বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা মনে করেন, একজন খেলোয়াড়ের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটির নাম হচ্ছে তাঁর পরিবার। একজন খেলোয়াড়ের জন্য পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সাহায্য বা পরিবারের সাথে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবার কি কারণে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান? কারণ ‘আপনার কঠিন সময়ে খুব কাছের বন্ধু বাদে অন্য বন্ধুরাও হয়ত বুঝবে না। এ সময় কিন্তু পরিবার ছাড়া কেউ বুঝবে না। কারণ আপনি কখন ঘুমান, খান, চলেন, আপনি কোন কাপড় পরতে পছন্দ করেন এটা কিন্তু আপনার পরিবারই জানে। হয়ত একদিন খারাপ খেলেছেন; পরিবারের সাথে আছে, আপনার কোন সময়টা কেমন তারা কিন্তু এটা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। পরিবারটা এমন একটা জিনিস যেটা আপনার ক্যারিয়ারকে অনেক বড় করে দিতে পারে আবার ছোটও করে দিতে পারে।’
মাশরাফি বিন মুর্তজার ভাষায়, ‘তরুণ প্রজন্ম বই পড়ছে না, পত্রিকা পড়ছে না, খেলাবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুর আগে এসবের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। শুধু তরুণদের ওপর দায় চাপিয়ে তো লাভ নেই। বড়রা তাদের জন্য কী করছে, সেটাও একটা ব্যাপার।
আমাদের মধ্য থেকে আগের সেই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আগে বাবা-মায়েরা সন্তানদের অনেক সময় দিতেন। কিন্তু এখন আমরা সবাই এত ব্যস্ত যে সম্পর্কের সুতাগুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানেরা একা একা বড় হচ্ছে।
ঝামেলা এড়ানোর জন্য বাবা-মায়েরাই বাচ্চাদের হাতে মোবাইল-ট্যাব তুলে দিচ্ছেন। ওটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক, তাঁদের যেন বিরক্ত না করে। এরপর আস্তে আস্তে ওরা সেটাতেই আসক্ত হয়ে যায়। ডিজিটাল স্ক্রিনে আবদ্ধ হয়ে যায় জীবন। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বড় হতে হতে নিজেদের বন্দী পরিবেশে আটকে ফেলে। অনেকে একসময় নেশা নয়তো অন্য কোনো খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। জীবনটাকে যে অন্যভাবেও উপভোগ করা যায়, সেটা হয়তো তারা জানেও না।
আজকের তরুণেরা বই পড়ে না, খেলে না। এসব শুনতে কারো ভালো লাগে না। পরিবার ও সমাজের বন্ধন দৃঢ় না করলে এর সমাধান নেই। আমারও দুটি সন্তান আছে। আমিও নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি আসলে তাদের কী দিতে পারছি? মানি আমরা সবাই ব্যস্ত। আমাদের অনেক কাজ। কিন্তু সন্তান মানুষ না হলে সবই বৃথা। তরুণ প্রজন্মকে দোষারোপ না করে তাই আগে আমাদের বড়দের সচেতন হতে হবে। ওরা ভুল করলে সেটাকে বড় করে না দেখে ভুলটা শুধরে দিতে হবে।
আর একটা কথা। আমরা যে খেলার কথা বলি, ওরা আসলে খেলবে কোথায়? নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া আমাদের তো এখন মাঠই নেই! কিশোর-তরুণেরা যে ভালো কিছু একেবারেই করছে না, সেটাও ঠিক নয়। বাংলাদেশেরই কয়েকজন স্কুলছাত্র রোবট বানিয়ে আজ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে। এ রকম আরও অনেক ভালো কাজ তারা করছে, যেসবের কথা আমরা বলি না। সবাই নেতিবাচক চিন্তা করি। এভাবে চিন্তা না করে ভালোটাকে উৎসাহ দিতে হবে। ভুল শুধরে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা এবং পরিবারের দায়িত্ব সবার আগে।’
সূত্র : bdcrictime.com ও প্রথম আলো