অতীত অতীতই। অতীতকে পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। তবে বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করতে পারি।
মানুষের পছন্দানুযায়ী বাছাই করার ক্ষমতা আছে। পছন্দ-অপছন্দের পার্থক্যের কারণেই কেউ সফল, কেউ ব্যর্থ; কেউ বিজয়ী আর কেউ পরাজিত। সঠিক পছন্দে হয় মানুষ, ভুল পছন্দে হয় অমানুষ।
সৃষ্টিজগতে মানুষ ও জ্বীন ছাড়া ফেরেশতা থেকে শুরু করে কাউকে এমন মেধা-বুদ্ধি-জ্ঞান দেয়া হয়নি যা দিয়ে কোনোটা গ্রহণ করার বা কোনোটা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নিতে পারে!
দৃঢ়চিত্ত হলে সে পারে-পারবে বিশ্বাস করে সফল হয়। আর দুর্বলচিত্ত হলে তিনি ক্ষুদ্র আশা পোষণ করে ব্যর্থ হয়। দুর্বল চিত্তের উচ্চাশা ও সিদ্ধান্ত কখনো কার্যকরী হয় না, স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবার আগেই তারা ছিটকে পড়েন।
যারা চিন্তার গতিপথ পরিবর্তন করে ভালো ও গঠনমূলক চিন্তা করতে পারেন না তাদের জীবন একই গতিপথেই চলে। চিন্তার পরিবর্তন না হলে মানুষের অবস্থারও পরিবর্তন হয় না।
রাগের স্রষ্টা পরিস্থিতি জটিল করে। রাগ নিয়ন্ত্রণের ফল রাগের ফলের উল্টো, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। রাগে নেগেটিভ এনার্জি তৈরি হয়ে শরীরে রোগ বাড়ে, মানসিক চাপ বাড়ে ।
ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই অনেককে যেতে হয়। একই কাজে কারো কাছে প্রশংসিত হন আবার কারো কাছে সমালোচিত হন।
ইচ্ছা ও একাগ্রতার সাথে মানুষের জন্য ভালো কিছু কাজ করতে হবে। মানুষকে সহায়তা করার কাজ জীবনের জন্য আনন্দদায়ক ও সন্তুষ্টিজনক বানাতে হবে।
যে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে না, সে জ্ঞানী নয়। যে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার পরও অপরাধ করে সে জ্ঞানপাপী।
সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তি সত্যকে চিনে, পাপের পথ ধরে না, পূণ্যের পথ ছাড়ে না, বিচার-বুদ্ধিবোধকে সদা জাগ্রত রাখে এবং বিশ্বাস করে দৃঢ়ভাবে।
জ্ঞানী শুভ চিন্তা করে, সদাচরণ করে ও পরের কল্যাণ কামনা করে। মূর্খ অজ্ঞতাকেই শক্তি মনে করে, বক্রপথে চলাকেই সহজ মনে করে, জ্ঞানী ও সৎ মানুষকে বোকা মনে করে।
যারা নতুন কিছু শিখতে রাজি নয়, তাদের নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখা উচিত নয়।
ভালো যেকোনো কিছু গ্রহণ করার জন্য উদার মন লাগে। বেশি বেশি বই পড়ে সৃজনশীলতা বাড়াতে হয়।
দেশ, পৃথিবী ও সমাজকে সেই অনেক বেশি দিতে পারে; যে অনেক বেশি অর্জন করে।
কল্পনাশক্তি বাড়াতে হয়, ভেতরের ভালো মানুষকে বের করে আনতে হয়। কঠিন পথে পদচারণা ও প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডকে পছন্দের কর্মকাণ্ড বানাতে হয়।
যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ-বিপ্লব দেশ-জাতিকে সংকটের ভেতর দিয়ে কখনো কখনো সম্ভাবনার দিকেও নিয়ে যায়। অনেকে নিহত হয়, অনেকে আহত হয়, অনেকের জীবিকা-সম্পদ তছনছ হয়ে যায়।
তাদের জীবনদান ও রক্তের কোনো বিনিময় হয় না। তবে কখনো যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, অগ্রগতি থেমে যায়, অগ্রযাত্রা মন্থর হয় তাহলে প্রতিদান দেয়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
যে যে ভালো উদ্দেশ্যে জীবন দেয় সেই উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করাই জীবিতদের পক্ষ থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো ও সদ্ব্যবহারের বহিঃপ্রকাশ। তার উদ্দেশ্যের উল্টাে কাজ করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা বা সহমর্মিতা বা সমবেদনা জানানো কখনো বিশ্বাসঘাতকতা, কখনো হাস্যকর আচরণ!
দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়ে সুন্দর দিন আসে, উজ্জল আগামীর নিশ্চয়তা বিধানও হয়। তবে সেজন্য সমাধানে আসতে হয়, ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর হতে হয়, বিশ্বাস ও শুভবুদ্ধি নিয়ে পথ চলতে হয়।
নিজের কাজে ফাঁকি দিয়ে অন্যের কাজের সমালোচনা করার নাম দেশপ্রেম নয়। অনুত্তমভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে অন্যকে সর্বোত্তমভাবে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেয়ায়ও সচেতনতা নয়।
অসুন্দর কাজ করে নিজেকে সুন্দর ও সাদা মনের দাবি করাও অর্থহীন। তুচ্ছ ব্যাপারে দ্বন্দ্ব-হানাহানি, সামান্য বিষয় নিয়ে সংগ্রাম-সংঘাত, ছোট ছোট চাওয়া-পাওয়া নিয়ে লোভ— মানুষের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে।
স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নপূরণে শুধু পাগলের মতো কাজ করাই সার্থকতা নয়, বয়স ও অভিজ্ঞতার আলোকে যথার্থ কাজে বৈচিত্র্যের আনন্দ নিতে পারাই সার্থকতা।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকায় বেঁচে থাকার মতো বেঁচে থাকা নয়।
বহু রকমের তথ্য, জ্ঞান ও বিজ্ঞতা অর্জন করে তা যত বেশি কাজে লাগানো যায়; সার্থকতা ততই বেশি।
কোনো মানুষকেই জাতি-মানবতা-জগত-স্রষ্টা এর চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে উপস্থাপনের আগ্রহ আরেকজন মানুষের থাকা উচিত নয়।
ব্যক্তি মানুষের চেয়ে ব্যক্তি গঠনের পদ্ধতি বড়, সমাজ উন্নয়নের একটি বড় প্রকল্পের চেয়েও আইডিয়া উন্নয়নের প্রক্রিয়া বড়।
শক্তিশালী সিস্টেম প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিকে মজবুত করে, সংগঠিত কাঠামো কঠিন উদ্যোগ বাস্তবায়নকেও সহজ করে, একটি ভালো প্লাটফর্ম অনেক ভালো চিন্তা-কর্ম-প্রয়াসে ভূমিকা রাখে।
যদিও এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক কলাকৌশল নীতি-বিধান মানার দিকে ঝোঁক কম; যা টেকসই উন্নয়ন ও দীর্ঘস্থায়ী আনন্দের অন্তরায়।
যার জীবন কখনো দুঃখের মধ্য দিয়ে যায়নি তার পক্ষে জগতের বিচিত্র সুখকে অনুভব করা অসম্ভব। অন্তত কিছুটা সময় কষ্টের মধ্য দিয়ে গেলে আনন্দের অনুভূতিগুলোর মূল্য দারুণভাবে অনুভূত হয়।
কল্পনাশক্তির সঠিক বৃদ্ধির জন্য বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়, বিশ্বস্ততার সঙ্গে যথার্থ বিচার-বিশ্লেষণ করার সক্ষমতাও লাগে।
ব্যবসার দৃষ্টিকোণের বাইরে অনেক ক্ষেত্রে সস্তা জনপ্রিয়তা নিম্নশ্রেণির ক্ষণস্থায়ী জিনিস। সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানোর কারণে অপ্রয়োজনীয় কিছুরও জনপ্রিয়তা বাজারে বেশি হতে পারে। তবে জনপ্রিয়তা জনবিচ্ছিন্নতা থেকে আসে না, সাহচর্য ও সান্নিধ্য থেকে আসে।
সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে শুধু ভেতরের বিশ্বাস দিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ মনপ্রাণ দিয়ে করতে হয়। ধৈর্যের সাথে লেগে থাকতে হয়।
কাজ করতে করতে দেখতে দেখতে শেখা হয়ে যায়। সব কিছুর আগে হচ্ছে শুরু করা। সব কিছুর ওপরে চেষ্টা। শতভাগ নির্ভুলভাবে শুরু করার চিন্তা কিংবা সময়-সাধ্য-সাধনাকে বিবেচনা না করা; পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।
অন্যকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা না থাকলে সম্পর্ক সুখের হয় না। ত্যাগের প্রবণতায় সমাজ সুন্দর হয়; ভোগ-বিলাসের প্রবণতায় নানান সমস্যা বাড়ে।
এতো এতো ভেজাল আর এতো এতো প্রতারণার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন দরকার, সবার সমন্বিত প্রয়াস দরকার, সমস্যার সমাধানে বিরোধ কমিয়ে আনা দরকার।
ভুলপথে ভুলভাবে চলা অর্থবহ জীবন নয়।
সঠিকভাবে বেঁচে থাকা, মূল্যবোধ ঠিক রাখা, নীতিতে অনঢ়-অটল থাকা, সামাজিকতা রক্ষা করা, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা- এসবের মাধ্যমেই সার্থক জীবনের সন্ধান মিলে।
জীবনের সার্থকতা যা করা উচিত তা করায়, সহজ-সরল জীবনযাপনে, কারও ক্ষতি না করায়।
পরিপূর্ণতাকে অস্বীকার করা, খন্ডিতাংশকে সম্পূর্ণ মনে করা, অপূর্ণ ফ্রেমে পূর্ণাঙ্গ কাঠামোকে আবদ্ধ করা- অস্বাভাবিকতাকে যেন স্বাভাবিকভাবে নেয়া!
এতে কখনোই আবেদন জোরালো হয় না, প্রস্তাবনাও নির্ভুল হয় না, বৃহত্তর উদ্দেশ্যকেও ধারণ করে না।
মানুষের তৈরি করা সফটওয়্যারগুলো নির্দিষ্ট কাজ করে। কমজনের মস্তিষ্কই নিজস্ব পরিকল্পনা ও ছকে এগুলোকে ব্যবহার করে। অধিকাংশের মস্তিষ্কই শুধুমাত্র সফটওয়্যারগুলোর নির্দেশনার আলোকে পরচালিত হয়।
স্রষ্টার বানানো সিস্টেম যখন মানুষের বানানো প্রসেসের কাছে আত্মসমর্পণ করে; তখন সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। সহায়ক-শক্তির মূল-শক্তি হয়ে ওঠার মানে দুর্বল ভিত্তির ওপর মজবুত প্রাসাদ নির্মাণ করতে চাওয়া।
কপি-পেস্ট করার যোগ্যতা নিয়ে মৌলিক কিছু সৃষ্টি করা যায় না। ত্রুটিযুক্ত নীতি অনুসরণ ও বিপথগামী নেতার অনুকরণ করে প্রকৃত মুক্তিও মিলে না। কৃতজ্ঞ হৃদয় অন্যকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বড় হয়, আর অকৃতজ্ঞ মন পরের অবদানকে নিজের বলে চালিয়ে ছোট হয়।
যে সমাজে ফুলের চেয়ে অস্ত্রের কদর বেশি, ভালোবাসার চেয়ে রক্তের চাহিদা বেশি, জিতিয়ে দেয়ার চেয়ে জিতে যাওয়ায় আনন্দ বেশি; সে সমাজ হিংস্র-রাক্ষুসে-হায়েনারূপী অমানুষের সমাজ। মানুষের সমাজে থাকে অহিংসা, ক্ষমা, পারস্পরিক সম্মানবোধ, সহানুভূতি-সমানুভূতি ও সহমর্মিতা।
জগতের সকল বৈচিত্র্যতাকে ধারণ করা জগতে প্রস্তুতকৃত কোনো সিস্টেমের পক্ষে সম্ভব নয়। জাগতিক সব সমস্যার সমাধান করাও জগতের কোনো সৃষ্টির পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। স্রষ্টাই কেবল সৃষ্টির সার্বিক কল্যাণ ও সামগ্রিক মুক্তির পথ বাতলে দিতে পারেন। সৃষ্টি কখনো সকল সৃষ্টির চেতনাকে ধারণ করতে পারে না।
একজন ভালো শিক্ষক জ্ঞানের একটি বৃক্ষ। একজন উদার রাজনীতিবিদ সমাজে স্বর্গসুখ আনায় ভূমিকা রাখেন। একজন যোগ্য চিকিৎসক রোগীর মনেও হাওয়ার মতো ছড়িয়ে দেন বাঁচার স্বপ্ন। একজন সৎ ব্যবসায়ী সেবায় ও পণ্যে গুণমান বজায় রেখে খেদমত করেন।
এরকম বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কৃষক, শ্রমিক, মুচি ও নাপিতসহ অনেক পেশাজীবী-বৃত্তিজীবী আছে যাদের ছাড়া চলে না। অথচ যাদের ভূমিকা জরুরি নয়, যাদের ছাড়াও চলে; এমন কমগুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদেরই মডেল-আইকন-মেন্টর বানানোর মূর্খ প্রবণতা এ প্রজন্মকে বিপথগামী-বিভ্রান্ত করেছে।
ভালো গান শোনা, প্রকৃতির সাৈন্দর্য দেখা, কবিতা আবৃত্তি শোনা, বই পড়া, ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন, আঁকাআঁকি করা, লেখালেখি করা, ভালো কনটেন্ট দেখা ও চিন্তা-গবেষণা করার মাধ্যমেও অবসরে বিনোদিত হওয়া যায়। এতে মনোজগতের সাথে বহির্জগতের দারুণ সংযোগ ঘটে।
নিজেকে বুঝার জন্য ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য খেলাধুলার শারীরিক কসরত কাজের হতে পারে, তবে শুধুই দর্শক হয়ে আজীবন হাততালি মারায় সুখ-তৃপ্তির কিছু নেই।
ভেতরে অশান্তি নিয়ে বাইরে আনন্দ দেখানো অর্থহীন। মন অসুন্দর হলে চোখের কোনো দেখাই হৃদয়কে প্রশান্তি দিতে পারে না।
বিনোদন যদি মানবিক সম্পর্কের চেয়ে বড় হয়ে যায় তা পাশবিকতা।
খেলাধুলা যাদের বিবেকবোধের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে; তাদের বুদ্ধির পরিপক্কতা কখনোই আসে না।
বি.দ্র. লেখাটি আনিসুর রহমান এরশাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।