকমতো কাজ করতে পারে না সন্তানের কথা ভেবে। কাজের মেয়ের কাছে তার বাচ্চাটি কেমন আছে?

ঠিকমতো দেখেশুনে রাখছে তো? মারধর করছে না তো কিংবা বকাবকি? ঠিক সময়ে খাবার খেতে দিচ্ছে তো? নাকি বাচ্চাকে চুরি করে নিয়ে গেল? এ রকম অনেক রকম প্রশ্ন ভিড় করে তার মনে। আর নানা শঙ্কায় ছেয়ে যায় হৃদয়।

এছাড়া দৈনিক পত্রিকায় যেভাবে বাচ্চা চুরির খবর ছাপা হচ্ছে, তাতে ভয়টা আরও বেশি পেয়ে বসে। কিছুতেই সে কাজে মন বসাতে পারে না। তার ওপর অফিসের চাপ। সব মিলিয়ে তাকে খুব হিমশিম খেতে হয়।

বাড়িতে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দেখেন বাচ্চাকে দেখাশুনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ টিভি নিয়ে বসে থাকে কাজের মেয়ে। শেষে বাসার পাশে একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাকে ভর্তি করান। তাদের যত্ন এবং পরিচর্যায় বাচ্চাকে নিয়ে এখন কোনো চিন্তা করতে হয় না।

সার্বক্ষণিক বিশ্বস্ত মানুষের তত্ত্বাবধান

বাড়িতে ছোট শিশুর যখন তখন বিপদ হতে পারে। বাড়ির আশপাশে পুকুর, ডোবা থাকলে তো কথাই নেই। শাহজাহানপুরের ছোট শিশু জিহাদের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে।

এ ছাড়া চুলার আগুন, গরম পানি, ধারালো জিনিস ইত্যাদি থেকে পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই শিশুকে সার্বক্ষণিক একজন বিশ্বস্ত মানুষের তত্ত্বাবধানে রাখতে পারলে সবচেয়ে নিরাপদ থাকা যায়।

কিন্তু এ যুগে চাইলেই একজন বিশ্বস্ত কাজের মানুষ পাওয়া মুশকিল। অনেক মা আছেন এসব নানা চিন্তা করে চাকরিটাই ছেড়ে দেন।

ডে-কেয়ার সেন্টারের নানা ধরন

রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ডে-কেয়ার সেন্টারের মধ্যে কিছু রয়েছে বিশেষায়িত। যেমন শুধু দরিদ্র শিশুদের জন্য, শুধু তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত মায়েদের শিশুদের জন্য, শুধু মধ্যবিত্তদের জন্য, শুধু উচ্চবিত্তের জন্য। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রও রয়েছে। আবার অনেক সেন্টার নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত। শিশুর এসব ডে-কেয়ার সেন্টারে অবস্থানের অনেক সুফল রয়েছে।

ছোট্ট বাচ্চার নিরাপত্তা

চাকরিজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে আবার অফিসে ফেরার পর সবচেয়ে বড় বেশি দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় তার কোলের ছোট্ট বাচ্চার যত্ন এবং নিরাপত্তা নিয়ে। একদিকে অফিস আর অন্যদিকে তার আদরের ছোট্ট বাচ্চাটি। এসব নিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাকে।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু প্রতিপালক

চাকরিজীবী এসব মায়ের কথা চিন্তা করে গড়ে উঠা আধুনিক মানসম্মত বেবি ডে কেয়ার সেন্টারে থাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু প্রতিপালক। তারা সারাদিন বাচ্চাদের চোখে চোখে রাখে। বাচ্চাদের খাওয়া, গোসল করা, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করা এবং ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে, সবটাই তারা করে থাকে। আবার সেখানে কয়েকজন শিক্ষিকাও থাকেন। তারা স্কুলের জন্যও বাচ্চাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে গড়ে তোলেন।

কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি

প্রশিক্ষিত শিক্ষিকারা বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের জন্য তাদের নিয়ে বিশেষ কিছু অ্যাকটিভিটি পরিচালনা করেন। তাদের নানা রকম শিক্ষামূলক গল্প-কবিতা পড়ে শোনান। বাচ্চাদের জন্য থাকে সুনির্দিষ্ট রুটিন। সেটা শতভাগ মেনে চলা হয়। রুটিনমাফিক সবাই একসঙ্গে খায়, একসঙ্গে খেলাধুলা করে, নানা বিষয়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করে। যার ফলে বাচ্চাদের কমিউনিকেশন স্কিলটা বৃদ্ধি পায়।

অনেক ডে কেয়ার আছে, তারা বাচ্চাদের বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস, শিশু দিবসসহ নানা দিবসে বাচ্চদের অংশগ্রহণ করানো হয়। এসব দিবসে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাচ্চার বুদ্ধিমত্তার প্রসার

উন্নত মানের বেবি ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাদের সামাজিক যোগাযোগের উন্নতি ঘটানো, ভাষার পরিপক্বতা আনা, শারীরিকভাবে গড়ে তোলা, বাচ্চার আবেগ ও মানসিক গুণাবলি ঠিক রেখে চলা। সর্বোপরি বাচ্চার বুদ্ধিমত্তার প্রসার ঘটানো।

তারা বাচ্চাদের পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা, বাচ্চাদের সুষম খাবার প্রদান করা এবং ইনডোর নানা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুবিধা দিয়ে থাকে। ফলে ডে কেয়ার সেন্টার থেকে বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখ থেকে ঝরে কথার ফুলঝুরি। সন্তানের এই প্রাণোচ্ছলতায় স্বস্তি ফেরে কর্মজীবী মা-বাবার মনে।

শিশুদের কোলাহল

কল্পনা করুন একটি ডে কেয়ার সেন্টারের কথা। দরজায় দাঁড়াতেই ভেসে আসবে শিশুদের কোলাহল। ড্রয়িং রুম যেন শিশু পার্ক। দেওয়ালে ঘন সবুজ গাছ, পশু আর বিচিত্র পাখির ছবি। মাঝখানে রাখা স্লিপার। তাতে খেলা করছে শিশুরা।

দরজা-জানালায় লাগানো রংধনু পর্দা। পাশের রুমে কমলা রঙের দেয়ালে ছোট্ট টেবিল আর ছোট্ট চেয়ারে ডাইনিং গোছানো। দেয়ালে লাগানো ড্রয়ারে শিশুদের নাম লেখা। প্রত্যেকের আলাদা বক্সগুলোতে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা।

পাশের স্বপ্ন ঘর সাজানো শিশুদের ঘুমের আয়োজনে। পরিষ্কার চাঁদর আর ছোট্ট বালিশের আরামদায়ক বিছানায় বিশ্রাম পায় হুল্লোড় মাতানো শিশুরা। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন কয়েকজন।

শিশুদের ঠিক সময়ে খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম, খেলাধুলা, নাচ, গান, প্রি-স্কুলিং, হোমওয়ার্কগুলো যত্ন সহকারে করানো হয়। প্রতিদিনের খাবারটা রুটিন করে পুষ্টি অনুযায়ী দেয়া হয়।

কোয়ালিটি সার্ভিস ও ডেভেলপমেন্ট

যদি আমরা ডে-কেয়ার সেন্টার করি তবে আমাদের আহ্বান হবে- আপনার সন্তানকে রাখুন, আপনি নিশ্চিন্তে  কাজে মন দিতে পারবেন। যেসব বাচ্চা মা-বাবার কাছে পড়তে চায় না তাদের নিয়ে আসুন। আপনি ব্যস্ত সমস্যা নেই, আপনার বাচ্চার প্রি-স্কুলিং বা হোমওয়ার্কের কাজ করে দিবো। আমরা এখানে বাচ্চাদের বিভিন্ন স্টেজের ফিজিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে খেয়াল রাখি এবং সে অনুযায়ী তাদের শেখাই। বিভিন্ন শিফটে বাচ্চাদের জন্য টিচার রয়েছে। এখানে বাচ্চা কোয়ালিটি সার্ভিস পায়।

প্যারেন্টসদের প্রশিক্ষণের আয়োজন

প্রতিটি কামরা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দিয়ে নেটওয়ার্কিং করার ফলে মা-বাবাও চাইলে বাচ্চা সারাদিন কী করছে তা দেখতে পারবেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও মায়ের মোবাইল ফোনের পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার হওয়ায় সন্তানকে নজরেও রাখতে পারেন। প্রতিমাসে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের মানসিক বিকাশে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হয় এবং প্যারেন্টসদের জন্যও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারেন আপনিও।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *