রাজনীতি কখনো দেশের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না, বোঝা হয়ে দাঁড়ায় অপরাজনীতি। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাজনীতি, মিথ্যাচার-প্রতারণার রাজনীতি কখনো দেশের ইতিবাচক অগ্রগতি আনে না। ঘুষ-লবিংয়ের রাজনীতি থেকে ভারমুক্ত হলে যেকোনো সময়ে যেকোনো দেশের জন্যই তা মঙ্গল।
রাজনীতি বনাম অপরাজনীতি
রাজনীতি মানুষের জন্য, জনগণের সেবার জন্য। অপরাজনীতি হচ্ছে- ব্যাংক ঋণখেলাপিদের জন্য, শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতকারীদের জন্য, জালিয়াতি করে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের জন্য।
ইতিবাচক রাজনীতি বনাম নেতিবাচক রাজনীতি
জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ইতিবাচক রাজনীতি দরকার। লুটপাটের রাজনীতির বিকল্প তৈরিতে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসা দরকার। নেতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ না হলে দেশের চেহারা পাল্টাবে না। অসৎ নেতৃত্ব পরিচালিত রাজনীতি দেশের উন্নতি-অগ্রগতির অন্তরায়!
অপরাজনীতির দোলাচলে
ধর্ষক কখনো ধর্ষণমুক্ত সমাজ উপহার দিতে পারে না। দুর্নীতিবাজ কখনো দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ায় নেতৃত্ব দিতে পারে না। ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপর নেতা কখনো জনগণের স্বপ্ন পূরণে নিবেদিত হতে পারে না। বক্রপথের পথিক কখনো সরল পথে কর্মীদেরকে এগিয়ে নিতে পারে না। ফলে অপরাজনীতির দোলাচলে অগ্রগতি থমকে যায়, পশ্চাদপদতা বৃদ্ধি পায়!
আশা-নিরাশার রাজনীতি
প্রতিহিংসার রাজনীতির জয়জয়কারের এ অবস্থার যত দ্রুত পরিবর্তন হবে, ততই মঙ্গল। নোংরা রাজনীতির মাধ্যমে কখনো প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না, দারিদ্র্য বিমোচন হয় না, সম্পদের বণ্টনব্যবস্থা সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় না এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সহজ হয় না। ফলে যে রাজনীতি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে আশার আলো জাগায় তা কল্যাণকর, আর যে রাজনীতি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নিরাশা বাড়ায় তা অত্যন্ত অকল্যাণকর!
দলকানা ও অন্ধ আনুগত্যের রাজনীতি
যে রাজনীতি শেখায় সাহসী হওয়া মানে শত অন্যায়-অপরাধ করেও মাথা উচু করে চলা; তাতে কখনোই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না। দলকানা ও অন্ধ আনুগত্যের রাজনীতিতে গতিই ধর্ম এবং উদ্যমী হওয়াই প্রত্যাশিত! কিন্তু সেই গতি বা উদ্যম মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও তাতে নিষেধাজ্ঞা নেই!
স্বার্থবাদের রাজনীতি
রাজনৈতিক দলগুলোতো কোনো লাভজনক সংগঠন নয়। রাজনীতিবীদরা অলাভজনক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ, সমাজের মঙ্গল, দেশ ও জাতির ভালোর জন্য সেবামূলক কাজ করবে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের যেকোনো পদের-পর্যায়ের নেতাদের ভাগ্য হঠাৎ-রাতারাতি বদলে যাওয়া অশনি সংকেত! কারণ স্বার্থবাদের রাজনীতির পক্ষে যতই বানোয়াট যুক্তি দেয়া হোক, আসলে তাতে মুক্তি মিলে না।
সমাজ গড়ার রাজনীতি
যেখানে রাজনীতি লাভজনক ব্যবসার চেয়েও বেশি লাভজনক প্রমাণিত হয়, সেখানে ব্যবসার মুনাফা হিসাব করা গেলেও রাজনীতি নামক পুঁজি ছাড়া ব্যবসার সুফল ভোগের হিসাব করা যায় না। রাজনীতিবীদরা পঁচে গেলে তাদের উদ্যোগগুলো সেই পঁচা-দুর্গন্ধকে সকল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়।
আসলে একটি মরা বৃক্ষ যেমন সুস্বাদু ফল ও দৃষ্টিনন্দন ফুল দিতে পারে না; তেমনি নীতিভ্রষ্ট দলের দিকভ্রান্ত নেতা-কর্মীরা কখনো লোভ-লালসা দমন করে বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত হতে পারে না। তাই ব্যক্তিস্বার্থে নয়, সমাজ গড়ার রাজনীতি চাই।
নষ্ট রাজনীতি ও ভুলের রাজনীতি
নষ্ট রাজনীতিকে বিবেচনা করতে হবে ক্যান্সারের জীবাণু বা বিষ হিসেবে; যারা সকল দিক-বিভাগকে আক্রান্ত-বিষাক্ত করে তোলে। মাথা-মস্তিষ্ক নষ্ট হলে যেমন দেহ-মন অচল-নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, রাজনীতি পঁচে গেলে তেমনি দেশ-জাতির স্বপ্ন-আশা-সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে ভবিষ্যত অন্ধকারের কালো মেঘে ছেয়ে যায়। ভুলের রাজনীতিতে ঘুরপাক খেলে শুধু দলেরই আখেরে ক্ষতি হয় না, দেশ ও জাতিরও সর্বনাশ হয়!
রাজনীতি বড়লোক হওয়ার সিঁড়ি!
সুস্থ শরীরের কত মানুষ বেকার! কাজের ক্ষেত্র কত সীমিত! অথচ কতজন রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে শুধু টাকা আর টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। রাজনীতি যেন বড়লোক হওয়ার সিঁড়ি, সকল আইন-কানুন নিয়ম-শৃঙ্খলার উর্ধ্বে ওঠার পথ, সকল নীতি-নৈতিকতার সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়ার বাহন!
রাজনীতিতে রহস্যময় চরিত্র ও দৃশ্যপট
রাজনীতিতে অনেক রহস্য পুরুষ থাকে, অনেক বীর পুরুষ থাকে, অনেক দৈত্য-দানব চরিত্রের নরপিশাচ থাকে, অনেক মানবদরদী জনসেবক থাকে! রহস্যময় চরিত্র থাকে বলে রহস্যময় অনেক কিছু মাঝে মাছে দৃশ্যপটেও আসে! ভালো নেতা আছে, মন্দ নেতাও আছে, ভালো কর্মী আছে, মন্দ কর্মীও আছে! তবে এই বাস্তবতার মধ্যেও ভালো দল হলো মন্দকে যেটি প্রশ্রয় দেয় না এবং ভালোকে যেটি পৃষ্ঠপোষকতা করে!
পরিবর্তিত রাজনীতি বা বদলে যাওয়া রাজনীতি
রাজনীতিবীদদের যদি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকে তা জাতির জন্য চরম হতাশাজনক। সমাজের মানুষ গণপ্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে রোবটের মতো আচরণ কখনোই প্রত্যাশা করে না। যাদের বহিষ্কার করা উচিত, তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়!
রাজনীতির নামে অপরাজনীতি
যাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে পুরস্কার-স্বীকৃতি দেয়া উচিত, তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। নানান কারণে আমরা পরিবর্তিত রাজনীতি দেখি বা এক ধরনের রাজনীতি বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বদলে নতুন ধারা বা নয়া বাস্তবতাও দেখা যায়! রাজনীতির নামে অপরাজনীতির কবল থেকে দেশবাসী মুক্তি চায়।
পেটনীতির রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা
এই যে অপরাধীকে অপরাধ করার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, আদর্শ-শুদ্ধতাকে চর্চা না করে নির্বাসনে পাঠানো- এসব বন্ধ হওয়া উচিত। ভালো চাকরির জন্য ভালো পড়াশোনা লাগে, সৎ সফল ব্যবসায়ী হবার জন্য দীর্ঘ সাধনা-ধৈর্য লাগে।
অথচ মাস্তানতন্ত্র-গুন্ডাতন্ত্রর মাধ্যমে বোমাবাজি-চাঁদাবাজির রাজনীতি করে কম সময়ে বিরাট বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হওয়া যায়। পেটনীতির রাজনীতি খুব কম মানুষকেই এগিয়ে দেয় আর অধিকাংশকেই পেছনে ঠেলে। তাই রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন দেশকে এগিয়ে নিতে।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ
সহনশীল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সব রাজনৈতিক দলকেই আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসা দরকার। একদল রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা দেখাতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হলে, প্রতিপক্ষকে গণগ্রেফতার করলে, বিরোধীদলের কর্মসূচিতে গুলি করলে- আরেক দলের মধ্যেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণতা বেড়ে যাবে, অন্য দলগুলোও অসংযত আচরণ বাড়িয়ে দেবে।
গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক ভাষা
গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলতে কেউ বাধা দিতে পারে না। সাংবিধানিক আচার-আচরণ যথাযথভাবে রপ্ত করতে পারার মানে আইনকে সঠিকভাবে মানা, সবার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। যে কোনো দেশেই রাজনৈতিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হলে নানান ধরণের মানবিক সংকট তৈরির আশংকা বেড়ে যায়।
অপরাজনীতির কালো ছায়া
সাজানো মামলা, গায়েবি মামলা ও পূর্বপরিকল্পিত রায়ে প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন হলে মানবতার মুক্তি মিলে না। কখনো প্রতিবাদ সভা হয়, কখনো দোয়া মাহফিলে সীমাবদ্ধ থাকে। কখনো প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
বক্তারা বক্তৃতা করেন। বিবৃতিদানকারীরা বিবৃতি প্রদান করেন। ক্ষতিগ্রস্তরা, ভিকটিমরা ও স্বজনরা আহাজারি করেন। অপরাজনীতির কালো ছায়া গ্রাস করে শহর বা গ্রামের সর্বত্র।
অপরাজনীতির কুৎসিত রূপ
শাসক হওয়া উচিত সেবক, শোষক নয়। ক্ষমতায় থাকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চেয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নের টেকসই পরিকল্পনা বেশি জরুরি! ক্ষমতা থাকলেই অন্যায়ভাবে তা ব্যবহার করা অনুচিত।
ন্যায়ের পক্ষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরকে সারাজীবন কারাভ্যন্তরে রাখার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা যায়, তবে মানুষের হৃদয় জয় করা যায় না। অপরাজনীতি রুখে দাঁড়ানো, অপরাজনীতির কুৎসিত রূপ ঠেকানোর চেষ্টা করা উচিত।
রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ
অপরাজনীতির কারণে নতুন প্রজন্ম এখন অনেকটাই রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ। কোনো সভ্য দেশেই আইন ব্যবস্থা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষা করে না। যার ক্ষমতা নেই, যে মজলুম, যে অধিকার বঞ্চিত; আইন ব্যবস্থা তার পক্ষে না থাকলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে রীতিমত বিপদজনক। তখন মানবাধিকার লংঘন অহরহ ঘটতে থাকে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বাড়তে থাকে।
প্রতিহিংসার রাজনীতি, প্রতিশোধের রাজনীতি
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও খুন নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়ায়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চরম আকার ধারণ করে। কালো টাকা ও পেশী শক্তিই রাজনীতির মূল নিয়ামক উপাদান হয়ে ওঠে। ক্ষমতার অপব্যাবহারের বিস্ময়কর মাত্রা যেকোনো দেশকেই গভীর নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিহিংসার রাজনীতি, প্রতিশোধের রাজনীতি কখনোই সুফল বয়ে আনে না।
রাজনৈতিক কপটতা থেকে রাজনৈতিক দেওলিয়াত্ব
উদার ও গণতান্ত্রিক সরকার গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে না। মানবিক অধিকার ও নাগরিক অধিকারে বিশ্বাসীরা বিচার বিভাগে দলীয়করণ করে না। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্র চর্চার পথ রুদ্ধ করে না। কোনো সরকার শুধু কিছু ব্যক্তি বা বিশেষ দলের নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের। ফলে ভিন্নতা ও বৈচিত্রতাকে ধারণ করে প্রকৃত কল্যাণকামী সরকার। এরা জানে- রাজনৈতিক কপটতা রাজনৈতিক দেওলিয়াত্ব প্রকাশ করে।
রাজনৈতিক দৈন্যদশায় দুর্দশা-দুর্ভোগ
ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ দেশ-জাতি-রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে প্রবল হলে রাজনীতিই শুধু গভীর সংকটে পতিত হয় না; দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বও হুমকিতে পড়ে। পরের স্বার্থ বিরোধীতা নিজের স্বার্থ বিরোধীতারই নামান্তর। কারণ আরেকজনের অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্য কখনো নিজের অগ্রযাত্রাকে নিরাপদ ও মসৃণ করে না।
ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে বা সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তথা শিকড়কে অস্বীকার করে কেউ দেশের সমস্যার সমাধান ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।রাজনৈতিক দৈন্যদশায় পতিত রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক চাপেই দুর্দশা-দুর্ভোগে পড়ে।
মানি মেকিং মেশিন
কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণকর বলা যায় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত নেতাদের পাশাপাশি কর্মী ও দেশের সাধারণ জনগণের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়। জনগণের সাথে সম্পর্কহীন গুটিকয়েক জননেতা, দুর্নীতির সাথে গভীর সম্পর্কে থাকা কিছু আমলা আর মানি মেকিং মেশিন হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষাই মূখ্য হলে সাধারণ মানুষ অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।
সবার উপরে দেশ নাকি দল?
তখনই স্পষ্ট হবে, দেশ সামনে এগিয়ে না গিয়ে পেছনের দিকে চলছে যখন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থ ও দশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। দলের পতন অবধারিত বা অবনতি তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন ব্যক্তিপূজা-আত্মপূজা-আত্মরতি ও ব্যক্তিস্বার্থ প্রবল হয়ে ওঠে। তাইতো সচেতনরা বলে দলের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, দেশ না থাকলে দল থাকবে না। দেশ না বাঁচলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও বাঁচবে না।
লোভ ও আত্মকেন্দ্রিকতায় জাতির ক্রান্তিকাল
লোভি ও আত্মকেন্দ্রিক মানুষের মনোযোগ জাতির অগ্রগতি ও উন্নতির দিকে কখনো থাকে না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, বোকা বানিয়ে, ধোকা-প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অমানবিক কাজকে বৈধতা দান ও স্বার্থহাসিলের ঘৃণ্য খেলায় তারা মেতে উঠে। যেকোনো জাতির ক্রান্তিকালে দেশবাসী সজাগ ও সচেতন হলেই কেবল নিরাশার মাঝেও আশার আলো জ্বালানো যায়।
হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী
মনে রাখতে হবে- যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার আছে এবং জবাবদিহিতা নেই- সেখানে শিক্ষাব্যবস্থার নিপীড়নমূলক কাঠামোর খপ্পরে পড়ে কোমলমতিরা, ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে অসভ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা, ভ্রান্তনীতিতে অতিমাত্রায় নিপীড়ক হয় সুবিধাভোগীরা, আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে-ভালোবাসায়-সহানুভূতিতে অপরাধ করে অপরাধীরা, অস্ত্র-পেশীশক্তি দেখায়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ে ভীত করে সন্ত্রাসী-ডাকাতরূপী জানবাজ সমর্থকরা।
নেতৃত্বশূন্যতায় অনিশ্চিত গন্তব্য
যারা সদ্ব্যবহার না করে দুর্ব্যবহার করে তারাও বলে আমরা মানুষের জন্য কাজ করছি, মানুষের পাশে সবসময় আছি, মানুষের জন্যই আমাদের সবকিছু উৎসর্গিত। আসলে যারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন লোভে-মোহে, তারা কখনো অন্যের অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম করতে পারে না। যে নিজেই সব সময় কোনো বাছ-বিচার না করে শুধু খাই খাই করেন তিনি অপরের জন্য নিয়োজিত-নিবেদিত হবেন কী করে! কোনো দল দেশপ্রেমী নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগলে দলটির গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা
অপরাজনীতিতে যুক্তরা গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগ দেয়ার চেয়ে বেশি মনোযোগ দেন নতুন করে ধ্বংসের উন্মত্তায় মেতে ওঠার সুযোগ তৈরির সাথে সাথে বস্তুগত-জাগতিক প্রাপ্তির জীবনবোধের দিকে। তারা অন্যকে অপমান করে সুখী হন, অভদ্রতা-মূল্যবোধহীনতা বা খারাপ আচরণ করে তৃপ্তি পান।
এরা অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়াকে মনে করে শক্তি-সামর্থ্য-অস্তিত্বের জানান দেয়া, অন্যায় করার পরও সংশোধন হতে আত্মসমালোচনাও না করাকে মনে করে বীরত্ব, অন্যায়ের সমাধান না করে ভিকটিমকে আরো তাচ্ছিল্য করতে পারাকে মনে করে ক্ষমতা-গর্ব-অহংকার! যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেই গণতন্ত্র নেই, সেসব দল গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরতে মোটেই দ্বিধা করে না।
রাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও মনোনয়ন বাণিজ্য
ভালো-মন্দ মানুষ সব জায়গায়ই আছে। তবে মন্দকে মন্দ বলা ও ভালোকে ভালো বলার মতো সংস্কৃতি-পরিবেশ-পরিস্থিতি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। ঢালাওভাবে শুধু কোনো একজনকে দোষ দেয়া ঠিক না; সার্বিক ব্যবস্থাটাই স্বাভাবিক ও সুস্থ হতে হবে। অন্যকে অপমান করা, টানাহেঁচড়া করা, অপদস্ত করার, সেবার নামে নামে বাণিজ্য করার অবস্থান মর্যাদা ধরে রাখায় সহায়ক নয়। চাঁদাবাজি ও মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
রাজনীতিতে জনবিচ্ছিন্নতায় পরগাছা
গালিগালাজ করে, লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়ে, গলাবাজি করে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। নিজের দেশ ও নিজ দেশের পতাকা-মানচিত্র-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ভালোবাসার মানে হচ্ছে- এদেশের মানুষকে ও মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে ভালোবাসা, এদেশের আকাশ-বাতাসকে ভালোবাসা, এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সমাজ-সংস্কৃতিকে ভালোবাসা!
যার আনন্দ অনেকের বেদনার কারণ হয়, যার অতি চালাকি অনেককে বোকা বানায় ও প্রতারিত করে; তার মুখের মধুর কথা কখনোই অন্তরের কথা হয় না! ফলে রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে একসময়ের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলও রাজনীতিতে পরগাছায় পরিণত হয়!
রাজনীতির হালচাল ও অন্তরায়
ভেতরেই ভালো মানুষকে বের করে নিয়ে আসার স্বপ্ন পূরণের জন্য অবিরত কাজ করতে হয়। মানুষের ভালোবাসার অসাধারণ বিষয়টুকু অনুভব করতে পারা, পরের ত্যাগ-কষ্টের অমর্যাদা না করার শক্তিটুকু লাভ করা, নতুন ধ্যান-ধারণা দিয়ে নিজের-অন্যের-পৃথিবীর-পরিবেশের সমস্যার সমাধান করে এগোতে পারা ও সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে নতুন করে সাজাতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের অবসরে রাজনীতি করার খায়েশ জাগে, যা সুস্থ রাজনীতির অন্তরায়। রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যায় না এমন কর্মকাণ্ড বাড়লে রাজনীতির সামগ্রিক হালচালই খারাপ হয়ে যায়।
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কদর্য রূপ
যার পয়সা আছে সে দুর্নীতিবাজদের পেছনে কিছু পয়সা খরচ করে দ্রুত অনেক পয়সা কামাতে পারে। আর যার কোনো পয়সা নেই, যার ঘুষ দেয় না; সে পয়সা বানাতেও পারে না, কামাতেও পারে না। ফলে যে গরিব সে গরিবই থাকে, যে বড়লোক সে আরো বড়লোক হয়। যে কষ্টে আছে তার উন্নতি হয় না, কষ্ট আরো বেশি বাড়ে; আর যার বিত্ত-বৈভব আছে তার ভাগ্য দ্রুত বদলে যায়। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির নোংরা কদর্য রূপ এমন অসুস্থ প্রবণতাকে হাজির করে যা রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে!
রাজনীতির মাঠে নীতিভ্রষ্ট কলাকুশলী
দুই পয়সা ঢেলে দুইশ পয়সা বানানো যায় বা টাকায় টাকা আনে বা ঢাকায় টাকা উড়ে- এসব কথা শুধু ধনী লোকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই চক্রটিকে বাঁচিয়ে রাখছে রাজনীতিবীদরা, চক্রটির খপ্পর থেকে বের হতে প্রতিবন্ধকতা রাজনীতি। রাজনীতির মাঠের কলাকুশলীরা নীতিভ্রষ্ট না হলে অন্য কোনো সেক্টরেই নৈতিক অবক্ষয় এতো ব্যাপক মাত্রায় ছড়াতে পারতো না।