নেতৃত্ব প্রদান করতে হলে ভিতরের আত্মবিশ্বাসকে জাগানো, ইতস্ততবোধ দূর করা, ভিতর থেকে উৎসাহ বাড়ানো, নিজের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি, নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া, নিজের সেরাটা দেয়া, সৎ ও অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে বাছাই করা, পেশাদার সংগঠনগুলোতে অংশ নেয়া, নিজের উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরা, অর্জিত জ্ঞান অন্যকে জানার সুযোগ করে দিতে প্ল্যাটফর্ম খোঁজা, নিজেকে প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে রাখা, অপ্রিয় মুহূর্তে ইমোশনাল না হয়ে মাথা গরম না করে পেশাদার মনোভাব দেখানো, কর্মপদ্ধতির কৌশলে ভিন্নতা আনা, কেন এগিয়ে যেতে চান নিজেকে প্রশ্ন করা, পেশাদার মনোভাব নিয়ে নিজেকে তৈরি করা প্রয়োজন।
প্রকৃত নেতার কাছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ, অনুযোগ, ব্যক্তিগত কথা-বার্তা, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে অনেকেই আসেন। সবার কাছে বিশ্বাসী এবং সৎ-যোগ্য নেতাকে প্রত্যেকের সমস্যাই মনোযোগ সহকারে শুনতে হয়, আবেগময় বিষয়গুলোতে সমবেদনা জানাতে হয়, কর্মীদের দুঃখে সমবেদনা জানাতে হয়, দক্ষ শ্রোতা হতে হয়, অন্যের প্রশংসা করতে হয়, নিজের ভুল স্বীকার করতে হয়, ভুল থেকে শিখতে হয়, ভালোকে প্রশংসার সাথে গ্রহণ করতে হয়, সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে আপসহীনভাবে এগিয়ে যেতে হয়, নৈতিক মূলবোধের মধ্যে থেকে জয়যাত্রা চালিয়ে যেতে হয় এবং জবাবদিহিতা-দায়িত্বশীলতা-স্বচ্ছতা থাকতে হয়, সম্ভাবনাকে হাতছাড়া না করতে ঝুঁকিগ্রহণের মানসিকতা থাকতে হয়, কঠিন সময় পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, হার না মানার মানসিকতা থাকতে হয়, গতানুগতিক ব্যবস্থা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার সাহস থাকতে হয়, ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা থাকতে হয়, অন্যকেও ত্যাগের মহিমায় দীক্ষিত করতে পারতে হয়।
নেতার মধ্যে সততা ও নিষ্ঠা, আত্মবিশ্বাস, কর্মনিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, উদারতা ও সৃজনশীলতার মতো মানবীয় গুণ থাকতে হয়। সফল নেতা ভালো কাজের মূল্যায়ন করেন, প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অধীনস্তদের মাঝে ভাগ করে নেন, সহযোগী-অধীনস্ত-অনুসারীদের পর্যাপ্ত উত্সাহ ও প্রেষণার উত্স হন, ক্ষতিকর ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমনে কখনো কখনো কঠোর হন, লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান করেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্যদের মতামত গ্রহণ ও তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন, অধীনস্তদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার প্রদান করেন, ভবিষ্যত্ প্রজন্মের মাঝে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করেন।
নেতৃত্বকে স্বতন্ত্র, গভীর এবং অতুলনীয় করতে নেতার অবশ্যই প্রবল আবেগ থাকতে হবে।নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদার-নৈতিক, সংকীর্ণমনা ও প্রতারণাকারী নয়। নেতাদের ব্যক্তিত্ব হতে হবে সৃজনমুখী; সংবেদনশীল, কঠোরমনা নয়। ক্ষমতাকে আমানত হিসেবে গণ্য করতে হবে। নিজের প্রভাব, বৈভব বা প্রতিপত্তি অর্জনের মাধ্যম হবে না নেতৃত্ব। লালসা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা ও বিলাসিতার কারণে বিচ্যুতি ঘটলেই ক্ষমতা পরিত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে। ভালো নেতা সুবিধার চেয়ে প্রত্যয়কে বেছে নেন, সুবিধার ঊর্ধ্বে নীতিকে স্থান দেন, বৃহত্তর অর্জনের জন্য স্বেচ্ছায় ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করেন। আত্মস্বার্থ ও উৎসর্গের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হলে দ্বিতীয়টিকে প্রাধান্য দেন।
নেতাকে যোগ্য উত্তরসূরি ও উত্তরাধিকার রেখে যেতে হয়, বর্তমানই শুধু নয় আগামীকাল তথা পরবর্তী সময়ের কথাও ভাবতে হয়। আত্মবিশ্বাস-সাহসিকতা এবং অনমনীয়তার শক্তি থাকতে হয়, দ্বিধাহীনভাবে শিখতে হয়।বইপত্র পড়ে, চারপাশের পরিবেশ আর মানুষ থেকে শিখতে হয়। মানুষকে তাদের সামর্থ্য ও দূর্বলতা বুঝতে হয়, নিজের অভিজ্ঞতা ছাড়াও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকেও শিখতে হয়, মানুষ চিনতে হয়, মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও ভেতরের সুপ্ত ক্ষমতাকে বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকতে হয় এবং সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হয়। কীভাবে কথা বলতে হবে বা কাকে কীভাবে বুঝাতে হবে তা বুঝতে মানুষের সাথে মেশতে হবে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদেরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।