গরিবের জীবন

একজন গরিব গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল-
ধনী হবার আশায়, ভাগ্য বদলানোর আশায়।
মাটির ওপর খালি পায়ে হাঁটা বন্ধ হলো,
ব্যবহার্যে হাতে তৈরি জিনিসের প্রাধান্য কমলো।

বাপ-দাদার স্মৃতিবিজরিত ভিটে-মাটি ছাড়লেন,
গ্রামের জমির মালিক শহরে এসে ভৃত্য হলেন।
বাড়িওয়ালা থেকে ভাড়াটিয়া হলেন! আত্মপরিচয় বদলালেন!
গরিব থেকে তিনি আরো গরিবানা হালতে পরলেন।

শহরে এসে তিনি বেশ স্মার্ট হতে চাইলেন,
লুঙ্গি ছেড়ে ডেনিম জিনস বা ফরমাল প্যান্ট ধরলেন।
সুতির ফতুয়া আর টিশার্ট বদলে ফুলহাতা কলার-শার্ট পরলেন,
বাটন মোবাইল ছেড়ে টাচস্ক্রিন মুঠোফোন নিলেন।

একসময়ের খালি পায়ের মানুষটিও জুতা পায়ে ছুটছেন,
জীবনযুদ্ধে নতুন করে নতুন ভাবে লড়ছেন!
চাকরিপ্রার্থীদের লাইন দেখে শিক্ষিত হতে না পারার দুঃখ ভুলছেন,
সার্টিফিকেটধারীদের করুণ চিত্রে নিজের সুখগল্প আঁকছেন।

উন্নত আর আধুনিক হতে এসে-
যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা থেমে থাকলেন!
আকাশছোঁয়া ভবন দেখে বসে-
আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলায়ে চমকে ওঠলেন!

জীবনের বিনিময়ে এ কেমন জীবিকা!
বাসা ভাড়া দেয়া! খাওয়ার খরচ যোগানো!
গলায় ফিতায় আইডিকার্ড ঝুলানো!
নয়টা-সাতটা অফিসে কাটানো!
জীবন থেকে যেন জীবনই হারিয়ে গেছে !

এখানে বাড়ির আঙিনায় ফলের গাছ নেই!
নদীর দেশীয় সুস্বাদু মাছ নেই!
যত্নে বড় করা গাছের ফল-সবজি নেই!
শিকড় নেই! অতিথিপরায়ণতা নেই!
জীবন দিয়ে যে নগর গড়লো, শহরকে আপন ভাবলো,
মৃত্যুর পর লাশ হয়ে গ্রামেই ফিরলো, কবর হলো!

এখানে সবকিছু বেচাকেনা হয়! বেচাকেনার খেলা চলে!
আয়-ব্যয়ের হিসাব–নিকাশে চলে অবিরত! অবিরাম!
বহিরাগত মাত্রই অপরিচিত! তাই অভ্যর্থনা নেই!
গরিবের দাম নেই! কদর নেই! মানুষের জীবন নেই!

গরিবের পরিচয় সে গরিব! সে যেন আসলে মানুষ নয়!
যে গরিব সে সমাজে অবনত! সে দুর্বল! তার গরিবী কপাল!
গরিব মানুষ কম খাবে! করোনায় মরবে! সঙ্কটে দিশেহারা হবে!
টিকে থাকা কঠিন হলে ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে মেসে উঠবে!
তবুও গরিব খুঁজে পাওয়া না যাওয়ার কিচ্ছা শোনানো হবে।
গরিবের শ্রমে, গরিবের ঘামে- ধনী আরো ধনী হবে!

যারা গরিবের টাকা লুট করে তারাও গরিবের চেয়ে বেশি সম্মানিত!
গরিবের সম্পদের চোরেরাও গরিবের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান!
গরিবকে শোষণ করে, অধিকার হরণ করে বদলে যায় যাদের জীবন
তারাই গরিবের বন্ধু সমাজসেবী মানবপ্রেমী- আরো কত কী!

যারা গরিব হয়ে জন্মান, তাদের সংগ্রামটা বেশি!
গরিবরা ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিতে পারেন না।
ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন না। ভালো হোটেলে থাকতে পারেন না।
ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে না। ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা পাবে না।
ভালো শপিংমলে কেনাকাটা করতে পারবে না।

গরিবদের দাওয়াত করে না! দায়িত্বও দেয় না! অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিও বেশি!
তবে অসহায়ত্বের নির্মম গল্পের কারণে ভিক্ষা দেয় বা দান করে।
তাই গরিবের ঝামেলা বেশি। অন্যকে যত্নআত্মি করতে হয় বেশি!
গরিব সাহায্য ও সহানুভূতি পায় কম! অবস্থা যায় আরও খারাপের দিকে!
বেশিরভাগেরই জীবন অপরিবর্তিত! দরিদ্র পরিবারে যাঁতাকলে পিষ্টতা!

গরিবের খরচ বাড়লেও বাড়ে না আয়। হিমশিম অবস্থা।
গরিব মানুষ খাবে কম! মূল্য দিবে বেশি!
পকেটে যার টাকা নেই সে রক্ত-ঘাম দেবে পানির দরে!
যেন গরিব মানুষের পেটই সমস্যার! অস্তিত্বই জটিলতার!

গরিবকে দেখানো হয় দয়া! দেখা হয় হীন চোখে!
গরিবের খানাপিনা শ্যান চোখে দেখে!
গরিব মানুষ ও মূল্যহীন হয় না শুধুই স্রষ্টার কাছে
গরিবদের নিয়ে রাজনীতির ফাঁকাবুলি সব মিছে

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র! অসমতার বিস্ফোরণ!
ব্যাপক বৈষম্য! ধনী তোষণ নীতি!
সস্তা দরে স্বপ্ন বিক্রি! যেন গরিবের স্বপ্ন থাকতে নেই!
ঋণজালের দুর্ভেদ্য চক্রে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা গরিব।

About আনিসুর রহমান এরশাদ

শিকড় সন্ধানী লেখক। কৃতজ্ঞচিত্ত। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। ভেতরের তাগিদ থেকে লেখেন। রক্ত গরম করতে নয়, মাথা ঠাণ্ডা ও হৃদয় নরম করতে লেখেন। লেখালেখি ও সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন, সাময়িকী, সংকলন, আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পর্ক। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, গবেষণা, লেখালেখি ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। পড়েছেন মিডিয়া ও জার্নালিজমেও। জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতীবান্ধা গ্রামে।

View all posts by আনিসুর রহমান এরশাদ →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *