আনিসুর রহমান এরশাদ
কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসক। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার সাধারণ সম্পাদক। উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। কোরিয়ান পিপলস আর্মির সুপ্রিম কমান্ডার। প্রতিবেশীদের সাথে নেই সদ্ভাব। কূটনৈতিক আদান-প্রদান বলতে তীব্র বাক্যবাণ আর ভয়ঙ্কর চোখরাঙানি। প্রচন্ড সামরিক আস্ফালন। বিপজ্জনক ভঙ্গিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োগ। বাহুবলের প্রদর্শনী। কোনো নিষেধাজ্ঞাকেই পাত্তা দেন না তিনি। বিশ্বনেতাদের বুড়ো আঙুল দেখান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুমকি-চাপ- ভাবনা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। চুলের বিচিত্র ছাঁট, পোশাকে ভিন্নতা ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান-এ সবকিছুতে উন বিশ্ব গণমাধ্যমে হয়ে উঠেছেন এক ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রের নেতা হিসেবে। আজ জানাব বৈচিত্র্য আর রহস্যে ঘেরা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়ক কিম জং-উন সম্পর্কে।
সর্বাধিনায়ক ও দেশের ত্রাণকর্তা
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার বিপ্লবের সর্বাধিনায়ক এবং নেতৃত্ব ও একতার কেন্দ্র কিম। বর্তমানে দেশের কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব তারই। রহস্যময় কিমের জন্মের সাল এবং তারিখ নিয়ে নানান ধন্দ্ব এবং ধোঁয়াশা রয়েছে। আমেরিকান রেকর্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি। দক্ষিণ কোরিয়ার রেকর্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮৩ সালের ৮ জানুয়ারি। উত্তর কোরিয়ার রেকর্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি। বাবা কিম জং ইলের স্ত্রী ছিলেন তিনজন। তিন ঘরে তার সন্তান ছিলো ছয়জন।
১৯৭১ সালে প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলের জন্ম হয়। পরে স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তাকে নির্বাসনে যেতে হয় মস্কোতে। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। তার ছেলে কিম জং-ন্যাম থেকে যায় বাবার সঙ্গেই। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম হয় দুই কন্যার। জং ইলের তৃতীয় স্ত্রী কো ইয়ং-হোই এর পূর্ব পুরুষ ছিলো জাপানী। তিনি গান গাইতেন। নাচতেন। তার ঘরে জন্ম হয় দুই ছেলের। একজন কিম জং চল। অন্যজন কিম জং উন। ইয়ং হোই-এর ঘরে আসে আরো কন্যা, কিম ইয়ো জং। উনের দাদা ইলের জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বী। নাতি উন দেখতে অনেকটা দাদার মতোই হয়েছেন। এ কারণে ভক্তরা তাকেই দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবেই দেখছেন।
কিমের শিক্ষাজীবন
তিনি নাকি সাত-আট বছর ধরে সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত লাইয়েবেফেল্ড-স্টেইনহোলজলাই পাবলিক স্কুলে পড়াশোনো করেন। উত্তর কোরিয়ান দূতাবাসে তাঁর রেজিস্ট্রেশন অবশ্য হয়েছিল ভিন্ন নামে। অর্থাৎ কিম জং উন নিজের পরিচয় গোপন করে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্র হিসেবে মোটেই ভালো ছিলেন না। ২০০৬ সালে পিয়ংয়ের কিম ইল সুং মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রিও রয়েছে কিমের। পরে তার উত্থান শুরু হয় সামরিক বাহিনীতে। বাবা কিম জং ইলের মৃত্যু হয় ২০১১ সালে। ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ক্ষমতায় বসেন কিম।
বিয়ে ও সন্তান
২০০৯ সালে কিছুটা লুকোছাপা করেই গায়িকা রি সোল জু-কে বিয়ে করেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম। বিয়ের দিন স্ত্রীকে ক্রিশ্চিয়ান ডায়ারের একটি হ্যান্ডব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন; যার দাম প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা। উত্তর কোরিয়ার ফাস্টলেডি জু দেশটির অভিজাত পরিবারের কন্যা। তার বাবা অধ্যাপক। মা স্ত্রী রোগ বিষয়ে চিকিৎসক। জু চীনে সঙ্গীতের ওপর পড়ালেখা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন চিয়ারলেডিও। এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের সময় উত্তর কোরিয়ার দলের পক্ষে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছিলেন। ২০১০ সালে কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ধারণা করা হয় তারা তিন সন্তানের বাবা ও মা।
খাদ্যরসিক কিম
খাদ্যরসিক কিম রোজ নিয়ম করে মাংস খান। ডেনমার্কের শুয়োরের মাংস পছন্দ করেন। ইরানের ক্যাভিয়ার মাংসও তার বেশ পছন্দ। জাপানের বিখ্যাত থালা সুসি এবং শ্যাম্পেন না হলেই নয়। গরুর দুধ খেতেও খুবই পছন্দ করেন। চীনা তরমুজ খান। সাপের ওয়াইন দিয়ে তৈরি খাবার-দাবার পছন্দ করেন।
নামী-দামি সিগারেট ও ওয়াইনের শখ রয়েছে। বছরে ২৩০ কোটি টাকার মদই লাগে। তার প্রিয় হেনেসির ওয়াইন বিশ্বের অন্যতম দামি ওয়াইনগুলির একটি। এক বোতল ওয়াইনেরই দাম প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। প্রায় ৪ হাজার টাকা মূল্যেও সিগারেট খান। সিগারেট রাখার জন্য চামড়ার তৈরি জায়গাটির দাম সিগারেটের প্রায় তিন গুন। অত্যধিক ধূমপান, স্থূলতা-সহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছেন তিনি।
প্রচণ্ড শৌখিন কিম
কিম সিনেমার পোকা-ভক্ত। তার ২০ হাজার সিনেমার ডিভিডির কালেকশন রয়েছে। তাঁর প্রিয় দুই ছবি ‘র্যাম্বো’ এবং ‘গডজিলা’। নিজের বাড়িতেই ১০০০ আসনের সিনেমা হল বানিয়েছেন। গাড়ির প্রতিও প্রচণ্ড শৌখিন কিম। কিমের গ্যারেজে ১০০টি গাড়ি রয়েছে। কিমের সবথেকে পছন্দের গাড়ি মার্সিডিজ বেঞ্জ। বিলাসিতার ব্যাপারে কিম জং উন একেবারেই সিদ্ধহস্ত। বাহারী সিগারেট, প্রাইভেট জেট এবং সুস্বাদু ক্যাভিয়ার- সবই আছে।
বিলাসবহুল জীবন
বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করছেন তিনি। প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিজস্ব ইয়াট নিয়ে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। ডিজনি বোট আর ফেরির একটি মিশেল এই ইয়াট। পুরো দেশজুড়ে তার ১৭টা প্রাসাদ আছে, আছে একটা নিজস্ব দ্বীপও। কিম জং উনের ব্যক্তিগত ঘড়ির সংগ্রহের যে মোট দাম, তা প্রায় ৮.২ মিলিয়ন ডলার। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মার্সিডিজে চড়ে রাষ্ট্রীয় সফরে যান কিম; এস৬০০ মডেলের এই গাড়ির মূল্যমান ১.৭ মিলিয়ন ডলার। কিম বানিয়ে নিয়েছেন নিজের জন্য আলাদা রানওয়েই। তার প্রায় প্রতিটি প্রাসাদের পাশেই নিজস্ব রানওয়ের ব্যবস্থা আছে।
কিমের যা পছন্দ
বাস্কেটবল খেলতে দারুণ পছন্দ করেন কিম। বাস্কেটবল তারকা মাইকেল জর্ডানের ছবিও আঁকতেন তিনি। ২০১৩ সালে কিম জং উন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যানের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব দ্বীপে দেখা করেন। ছোটবেলায় রাতে ঘুমোতেনও বিছানায় বাস্কেটবল নিয়ে। গলফ খেলার প্রতি তার আকর্ষণ আছে। কিমের এই শখ পূরণে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে ৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়। ঘোড়দৌড়ে কিম জং উনের দুর্দম আকর্ষণ। তাই রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া উৎপাদন ও তত্ত্বাবধানের খরচ বহন করা হয়। কিমের প্রিয় খেলা স্কি। আর এজন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ক্রিয়ং স্কি রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
আমুদে কিম
যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও মুহূর্তে ঠোঁটের কোণে হাসি থাকে কিমের। কিম চান সবাই তাকে আমুদে হিসেবেই চিনুক। যদিও বাবার কফিন নিয়ে প্রকাশ্যে হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন কিম জং-উন। নিজেকে বাবা কিং জং ইলের মতো দেখাতে ইচ্ছে কওে বলেই ভ্রু ছোট করেন তিনি। নিজের ইমেজ উপরে তুলতে কিমের প্রচেষ্টার কমতি নেই।
বিভিন্ন ছবিতেই তাকে দেখা গেছে কোনো সৈনিকের কাঁধে হাত রেখে হাসতে হাসতে কথা বলছেন, কোনো শ্রমিকের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছেন কিংবা হাসপাতালে বাচ্চাদেও কোলে নিয়ে আদর করছেন। কিমকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। উত্তর কোরিয়ার বরফ আচ্ছাদিত সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পিকতুতে কমপক্ষে তিনবার আরোহণ করেছেন তিনি। বিশ্বের নজর কাড়তে সাদা ঘোড়ায় চড়ে ছুটেও বেড়ান তিনি।
রহস্যময় কিম
রহস্যের আরেক নাম কিম জং উন। স্বৈরতন্ত্রী একচ্ছত্র এই শাসক যে নৃশংস তার প্রমাণ- করোনা রোগীদের দেখা মাত্র গুলি করে মারতে তার নির্দেশনা। কিম কাকা জ্যাং সং থায়েককে নৃশংসভাবে খুন করে মুণ্ডু কাটা দেহটা আফিসারদেরও দেখিয়েছিলেন, সরকারি অফিসের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। কচ্ছপ খাবার-জল না পেয়ে মারা যাওয়ায় খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের দেহ গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। নিজের পিসেমশাইকে কুকুর লেলিয়ে মেরে ফেলেছিলেন কিম।
বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে মিসাইলের সামনে রেখে নিমেষে উড়িয়ে দেওয়া হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হাইওন ইয়োঙ্গ চোলকে। নিজের এক প্রেমিকাকেও নাকি হত্যা করেছিলেন তিনি। অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগে সেনাবাহিনীর এক জেনারেলকে ভয়ঙ্কর রাক্ষুসে ‘পিরানহা মাছ’ ভর্তি অ্যাকুরিয়ামে ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন; ফেলে দেয়ার আগে ছুরি দিয়ে হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ চিড়ে দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিত্যনতুন পন্থা বেছে নেন কিম। অনেক সময় অ্যান্টি ট্যাঙ্ক বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়ে গোলা ছুড়ে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়। অনেককে জীবন্ত বাঘের খাঁচায় ছেড়ে দেয়া হয়, প্রকাশ্যে জনসম্মুখে কারো শিরশ্ছেদ, কাউকে পাহাড়ের চূড়া থেকে নিক্ষেপ, কাউকে ফাঁসি অথবা কারাগারের বন্দি কক্ষে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়। তার নিষ্ঠুর এই হত্যাযজ্ঞের তালিকায় রয়েছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ও কিউবা এবং মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত পিয়ংইয়ংয়ের দুই রাষ্ট্রদূতও।
পিসেমশাইকে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে মেরেছিলেন। ২০১৬ সালে দুর্ব্যবহারের কারণে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-জিনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়। একটি ইভেন্টে একটু ঘুমিয়ে পড়ার কারণেও প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা ঘটে! কেউ যদি তাঁর পছন্দের নকশা মেনে কিছু বানাতে না পেরেছেন, তাঁকেও শূলে চড়িয়েছেন কিম।
অহঙ্কারী কিম
সবসময় ক্ষমতার অহঙ্কার করেন তিনি। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে বাবার আমলে কাজ করেছেন এমন তিন মন্ত্রী এবং ৭ জন জেনারেলকে পদ থেকে বহিষ্কার করেন এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। মাঝেমাঝেই তার উধাও হয়ে যাওয়া পুরো বিশ্বের কাছেই একটা বিরাট রহস্য। অথচ দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পরে, তাকে গোটা বিশ্বের কাছে গ্রেট সাকসেসর এবং আউটস্ট্যান্ডিং লিডার হিসাবে পরিচয় দেওয়া শুরু হয়। কোরিয়ান এজেন্সিগুলি তাকে এমন এক মহান ব্যক্তি হিসাবে সকলের সামনে ভাবমূর্তি গড়ে দিতে চায় যেন তিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন।
গোপন ডেরা
পিয়ংইয়ংয়ে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেয়ে ২৬ বছর বয়সী তরুণী হি ইয়ন লিম দাবি করেন, ‘অনেক বিলাসবহুল গোপন ডেরা তৈরি করেছেন কিম। সেখানেই কিমের নির্দেশে স্কুলের সুন্দরী ছাত্রীদের ধরে এনে যৌনদাসী করে রাখা হয়। নিজের যৌনদাসী হিসেবে স্কুলের সবচেয়ে সুন্দর ছাত্রীকে ধরে আনার নির্দেশ দেন তিনি। কিম মূলত সুন্দর পা দেখেই তাদের নির্বাচন করেন। ওই মেয়েদের কাজ হলো নেতাকে খাওয়ানো ও তাঁর শরীর মালিশ করা। সেখানে কিশোরীদের ওপর যৌন নির্যাতনও চালানো হয়। ’ তাকে বহু নারী পরিবেষ্টিত দেখা যায়।
সমান্তরাল উন্নয়ন নীতি
কিম জং উন ‘সমান্তরাল উন্নয়ন’ নীতি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি চাইছেন সমান্তরালভাবে পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটুক দেশটির। উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে স্বীকৃতি চান কিম। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির অবসানের লক্ষ্যে কিম জং উন ও ট্রাম্প দুই দফা বৈঠক করেছেন। পারমাণবিক পরীক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি একগুঁয়েমি নীতি অনুসরণ করেন।
অস্ত্র প্রদর্শনে আগ্রহ
নতুন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন করতে ভালোবাসেন। সুপার লার্জ এবং মাল্টিপল লঞ্চ করতে সক্ষম রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উৎক্ষেপণ নিয়ে মহাখুশি হন কিম। নতুন নতুন সমরাস্ত্র তৈরি করতে পছন্দ করেন। অস্ত্রের এই দীর্ঘ তালিকার মধ্যে রয়েছে: দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা আরো নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, রকেট কিম্বা ক্ষেপণাস্ত্রে বহনযোগ্য বিশালাকৃতির বোমা বা ওয়ারহেড, গুপ্তচরবৃত্তির জন্য স্যাটেলাইট এবং পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ ইত্যাদি।
অদ্ভুত নিয়ম কিমের
উত্তর কোরিয়ায় জিনস পরা অপরাধ। ‘পশ্চিমা ফ্যাশন’ তাড়াতে ২০১৬ সালে কিম এই নিয়ম চালু করেন। দেশটির পুরুষদের জন্য ২০১৩ সালে ১০ ধরনের হেয়ারকাট নির্দিষ্ট করে দেন কিম। নারীদের জন্য ১৮টি। এর বাইরে কেউ কিমের মতো চুল কাটতে পারেন না। উত্তর কোরিয়ায় কেউ কিমের নামে নাম রাখতে পারেন না।
উত্তর কোরিয়ায় জন্মনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ নিষিদ্ধ। কিমের ধারণা, জনসংখ্যা বাড়লে তাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়বে। কিম কিশোর-কিশোরীদের যৌনতায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং কৈশোরকালে যৌনতা দেশদ্রোহীতার মতো অপরাধ বলেই মনে করছেন তিনি। কুকুর পোষাকে “পশ্চিমা অবক্ষয়” বলে পিয়ংইয়ংয়ে পোষ্য কুকুর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিমের ছোট বোন কিম ইয়ো-জং
কিমের ছোট বোন কিম ইয়ো-জং হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারী । ভাই-বোনদের মধ্যে তাকেই কিমের একমাত্র মিত্র বলে মনে করা হয়। উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী নেতা হিসেবে কিম ইয়ো-জং এর কথা বেশ আলোচিত হয়।
রহস্যে মোড়া রহস্যময় কিমের জীবন
রহস্যময় পুরুষ কিম নিজেকে রহস্যের চাদরে ঢেকে রাখতে পছন্দ করেন । দেশেরও অনেক কিছুই আড়াল করে রাখেন অদ্ভুত চরিত্রের এই নেতা। রহস্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখা একনায়ককে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তিনি যেখানে যান, সঙ্গে নাকি যায় পোর্টেবল টয়লেট! পাছে তার মল, মূত্র পরীক্ষা করে কেউ জেনে ফেলে তার শরীর-স্বাস্থ্যের হালহকিকৎ।
বাইরে থেকে দেখে শক্তিশালী মনে হলেও বাস্তবে শারীরিকভাবে তিনি নাকি খুবই দুর্বল! সব সময়ে ভোগেন গেঁটে বাতে! জ্বরজারিতেও ভোগেন খুব। তিনি নিজে বাঁচতে আর ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে লোক ঠকাতে ভালোবাসেন। কিম শুধুই ‘ইয়েস’ শুনতে ভালোবাসেন। ‘নো’ তাঁর অপছন্দ! তাই তার ওঠাবসা, চলাফেরার সব সময় তাঁকে ঘিরে রাখেন ‘ইয়েস ম্যান’রা! তিনি মিথ্যেবাদীও! আপাদমস্তক রহস্যে মোড়া তার জীবন।