এলোমেলো ভাবনা

অনেকে ভাবেন দাতন ছেড়ে টুথব্রাশ, গামছা ছেড়ে তোয়ালে আর লুঙ্গি ছেড়ে স্লিপিং স্যুট এর ব্যবহার করলেই ভদ্রলোক হওয়া যায়। অথচ ভদ্রতা শুধু পোশাকে নয়, ডিগ্রিতে নয়,পদবীতে নয়! ভদ্রতা বিনয় ও নম্রতায়, মার্জিত ব্যবহারে, উত্তম আচার-আচরণে, কথার মাধুর্যতায়!

কেউ ফাঁদে ফেলে, কেউ ফাঁদে পড়ে। চিন্তাভাবনার ফাঁদ! মানবরচিত মতবাদের ফাঁদ! এতে সময় নষ্ট হয়! জীবন অচল হয়ে যায়! নিজের মন-মগজ শেকলে শৃঙ্খলিত হয়! নিজেকে চালানোর সুইচ আরেকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকে! ফলে মৃত্যুর আগেই মরে যায় সাহস, আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসার কাজ ও সৃজনশীলতাসহ অনেক কিছুই।

শর্টকাট পদ্ধতি দিয়ে উপরে ওঠতে চাওয়ার প্রবণতা মারাত্মক। অথচ শিক্ষার্থী সাজেশন আর নোট-গাইড পড়ে শর্টকাট পদ্ধতিতে ভালো রেজাল্ট করতে চায়। ব্যবসায়ী সময় নিয়ে আস্থা অর্জন করতে ও তৈরি হতে লেগে থাকার চেয়ে স্বপ্ন পূরণে চলে বক্রপথে। পেশাজীবীরাও পেশাদারিত্ব ভুলে হালাল-হারাম বাছবিচার না করে শর্টকাট উপায়ে বিপুল সম্পদের মালিক হতে চায়।

যে নিজে অন্যায় করে সে অন্যের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। যে কুপ্রথার বিরুদ্ধে কথা বলবে তাকে আগে কুপ্রথা চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাফল্য অর্জন যেনতেন ভাবে করা যায়, তবে জীবনকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত না নিলে জীবনে সার্থকতা অর্জন করা যায় না।

শুধু কী নাই তা ভেবে অস্থির না হয়ে যা কিছু আছে, সব জীবন গড়তে কাজে লাগাতে হবে। মনের জোর আসল জোর। মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা আসল ক্ষমতা। সুস্বাস্থ্য জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। সময় ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের সুযোগই বড় সুযোগ।

কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়া কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা জন্ম নেয় না। কোনো প্রয়োজন ছাড়া সংগঠনেরও জন্ম হয় না। কোনো কিছুর প্রভাব ছাড়া ব্যক্তির জীবনও বদলে যায় না। জগত বা সমাজকে বদলাতে হলে আগে ব্যক্তিকে বদলে যেতে হয়। ভেতরটা বদলালে বাহিরটা বদলাবেই; আর ভেতরটা অপরিবর্তিত রেখে বাহিরটা বদলানো অর্থহীন চমক মাত্র!

অহংকারী মাত্রই লোভী-জাহান্নামী। অহংকারী নিজকে অন্যদের থেকে বড়-উঁচু মনে করে, অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, গালিগালাজ করে, নাক ছিটকায়,দম্ভভরে চলে, যোগ্যতার বড়াই করে এবং সম্মান প্রত্যাশা করে।

অহংকারী নিজের থেকে গরিব মানুষকে মানুষই ভাবে না আবার নিজের থেকে কাউকে ক্ষমতাবান-বিত্তবান-জ্ঞানবান মনে করলে শুধু কার্যসিদ্ধির স্বার্থেই পা চাটেন। নিজের কাজে আত্মতৃপ্ত হলেও পরের কাজ-গুণ-দক্ষতাকে তুচ্ছ ভাবেন, নিজেকে আলাদা ভেবে অন্যদের নিচুজ্ঞান করেন।

আবেদ-ওলী-ছালেহ আযাযীল অহংকার করে হয়েছে চরম হতাশ ও অভিশপ্ত ইবলিশ। জেনেটিক্যালি একজন জিন ফেরেশতার সম্মান প্রাপ্ত হয়েও আল্লাহর একটি আদেশ অমান্য করার অপরাধে হয়েছে শয়তান। আবুল হাকাম বা বুদ্ধিমানের বা জ্ঞানের বাবা হয়ে গেছে আবু জেহেল বা অজ্ঞ-মূর্খের বাবা। অহংকার অন্ধ ও বাস্তবতাবিমুখ করেছিল ফেরাউন ও নমরুদকে। আবু লাহাব উতবা শায়বা দম্ভ ভরে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। বানানো বেহেশত না দেখেই বিদায় নিতে হয়েছিল খোদা দাবিকারী বাদশাহ শাদ্দাদকে।

ভুল কন্সালটেন্সির পরিণাম মারাত্মক হওয়ায় সঠিক পরামর্শক বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রয়োজনীয় পরামর্শক সেবা অপচয়ের উর্বর ক্ষেত্র। ইবলিশের ভুল কনসালটেন্সির শিকার হয়ে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে স্বর্গসুখ ছেড়ে পৃথিবীতে আসতে বাধ্য হন আদি পিতা ও আদি মাতা। কোনো পরামর্শক যদি অসুদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন, শুধু ফিস পেলেই সন্তুষ্ট থাকেন, ফাঁকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন আর কারো পক্ষ হয়ে কাজ করেন; তারা আসলেই বড় ক্ষতি করেন, যেন ইবলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

যার যেমন মানসিকতা তার তেমন জগতই গড়ে ওঠে। যার মানসিকতার ছাঁচ যেমন তার চারপাশটাও তেমন। সামর্থ্য ও যোগ্যতা সবারই আছে, পরিবেশ ও সুযোগের ভিন্নতার কারণে সবার সম্ভাবনার বিকাশ সমান হয় না। তবে প্রত্যেকের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করার সুযোগ সমাজে স্থায়ী শান্তির জন্যই জরুরি।

যে যার পেছনে সময়, শ্রম ও মেধা নিয়োজিত করে; সে তারই বৃত্তে আটকে যায়। তার যে অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিকতা ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা গড়ে ওঠে, এর বাইরে সে খুব সহজে যেতে পারে না। যারা কখনো কখনো কমফোর্ট জোনের বাইরে যায়, তারাও নিজস্ব অস্তিত্বকে অধিকাংশ সময়ই একটি সীমাবদ্ধ গন্ডিতেই আবদ্ধ রাখে।

কেউ নিভৃতে থাকে, কেউ খ্যাতির পেছনে ছুটে! যোগ্যতা, পারদর্শিতা ও উৎকর্ষতা যত বাড়ে, মানুষ তত নির্দিষ্ট জায়গার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে যায়। সম্মান ও মর্যাদার মাত্রা যাই হোক, কর্মই তাঁদের প্রাপ্য ও প্রয়োজনের গন্ডি নির্ধারণ করে। কর্মবীররা ভেতরের তাগিদেই কর্মব্যস্ত, পুরস্কার ও সম্মাননা তাদের কাজের গতির হ্রাস-বৃদ্ধি করে না।

সফল হবার জন্য ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা যত জনের আছে, সার্থকতা লাভের জন্য ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা তত জনের নেই। ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকলে সে খড়কুটোকে আশ্রয় করে নিরাপদে জীবন কাটানোর সুযোগ খুঁজে না। সে বড় উদ্যোগ নিতে চায়, নিজের শক্তি-সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে চায়, শেখাটাকে প্রয়োগ করতে চায়।

হেরে যাওয়ার ভয়ে যারা কাজই শুরু করে না তারা কখনো জিতে না। ভয় ভীতুকে মরার আগেই মেরে ফেলে। লোকসানের আশঙ্কায় যে আলোই জ্বালে না, তার ভবিষ্যত উজ্জ্বলও হয় না। কেউ মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবথেকে বড় সাফল্য মনে করেন, আবার কেউ স্রষ্টার ভালোবাসায় ভালোলাগারও অনেক কিছু বিসর্জন দেয়।

যার জীবনের লক্ষ্য খুব ছোট, সে সমস্যা ও সংকটে সহজেই ভেঙে পড়ে। সংকল্পে স্থির না থাকায় সাফল্যও পায় না। বড় স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস সম্ভাবনা বিকাশের বিশ্বাস সুদৃঢ় করে। মহৎ লক্ষ্য নিয়ে কাজকে ভালোবেসে মন দিয়ে কাজ করলে সুফল মিলবেই।

বি.দ্র. লেখাটি আনিসুর রহমান এরশাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।

About পরিবার.নেট

পরিবার বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরিবার ডটনেট’ এর যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। পরিবার ডটনেট এর উদ্দেশ্য পরিবারকে সময় দান, পরিবারের যত্ন নেয়া, পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা, পারিবারিক পর্যায়েই বহুবিধ সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে সমাজকে সুন্দর করার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার ডটনেট চায়- পারিবারিক সম্পর্কগুলো হবে মজবুত, জীবনে বজায় থাকবে সুষ্ঠুতা, ঘরে ঘরে জ্বলবে আশার আলো, শান্তিময় হবে প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মানবিক মান-মর্যাদা-সুখ নিশ্চিত হবে । আগ্রহী যে কেউ পরিবার ডটনেট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে লেখা ছাড়াও পাঠাতে পারেন ছবি, ভিডিও ও কার্টুন। নিজের শখ-স্বপ্ন-অনুভূতি-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে। কনটেন্টের সাথে আপনার নাম-পরিচয়-ছবিও পাঠাবেন। ইমেইল: poribar.net@gmail.com

View all posts by পরিবার.নেট →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *